মজা করে কবুল পড়লে কি বিয়ে হয়ে যায়?

Question

আসসালামু আলাইকুম শায়খ, মজা করে কোন প্রাপ্তবয়স্ক যুবক-যুবতী স্বজ্ঞানে যদি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে কবুল বলে,এবং আমি কোথাও শুনেছি মজা করে কবুল বললেও বিয়ে হয়ে যায়,আর এটা তারা কেউই জানতো না যে মজা করে কবুল বললেও বিয়ে হয়ে যায়।

এক্ষেত্রে কি বিয়ে হয়ে গেছে? তবে আমি শুনেছি যুবতী মেয়েদের ওলী ব্যাতীত বিবাহ হয় না।এখানে ত তারা কেবল আল্লাহকে সাক্ষী রেখেছে। দয়া করে এই বিষয় এ জানাবেন

Answer 1

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হল  আযাদ প্রাপ্ত বয়স্ক বিবেকবান দু’জন মুসলিম পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা স্বাক্ষীর সামনে পাত্র/পাত্রি প্রস্তাব দিবে আর অপরপক্ষ পাত্র/পাত্রি তা কবুল করবে। আর সাক্ষিগণ উভয়ের কথা সুষ্পষ্টভাবে শুনবে। সুতরাং বিয়ের মজলিসে সাক্ষীর উপস্থিত ছাড়া বিয়ে সহীহ হবে না।

 

হাদিস শরিফে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ ، أَنّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ لا نِكَاحَ إِلا بِوَلِيٍّ وَشَاهِدَيْ عَدْلٍ ، وَمَا كَانَ مِنْ نِكَاحٍ عَلَى غَيْرِ ذَلِكَ ، فَهُوَ بَاطِلٌ

আয়শা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্  ﷺ বলেছেন, অভিবাক ও দু’জন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষীর উপস্থিতি ব্যতিত বিয়ে শুদ্ধ হয় না। যে বিবাহ অভিবাক ও সাক্ষীর উপস্থিতি ব্যতিত হবে তা বাতিল। (সহিহ ইবন হিব্বান ৪০৭৫)

 

ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াতে রয়েছে-

فى الدر المختار- ( و ) شرط ( حضور ) شاهدين ( حرين ) أو حر وحرتين ( مكلفين سامعين قولهما معا ) (الدر المختار ، كتاب النكاح،-3/9)

অনুবাদ-বিবাহ সহীহ হওয়ার শর্ত হল শরীয়তের মুকাল্লাফ [যাদের উপর শরীয়তের বিধান আরোপিত হয়] এমন দুইজন আযাদ পুরুষ সাক্ষি বা একজন আযাদ পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষি হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল  বলার উভয় বক্তব্য স্বকর্ণে উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। {আদ দুররুল মুখতার-৩/৯, ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮}

 

বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হল মৌলিকভাবে দু’টি। যথা-

১-ইজাব কবুল হওয়া।

২-দুইজন মুসলিম প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ বা একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা উক্ত ইজাব কবুল স্বকর্ণে শুনা।

 

ব্যস উক্ত দু’টি শর্ত পাওয়া গেলেই বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায়।

যার পুরোপুরি ব্যাখ্যা হলোঃ- 

স্বামী স্ত্রীকে ইজাব তথা প্রস্তাব দিবে বা কোন ব্যক্তিকে উকিল বানিয়ে স্বামীর পরিচয় ও দেনমোহর উল্লেখ করে প্রস্তাব দিবে, আর স্ত্রী সেই প্রস্তাবকে কবুল করবে। কিংবা স্ত্রী নিজে স্বামীকে প্রস্তাব দিবে আর স্বামী তা কবুল করবে, কিংবা স্ত্রীর অনুমতিক্রমে তার উকীল গিয়ে স্বামীকে প্রস্তাব দিবে আর স্বামী তা কবুল করবে। আর উক্ত প্রস্তাব এবং কবুল বলার বিষয়টি উপস্থিত থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক দুইজন মুসলিম পুরুষ বা একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও দুইজন মহিলা স্বকর্ণে শুনবে। তাহলেই শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যাবে।

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

 

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী যতটুকু বুঝে আসছে যে, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কোনো স্বাক্ষী ছিলো না। বরং আল্লাহকে স্বাক্ষী রেখে ইজাব-কবুল করেছে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিয়ে হবে না। কারণ বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হল  আযাদ প্রাপ্ত বয়স্ক বিবেকবান দু’জন মুসলিম পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা স্বাক্ষীর সামনে পাত্র/পাত্রি প্রস্তাব দিবে আর অপরপক্ষ পাত্র/পাত্রি তা কবুল করবে। আর সাক্ষিগণ উভয়ের কথা সুষ্পষ্টভাবে শুনবে। সুতরাং বিয়ের মজলিসে সাক্ষীর উপস্থিত ছাড়া বিয়ে সহীহ হবে না।

 

উল্লেখ্য যে, হানাফী মাজহাবে প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের ওলী ছাড়াও বিয়ে সহীহ হয়ে যায়। 

Comments

জি জাযাকাল্লাহ, বুঝতে পেরেছি,,আশা করি দ্রুত উত্তর আসবে।

আরেকটা প্রশ্ন হুযুর,স্ত্রীকে যদি ভুল ক্রমে বা মজা করে, অনিচ্ছাকৃত যদি মা বলে ডেকে ফেলে তাহলে কি তালাক হয়ে যাবে?

আর যদি এই বিষয়ে সে না জেনে করে তাহলে কি তালাক হবে?

---

প্রশ্নের উত্তরটা কবে পাবো হুযুর? আমার একটু জরুরি ছিলো,,আল্লাহ মাফ করুন,,এটার উত্তর জানতে পারলে অনেকটা স্বস্তি পেতাম।

---

না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তালাক হবে না। আবার যেহেতু ভুলক্রমে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়ে গিয়েছে তাই তেমন কোন গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ। তবে জেনেশুনে স্ত্রীকে মা বলে ডাকা অনেক অনেক বড় গোনাহের কাজ।