(১)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তালাক প্রদানের নিয়তেই উক্ত বাক্য বলে থাকে,সেক্ষেত্রে তালাক হবে।
নতুবা তালাক হবেনা।
ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীতে আছেঃ-
الفتاوى الهندية (8/ 157)
"وَلَوْ قَالَ: امْرَأَتُهُ الْحَبَشِيَّةُ طَالِقٌ، وَلَا نِيَّةَ لَهُ فِي طَلَاقِ امْرَأَتِهِ، وَامْرَأَتُهُ لَيْسَتْ بِحَبَشِيَّةٍ لَا يَقَعُ عَلَيْهَا، وَعَلَى هَذَا إذَا سَمَّى بِغَيْرِ اسْمِهَا وَلَا نِيَّةَ لَهُ فِي طَلَاقِ امْرَأَتِهِ، فَإِنْ نَوَى طَلَاقَ امْرَأَتِهِ فِي هَذِهِ الْوُجُوهِ طَلُقَتْ امْرَأَتُهُ، كَذَا فِي الذَّخِيرَةِ".
সারমর্মঃ-
কেহ যদি বলে,তার হাবশী স্ত্রী তালাক,আর তার স্ত্রীকে তালাক প্রদানের নিয়ত না থাকে,আর তার স্ত্রী হাবশী না হয়,তাহলে তার স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হবেনা।
যদি স্বামী স্ত্রীর নাম ব্যাতিত অন্য নাম বলে,আর তার স্ত্রীকে তালাক প্রদানের নিয়ত না থাকে,তাহলেও তালাক হবেনা।
তবে এসব ছুরতে যদি নিজ স্ত্রীকে তালাক প্রদানের নিয়ত করে থাকে,সেক্ষেত্রে তালাক পতিত হবে।
البحر الرائق شرح كنز الدقائق (3/ 273)
"ولو قال: امرأته الحبشية طالق، وامرأته ليست بحبشية لا يقع ... وفي المحيط: الأصل أنه متى وجدت النسبة وغير اسمها بغيره لا يقع؛ لأن التعريف لا يحصل بالتسمية متى بدل اسمها؛ لأن بذلك الاسم تكون امرأة أجنبية، ولو بدل اسمها وأشار إليها يقع". (البحر الرائق شرح كنز الدقائق (3/ 273)
সারমর্মঃ-
কেহ যদি বলে,তার হাবশী স্ত্রী তালাক,আর তার স্ত্রীকে তালাক প্রদানের নিয়ত না থাকে,আর তার স্ত্রী হাবশী না হয়,তাহলে তার স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হবেনা।
,,, যদি স্ত্রীর নাম ব্যাতিত অন্য দিকে নিসবত করা হয়,তাহলে তালাক পতিত হবেনা। যখন নাম পরিবর্তন করবে,তখন তার স্ত্রীর পরিচিতি লাভ হবেনা।
কেননা ঐ নাম দ্বারা অপরিচিত মহিলা হতে পারে।
যদি কেহ স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে,আর তার স্ত্রীর দিকেই ইশারা করে,সেক্ষেত্রে তালাক পতিত হবে।
(২) একজন যোগ্য মুফতি সাহেবের নিকট ফতোয়া নেয়ার পর সেখানে দ্বিমত করা ঠিক হবে না।
কয়েকজন মুফতি সাহেবের নিকট ফতোয়া নেয়ার পরো মনের ভিতর ওয়াসওয়াসা আসে..যদি উনি কোনো ভূল মাসালা দিয়ে থাকেন তখন!!আল্লাহ যদি আমাকে পাকড়াও করে...এমন মনোভাব তো আসবেই।সেজন্য আপনি একজন আলেমের কাছ থেকেই ফাতাওয়া নিবেন। একাধিক আলেমের কাছ থেকে ফাতাওয়া নেওয়া কখনো জায়েয হবে না।
(৩)
একটা মাসালায় আলেমদের মতানৈক্য আছে।
জমহুর আলেমরাও মতবিরোধ করেছে,সেখানে সেখানে ফতোয়া কার উপর,সেটি মানতে হবে।
সেটি জানা না গেলে যার কথার পক্ষে দলিল আছে,তার ফতোয়া মানবেন।
সকলের দলিল থাকলে যার দলিল বেশি স্পষ্ট, সেটি মানবেন।
(এগুলো নির্ধারনের জন্য বিজ্ঞ মুফতী সাহেবের স্বরনাপন্ন হবেন।)
সকলের দলিল স্পষ্ট হলে বা কাহারো কথার দলিল উল্লেখ না থাকলে সেখানে আপনি ঐ আলেম সাহেবের ফাতাওয়াটা মানবেন, যাকে আপনার কাছে বিশ্বস্ত মনে হবে।
(৪)
দুধ খাওয়ার সময় সাথে সাথেই দুধ তুলে দিলে সেটি নাপাক হবেনা।
(৫)
শরীয়তের বিধান হলো ওয়াতনে আসলী (স্থায়ী নিবাস) তে এক দিনের জন্য গেলেও পুরো নামাজ পড়তে হবে।
ব্যক্তি নিজের স্থায়ী নিবাসে গেলে কখনো মুসাফির হয়না। স্থায়ী নিবাস বলে এমন স্থানকে-“যেখানে ব্যক্তির বসবাসের জন্য স্থায়ী গৃহ থাকে, স্ত্রী সন্তান নিয়ে যেখানে সর্বদার জন্য থাকার নিবাস হয়”।
শরীয়তের বিধান হলো কোন স্থানে গিয়ে সেখানে যদি কমপক্ষে পনের দিন থাকার নিয়ত না করে, তাহলেও কসর পড়তে হবে। বেশি দিন থাকার নিয়ত করলে কসর করতে পারবে না।
৭৮ কিলোমিটার হল সফরের দূরত্ব। এর কম নয়। সুতরাং কেউ যদি ৭৮ কিলোমিটার দূরত্বের সফরের নিয়তে বের হয় কেবল সেই ব্যক্তি কসর পড়তে পার। এরচে’কম দূরত্বের সফরের জন্য কসর পড়া জায়েজ নয়।
★বিস্তারিত জানুনঃ-
সেক্ষেত্রে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ কসর করতে হবে। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ
‘আর যখন তোমরা যমীনে সফর করবে, তখন তোমাদের নামাজ কসর করাতে কোনো দোষ নেই।’ [সূরা নিসা, আয়াত: ১০১]
হাদিস শরীফে এসেছে,
عِيسَى بْنُ حَفْصِ بْنِ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ صَحِبْتُ ابْنَ عُمَرَ فِى طَرِيقٍ – قَالَ – فَصَلَّى بِنَا رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ أَقْبَلَ فَرَأَى نَاسًا قِيَامًا فَقَالَ مَا يَصْنَعُ هَؤُلاَءِ قُلْتُ يُسَبِّحُونَ. قَالَ لَوْ كُنْتُ مُسَبِّحًا أَتْمَمْتُ صَلاَتِى يَا ابْنَ أَخِى إِنِّى صَحِبْتُ رَسُولَ اللَّهِ – ﷺ – فِى السَّفَرِ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ أَبَا بَكْرٍ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ عُمَرَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَصَحِبْتُ عُثْمَانَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَقَدْ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ (لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
ইবনে উমর রাযি. বলেন, নিশ্চয় আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সফর করেছি, তিনি মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি আবু বকর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও আমরণ সফরে ২ রাকাতই পড়েছেন। আমি উমর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি তিনি মৃত্যু পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি উসমান রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ এর মাঝে রেখেছি উত্তম আদর্শ। (মুসলিম ১৬১১)
আরো জানুনঃ
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
ছেলেরা শশুরবাড়ি তে কছর করবে যদি সফরের দূরত্ব পরামাণ বা তার চেয়ে বেশি হবে।
মেয়েরা তার শশুর বাড়িতে স্থায়ী ভাবে থাকার নিয়ত না করলে,বরং তারা যদি পরিবার সহ অন্যত্রে থাকে,আর সেখানেই স্থায়ী বাসা তাদের থাকে,এবং স্থায়ী ভাবে সেখানেই তার স্বামী থাকার নিয়ত করে,সেক্ষেত্রে সেই স্থায়ী বাসা হতে সে স্ত্রী শশুর বাড়িতে আসলে, সফরের দূরত্বে হলে ও ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে কসর আদায় করবে।
আর এ সমস্ত শর্ত পাওয়া না গেলে পূর্ণ নামাজই আদায় করবে।
(৬)কেউ তার স্ত্রী কে বলল,
"তুমি যদি তোমার বাবার বাসায় যাও তাহলে তালাক" এখন সে যদি বাসায় না যায় এবং তার বাবা যদি মেয়ের বাসায় আসে এবং ফোনে কথা বলে তাহলে তালাক হবে না।
এক্ষেত্রে যদি মুখে সে বাসায় যাওয়ার কথার উপর শর্ত দিলো কিন্তু সে নিয়্যাত করলো বা চাইলো বা মনে আসলো যে বাবার সাথে কথা বললেও তালাক।
এখন এই নিয়্যাত ধর্তব্য হবেনা।
(৭)
আপনি যে মাযহাবকে অনুসরণ করে ধাকেন, সেই মাযহাবের ফাতাওয়াই আপনি গ্রহণ করবেন। আপনি যদি হানাফি ফিকহকে গ্রহণ করে থাকেন,তাহলে অন্যত্র মাস'আলা জিজ্ঞাসার আপনার কোনো প্রয়োজনিয়তা নাই।