আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
2,566 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (5 points)
আসসালামুআলাইকুম, হজরত আমি জানতে চাচ্ছিলাম যে তালিবে ইলম কাকে বলে?
একজন মাওলানা ও একজন মুফতির মাঝের পার্থক্য কী?
যারা আমাদের IOM থেকে আলিম কোর্স শেষ করবে তাদের কি আমরা আলেমে দ্বীন/আলেম বলতে পারব?
জাযাকাল্লাহ খাইরান ।

1 Answer

0 votes
by (574,320 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

ইলম দ্বারা উদ্দেশ্য দ্বীনি শিক্ষা,তালেব দ্বারা উদ্দেশ্য হলো অর্জন কারী।
তার মানে যেই দ্বীনি জ্ঞানের শিক্ষার্থী হবে,সেই তালেব ইলম।

তালেবে ইলম হল যার মধ্যে তলব আছে জ্ঞান অর্জনের, পিপাসা আছে যেমন পিপাসার্থ ব্যক্তির পানির তীব্র চাহিদা হয়। তালাব হচ্ছে পিপাসা। ইলম অর্জনের পিপাসা যার মধ্যে আছে তার শুধু একটি চিন্তা থাকা দরকার সেটা হলো ইলম। তলবের পিপাসা এমন হতে হবে যতক্ষণ ইলম অর্জন না হয়, ততক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। ইলমের পিপাসায় কাতর হয়ে যাওয়া।

দ্বীনী ইলম অর্জনের সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, আলিমগণের নিকট থেকে ইলম অর্জন করা।

হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বললেন-
خُذُوا الْعِلْمَ قَبْلَ أَنْ يَذْهَبَ
‘ইলম অর্জন কর তা বিদায় নেওয়ার আগে’। সাহাবীগণ আরয করলেন-
وَكَيْفَ يَذْهَبُ الْعِلْمُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ، وَفِينَا كِتَابُ اللَّهِ؟
আল্লাহর নবী! ইলম কীভাবে বিদায় নেবে, আমাদের মাঝে তো রয়েছে আল্লাহর কিতাব?
বর্ণনাকারী বলেন, এ কথায় তিনি রুষ্ট হলেন। এরপর বললেন-
ثَكِلَتْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ أَوَلَمْ تَكُنِ التَّوْرَاةُ وَالْإِنْجِيلُ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ، فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمْ شَيْئًا؟ إِنَّ ذَهَابَ الْعِلْمِ أَنْ يَذْهَبَ حَمَلَتُهُ، إِنَّ ذَهَابَ الْعِلْمِ أَنْ يَذْهَبَ حَمَلَتُهُ
তোমাদের  মরণ হোক! বনী ইসরাইলের মাঝে কি তাওরাত ও ইঞ্জীল ছিল না, কিন্তু এতে তো তাদের কোনোই উপকার হল না! ইলমের প্রস্থানের অর্থ তার বাহকগণের প্রস্থান। -মুসনাদে আহমদ ৫/২৬৬; আদদারেমী ১/৮৬, হাদীস ২৪৫

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ
যে কেউ ইলমের খোঁজে কোনো পথে চলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। -মুসনাদে আহমদ ১৪/৬৬

আলেমের সংজ্ঞা
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ
নিশ্চয়ই তাঁর বান্দাদের (মধ্যে) আলেমগণই আল্লাহকে সত্যিকার অর্থে ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিশালী ও ক্ষমাশীল। [আল-ফাতিরঃ ২৮]

এ আয়াতের ব্যাপারে ইমাম কুরতুবী রহঃ বলেন, (فَمَنْ عَلِمَ أَنَّهُ عَزَّ وَجَلَّ قَدِيرٌ أَيْقَنَ بِمُعَاقَبَتِهِ عَلَى الْمَعْصِيَةِ) আলেম তারাই যারা আল্লাহর ক্ষমতার ব্যাপার জ্ঞান রাখেন। তারা আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে কোনো সন্দেহের মধ্যে নেই (বান্দার অপরাধ যা-ই হোক না কেন)।

আল-রাবি’ বর্ণনা করেন যে ইবন আব্বাস বলেন, (مَنْ لَمْ يَخْشَ اللَّهَ تَعَالَى فَلَيْسَ بِعَالِمٍ) যে আল্লাহ (ও তার শাস্তি)-কে ভয় করেনা সে আলেমই নয়।
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হে ইলমের বাহকগণ! তোমরা আমল করো। কেননা প্রকৃত আলেম ঐ ব্যক্তি যে ইলম অনুযায়ী আমল করে। (সুনানে দারেমী-৩৯৪)

আলেম শব্দের শাব্দিক অর্থ হল জ্ঞানী। কিন্তু প্রতিটি সমাজ ও রাষ্ট্রে শব্দের আলাদা একটি পারিভাষিক অর্থ থাকে। যে এলাকায় উক্ত শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সে এলাকায় সে শব্দটি দিয়ে উক্ত পারিভাষিক অর্থটিই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। শাব্দিক অর্থ নয়।

যেমন শায়েখ। শায়েখ শব্দের অর্থ হল বয়স্ক, বুড়ো। কিন্তু আরবে এর দ্বারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত,ডিগ্রিপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বুঝানো হয়ে থাকে। 

আরবে যেমন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত এবং ডিগ্রিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের শায়েখ বলা হয়। তেমনি আমাদের উপমহাদেশে আলেম বলতে এমনি দ্বীনী প্রতিষ্ঠান থেকে কুরআন, সুন্নাহ ও ফিক্বহে ইসলামী সম্পর্কে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত এবং ডিগ্রিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আলেম বলা হয়ে থাকে।
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত যে ব্যাক্তি IOM থেকে আলিম কোর্স শেষ করবে তাকে আমরা আলেম মানে জ্ঞানি অর্থে আলেমে দ্বীন/আলেম বলতে পারবো।

মুফতি (আরবি: مفتي) হলেন একজন ইসলামি পন্ডিত যিনি ইসলামি আইনশাস্ত্রের বিশদ ব্যাখ্যা এবং ইসলামের আলোকে বিভিন্ন ফতোয়া প্রদান করেন।

একজন ব্যক্তি মুফতি হতে গেলে প্রধানত কয়েকটি ধাপে যোগ্য হতে হয় এবং এই যোগ্যতা ইসলামি পন্ডিতদের দ্বার নিশ্চিতকৃত হতে হয়। তাকে নিন্মোক্ত জিনিসসমূহ জানতে হয় একা প্রমাণের জন্য যে সে ফতোয়া দেওয়ার যোগ্য:

★আরবি ভাষায় অভিজ্ঞ
★কোরআন ও হাদীস শাস্ত্রে পারদর্শী
★উসুল আল ফিকহ শাস্ত্রের পারদর্শী
★সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন।
এই জন্যই কোনো অভিজ্ঞ মুফতীর অধিনে থেকে কিছু বছর লেখাপড়া,ফতোয়ার তামরীন,ইস্তেফতার জবাব ইত্যাদি লিখে যোগ্যতাসম্পন্য হতে হয়।   

★মাওলানা
শব্দটি মূলত দুটি শব্দ (তথাمولا+نا) যোগে গঠিত।‘মাওলা’ শব্দের অনেকগুলো অর্থ রয়েছে। যেমন:

প্রভূ,বন্ধু,সাহায্যকারী,মনিব,দাস,চাচাতো ভাই,প্রতিনিধি,অভিভাবক,নিকটবর্তী,আত্মীয়,নেতা,গুরু,প্রতিপালক,সর্দার
প্রেমিক,প্রতিবেশী,আনুগত্য,প্রার্থনা,নীরবতা,ইবাদত,দণ্ডায়মান,জাহান্নাম ইত্যাদি। 

পবিত্র কুরআন শরিফে প্রায় ৪টি অর্থে মাওলা শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন:
১.সূরা বাকারার ২৮৫ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে: ﺍﻧﺖ ﻣﻮﻻﻧﺎ ﻓﺎﻧﺼﺮﻧﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻘﻮﻡ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮﻳﻦ’ এখানে শব্দটি অভিভাবক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
২.সূরা হাদীদের ১৫ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে: ﻓَﺎﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻟَﺎ ﻳُﺆْﺧَﺬُ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﻓِﺪْﻳَﺔٌ ﻭَﻟَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﻣَﺄْﻭَﺍﻛُﻢُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭُ ﻫِﻲَ ﻣَﻮْﻟَﺎﻛُﻢْ ﻭَﺑِﺌْﺲَ ﺍﻟْﻤَﺼِﻴﺮُ এখানে শব্দটি আবাস্থল অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
৩.সূরা মুহাম্মাদের ১১নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে: ذلك بأن الله مولى الذين ..آمنوا. এখানে শব্দটি বন্ধু অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
৪.সূরা তাহরীমের ৪নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে: والله مولاكم... এখানে সহযোগী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

আর তাছাড়া উর্দু ভাষায় মাওলানা শব্দটি উস্তাদ ও আলেমে দ্বীন অর্থেও ব্যবহৃত হয়।  আমরা যেহেতু এই শব্দের ব্যবহার উর্দুভাষীদের থেকে পেয়েছি, তাই সাধারণত মাওলানা দ্বারা এই দুই অর্থই উদ্দেশ্য করা হয়ে থাকে।

মাওলানা (مولانا একটি সম্মানসূচক উপাধি যা মুসলিম ধর্মীয় নেতার নামের শুরুতে যুক্ত করা হয়। 

মূলত মধ্য এশিয়া ও ভারত উপমহাদেশে মাদ্রাসা বা দারুল উলুম বা কোনো ইসলামি পন্ডিতের অধীনে পড়াশোনা করা দাওরায়ে হাদীস  পাশ ব্যক্তিকে সম্বোধনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (5 points)
আপনার সুন্দর ও আন্তরিক উত্তরের প্রদানের জন্য জাযাকাল্লাহু খাইরান উস্তাদ।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...