ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
□ জানাবাতের অবস্থায় যেসব আমল জায়েয নয়:
১. সালাত পড়া: জুনুবী অবস্থায় সালাত পড়া জায়েয নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا
تَقۡرَبُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنتُمۡ سُكَٰرَىٰ حَتَّىٰ تَعۡلَمُواْ مَا تَقُولُونَ
وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّىٰ تَغۡتَسِلُواْ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত বা জুনুবী অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী
হবে না যতক্ষণ না তোমরা বোধ শক্তি ফিরে পাও এবং গোসল কর। তবে পথ অতিক্রমের উদ্দেশ্যে
তোমরা মসজিদের উপর দিয়ে চলতে পার।” সূরা নিসা, আয়াত নং-৪৩
মোটকথা; যেসব আমাল/ইবাদাত
অযু ছাড়া করা করা যায়না। সেগুলো জানাবাত অবস্থায় গোসল ছাড়াও করা নাজায়েয হয়ে যায়। যথা-
সালাত, সেজদায়ে তেলাওয়াত, সেজদায়ে শুকুর, কাবা শরীফের তাওয়াফ ইত্যাদি।
২. কা‘বা শরীফ তাওয়াফ করা: জুনুবী অবস্থায় কা‘বা শরীফ তাওয়াফ করা নাজায়েয। আব্দুল্লাহ
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
الطَّوَافُ حَوْلَ الْبَيْتِ مِثْلُ
الصَّلاَةِ، إِلاَّ أَنَّكُمْ تَتَكَلَّمُوْنَ فِيْهِ، فَمَنْ تَكَلَّمَ فِيْهِ
فَلاَ يَتَكَلَّمَنَّ إِلاَّ بِخَيْرٍ
কা‘বা শরীফ তাওয়াফ করা সালাতের ন্যায়। তবে তাতে কথা বলা যায়। অতএব, তোমরা কথা বলতে চাইলে কল্যাণকর কথাই বলবে।’’ তিরমিযী, হাদীস নং ৯৬০
৩. কোন অনিবার্য কারণ ছাড়া মসজিদে অবস্থান বা গমন করা; ‘আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন,
وَجِّهُوْا هَذِهِ الْبُيُوْتَ عَنِ
الـْمَسْجِدِ ؛ فَإِنِّيْ لاَ أُحِلُّ الـْمَسْجِدَ لِحَائِضٍ وَلاَ جُنُبٍ
“তোমরা মসজিদমুখী ঘরের দরজাগুলো বন্ধ করে দাও। কারণ, ঋতুবর্তী বা জুনুবী ব্যক্তির
জন্য মসজিদে অবস্থান করা জায়েয নয়।’’ আবু দাউদ, ২৩২
৪. ক. (গিলাফ বিহীন) কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা: জুনুবী অবস্থায় কুরআন মাজীদ স্পর্শ
করা নাজায়েয, আমর ইবনে হাযম, হাকীম ইবনে হিযাম ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে
বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন,
لاَ يَمَسُّ
الْقُرآنَ إِلاَّ طَاهِرٌ.
“পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া তোমাদের কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না।” দারাক্বুত্বনী, হাদীস নং-৪৩১
খ. কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত: জুনুবী অবস্থায় কুরআন মাজীদ পড়া যাবে না। তবে ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়া যাবে এবং দুআর আয়াতগুলো দুআর
উদ্দেশ্যে পড়া যাবে। ‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلعم يُقْرِئُنَا الْقُرْآنَ عَلَى كُلِّ حَالٍ
مَا لَمْ يَكُنْ جُنُبًا
“রাসূলুল্লাহ সা. জুনুবী অবস্থা ছাড়া যে কোনো সময় আমাদেরকে কুরআন পড়াতেন।’’ তিরমিযী, হাদীস নং- ১৪৬
□ জানাবাতের অবস্থায় যেসব আমল জায়েয:
নামায, তাওয়াফ, কুরআন তেলাওয়াত ও স্পর্শ করা এবং মসজিদে গমণ করা ছাড়া অন্যান্য
সবধরণের কাজ করা যাবে। যথা. জিকির-আযকার করা, দরুদ শরীফ পড়া, বিভিন্ন দোয়া পড়া, ঘরের কাজ করা, পানাহার করা সহ ইত্যকার কোনো কাজই নিষেধ নয়। একাধিক হাদীসে এ
বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন, আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে মদিনার কোন এক পথে রাসূল ﷺ-এর দেখা হল। আবু
হুরায়রা রাযি. তখন জানাবাতের অবস্থায় ছিলেন। তিনি বলেন, আমি নিজেকে নাপাক মনে করে সরে পড়লাম। পরে আবু হুরায়রা রাযি. গোসল
করে আসলেন। পুনরায় সাক্ষাৎ হলে রাসূল ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, আবু হুরায়রা! কোথায় ছিলে? আবু হুরায়রা রাযি. বললেন, আমি জানাবাতের অবস্থায় আপনার সঙ্গে বসা সমীচীন মনে করিনি। নবীজী
ﷺ বললেন, سبحان الله، إن المسلم لا ينجس সুবহানাল্লাহ্! মু’মিন নাপাক
হয় না। সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৭৯
তবে অন্যান্য কাজ একেবারে নিষেধ না হলেও কোনো কাজ করার আগে গোপনাঙ্গ ধুয়ে নেয়া
ও অজু করে করে নেয়ার কথা একাধিক হাদীসে এসেছে। আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত,
রাসূল ﷺ জানাবাতের (গোসল ফরজ) অবস্থায় পানাহার কিংবা ঘুমানোর
ইচ্ছা করলে নামাজের অজুর মত অজু করে নিতেন।’’ সহীহ মুসলিম-৩০৫
উল্লেখ্য, ফরজ গোসল বিলম্বিত হওয়ার কারণে যদি নামাজ কাজা হয়ে যায় তাহলে
গোনাহগার হতে হবে। তীব্র লজ্জা এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য কোনো ওজর নয়; সুতরাং এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি।
যিনা করার শাস্তি সম্পর্কে জানুন - https://ifatwa.info/56457/
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
নাপাক শরীর নিয়ে কাজ করা যাবে না কথাটা ভুল। সুতরাং এ অবস্থায় কম্পিউটার চালানো
বা গাড়ি চালানোও জায়েজ আছে এবং ইনকামও
হালাল হবে।