আস্সালামুআলাইকুম,
একটু বড় হবে লেখা টা কিন্তু দয়া করে পুরোটা পড়বেন। প্রথমেই দুঃখিত এতো বড় করে লেখার জন্যে .
আমার বিয়ের ১০ মাস হলো। বিয়ে টা ইসলামিক ভাবেই করার চেষ্টা করেছি এবং ভালো ভাবেই সম্পূর্ণ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় বিয়ের পরপরে। আমার স্বামী বিদেশ থাকে তাই বিয়ে করে এক মাসের ছুটি তে এসে। এক মাস পর চলে যাই।
- বিয়ের ২ মাসে আমি তাকে আরেক ফেইসবুক আইডি সহ হাতে নাতে ধরি। ধরার পর সেই মিথ্যা বলা শুরু করে এবং স্বীকার করতেই চাই না। এরপর এই মিথ্যা তাকে সত্য বানানোর জন্য সেই তার আরেক বন্ধুর সাথে মাইল মিথ্যা গল্প তুলে ধরে আমার সামনে। আরো ১০ টা মিথ্যা কথা বলে। তখন আমার খুব কষ্ট হয়। কারণ এই ছোট্ট সামান্য কথাতেই শুরু তাই কিভাবে তার মিথ্যা কথা বলার চিন্তা , আমাকে প্রতারণা করার চিন্তা মাথায় আসে !
যাই হোক , এর পর আমি তাকে এসব কিছু নিয়ে আর আগেই না এবং আরো একটা সুযোগ দেয়ার চিন্তা করি। আমার পরিবার কেও জানাই বিষয় টা। তারা ও আমাকে এটা নিয়ে আর ঝামেলা করতে নিষেধ করে।
- এর কিছু দিন পরে, ঈদ এর সময় , আমি নিজের টাকা প্রায় ৪০০০০ টাকা খরচ করে নিজে প্লেন ভাড়া দিয়ে, তার জন্য বিভিন্ন খাবার রান্না করে, নিজের টাকা দিয়ে গিফট কিনে ৭ দিনের জন্য তার সাথে দেখা করতে যাই, ঈদ উদযাপন করতে যাই একসাথে। ওখানে যেয়ে তার মধ্যে আমি অনেক আচরণ গত সমস্যা দেখতে পাই। যেমন , কোথায় কোথায় খাওয়া নিয়ে খোটা দেয়া। ওখানে যেয়ে আমি নরমাল খাবার খেয়েছি কিন্তু এর পর ও সে উঠতে বসতে খাওয়া নিয়ে খোটা দেয়া শুরু করে। আর খাবার খাবার সময় ঠিক মতো অর্ডার দেয়না , অল্প দেয়। আবার মুখ ভার করে রাখে আমি খাবার খাবার সময়। এমন ভাব করতে থাকে , যেন তার সব টাকা পয়সা খেয়ে ফেলতেই তাকে বিয়ে করেছি।
এরপর আসে আরো বড় ঝামেলা। আমার মোবাইল ফোন হাত থেকে পরে একদম গুড়ি গুড়ি হয়ে ভেঙে যাই। প্রথমে আমি বলি থাকে কিনে দিতে হবে না কিন্তু সেই জোড়া জুড়ি করে বলে কিনে দিবে। যাক আমি ও রাজি হই। এরপর মোবাইল কিনে দিয়ে খোটা দিয়ে কথা বলার মাত্রা আরো ২ গুন্, ৩ গুন্ বেড়ে যায়। মোবাইল কিনে দিয়ে ৭ দিন পর্যন্ত এই একই কথা যে উনি আমাকে অনেক দামি মোবাইল কিনে দিসে , এরকম দামি জিনিস আর কাউকে আজ পর্যন্ত কিনে দেয় নাই। নিজের পরিবার কেও না। এই কথা যেন আমি সারা জীবন মনে রাখি। এটাও বলে যে উনি নিজে বেশি দামি মোবাইল ব্যবহার করেন না কিন্তু আমাকে তার চেয়েও দামি মোবাইল দিয়েছে উনি নিজে না কিনে , আর বার বার বলতে থাকে যেন এসব কথা আমি সারা জীবন মনে রাখি। বলে যে এই যে মোবাইল টা কিনে দিলেন উনি , এই টাকা উনার কষ্টে উপার্জিত টাকা , সেই টাকা থেকে আমাকে মোবাইল কিনে দিসে। আরো বলে যে তাকে যেন একটা মেডেল কিনে দেয় , এতো টাকা দিয়ে আমাকে মোবাইল কিনে দেয়ার জন্য। আরো বলে এই যে মোবাইল কিনে দিলাম , এখন এটার বিনিময়ে তাকে কি দিবো ? আমার ফ্যামিলি তাকে কি দিবে এটার বিনিময়ে ??? এসব বলতে থাকে। এসব শুনে আমি টানা ৭ দিন শুধু কাঁদতাম আর কাঁদতাম।
- এরপর আসি কথা দিয়ে খোটা দেয়ার আরেক বিষয়। উনি এবং উনার মা মানে আমার শাশুড়ি , বার বার আমাকে এটা বুঝানোর চেষ্টা করে যে এই যে আমি বাইরের দেশে ঈদ করতে গেসি এটা অনেক বড় ভাগ্যের বিষয়। সবার কপাল ই জুট না। এটা শুধু মাত্র আমার কপাল ই জুতেসে কারণ আমার উনার সাথে বিয়ে হয়েছে। তানাহলে আমি কখনো অন্য দেশে ঘুরার ভাগ্য হতো না। । আমার স্বামী আমাকে তার বন্ধুদের উদাহরণ দেয় যে দেখো অমুক ভাই ৫ বছর ধরে এই দেশে ই থাকে কিন্তু আজ পর্যন্ত তার বৌকে আনেনি ঘুরতে , আমি এনেছি। এসব বার বার বলে আমাকে।
- আমাকে উনার বিয়ের আগের কাহিনী সুনান যে মন্ত্রীর মেয়ে রা তার কাছে আসতেন , মন্ত্রী রা তাকে দাওয়াত করে খাওয়াতেন উনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতেন , কিন্তু এসব ছেড়ে উনি আমাকে বিয়ে করেছেন।
- বার বার আমার কাছ থেকে জানার চেষ্টা করে যে আমার আম্মু আমার বড় বোনের স্বামী কে কি কি দিয়েছে ঈদ ই উপহার , আমাদের কত জমি আছে , টাকা আছে , আমাদের রীতি তে জামাই আদর কিভাবে করে এসব।
- এসব কিছু সহ আরো ছোট / বড় বিভিন্ন কথা শেষএ শুরু হয় টাকা পয়সা এর ঝামেলা। আমাকে বিয়ের পর এই পর্যন্ত শুধু ২ বার হাত খরচ পাঠায়। এরপর আমি বিভিন্ন ভাবে প্রমান পাই যে উনি আমাকে হাত খরচ দেন না এই উসিলায় যে উনার ইনকাম নেয় কিন্তু দেখতে পাই যে উনি সমস্ত টাকা তার মা , বোন , ভাই , ভাবি , তাদের বাচ্চা দেড় পিছনে খরচ করে আর আমাকে দেখায় তার কাছে কোনো টাকা নেই।
- আর আমি ভরণ পোষণের টাকা চাইলে বলে আমার বাবা মা এর কাছ থেকে নিয়ে চালাতে। এই পর্যায়ে আমি ও মেনে নেই না এবং কথা কাটা কাটি হয়ে এক পর্যায় আমার কাছে থাকা ডেবিট কার্ড ও ব্লক করে দেয়।
- এরপর থেকে শুরু হয় আমার পরিবারকে জ্বালাতন করা। কথা কাটা কাটি হওয়ার পর , আমি তার সাথে কথা কমিয়ে দেয় কারণ যখন ই কথা হতো উনি খালি আমাকে এসব খোঁটায় দিতেন। এসব শুনতে বার বার আমার ভালো লাগতো না। কিন্তু কথা কমিয়ে দেয়াতে উনি শুরু করেন , আমার আম্মু আব্বুর সাথে খারাপ ব্যবহার করা। আমার আম্মুর কাছে ফোন দিয়ে , মেসেজ দিয়ে আমার নামে বিচার দেয়া শুরু করেন , যে আমি তার সাথে কথা বলি না কেন , এটাও বলে যে আমি নাকি সব মিথ্যা বলসি। এরপর শুরু করে ভয়েস মেসেজ দেয়া। অনেক তীব্র ভাবে লম্বা লম্বা টান দিয়ে আমার আম্মু আব্বু কে ভয়েস মেসেজ দিতেন। আর আমার নামে বিচার দিতেন। সাথে সাথে এটাও বলতেন যে , আপনাদের কিসের এতো ভাব? কইবার আমার (মানে আমার শশুর শাশুড়ি কে দাওয়াত করে খাওয়াচ্ছেন আপনারা? কি করেছেন এতো দিন তার জন্য (মানে আমার স্বামীর জন্য কি করেছে আমার বাবা মা) এসব বলতেন। খোটা দিতেন। অথচ , এখন ও আমার আব্বা আম্মু উনার কাছে ১০০০০ টাকা পান। যেটা এখন ও ফিরত দেন নি। এসব শুনতে শুনতে আমার আব্বু আম্মু এক পর্যায় সিক হয়ে যান আর হসপিটাল ই ভর্তি হন। কিন্তু উনার এরপর ও কথা বন্ধ হয়ে নি। এরপর ও আমার আব্বু আম্মু কে এসব নিয়ে প্রতিনিয়ত কথা শুনাতেন। এক পর্যায় আমি বলি , আমি আপনার কাছে আমার আব্বু আম্মুর যান ভিক্ষা চাই। আপনার পায়ে পড়ি , দয়া করে তাদের কে কিছু বইলেন না। আপনার যা বলার আমাকে বলেন। কিন্তু শুনেন নি উনি।
- এসব দেখে আমার বড় বোন , দুলা ভাই একসাথে মিটিং এ বসেন তাকে নিয়ে। মিটিং এর পর উনি আমার দুলাভাই কে বলেন সব দোষ আমার আমার আম্মুর। এই বিয়ে করে নাকি উনি ভুল করছেন।
এসব শুনি আমিও তাকে বলি , যে হা , আমার ও উনার সাথে থাকার ইচ্ছা নেই। আমিও তালাক উচ্চারণ করি।
এখন আমি আর তার সাথে থাকতে ইচ্ছুক নোই। আমি অনেক কষ্ট পাই তার সাথে থাকলে।
১) এতো কিছু বলার কারণ হলো , এই যে আমার তালাক চাওয়া এতো কাহিনীর পরে, এরপর ও কি আমার গুনাহ হবে ??? আমি তো চেষ্টা করেছি ঠিক করার , আমার পরিবার ও বসেছেন তার সাথে। এখন আমি কি তালাক দিলে গুনাহ হবে?
২) কিভাবে শরীয়ত মোতাবেক তালাক দিতে পারি?
৩) তালাক এ আমি সাক্ষী হিসেবে আমার বাবা মা কে রাখতে চাচ্ছি না , কারণ উনারা অনেক অসুস্থ। এখন সাক্ষী হিসেবে কাকে রাখতে পারি ?
৪) আমাকে কি বিয়ের কাবিনের টাকা ফিরত দিতে হবে?
৫) ঐযে মুখ দিয়ে বলেছি তালাক দিলাম , তাহলে কি তালাক হয়ে গেসে ?
জাজাকাল্লাহু খাইরান , এতো ধৈর্য সহকারে সব পড়ার জন্য। আমি উত্তর পাওয়ার সাথে সাথেই এসব ব্যক্তিগত বিষয় মুছে ফেলবো। শুধু মাত্র সঠিক উত্তর পাওয়ার জন্যে ব্যক্তিগত বিষয় তুলে ধরলাম।