بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
১. টাই এর সূচনা শূলের প্রতীক হিসাবে হয়েছে
কিনা, এ নিয়ে
পক্ষ-বিপক্ষের বক্তব্য ও তাহকিক-গবেষণা এতটাই দুবোধ্য ও প্রান্তিকতাপুষ্ট যে, একে যেমনিভাবে
নিশ্চিতভাবে শূলের প্রতীক বলা মুশকিল,অনুরূপভাবে ‘শূলের প্রতীক নয়’ এটাও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।
তবে অকাট্য তথ্যপ্রমাণপুষ্ট না হলেও এটি শূলের প্রতীক হিসাবে এতটাই জনশ্রুতি আছে যে,তা সত্য হওয়ার
সম্ভাবনাই প্রবল। যদি সত্য হয় তাহলে বিজাতীয়
সংস্কৃতির অনুকরণ শরীয়তের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত। হাদীস শরীফে এসেছে-‘যে ব্যক্তি
যে সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখে সে তাদের দলভুক্ত।’ (সুনানে আবু দাউদ ২/৫৫৯)
কিন্তু যেহেতু বিষয়টি অকাট্য তথ্যপ্রমাণপুষ্ট নয় ; উপরন্তু বিধর্মীদের
সাদৃশ্যতা গ্রহনের ইচ্ছা ব্যতিরেকেই এর ব্যাপক প্রচলন হয়ে পড়েছে তাই মুফতীগণ বলেন, এটা পরা একেবারে
হারাম তো বলা যাবেনা তবে সন্দেহযুক্ত বিধায় মাকরূহ হবে। তাই এর ব্যবহার এড়িয়ে চলা
কর্তব্য। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া১২/৪০৮)
২.মক্কার কাফেররা শীষ বাজানো, তালি দেয়া ইত্যাদিকে
ইবাদত মনে করতো । মুসলমানদের জন্য বিধর্মীদের ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং রীতি-নীতি অনুসরণ, অনুকরণ করা
যেহেতু নাজায়িয, তাই
হাতে তালি দেয়া এবং শীষ বাজানো কাফেরদের ধর্মীয় ঐতিহ্য হওয়ার কারণে তা অবশ্যই গোনাহের
কাজ ।
হাততালি বা করতালি দেওয়া নাজায়েজ হবে, যখন এ করতালি
ইবাদতের উদ্দেশ্যে করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا كَانَ صَلَاتُهُمْ عِندَ الْبَيْتِ
إِلَّا مُكَاءً وَتَصْدِيَةً ۚ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ
অর্থ: ‘কাবার
কাছে তাদের নামাজ বলতে শিস দেওয়া আর তালি বাজানো ছাড়া অন্য কোনো কিছুই ছিল না। অতএব
এবার নিজেদের কৃত কুফরির আজাবের স্বাদ গ্রহণ করো।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৩৫)
এ আয়াত দ্বারা আমরা জানতে পারি যে তালি দেওয়া হলো মুশরিকদের
একটি ইবাদত। শিস দেওয়াও তাদের একটি ইবাদত। সুতরাং এগুলো মুসলিম করতে পারে না। এবং ইবাদত
হিসেবে করলে তা বড় গুনাহ হবে।
আর ইবাদত হিসেবে না করে কাউকে উৎসাহ দেওয়ার তালি দেওয়া হারাম
না হলেও মাকরুহ তথা অপছন্দনীয়। কেননা করতালি মুশরিকদের একটি ইবাদত এবং অন্য ধর্মের
উৎসাহ ও অনুষ্ঠানের একটি সংস্কৃতি। এটি ইহুদি ও খ্রিস্টানদের আনন্দ প্রকাশের পদ্ধতি।
(কেফায়াতুল মুফতি : ৯/১১৬)
তা ছাড়া আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় বহু অনুষ্ঠান করেছেন
এবং বক্তৃতা ও ওয়াজ করেছেন,
কোথাও হাতে তালি দেননি। মহানবী (সা.) হাততালির পরিবর্তে মারহাবা, সুবহানাল্লাহ, মাশাআল্লাহ
অর্থাৎ তাসবিহ পাঠ করার শিক্ষা দিয়েছেন। অতএব কড়তালি বা হাত তালি না দেওয়াটাই
ভালো।
*যদি আপনি চোখ মারা দিয়ে বতর্মান প্রচলিত ছেলে মেয়ে একে অপরকে চোখ
টিপাটিপি বুঝিয়ে থাকেন। চোখ মারাতো দূরের কথা ইসলামে মেয়েদের দিকে তাকানোই নিষেধ। চোখ
আপনি ছেলে বা মেয়েকে বা কাউকে ঠাট্টা করেও মারতে পারবেন না। ইসলামে এভাবে ঠাট্টা করাও হারাম। আল্লাহু বলেন-
وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ
مِنْهَا وَمَا بَطَنَ
" অশ্লীল/
খারাপ আচরনের নিকটেও যেয়ো না তা প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে। (সূরা আনআম – ১৫১)
৩. https://ifatwa.info/7681/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ
করা হয়েছে যে, শরীয়তের বিধান অনুযায়ী চুলে দাড়িতে খেজাব দেয়া মুস্তাহাব। লাল
ও হলুদ এবং এমন লাল খেজাব যা কিছুটা কালোর দিকে ধাবিত এমন খেজাব লাগানো জায়েজ পুরুষ
মহিলা উভয়ের জন্য।
তবে কালো খেজাব লাগানো জায়েজ নয়।
হাদীস শরীফে এসেছে ,
أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عُبَيْدِ
اللَّهِ الْحَلَبِيُّ عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ وَهُوَ ابْنُ عَمْرٍو عَنْ عَبْدِ
الْكَرِيمِ عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَفَعَهُ أَنَّهُ
قَالَ قَوْمٌ يَخْضِبُونَ بِهَذَا السَّوَادِ آخِرَ الزَّمَانِ كَحَوَاصِلِ
الْحَمَامِ لَا يَرِيحُونَ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ
আব্দুর রহমান ইবন আবদুল্লাহ হালাবী (রহঃ) ... ইবন আব্বাস (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শেষ যমানায় এমন
কতক লোক হবে, যারা
কবুতরের বুকের মত কালো খিজাব লাগাবে, তারা বেহেশতের গন্ধও পাবে না। (নাসায়ী ৫০৭৪
মিশকাত ১৪৫২, গায়াতুল
মারাম ১০৭।)
أَخْبَرَنَا يُونُسُ بْنُ عَبْدِ الْأَعْلَى
قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ قَالَ أَخْبَرَنِي ابْنُ جُرَيْجٍ عَنْ أَبِي
الزُّبَيْرِ عَنْ جَابِرٍ قَالَ أُتِيَ بِأَبِي قُحَافَةَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ
وَرَأْسُهُ وَلِحْيَتُهُ كَالثَّغَامَةِ بَيَاضًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَيِّرُوا هَذَا بِشَيْءٍ وَاجْتَنِبُوا السَّوَادَ
ইউনুস ইবন আবদুল আ'লা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, মক্কা
বিজয়ের দিন আবু কুহাফাকে আনা হলে তাঁর মাথা সাগামা (সাদা রঙের ফল বিশেষ)-এর মত সাদা
ছিল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এই রংকে কোন কিছু দ্বারা
পরিবর্তিত করে দাও কিন্তু কালো রং দ্বারা নয়। (নাসায়ী ৫০৭৫ সহীহ। ইবন মাজাহ ৩৬২৪, মুখতাসার মুসলিম
১৩৪৭, সহীহাহ
৪৯৬)
বিস্তারিত জানুনঃ https://ifatwa.info/4159/
ফুকাহায়ে কেরামদের আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে,কালো কলপ একদমই
দেওয়া যাবে না। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, ৭/১৫৯,মাকতাবাতু দরুল উলূম করাচী)
কালো কলপ ব্যতীত চুলে যেকোনো কালার দেয়া যেতে পারে যদি তা কাফিরগণ
কে অনুসরণ করে না করা হয়। (যেব ও যি-নত কে শরয়ী আহকাম-৭১)আল্লাহ-ই ভালো জানেন।
আরো জানুন: https://ifatwa.info/6585/?show=6585#q6585
৪. যে
মহিলার চুল এত লম্বা যে,
কিছু অংশ কাটলে পুরুষের চুলের সাথে সাদৃশ্য হবে না তার জন্য ঐ পরিমাণ কাটা জায়েয
হবে। পক্ষান্তরে যার চুল তত লম্বা নয়; বরং অল্প কাটলেই কাঁধ সমান হয়ে যাবে
এবং পুরুষের বাবরী চুলের মতো দেখা যাবে তার জন্য অল্প করেও কাটারও অনুমোদন নেই। তবে
জটিল অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে চুল ছোট করা, এমনকি জরুরতবশতঃ
মুন্ডানোরও অনুমোদন রয়েছে। তবে সর্বাবস্থায় ফ্যাশনের অনুকরণ করা থেকে বিরত থাকা জরুরি।
উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে মহিলারা তাদের চুল কাটতে পারবে।
জ্ঞাতব্য যে, নয় বৎসর বয়স থেকে চুল রাখা জরুরী, কেননা নয় বছর
বয়স থেকেই মহিলার মধ্যে পুরুষ আকৃষ্টকারী অবয়ব সৃষ্টি হয়ে যায় এবং তখন থেকেই
মূলত পর্দা জরুরী হয়ে যায়।
তবে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণের নিমিত্তে চুল কাটা কখনো জায়েয
হবে না। কেননা হাদীসে এসেছে,
'যে
ব্যক্তি যে জাতীর অনুসরণ করবে,সে তাদের-ই অন্তর্ভুক্ত হবে।'
সুতরাং কেউ যদি এমনিতেই সৌন্দর্য গ্রহণের জন্য সামান্য চুল কর্তন
করে,তাহলে
সেটা হারাম হবে না।
এ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/3051
https://www.ifatwa.info/28511/