আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
এই ফাতওয়াতে আপনারাই আরব শাসকদের তাকফীর করেছেন [যদি প্রশ্নে উল্লেখ করা অপরাধগুলা বাস্তবেই তারা করে থাকে]।
আবার এই ফাতওয়াতে বলা হয়েছে বর্তমান বঙ্গীয় শাসককে তাকফীর করা যাবে না। আমার প্রশ্ন হলো কেন তাকে তাকফীর করা যাবেনা যেখানে তার অপরাধ আরব শাসকদের চেয়েও অধিক স্পষ্ট?
এ কথা সর্বজনবিদিত যে, রাষ্ট্র প্রধানের অনুমতি ছাড়া কোন আইন সংবিধানে যুক্ত হতে পারে না এবং কখনো এমনটা হয়ও নি।
আর এই সংবিধান এমন ৪ টি (গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা) মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত যেগুলা ইসলামের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
এছাড়া বলা হয়েছেঃ
ধারা ২(ক) - ইসলাম এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানদের ধর্মের সমান মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে।
ধারা ৪(ক) - শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সকল সরকারী কার্যালয়ে রাখা বাধ্যতামূলক।
ধারা ১৪ (খ) - রাষ্ট্র কর্তৃক ধর্মের রাজনৈতিক মর্যাদা বিলোপ করা হবে।
এছাড়া অনুচ্ছেদ ৭ এর এক ও দুই
অনুচ্ছেদ ৬৫ ধারা ১
অনুচ্ছেদ ৭৫ এর ধারা ১ এর খ
অনুচ্ছেদ ৮০ এর ধারা ১,২,৩,৪,৫
অনুচ্ছেদ ৪৮ এর ধারা ২
অনুচ্ছেদ ৫৯ এর ধারা ১
অনুচ্ছেদ ৫৮ এর ধারা ২
অনুচ্ছেদ ৫৫ এর ধারা ২
অনুচ্ছেদ ১৪৪ এর ধারা ১
অনুচ্ছেদ ২৮ এর ধারা ১,২
অনুচ্ছেদ ২৬ এর ধারা ১,২
অনুচ্ছেদ ২৯ এর ধারা ১,২
অনুচ্ছেদ ৩৯ এর ধারা ১,২ক
অনুচ্ছেদ ৩২ এবং ৪৯
সহ সংবিধানের অনেক বিধান সরাসরি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক।
এছাড়া তার অন্যান্য অপরাধ হলোঃ
১। হিন্দুদের প্রতিমা দূর্গার ব্যাপারে সে বলেছে "গজে করে যখন মা দূর্গা আসে তখন দেশে নাকি অনেক ফসল হয়। এটা কথিত আছে। কাজেই আমরা আশা করি আমরা আগামীতে ফুলে ফলে ভরে উঠবো। দেশের মানুষ উন্নত হবে।" এছাড়া হিন্দুদের কতটা মন্দির তৈরি করে দিয়েছে সেটা নিজ মুখেই উল্লেখ করেছে।
২। সে বলেছে "বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার আছে।
৩। সে পর্দানশীল নারীদের জীবন্ত তাবু বলে উপহাস করেছে।
৪। কুফফার রাষ্ট্র ভারতকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে।
৫। উত্তরাধিকারের সম্পত্তি বন্টনের ব্যাপারে আলিমদের উদ্দেশ্যে তার মন্তব্য "শরীয়াহ আইনের দোহায় দিয়ে মা ও মেয়েকে বঞ্চিত করে দিয়ে বাবার বা স্বামীর হাতে করা সম্পত্তি তাদের কাছে থেকে কেড়ে নেওয়া হয় এর কোন সূরাহ করা যায় কিনা ব্যাপারটা আপনার দেখবেন।
৬। সে ভারত ভ্রমণে যেয়ে মূর্তির পায়ে ফুল দিয়েছে।
এরপরও কি আমরা তাকে তাকফির করতে পারবো না? নাকি আপনারা ফাতওয়া দিতে ভয় পাচ্ছেন?
শাইখ সুলাইমান আল উলওয়ান হাফিযাহুল্লাহ বলেনঃ
আল-ইমাম ইবন হাযম রাহিমাহুল্লাহ বলছেন ফাক্বীহগণ এ বিষয়ে একমত, যদি কেউ প্রকৃত (অবিকৃত) তাওরাত অথবা ইঞ্জিল দিয়েও শাসন করে তবে সে কাফির। (কারণ কিতাবগুলো শুধুমাত্র বানী-ইসরাইলের জন্য নাযিল করা হয়েছিল) তবে আজকের শাসকদের ব্যাপারে হুকুম কি হবে, যারা শাসন করছে ইহুদী-নাসারা আর সেইসব অভিশপ্ত নাস্তিক, গণতান্ত্রিক আর সেক্যুলারিস্টদের আইন দিয়ে, যারা ইবলিসের চাইতেও বড় কাফির?
ইবন হাযম বলছেন যে ব্যাক্তি ক্বুর’আন ছেড়ে অবিকৃত তাওরাহ আর ইঞ্জিল দিয়ে শাসন করবে তার কাফির হবার ব্যাপারে ফাকীহগণের ‘ইজমা আছে। আর যারা বুশের নীতি, আর অভিশপ্ত ন্যাটো আর জাতিসংঘের আইন আর নীতি দিয়ে শাসন করছে তারা কাফির না?
সুবহান’আল্লাহ্, “তোমাদের কি হল? তোমরা কেমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছ?” [আল-ক্বালাম, ৩৬]
আমাদের সময়ে এই গোমরাহির (অর্থাৎ যে আল্লাহর আইন দ্বারা শাসন করে না, তাকে কাফির মনে না করা) ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। আজকের স্বঘোষিত সালাফিদের মধ্যে ‘ইরজা আছে। এরা হল ইরজা’র সালাফ। এরা হল এমন সব লোক, সত্যকে বিলম্বিত করার ব্যাপারে যাদের রয়েছে ব্যাপক প্রেরণা ও উদ্দীপনা। আর তাই তারা বলে “এ হল কুফর দুনা কুফর।” [অর্থাৎ আজকের স্বঘোষিত ইরজাসম্পন্ন ‘সালাফি’রা বলেন আল্লাহর আইন দ্বারা শাসন না করা হল, “কুফর দুনা কুফর”।]
সাইয়্যদিনা ইবন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুঃ
১।হাসান ইবনে আবি আর রাবিয়া আল জুরজানি [পূর্ণ নাম হল, ইবন ইয়াহইয়া ইবন জা’জ। ইনিও বর্ণনাকারী হিসেবে সত্যবাদী এবং বিশ্বাসযোগ্য বলে গৃহীত] বর্ণনা করেছেন, আমরা আব্দুর রায্যাক থেকে, তিনি মুয়াম্মার থেকে, তিনি ইবনে তাউস থেকে, এবং তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন-
ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে প্রশ্ন করা হল আল্লাহর এই আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে, “...।আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন তদানুসারে যারা বিচার-ফায়সালা করে না, তাঁরাই কাফির।” [আল-মায়’ইদা, ৪৪]
জবাবে ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “কুফরের জন্য এটাই যথেষ্ট।” [আকবার উল কাদ্দাহ, খণ্ড ১, পৃঃ ৪০-৪৫, ইমাম ওয়াকিয়া। বর্ণনাকারী হলেন মুহাম্মাদ ইবন খালাফ ইবন হাইয়্যান, যিনি পরিচিত ওয়াকিয়া নামে। তিনিই আখবার উল ক্বাদা কিতাবটি রচনা করেছেন। ইবন হাজার আল-আসক্বালানী, আল-খাতিবি এবং ইবন কাসির – তাঁদের সকলের উপর আল্লাহ্ রহম করুন – ওয়াকিয়ার ব্যাপারে বলেছেন, “সে বিশ্বাসযোগ্য”।]
যখন ইবন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলছেন, “কুফরের জন্য এটাই যথেষ্ট”, তখন আর এটাকে ছোট কুফর বলে গণ্য করা যাবে না। যেহেতু তিনি “যথেষ্ট” বলেছেন, তাহলে বোঝা যাচ্ছে তিনি এখানে বড় কুফর (কুফর আকবরকেই) বোঝাচ্ছেন।
সায়্যেদিনা ইবন মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুঃ
একদা ইবন মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে রিশওয়া (ঘুষ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি বলেন-
“এটা হচ্ছে সুহত (অবৈধ সম্পদ)।”
তখন আবারো জিজ্ঞেস করা হয়, “না, আমরা বিচার ফায়সালার ব্যাপারে বলছি।”[অর্থাৎ প্রশ্ন নিছক ঘুষ গ্রহণ করার ব্যাপারে না, ঘুষের বিনিময়ে বিচার বদলে দেয়ার ব্যাপারে]
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু জবাব দিলেনঃ “এটাই হচ্ছে কুফর।” [তাফসীর ইবন কাসীর এবং আকবার আল-ক্বাদা]
শাইখ সুলাইমান আল উলওয়ান হাফিযাহুল্লাহ বলেনঃ
আল্লাহ্ তাআলা যা বলেছেন তার আলোকেই বলতে চাইঃ
১। আল্লাহর আইন ছেড়ে দেওয়া কুফর
২। (নিজের মত) আইন প্রণয়ণের কুফর এবং
৩। (নিজের তৈরি) আইন দিয়ে শাসন করার কুফর।
তারা (যেসব শাসক এরূপ করেছে) তিন ধরনের কুফর করেছে যা তাদেরকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।
সুতরাং যারা বলে 'এরূপ শাসকেরা তো কুফর করে না, যদি না তারা পরিপূর্ণভাবে (অন্তর থেকেও) বর্জন করে।' তারা ঘুলাত আল জাহমীয়া মাযহাবের অংশ বা মুরজিয়া।"
আর এটা তো এমন বিষয় যে ব্যাপারে উম্মতের ইজমা হয়ে গেছে।