আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
3,707 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (45 points)
আস সালামু আলাইকুম,
১.জীবিত অবস্থায় সম্পত্তি সন্তানদের মধ্যে বন্টনের নিয়ম কি?

২. কেউ যদি জীবিত অবস্থায়  তার সম্পত্তি কিছু অংশ বা সিংহভাগ অংশ তার মেয়েদের না দিয়ে ছেলেদের দেয় তা কি জায়েজ হবে?

1 Answer

+1 vote
by (565,890 points)
edited by
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
 بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
ব্যক্তি জীবিত এবং সুস্থ্য থাকা অবস্থায় তার মালিকানাধীন সম্পদ যাকে ইচ্ছে দান করতে পারে। যেখানে ইচ্ছে খরচ করতে পারে। এতে তার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।

ব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় তার অর্জিত সম্পদের একক মালিকানা তার হাতেই থাকে। তাতে যাচ্ছেতাই হস্তক্ষেপের অধিকার তার রয়েছে। এতে কেউ হক দাবী করার অধিকার রাখে না। হ্যা, মৃত্যুর পরের কথা ভিন্ন। তখন শরয়ী নীতিমালা অনুপাতে সম্পদ বন্টন করতে হয়।

তবে মুস্তাহাব পদ্ধতি একটু ভিন্নঃ
ইসলামের উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী যদিও ছেলে-মেয়ের প্রাপ্ত সম্পদে বৈষম্যের বিষয়টি স্বীকৃত এবং এই বিধান মহান রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকেই প্রদত্ত, কিন্তু হেবাসূত্রে সম্পদ বণ্টনের মাসআলা এর থেকে ভিন্ন। এখানে বৈষম্যের সুযোগ নেই। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যদি তার জীবদ্দশায় নিজ সন্তানদের মাঝে সম্পদ বণ্টন করে তাহলে তার জন্য সব ছেলে-মেয়ের মাঝে সমানহারে সম্পদ বণ্টন করা মুস্তাহাব। 

মেয়েকেও ছেলের সমান সম্পদ দিবে। জুমহুর উলামায়ে কেরাম বলেছেন, সম্পদ বণ্টনে ছেলে-মেয়ের মাঝে বৈষম্য না করার বিষয়টি শরয়ী দলীলের আলোকে অধিক শক্তিশালী এবং অগ্রগণ্য এবং এর ওপরই ফতোয়া।(ফাতাওয়া আলমগীরী ৪/৩০১; আলবাহরুর রায়েক ৭/৪৯০; তাকমেলায়ে ফাতহুল মুলহিম ২/৭৫; কিতাবুন নাওয়াযেল ১২/১৮৫, ১৮৭) 

وفى الهندية- ولو وهب رجل شيئا لأولاده في الصحة وأراد تفضيل البعض على البعض في ذلك لا رواية لهذا في الأصل عن أصحابنا، وروي عن أبي حنيفة – رحمه الله تعالى – أنه لا بأس به إذا كان التفضيل لزيادة فضل له في الدين، وإن كانا سواء يكره وروى المعلى عن أبي يوسف – رحمه الله تعالى – أنه لا بأس به إذا لم يقصد به الإضرار، وإن قصد به الإضرار سوى بينهم يعطي الابنة مثل ما يعطي للابن وعليه الفتوى هكذا في فتاوى قاضي خان وهو المختار، – (الفتاوى الهندية، كتاب الهبة، الباب السادس في الهبة للصغير ٤/٣۹۱، رد المحتار-12/608)
যার সারমর্ম হলো যদি জীবিত থাকা অবস্থায় কেহ সম্পদ বন্টন করতে চায়,তাহলে দ্বীনের খাতিরে কাউকে বেশি দেওয়া জায়েয আছে।
তবে উভয়েই সমান পর্যায়ের হলে সমানভাবে সম্পদ দেওয়া উচিত,অন্যথায় মাকরুহ হবে।   

فى البيضاوى- والمالك هو المتصرف فى الأعيان  المملوكة كيف شاء الخ (تفسير بيضاوى، سورة الفاتحة- 1/7)
মালিম তার সম্পদের ভিতর যেমন ইচ্ছা,তাছাররুফ করতে পারবে।

(০২)
জীবিত অবস্থায় সম্পত্তি দিলে সেটাকে হেবা বলে, মৃত্যু বরনের পর সম্পত্তির ভাগকে মিরাছ 
বলে। 
,
হেবা এবং মিরাছ এক জিনিস নয়। হেবা হলো, কেউ তার জীবদ্দশায় সন্তুষ্টচিত্তে কাউকে কোনো সম্পদ দান করে দেয়া। আর মিরাছ হলো, কারও ইন্তেকালের পর অবধারিতভাবে তার থেকে ওয়ারিসের প্রাপ্ত সম্পদ। দু’টোর মাঝে বিস্তর পার্থক্য আছে। 

হেবার ক্ষেত্রে ব্যক্তির কিছুটা স্বাধীনতা থাকলেও মিরাছ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যক্তি শরীয়তের সীমার বাইরে যেতে পারে না। কমবেশি করতে পারে না। সে হিসেবে কোনো ব্যক্তি হেবাসূত্রে তার সম্পদ সন্তানদের মাঝে বণ্টন করার ক্ষেত্রে তার স্বাধীনতা থাকার দরকার ছিল, কমবেশি করার অধিকার পাওয়া উচিৎ ছিল, যেমনিভাবে তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে দান করার সময় তিনি স্বাধীনভাবে কমবেশি করে দিতে পারেন; কিন্তু সন্তানের বেলায় শরীয়ত পরিপূর্ণভাবে এই স্বাধীনতা দেয়নি। সান্তানদের হেবাসূত্রে সম্পদ দান করলে বৈষম্য করা অনুচিৎ। কারণ সন্তানের মাঝে বৈষম্যের মাধ্যমে ভবিষ্যতে তাদের পরস্পরে ঝগড়া লাগার সম্ভাবনা আছে। পিতার প্রতি অশ্রদ্ধা এবং অভক্তি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে কিংবা হেবার মধ্য দিয়ে কোনো সন্তানকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ খোঁজা হতে পারে। 

  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী হযরত নোমান ইবনে বশীর রাযি.  
 জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি তোমার সব সন্তানকে এভাবে দিয়েছো?’ নোমান রাযি.-এর ‘না’ উত্তর শুনে নবীজি তাকে বলেন, ‘আল্লাহকে ভয় করো এবং সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করো।’(সহীহ বুখারী : ২৫১৫; ইলাউস সুনান : ৫২৭৭)

হাদীসটির পূর্ণরুপঃ
  النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ أبَاهُ أتَى بِهِ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: إِنِّي نَحَلْتُ ابْنِي هَذَا غُلاَماً كَانَ لِي، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَكُلَّ وَلَدِكَ نَحَلْتَهُ مِثْلَ هَذَا ؟» فَقَالَ: لاَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: فَأَرْجِعهُ وَفي رِوَايةٍ: فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَفَعَلْتَ هذَا بِوَلَدِكَ كُلِّهِمْ ؟ قَالَ: لاَ، قَالَ: اِتَّقُوا الله وَاعْدِلُوا فِي أَوْلاَدِكُمْ فَرَجَعَ أَبِي، فَرَدَّ تِلْكَ الصَّدَقَةَ . وفي روايةٍ : فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «يَا بَشيرُ أَلَكَ وَلَدٌ سِوَى هَذَا ؟» فَقَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «أكُلَّهُمْ وَهَبْتَ لَهُ مِثْلَ هذَا ؟» قَالَ: لاَ، قَالَ: فَلاَ تُشْهِدْنِي إِذاً فَإِنِّي لاَ أَشْهَدُ عَلَى جَوْرٍ وفي روايةٍ : «لاَ تُشْهِدْنِي عَلَى جَوْرٍ» . وفي رواية : «أَشْهِدْ عَلَى هذَا غَيْرِي !» ثُمَّ قَالَ: «أَيَسُرُّكَ أَنْ يَكُونُوا إِلَيْكَ فِي البِرِّ سَواءً؟» قَالَ: بَلَى، قَالَ: «فَلا إِذاً» . متفق عليه 

 নু’মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তাঁর পিতা তাঁকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে হাজির হয়ে বললেন, ‘আমি আমার এই ছেলেকে একটি গোলাম দান করেছি। [কিন্তু এর মা আপনাকে সাক্ষী রাখতে বলে।]’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তোমার সব ছেলেকেই কি তুমি এরূপ দান করেছ?’’ তিনি বললেন, ‘না।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তাহলে তুমি তা ফেরৎ নাও।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমার সব ছেলের সঙ্গেই এরূপ ব্যবহার দেখিয়েছ?’’ তিনি বললেন, ‘না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা কর। সুতরাং আমার পিতা ফিরে এলেন এবং ঐ সাদকাহ [দান] ফিরিয়ে নিলেন।’’

আর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে বাশীর! তোমার কি এ ছাড়া অন্য সন্তান আছে?’’ তিনি বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ [রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, ‘‘তাদের সকলকে কি এর মত দান দিয়েছ?’’ তিনি বললেন, ‘জী না।’ [রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, ‘‘তাহলে এ ব্যাপারে আমাকে সাক্ষী মেনো না। কারণ আমি অন্যায় কাজে সাক্ষ্য দেব না।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আমাকে অন্যায় কাজে সাক্ষী মেনো না।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘এ ব্যাপারে তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে সাক্ষী মানো।’’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি এ কথায় খুশী হবে যে, তারা তোমার সেবায় সমান হোক?’’ বাশীর বললেন, ‘জী অবশ্যই।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে এরূপ করো না।’’ 

(সহীহুল বুখারী ২৫৮৬, ২৫৮৭, ২৬৫০, মুসলিম ১৬২৩, তিরমিযী ১৩৬৭, নাসায়ী ৩৬৭২-৩৬৮৫, আবূ দাউদ ৩৫৪২, ইবনু মাজাহ ২৩৭৫, ২৩৭৬, আহমাদ ১৭৮৯০, ১৭৯০২, ১৭৯১১, ১৭৯৪৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৭৩)

অন্য বর্ণনায় এসেছে হযরত নোমান ইবনে বশীর (রাযি.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা (সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে) তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করো। তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করো।’
(সহীহ বুখারী : ১/৩৫২; সুনানে আবুদাউদ : ৩৫৪৪)

তাই হেবাসূত্রে সন্তানদের মাঝে সম্পদ বণ্টন করার ক্ষেত্রে ইনসাফ এবং সমতার প্রতি লক্ষ্য রাখা খুবই জরুরী। এ জন্যই ইমাম আবু ইউসুফ রহ. বলেছেন, স্বাভাবিকভাবে সন্তানদের মাঝে সমানভাবে সম্পদ বণ্টন করা মুস্তাহাব হলেও যদি পিতার পক্ষ থেকে কোনো সন্তানের ক্ষতিসাধনের ইচ্ছা থাকে তখন সমানভাবে সম্পদ বণ্টন করা ওয়াজিব।(ফাতাওয়া আলমগীরী ৪/৩৯১; উমদাতুল কারী ৬/১৪৬ বৈরুত)

স্বাভাবিক অবস্থায় হেবাসূত্রে সন্তানকে সম্পদ দেয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য না করা মুস্তাহাব হলেও কেউ যদি বৈষম্য করে তবে তা মাকরুহ হবে, হারাম হবে না। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি কোনো সন্তানের দীনী বিষয়ে অগ্রগণ্যতার কারণে অথবা মাতা-পিতার অধিক খেদমতের কারণে তাকে সামান্য সম্পদ বাড়িয়ে দেয় তবে তা মাকরুহ হবে না। তবুও ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন, এ ক্ষেত্রেও বৈষম্য না করাই উত্তম। উল্লেখ্য, এ ধরনের বৈষম্য যদি অন্য সন্তানরা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয় তাহলে তা সর্বাবস্থায় জায়েয।(আলবাহরুর রায়েক ৭/৪৯০; কিতাবুন নাওয়াযেল ১২/২০১৮)

★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি শরয়ী কারনে  কেহ যদি জীবিত অবস্থায়  তার সম্পত্তি কিছু অংশ বা সিংহভাগ অংশ তার মেয়েদের না দিয়ে ছেলেদের দেয় তাহলে কোনো গুনাহ নেই।
,
তবে বিনা কারনে (শরয়ী কারন ব্যাতিত)  এমনটি করা মাকরুহ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...