بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
মাতাপিতার পরামর্শেই বিয়েতে
কল্যাণ নিহিত রয়েছে। সকলের জন্য উচিত হলো মাতাপিতা
এবং পারিবারিক ভাবে প্রশ্নে উল্লেখিত বিয়ে
করা। হাদীস
শরীফে এসেছেঃ
عَنْ عَبْدِ
اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ؛ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الْأَيِّمُ
أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস
রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার।
{মুয়াত্তা মালিক,
হাদীস নং-৮৮৮,
সহীহ মুসলিম,
হাদীস নং-১৪২১,
মুসনাদে আহমাদ,
হাদীস নং-১৮৮৮,
সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস নং-২০৯৮,
সুনানে দারেমী,
হাদীস নং-২২৩৪,
সুনানে তিরমিজী,
হাদীস নং-১১০৮,
সুনানে নাসায়ী,
হাদীস নং-৩২৬০,
সহীহ ইবনে হিব্বান,
হাদীস নং-৪০৮৪,
সুনানে দারাকুতনী,
হাদীস নং-৩৫৭৬}
عَنْ أَبِي
سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ: ” جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ
اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ
أَبِي وَنِعْمَ الْأَبُ هُوَ، خَطَبَنِي إِلَيْهِ عَمُّ وَلَدِي فَرَدَّهُ،
وَأَنْكَحَنِي رَجُلًا وَأَنَا كَارِهَةٌ. فَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أَبِيهَا، فَسَأَلَهُ عَنْ قَوْلِهَا، فَقَالَ:
صَدَقَتْ، أَنْكَحْتُهَا وَلَمْ آلُهَا خَيْرًا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا نِكَاحَ لَكِ، اذْهَبِي فَانْكِحِي مَنْ شِئْتِ
হযরত সালামা বিনতে আব্দুর
রহমান রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক মেয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে এল। এসে বলল,
হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা! কতইনা উত্তম
পিতা! আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন
এক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি। এ ব্যাপারে রাসূল সাঃ তার পিতাকে
জিজ্ঞাসা করলে পিতা বলে, মেয়েটি
সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভাল নয়। তখন রাসূল
সাঃ মেয়েটিকে বললেন, “এ বিয়ে হবে না, তুমি
যাও, যাকে
ইচ্ছে বিয়ে করে নাও”। {সুনানে
সাঈদ বিন মানসূর, হাদীস
নং-৫৬৮, মুসন্নাফে
আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস
নং-১০৩০৪, মুসান্নাফে
ইবনে আবী শাইবা, হাদীস
নং-১৫৯৫৩, দিরায়া
ফী তাখরীজি আহাদিসীল হিদায়া, হাদীস নং-৫৪১}
মা-বাবাকে শ্রদ্ধা করা,
ভালবাসা,
তাঁদের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা,
কথা শোনা,
গুরুত্ব দেওয়া,
বাধ্য হওয়া শরিয়তের দৃষ্টিতে ওয়াজিব এবং
তাঁদের অবহেলা করা, নাফরমানি
করা হারাম। তবে বাবা-মা যদি অনৈতিক কাজে কিংবা অবৈধ কাজে জোর করে তাহলে বাধ্য হওয়া
যাবে না। কেননা, আল্লাহ
তাআলা বলেন,
وَإِن
جَاهَدَاكَ عَلى أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا
وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ
إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
যদি তাঁরা (পিতামাতা) তোমাদের
উপর চাপ প্রয়োগ করে আমার সাথে কাউকে শরীক করার জন্য যা (শিরক) তোমার বোধগম্য নয়,
তাহলে তুমি তাঁদের কথা অমান্য করো,
(অর্থাৎ আমি আল্লাহর সাথে কাউকে
শরীক করো না) আর পার্থিব জীবনে উৎকৃষ্ট পন্থায় তাঁদের সাথে সৎ সম্পর্ক বজায় রেখো। আর
তুমি তাঁদের পথ অনুসরণ করো যারা (আমি এক) আমার প্রতি অবিচলভাবে আকৃষ্ট রয়েছে।’ (সূরা
লুকমান ১৫)
রাসূলুল্লাহ ﷺ
বলেন,
فَإِنْ
أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ
অসৎকাজে আনুগত্য নয় ;আনুগত্য কেবলমাত্র সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে। (বুখারী
৭১৪৫ মুসলিম ১৮৪০)
হাসান বসরী রহ. বলেন,
إن منعتْه أمُّه عن العشاء في الجماعة شفقة : لم يطعها যদি মা সন্তানের প্রতি মায়া দেখিয়ে ইশার জামাতে শরিক হতে বারণ করে তাহলে এ ক্ষেত্রে
তাঁর আনুগত্য করা যাবে না। (বুখারী ১/২৩০)
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ.-কে
জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, বাবা
যদি সন্তানকে জামাতে নামায আদায় করা থেকে নিষেধ করে তাহলে কী করবে?
তিনি উত্তর দিয়েছিলেন,
এ জাতীয় ক্ষেত্রে বাবার কথা অমান্য করবে।
(গিযাউল লুবাব ১/৩৮৫)
তাঁকে আরো জিজ্ঞেস করা হয়েছিল,
এক ব্যক্তি তাঁর সন্তানকে আদেশ করেছে যে,
ফরয নামায ছাড়া কোনো নামায পড়বে না। এখন
সন্তানের করণীয় কী? তিনি
উত্তর দিয়েছেন, এই
হুকুম অমান্য করবে এবং নফল পড়বে। (গিযাউল লুবাব ১/৩৮৪)
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া
রহ. বলেন,
ويلزم
الإنسان طاعة والديه في غير المعصية وإن كانا فاسقين ، وهو ظاهر إطلاق أحمد ، فإن
شق عليه ولم يضره : وجب ، وإلا فلا
বাবা-মা ফাসেক হলেও বৈধ কাজের
ক্ষেত্রে তাঁদের বাধ্য থাকা আবশ্যক। ইমাম আহমাদ রহ.-এর বক্তব্যের উদ্দেশ্যও এটাই। আর
যদি বৈধ কাজ করতে গিয়ে সন্তানের জন্য কেবল কষ্ট হয় কিন্তু ক্ষতিকর না হয় তাহলেও তাঁদের
বাধ্য থাকা ওয়াজিব। ( আল ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৩৮১)
উক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বাবা-মায়ের
আনুগত্যের সীমারেখা সংক্ষেপে এভাবে নির্ণয় করতে পারি–
১. তাঁদের বাধ্য থাকার বিষয়টি
কেবল বৈধ কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং যদি তাঁরা ফরযে আইন,
ওয়াজিব কিংবা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বর্জন
করতে বলেন অথবা যদি তাঁরা কোনো হারাম কাজ করতে বলেন তাহলে সে ক্ষেত্রে তাঁদের আনুগত্য
করা জায়েয হবে না।
২. যদি তাঁরা নফল-মুস্তাহাব
পুরোপুরি ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন তাহলে তাঁদের এই নির্দেশ মানা যাবে না। কেননা,
এর মাধ্যমে তাঁদের ইসলামের প্রতি অবহেলা
প্রকাশ পায় এবং এই নির্দেশের মান্য করার মাঝে তাঁদের কোনো উপকার নিহিত নেই।
৩. যদি তাঁরা নফল-মুস্তাহাব
পুরোপুরি নয় বরং বিশেষ কোনো যৌক্তিক কারণে নির্দিষ্ট কোনো নফল-মুস্তাহাব ছেড়ে দেয়ার
নির্দেশ দেন তাহলে এক্ষেত্রে তাঁদের হুকুম মানা ওয়াজিব। যেমন,
সন্তানের শরীর দুর্বল তাই তাকে নফল রোজা
না রাখার নির্দেশ দিলেন কিংবা বাবা বা মায়ের কোনো প্রয়োজনে সন্তানকে নফল আমল ছেড়ে দিয়ে
ওই কাজটি করে দিতে বললেন– তাহলে এই হুকুম মানা সন্তানের
উপর ওয়াজিব।
৪. তাঁদের হুকুমকৃত কাজটি
তাঁদের জন্য উপকারী হতে হবে। সুতরাং যদি তা তাঁদের জন্য ক্ষতিকর হয় তাহলে ওই হুকুম
মান্য করা যাবে না।
৫. বাবা-মা যদি এমন কাজ করতে
বলেন যা সন্তানের পক্ষে অসম্ভব কিংবা সম্ভব তবে জীবনের ঝুঁকি আছে তাহলে সে ক্ষেত্রে
তাঁদের প্রতি বাধ্য থাকা জরুরি নয়। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, لا
ضرر ولا ضرار ক্ষতি ও ক্ষতি সাধনের কোন অনুমতি নেই। (সুনানে দারাকুতনী
৩০৭৯)
৬. উক্ত ক্ষেত্রসমূহে তাঁদের
আনুগত্য না করা মানে তাঁদের সঙ্গে অসদাচারণ করা নয়। কেননা,
উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে, পিতামাতার
সেবা ও সদ্ব্যবহারের জন্য তাঁদের মুসলমানও হওয়া জরুরী নয়।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!
প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে যদি সেই পাত্র পূর্ণ ভাবে শরীয়াহ মেনে চলে ও হারাম থেকে দূরে থাকে এবং তার
ইনকামও যদি হালাল হয় তাহলে এমতাবস্থায় উল্লেখযোগ্য কোন কারণ ছাড়া মা বাবার হুকুম অমান্য
করলে গুনাহ হবে। মাতাপিতার পরামর্শেই বিয়েতে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। সকলের জন্য উচিত হলো মাতাপিতা এবং পারিবারিক ভাবে প্রশ্নে উল্লেখিত বিয়ে করা। বর্তমান এই ফেতনার যুগে একজন প্রাপ্ত
বয়স্ক মেয়ে বিনা কারণে বিয়েতে বিলম্ব করা মোটেও উচিত নয়। তবে হ্যাঁ যদি উক্ত পাত্র
বেদ্বীন হয় বা সুস্পষ্ট কোন হারাম কাজের সাথে জড়িত অথবা অন্য কোন উল্লেখযোগ্য শরীয়ত
সম্মত কারণে যদি মা বাবার কথা না শুনেন তাহলে এতে গুনাহ হবে না। আরো জানুন: https://ifatwa.info/41599/
https://ifatwa.info/37156/?show=37156#q37156