১. জমি বন্ধক রেখে টাকা ভোগ করা জায়েজ কিন্তু যে জমি নিবে তার জন্য ভোগ করা জায়েজ নেই। আমার কিছুদিন আগে মনে হয়েছিলঃ ব্যাপারটি তো উল্টো করেও চিন্তা করা যায়৷ যেমনঃ যে জমি নিলো সে টাকাগুলো জমিওয়ালার কাছে আমানত হিসেবে রাখল, তাহলে তো জমি ভোগ করা জায়েজ হয় এবং বন্ধকের টাকা নিয়ে ভোগ করা হারাম হয়।
ক) আমার এসব সন্দেহ আসার পরেও আমি যদি ধরে নেই যে, হুজুররা যা মাসয়ালা দিয়েছেন সেটিই গ্রহণ করি, মানে জমি বন্ধকের টাকাটা হালাল হিসেবে ধরে নিয়ে ব্যবসা করি, তাহলে কি সমস্যা হবে?
বর্তমানে ভাবছিঃ আমি যদি টাকার প্রয়োজনে কাউকে বলি জমি বন্ধক নেওয়ার জন্য তাহলে প্রয়োজনটা আগে আমি দেখাচ্ছি, মানে আমার টাকার প্রয়োজন। যেহেতু টাকার প্রয়োজন সেহেতু আমাকে জমি অন্যের কাছে রাখতেই হচ্ছে। মানে এদিক দিয়ে জমিটা হলো আমানত (যদিও জানি যে, তারা জমি ভোগ করবে)। আমার মনে হয় এই হিসেবে জমি বন্ধকের টাকা ভোগ করা জায়েজ আছে।
কিন্তু কেউ যদি জমি বন্ধক নিতে চায় এবং আমি সে কারণে আমাকে টাকা দেয়, তাহলে দেখা যাচ্ছে তার জমিটা প্রয়োজন এবং সে কারণে আমাকে টাকা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে আমার মতে তার টাকাটি হলো আমানত। মানে আমি এক্ষেত্রে জমি বন্ধক রেখে টাকা ব্যবহার করতে পারব না।
তবে আমারও টাকা প্রয়োজন এজন্য জমি বন্ধক রাখব এবং আরেক জনের জমি প্রয়োজন এজন্য জমি বন্ধক নিবে টাকা দিয়ে- যদি বিষয়গুলো এমন হয় তাহলে কি হবে সে বিষয়ে বলতে পারছি না।
প্রিয় হুজুর, আমি জেনারেল পড়ুয়া একজন ছাত্র।বেয়াদবি নিবেন না। আমি মাসয়ালা দিচ্ছি না। আমার মনে এসব প্রশ্ন আসছে তাই তুলে ধরলাম। আমি আপনাদেরকে অনেক বেশি সম্মান করি। নিশ্চয়ই আপনারা পড়াশুনা করে জেনে আলেম হয়েছেন, আর আমি মনগড়া কথা বলছি। তারপরেও আমার মনের কথাগুলো বললাম। এসব মাসয়ালা নয় বরং আমার মনে আসা কথা বা সারাদিন ধরে চিন্তা করার কারণে এসব আসতে পারে।
খ) আপনারা যেহেতু মাসয়ালা দিয়েছেন যে, জমি বন্ধক রেখে টাকা নেওয়া জায়েজ আছে,তাই আমি জমি বন্ধক রেখে ব্যবসা করতে চাচ্ছি। আমার উপরের চিন্তার কারণে কি আমার ক্ষেত্রে মাসয়ালা ভিন্ন হবে? আমি চাই না মাসয়ালা ভিন্ন হোক।
২. ক) মনে করেন, ২ জন মুফতি এক মত দিলো বাকি ১ জন ভিন্ন মত দিল। আমি যদি আমার সুবিধার ভিত্তিতে সহজ মাসয়ালাটি গ্রহণ করি তাতে সমস্যা হবে? এক্ষেত্রে আমি ২ জন কিংবা ১ জন মুফতির দেওয়া ফতোয়াও গ্রহণ করতে পারি কারণ তারা বা তিনি দলিলের ভিত্তিতে মাসয়ালা দিয়েছেন।
খ) আমার যদি এই দুই টাইপের মাসয়ালার কোনো একটি যুক্তিযুক্ত মনে হয় তারপরেও সেটি গ্রহণ না করে যদি অন্যটি গ্রহণ করি তাহলে সমস্যা হবে? কারণ এক্ষেত্রেও আমি সহজটিকে বেছে নিয়েছি এবং আমার মতে মুফতি সাহেব দলিলের ভিত্তিতে মাসয়ালা দিয়েছেন।
৩. ক) যদি কোনো মুফতি সাহেব চোখের জেনা বা কবিরা পাপের সাথে যুক্ত থাকে তবে কি তার থেকে মাসয়ালা নেওয়া যাবে?
খ) নিজ মাযহাবের হওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় মুফতি সাহেবদের কিছু ফতোয়াতে পার্থক্য দেখা যায়। যদি কোনো মুফতি সাহেবের দুই একটি বা কিছু ফতোয়াতে এমন পার্থক্য দেখা যায়, তবে কি পরবর্তীতে তার থেকে মাসয়ালা নেওয়া যাবে?
৪. ব্যবসার ইনভেস্টের টাকা হালাল কিনা এবং আমার এবং আমার স্ত্রীর সম্পর্ক হালাল আছে কিনা এসব নিয়ে খুব চিন্তিত থাকি সব সময়। এমনকি কোনো কাজও ঠিক মত করতে পারি না এসব চিন্তার কারণে। আপনাদের থেকে অনেক বার মাসয়ালা নেওয়ার পরেও নতুন নতুন নানা ধরনের প্রশ্ন আমার মনে আসতেই থাকে। এ-কারণে আমি ঠিক করেছিলাম যে, হালাল বা হারাম কি হয় হোক- ব্যবসা এবং সম্পর্ক চালিয়ে যাই। ধরেন, আমার ব্যবসা এবং সম্পর্ক হালাল থেকেই গেল কিন্তু আমি তা জানলাম না। তবে- আমি ধরে নিয়েছিলাম যে ব্যবসা এবং সম্পর্ক কি হয় হোক; চালিয়ে যাই। আমার এই মানসিকতার কারণে আল্লাহ কি আমাকে বলতে পারেন যে, "বান্দা, তুই যেহেতু সিওর না হয়ে চালিয়ে গেছিস বা মনে করেছিস যে কি হয় হোক; যেহেতু মনে করেছিস -কি হয় হোক; সেহেতু আমি হারাম হিসেবে ধরে নিলাম। কারণ, বান্দা তুই সিওর না হয়ে সামনে এগিয়েছিস". আল্লাহ কি এভাবে আমাকে বলতে পারেন?
৫. আমাদের সমাজের অনেকে হালাল হারাম মিক্সড ইনকাম করলেও তারা এবিষয়ে তেমন কিছু মনে করে না। তারা মনে করে হারাম খাচ্ছি, পাপ হচ্ছে এতোটুকুই। কিন্তু আমি মনে করি- হারাম খেলে ইবাদত, দোয়া কবুল হয় না। হারাম দিয়ে ব্যবসা করলে সারাজীবনের ইনকাম হারাম হবে; মানে সারাজীবনের ইবাদত কবুল হবে না। আমার মতে সাধারণ মানুষ এসব বিষয়ে কম ভাবে বা ভাবে না কিন্তু আমি এসব বিষয়ে ভাবি। আমার প্রশ্ন হলোঃ সাধারণ মানুষ যেহেতু কম ভাবে বা কম জানে সেহেতু তারা যদি হারাম ইনকাম করে তবে কি তাদের ইবাদত কবুল হবে? এখন আমি যদি হারাম ইনকাম করি তবে- আমি যেহেতু বেশি ভাবি এবং জানি সেহেতু আমার ইবাদত কি কবুল হবে না? আমার পাপ কি তাদের থেকে বেশি হবে?
৬. ক) হারাম টাকা দিয়ে হালাল ব্যবসা শুরু করলে পরে অন্য হালাল খাত থেকে উক্ত হারাম টাকাগুলো দান করে দিলে ব্যবসা সম্পূর্ণ হালাল হয়ে যায়। আমার প্রশ্ন হলোঃ কেউ যদি জেনে বুঝে হারাম টাকা দিয়ে হালাল ব্যবসা শুরু করে এবং পরে অন্য হালাল উৎস থেকে ঐ পরিমাণ টাকা দান করে দেয়, তবে কি ব্যবসা সম্পূর্ণ হালাল হবে?
খ) হারাম টাকাটি কিভাবে দান করতে হবে?
(উল্লেখ্য যে, আমি একজন বিবাহ, তালাক, হুরমত, যিহারের ওয়াসওয়সার রোগী। বর্তমানে কনফেকশনারী ব্যবসা নিয়েও অনেক চিন্তায় আছি)