আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
93 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (12 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
উস্তাদ, আমি বর্তমানে অনার্স পড়তেছি।আমার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পূর্বে স্বামীকে বলেছিলাম ইসলামে মেয়েদের ফ্রিমিক্সিং পরিবেশে জব করা জায়েজ নেই,তাই আমি জব করবোনা।অর্থ উপার্জনের দায়িত্ব ছেলেদের উপর,মেয়েদের উপর নয়।আমি আরও বলেছি আমার পরিবারের একটু অর্থনৈতিক সমস্যা আছে,এবং আমার দান সাদাকা,সমাজ সংস্করণ মূলক কাজ করার ইচ্ছে আছে,তাই আমি ফ্রিল্যান্সিং করতে চাই। আমাকে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হেল্প করতে হবে।আমার স্বামী বলেছিলেন ঠিকআছে,তোমাকে বাইরে চাকুরী করতে হবেনা।তুমি ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করিও।

এখন,উনি আমাকে এভাবে বলতেছেন, আমি যে তোমাকে ফ্রিল্যান্সিং শিখাবো,কম্পিউটার কিনে দিব,কোর্স করাবো তাহলে আমার কি লাভ!(জানিনা মজা করে বলেছেন,নাকি সিরিয়াস বলেছে)। আমার ভরনপোষণে উনি কোনো কমতি রাখেননা।

কিন্ত উনার এমন কথায় আমি কষ্ট পেয়েছি,আমার মনে হয় মাঝেমধ্যে,  আমি ফ্রিল্যান্সিং শিখে  ভবিষ্যতে উনাকে টাকা দিয়ে হেল্প করবো এজন্যই এতকিছু করতে আমার জন্য!(উনি মাঝেমধ্যে বলেন কোন কিছু শৌখিন জিনিসপত্র দেয়ার কথা বললে, এখন দিচ্ছি পরবর্তীতে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করে আমাকে পরিশোধ করে দিও)।বিষয়টি মজা হিসেবে নিলেও মাঝেমধ্যে সিরিয়াস মনে হয় আমার কাছে!..

উস্তাদ, আমি ফ্রিল্যান্সিং শিখার কাজ সামনে শুরু করবো ইনশাআল্লাহ,, যেটা আমার ।স্বামীর  হাত ধরেই শিখবো।

এখন আমি যখন আয় করবো সেখান থেকে আমার পরিবারকে হেল্প করবো,দান সাদাকা করবো।নিজের ক্যারিয়ারের জন্য ফ্রিল্যান্সিং শিখতেছিনা উস্তাদ। আমার পরিবারের প্রয়োজন আছে, দান সাদাকা করতে ভালো লাগে তাই শিখতে চাই।

আমার স্বামী  মোটামুটি সচ্ছল। তার কোনো মৌলিক প্রয়োজনের অভাব নেই আলহামদুলিল্লাহ। কিন্ত অন্যান্য প্রয়োজন আছে (যেমনঃ আমাদের সন্তানদের বড় করতে অর্থে প্রয়োজন,বাড়ি করতে অর্থের প্রয়োজন, শহরে সেটেল্ড হতে অর্থের প্রয়োজন  এমনটা)।

এখন আমি যদি ঘরে বসে ইনকাম করে নিজের পরিবারকে সাপোর্ট দেই,দান সাদাকা করি, স্বামীকে হেল্প করি আরো সচ্ছল ভাবে বসবাসের জন্য,,তাহলে কি আমার এমনটা করা উচিত হবে!?
স্বামী সচ্ছল ভাবে বসবাস করতে চায় এজন্য তাকে আর্থিক ভাবে হেল্প করাতে আমি সাওয়াবের অংশীদার হব উস্তাদ?
নাকি তাকে বলে দিব স্বামীর দায়িত্ব  সংসার চালানো,স্ত্রীর দায়িত্ব  নয়,যেহেতু স্বামীর মৌলিক চাহিদা মেটানোর মত সামর্থ্য আছে। না থাকলে ভিন্ন কথা।

এখন আমি স্বামীর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং শিখে আমার পরিবারকে হেল্প করবো,এটাতে উনি জেলাস হয়ে হয়তো চান যেনো পরিবারকে যেমন হেল্প করবো তেমন যেনো উনাকেও হেল্প করি,,যেহেতু উনি ফ্রিল্যান্সিং শিখতে সাহায্য করবেন আমাকে।

উস্তাদ আমার পুরো বিষয়টি পড়ে ইসলামের আলোকে পরামর্শ দিন উস্তাদ।এখন আমার কিরকম সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।আমার স্বামী যেমনটা চান তেমনটি করা উচিত হবে কি,গোনাহগার হব কিনা? অথবা স্বামীর গোনাহ হবে কিনা,উনার এমন দাবী ইসলাম গ্রহন করে কিনা ইত্যাদি???

1 Answer

0 votes
by (678,880 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


শরীয়ত স্ত্রীর উপর এমন কোনো দায়িত্ব দেয়নি,যাতে তাকে ইনকাম করতে হবে।
স্ত্রীর ভরণ-পোষণ স্বামীর উপর সর্বাবস্থায় ফরয, স্ত্রীর নিজের সম্পদ থাকুক বা না থাকুক।
,
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
 
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ ۚ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ ۚ
 
পুরুষেরা নারীদের অভিভাবক, ঐ (বিশেষত্বের) কারণে, যার দ্বারা আল্লাহ তাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং ঐ সম্পদের কারণে, যা তারা ব্যয় করেছে। সুতরাং সৎ নারীরা হল অনুগত, (স্বামীর) অবর্তমানে (নিজের সতিত্ব ও স্বামীর সম্পদ) রক্ষাকারী, আল্লাহ রক্ষা করার কারণে ... -সূরা নিসা : ৩৪
 
এখানে  قَوَّامُونَ  -এর তরজমা করা হয়েছে ‘অভিভাবক’। মুফাসসিরীনের ব্যাখ্যামতে তা হচ্ছে,
 
শাসন ও ব্যবস্থায়ন এবং রক্ষা ও নিরাপত্তাবিধানের মাধ্যমে নারীর দেখভাল করা এবং আদেশ ও নিষেধের মাধ্যমে তার অবস্থার সংশোধন করা, যেমন শাসকগণ প্রজাসাধারণের দেখভাল করে। তো পুরুষ হচ্ছে নারীর প্রধান ও উপরস্থ;নারীর শাসক ও সংশোধক, যদি সে বেঁকে যায়।-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৮৮; আহকামুল কুরআন ইবনুল আরাবী ২/৪১৬; তাফসীরে কাশশাফ ১/৫০৫; তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/৪৯১
 
এই আয়াতে স্ত্রীর উপর স্বামীর অভিভাবকত্বের দুটো কারণ বলা হয়েছে : প্রথমত দৈহিক শক্তি-সামর্থ্য ও বিচার-বিচক্ষণতার মতো গুণাবলি, দ্বিতীয়ত মোহরানা ও ভরণ-পোষণের জন্য ব্যয়বহন।
 
এই আয়াতে ‘পুরুষের ব্যয়কৃত সম্পদ’ মানে স্ত্রীর মোহরানা, খোরপোষ ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ, কুরআন ও সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী যা বহন করা অবশ্যকর্তব্য। এ আয়াত প্রমাণ করে, স্ত্রীর নাফাকা ও খোরপোষ স্বামীর উপর ফরয। -তাফসীর ইবনে কাছীর ১/৪৯২; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৮৮
 
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ عَمْرِو بْنِ الأَحْوَصِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّهُ، شَهِدَ حَجَّةَ الْوَدَاعِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَذَكَّرَ وَوَعَظَ فَذَكَرَ فِي الْحَدِيثِ قِصَّةً فَقَالَ " أَلاَ وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا… أَلاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ " .
 
সুলাইমান ইবনু আমর ইবনুল আহওয়াস (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ
বিদায় হজ্জের সময় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং ওয়াজ-নাসীহাত করলেন। এ হাদীসের মধ্যে বর্ণনাকারী একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ নাও। ... জেনে রাখ! তোমাদের প্রতি তাদের অধিকার এই যে, তোমরা তাদের উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে। (সুনানে তিরমিযী ১১৬৩)
 
হযরত আমর ইবনুল আহওয়াস রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
সাবধান, তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের উপর রয়েছে কিছু অধিকার, আর তোমাদের স্ত্রীদের জন্যও তোমাদের উপর রয়েছে কিছু অধিকার। তোমাদের অধিকার এই যে, স্ত্রীরা কোনোভাবেই তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে পদার্পণের সুযোগ দিবে না, যাকে তোমাদের পছন্দ নয়। এবং তোমাদের ঘরে এমন কাউকে প্রবেশের অনুমতি দিবে না, যাকে তোমাদের অপছন্দ।

সাবধান, তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যে, খোরপোষের বিষয়ে তাদের প্রতি সদাচার করবে।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৬৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৮৫১

মুআবিয়া কুশাইরী রাহ. বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! স্ত্রীদের বিষয়ে আমাদের প্রতি আপনার আদেশ কী? তিনি বললেন-

তোমরা যেমন খাও তাদেরকেও তেমন খাওয়াও, তোমরা যেমন পর, তাদেরকেও তেমন পরাও। তাদেরকে প্রহার করো না ও কটু কথা বলো না।-সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৪১৬৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২১৪২

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
আপন যদি ফ্রিল্যান্সিং শিখে বৈধ ভাবে টাকা ইনকাম করেন,সেক্ষেত্রে নিজ পরিবারকে হেল্প করতে পারেন,সাদাকাহ করতে পারেন,স্বামীকেও হেল্প করতে পারেন।
তবে কোনোটিই আপনার উপর শরীয়ত কর্তৃক আবশ্যক নয়।
সম্পূর্ণ আপনার ইখতিয়ারধীন।

এমন নয় যে স্বামীকে হেল্প করতেই হবে,বা নিজ পরিবারকে হেল্প করতেই হবে।
বিষয়টি এমন নহে।

আপনার ইচ্ছা,আপনি স্বামীকে হেল্প করতেও পারেন,নাও করতে পারেন।

স্বামী এর জন্য আপনাকে চাপ দিতে পারবেনা।

সংসারের জন্য খরচ করলেও ছওয়াব পাবেন,পিতা মাতাকে দিলেও ছওয়াব পাবেন,সাদাকাহ করলেও ছওয়াব পাবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...