আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
219 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (12 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম।
পিতা তার জীবদ্দশায় থাকা অবস্থায় বর্তমানে তার সমস্ত সম্পত্তি তার নিজের ছেলেমেয়েদের না দিয়ে ভাইয়ের ছেলেদের দিয়ে দিতে চাচ্ছে। এক্ষেত্রে তার সন্তানেরা তার কাছ থেকে জোর করে সম্পত্তি পেতে চাচ্ছে আর বাধা দিচ্ছে নিজের ভাইয়ের ছেলেদের সম্পত্তি না দেবার জন্য। প্রশ্ন হলো-

১)পিতা তার সন্তানদের বঞ্চিত করে নিজের সম্পত্তি তার ভাইয়ের ছেলেদের দিয়ে দেয়া কি বৈধ হচ্ছে?
২) সন্তানেরা যে বাঁধা দিচ্ছে সেটা কি সন্তানদের জন্য বৈধ?

৩) "দেয়ালে লাথি দিয়ে দুই হাত পিছনে নিয়ে যেতে পারলে কী দিবা?" আরেকজন বললো- দেয়ালকে তো পিছনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না" যদি পারো এই মানিব্যাগ দিয়ে দিব বা এতো টাকা দিবো" - অপরজন দেয়ালে লাথি মেরে নিজের দুই হাত পিছনে নিয়ে গিয়ে বললো-এইবার টাকা দাও। অপরজন বললো- কই,তুমি তো দেয়াল নিলা না- তখন অপর ব্যক্তি বললো, আমি তো দেয়াল নিয়ে যাবো বলি নাই, হাত নিয়ে যাবো বলেছি। অতঃপর সে টাকাটা নিয়ে নিলো। অপর বেচারা ধোঁকা খেয়ে টাকাটা দিয়ে দিলো।
প্রশ্ন হলো- এহেন কর্মকান্ড কি জায়েজ? তার এভাবে কথায় ধোয়াসা েরেখে টাকা নেয়া কি বৈধ হবে?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
ব্যক্তি জীবিত এবং সুস্থ্য থাকা অবস্থায় তার মালিকানাধীন সম্পদ যাকে ইচ্ছে দান করতে পারে। যেখানে ইচ্ছে খরচ করতে পারে। এতে তার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।

ব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় তার অর্জিত সম্পদের একক মালিকানা তার হাতেই থাকে। তাতে যাচ্ছেতাই হস্তক্ষেপের অধিকার তার রয়েছে। এতে কেউ হক দাবী করার অধিকার রাখে না। হ্যা, মৃত্যুর পরের কথা ভিন্ন। তখন শরয়ী নীতিমালা অনুপাতে সম্পদ বন্টন করতে হয়।

তবে মুস্তাহাব পদ্ধতি একটু ভিন্নঃ

ইসলামের উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী যদিও ছেলে-মেয়ের প্রাপ্ত সম্পদে বৈষম্যের বিষয়টি স্বীকৃত এবং এই বিধান মহান রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকেই প্রদত্ত, কিন্তু হেবাসূত্রে সম্পদ বণ্টনের মাসআলা এর থেকে ভিন্ন। এখানে বৈষম্যের সুযোগ নেই। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যদি তার জীবদ্দশায় নিজ সন্তানদের মাঝে সম্পদ বণ্টন করে তাহলে তার জন্য সব ছেলে-মেয়ের মাঝে সমানহারে সম্পদ বণ্টন করা মুস্তাহাব। 
,

ইমাম আবু ইউসুফ রহ. বলেছেন, স্বাভাবিকভাবে সন্তানদের মাঝে সমানভাবে সম্পদ বণ্টন করা মুস্তাহাব হলেও যদি পিতার পক্ষ থেকে কোনো সন্তানের ক্ষতিসাধনের ইচ্ছা থাকে তখন সমানভাবে সম্পদ বণ্টন করা ওয়াজিব।(ফাতাওয়া আলমগীরী ৪/৩৯১; উমদাতুল কারী ৬/১৪৬ বৈরুত)

  النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ أبَاهُ أتَى بِهِ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: إِنِّي نَحَلْتُ ابْنِي هَذَا غُلاَماً كَانَ لِي، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَكُلَّ وَلَدِكَ نَحَلْتَهُ مِثْلَ هَذَا ؟» فَقَالَ: لاَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: فَأَرْجِعهُ وَفي رِوَايةٍ: فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَفَعَلْتَ هذَا بِوَلَدِكَ كُلِّهِمْ ؟ قَالَ: لاَ، قَالَ: اِتَّقُوا الله وَاعْدِلُوا فِي أَوْلاَدِكُمْ فَرَجَعَ أَبِي، فَرَدَّ تِلْكَ الصَّدَقَةَ . وفي روايةٍ : فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «يَا بَشيرُ أَلَكَ وَلَدٌ سِوَى هَذَا ؟» فَقَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «أكُلَّهُمْ وَهَبْتَ لَهُ مِثْلَ هذَا ؟» قَالَ: لاَ، قَالَ: فَلاَ تُشْهِدْنِي إِذاً فَإِنِّي لاَ أَشْهَدُ عَلَى جَوْرٍ وفي روايةٍ : «لاَ تُشْهِدْنِي عَلَى جَوْرٍ» . وفي رواية : «أَشْهِدْ عَلَى هذَا غَيْرِي !» ثُمَّ قَالَ: «أَيَسُرُّكَ أَنْ يَكُونُوا إِلَيْكَ فِي البِرِّ سَواءً؟» قَالَ: بَلَى، قَالَ: «فَلا إِذاً» . متفق عليه 

 নু’মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তাঁর পিতা তাঁকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে হাজির হয়ে বললেন, ‘আমি আমার এই ছেলেকে একটি গোলাম দান করেছি। [কিন্তু এর মা আপনাকে সাক্ষী রাখতে বলে।]’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তোমার সব ছেলেকেই কি তুমি এরূপ দান করেছ?’’ তিনি বললেন, ‘না।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তাহলে তুমি তা ফেরৎ নাও।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমার সব ছেলের সঙ্গেই এরূপ ব্যবহার দেখিয়েছ?’’ তিনি বললেন, ‘না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা কর। সুতরাং আমার পিতা ফিরে এলেন এবং ঐ সাদকাহ [দান] ফিরিয়ে নিলেন।’’

আর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে বাশীর! তোমার কি এ ছাড়া অন্য সন্তান আছে?’’ তিনি বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ [রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, ‘‘তাদের সকলকে কি এর মত দান দিয়েছ?’’ তিনি বললেন, ‘জী না।’ [রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, ‘‘তাহলে এ ব্যাপারে আমাকে সাক্ষী মেনো না। কারণ আমি অন্যায় কাজে সাক্ষ্য দেব না।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আমাকে অন্যায় কাজে সাক্ষী মেনো না।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘এ ব্যাপারে তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে সাক্ষী মানো।’’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি এ কথায় খুশী হবে যে, তারা তোমার সেবায় সমান হোক?’’ বাশীর বললেন, ‘জী অবশ্যই।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে এরূপ করো না।’’ 

(সহীহুল বুখারী ২৫৮৬, ২৫৮৭, ২৬৫০, মুসলিম ১৬২৩, তিরমিযী ১৩৬৭, নাসায়ী ৩৬৭২-৩৬৮৫, আবূ দাউদ ৩৫৪২, ইবনু মাজাহ ২৩৭৫, ২৩৭৬, আহমাদ ১৭৮৯০, ১৭৯০২, ১৭৯১১, ১৭৯৪৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৭৩)

আরো জানুনঃ 
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত  সন্তানদের বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে এমনটি করে থাকলে গুনাহগার হবে। 
আখেরাতে এর জন্য তাকে  আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।  
তবে এমনভাবে তার ভাইয়ের ছেলেদের দিলে ভাইয়ের ছেলেরা মালিক হয়ে যাবে।
,
(০২)
সন্তানেরা বাবার কাছ থেকে উত্তম আখলাক দেখানোর মাধ্যমে চাইতে পারে,তবে বাধা দিতে বা জোড় করতে পারবেনা।
,
(০৩)
এই কর্মকান্ড গুলো বাজীর আওতায় পড়ে,যাতে অনেক সময়েও ধোকা থাকে,তাই এগুলো নিষিদ্ধ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...