আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
225 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (38 points)
আসসালামু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ।
আমি একটি বিষয় নিয়ে অত্যন্ত চিন্তাগ্রস্ত আছি,শাইখরা আমাকে সাহায্য করবেন,এটা আমার বিনীত অনুরোধ এবং আবদার।
আমি যথাসাধ্য হারাম কাজ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি,শরয়ী পর্দা এবং অন্যান্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার হুকুম- আহকাম পালনের চেষ্টা করি আলহামদুলিল্লাহ, তিনি আমার হিদায়াতদাতা।সহশিক্ষা বিষয়ে অনেক লেখা পড়েছি,অনেক পোস্ট পড়ি।এটা মেয়েদের জন্য নিশ্চিত হারাম বলে শুনি। আমি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িৎ প্রকৌশলে পড়ছি,স্কুল কলেজ আলহামদুলিল্লাহ গার্লস ছিলো। আমি আমার পরিবারে বুঝিয়েছি,কান্নাকাটি করেছি এবংতারা কোনোভাবেই আমার পড়া থেকে ড্রপ করা মেনে নিতে নারাজ,এ নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়ে গেছে। আমি আশংকা করি,তাদের সাথে আমার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে শুধু এই কারণে,ছোটবেলা থেকে আমি প্রচন্ড ভালো রেজাল্ট করি,বৃত্তি পাই এবং জেলায়ও মেধাস্থান থাকে। তাদের ইচ্ছামতো মেডিক্যালে পড়িনি বলে আমার সাথে অনেক ঝামেলা হয়েছিলো। আমার শিক্ষার জন্য তারা অনেক ত্যাগস্বীকার করেছেন। এমনকি আম্মু বাসা ছেড়ে আমাকে নিয়ে ঢাকায় থেকেছেন দেশের সবচেয়ে নামী কলেজে পড়তে চেয়েছিলাম তাই। স্কুলে থাকতে খুব অভাব ছিলো যখন,
**আমি ফিতনা এড়াতে এবং সহশিক্ষা যাতে আমার উপর প্রভাব না ফেলে,সেজন্য বিবাহের সিদ্ধান্ত নেই পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়।ব আমার জাওয সাহেবের সাথে থাকি। লেখাপড়া করি। তিনিও আমার বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়েন। বই খাতা কেনা থেকে শুরু করে এখানে যা প্রয়োজন,আমার সাথে থাকেন,টিচারকে কোনো প্রজেক্ট দেখাতে গেলেও আমার সাথে যান। আর থিসিস এর কাজে পুরুষ টিচার এর বদলে আমি নারী শিক্ষকের আন্ডারে আছি।
বর্তমানে তাহলে আমার পড়ার উদ্দেশ্য হলো:
১) এই বছরই আমার পড়া শেষ হয়ে যাবে। বাসা থেকে কোনোভাবেই মানছে না আমি এখন ছেড়ে দিই।ঝামেলা হচ্ছে এ নিয়ে বলতে গেলে। এখনো আমি আমার বাসার দেয়া খরচে চলি।জাওয স্টুডেন্ট, এখন আমার খরচ বহন করতে তিনি অপারগ। কিছু টিউশন করান,তাতে বাসা ভাড়া,দোকান,তার নিজের হাতখরচে চলে যায়।যতদিন তিনি পড়া না শেষ করেন,আমার খরচ আমার ফ্যামিলির উপর বলে নেয়া হয়েছে বিয়ের সময়।
২) আমার ভবিষ্যতে নারী-পুরুষের সহাবস্থান আছে এমন জায়গায় চাকরির ইচ্ছা নেই। আমি মাদ্রাসাহতে খিদমত করতে ইচ্ছুক,আমার পছন্দের কিছু মাদ্রাসাহ আছে সেখানে জেনারেল এর শিক্ষিকার শিক্ষাগত যোগ্যতা গ্র‍্যাজুয়েশন কম্পলিট চায়। যেকারণে আমি চাই এই শেষ বছরে বাদ না দিয়ে পড়াটা কম্পলিট হোক। আমার জাওযের পরিবারের ব্যয়ভার তারই বহন করতে হবে,বড় ছেলে তিনি। আর এদিকে আমার খরচ,সামনে বাচ্চাদের খরচ, আমার চিকিৎসা বাবদ বেশ খরচ আছে,মাসে আট হাজার টাকার কেবল ওষুধই দরকার,এখন টাকার সামর্থ্য না থাকায় খেতে পারছি না। সবদিক মিলিয়ে আমার একটা কর্মসংস্থান দরকার। যদি বাসায় বসে টিউশন/ফ্রিল্যান্সিং করতে পারি আল্লহ তৌফিক দিলে,হয়তো বাইরে আর যাবো না কিন্তু গ্র‍্যাজুয়েশন এর সার্টিফিকেট এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
৩) আমার শশুড়-শাশুড়ি আমার কিছু শারীরিক ত্রুটি (যেমন শর্ট) থাকলেও পছন্দ করেছেন আমার পড়াশুনা দেখে। এখন মাঝ পথে বাদ দিলেও আমাকে তাদের কটুকথা বা দোষারোপ শুনতে হবে,এমনিতেই তাদের হিদায়াত নেই বলে আমার পর্দার জন্য,দেবরের সামনে না যাওয়া/নিকাব পড়ে যাওয়া নিয়ে বেশ নারাজ। নারীবাদী চেতনা পোষণ করি না,ওয়াল্লহি।
৪) মাঝে মাঝে ভার্সিটির মেয়েদের ক্বুরআন এবং পর্দা নিয়ে শেখাতাম,এখন ব্যস্ততায়  পারছি না। আমার মাধ্যমে,পোশাকের মাধ্যমে, দাওয়াত পাক মেয়েরা,এটাও একটা উদ্দেশ্য আমার। আমি ভার্সিটির মেয়েদেরকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড করি,যাতে আমার ইসলামিক মেসেজ গুলো,তারা পোস্টে এবং স্টোরিতে দেখতে পায়। তাদের গতিবিধি/পোশাক আশাক/কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করি প্রতিদিন এবং সে অনুযায়ী পোস্ট দেই ইসলাম কি বলে সে বিষয়ে,তা নিয়ে।
৫) সাইন্স নিয়ে পড়েছি,এই সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এর নলেজ যদি দ্বীনের কোনো ফাতওয়া,তাহকীক এর প্রয়োজন হয়,তাহলে তা কাজে লাগানোর নিয়াত আছে। অন্য মেয়েদের সাইন্স,ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়গুলো,প্রযুক্তি রিলেটেড বিষয়গুলো জানাতে,পড়াতে পারবো,নিজের মেয়ে বাচ্চাদের বাসায় পড়ানোর ইচ্ছা,গ্র‍্যাজুয়েশন পর্যন্ত যা শিখব গোটাটাই।তাদের জেনারেল শিক্ষার জন্য বাইরে বের করতে চাই না।
৬)এখন আমার অর্থের প্রচন্ড অভাব হচ্ছে,টিউশন করাবো (বাইরে গিয়ে না,বাসাতেই) গার্জিয়ান জানতে চায়,কোথায় পড়ছি,কোন ইয়ারে। পড়াশুনা করছি না শুনলে তারাও স্টুডেন্ট দিবে না।

সব মিলিয়ে খারাপ সিচুয়েশন এড়াতে আমি এখনো স্টপ করিনি পড়াটা।
উল্লেখ্য, আমি কোনো অনুষ্ঠান,আন্দোলন,সেমিনার কিছুতে যাই না ভার্সিটির। ক্লাস এবং ল্যাবের সময়টা ভার্সিটিতে থাকি। আর জাওয আমার খোঁজ খবর রাখেন,ভার্সিটির বিষয়েও। হযরত,আমি হারাম বিষয় হালালাইজের পক্ষে না। আমি আমার খোদার বান্দী। সিচুয়েশন জটিল না হলে বহু আগেই ছেড়ে দিতে পারতাম পড়াটা।জানি না কতোটুকু বুঝাতে পেরেছি।
 আমাকে সমাধান দিন!!

1 Answer

+1 vote
by (559,140 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


https://ifatwa.info/30426/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে, 
দ্বীনি শিক্ষা হোক,বা দুনিয়াবি শিক্ষা হোক,ইসলামের বিধান হলো ছেলেরা ছেলেদের প্রতিষ্ঠানে এবং মেয়েরা মেয়েদের প্রতিষ্ঠানে পড়বে। বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে এর প্রতি সর্বোচ্চ লক্ষ রাখা ও গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। 

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاء

মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী…। (সূরা আলি ইমরান ১৪)

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ

আমি আমার পরে মানুষের মাঝে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিকতর ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাই নি।(বুখারী ৪৮০৮ মুসলিম ২৭৪০)

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাতে এসেছে,

 فلا يجوز للمرأة أن تَدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك

সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা কিংবা চাকরি করা জায়েয হবে না যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিবাকের জন্য জায়েয হবে না তাকে এর অনুমতি দেয়া।  (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১২/১৫৬)

★ একান্ত অপারগ অবস্থায় বা বিকল্প কোন পথ না পেলে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা জায়েয আছে। কেননা, الضرورات تبيح المحظورات     জরুরত নিষিদ্ধ কাজকে সিদ্ধ করে দেয়। (আলআশবাহ ওয়াননাযাইর ১/৭৮)

তবে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, যাতে পর্দা লঙ্ঘন বা আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম সংঘটিত না হয়।

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ

অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)
,
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
যতদিন পর্যন্ত এই দেশে পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু না হচ্ছে ,ততদিন প্রয়োজনের তাগিদে নিম্নোক্ত শর্তাদির সাথে উলামায়ে কেরামগন  কলেজ-ভার্সিটিতে শিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দেন।

১/শিক্ষা অর্জন দেশ ও মুসলিম জাতীর খেদমতের উদ্দেশ্যে হতে হবে।

২/চোখকে সব সময় নিচু করে রাখতে হবে,প্রয়োজন ব্যতীত কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকার দিকে তাকানো যাবে না।মহিলা/পুরুষ তথা অন্য লিঙ্গের  সহশিক্ষার্থীদের সাথে তো কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা যাবেই না।সর্বদা অন্য লিঙ্গর শিক্ষার্থী থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।
ফাতাওয়া উসমানী ১/১৬০-১৭১;

সহ শিক্ষা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ 

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
প্রশ্নে উল্লেখ রয়েছে,
আমার জাওয সাহেবের সাথে থাকি। লেখাপড়া করি। তিনিও আমার বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়েন। বই খাতা কেনা থেকে শুরু করে এখানে যা প্রয়োজন,আমার সাথে থাকেন,টিচারকে কোনো প্রজেক্ট দেখাতে গেলেও আমার সাথে যান। আর থিসিস এর কাজে পুরুষ টিচার এর বদলে আমি নারী শিক্ষকের আন্ডারে আছি।

সুতরাং প্রশ্নের বিবরণ মতে আপনি শিক্ষা চালিয়ে যাবেন।
এটিই পরামর্শ থাকবে। 

আপনি পরবর্তীতে শরীয়াহ সম্মত পন্থায় টিউশন/ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন।
চাইলে কোনো মহিলা মাদ্রাসাতেও শিক্ষকতা করতে পারেন।

আপনি লেখাপড়ার ক্ষেত্রে উম্মাহর খেদমতের নিয়ত করবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...