আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
188 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (20 points)
১. আমি একজনকে অযথা আল্লাহর কিরি কাটতে শুনি(কসম করাকে আমাদের এলাকায় কিরি কাটাও বলা হয়)। এবং তাকে আমি বলি যে, " কিরি কাটা খারাপ, সঠিক ভাবে না জেনে কিরি কাটতে হয় না "। আমি মূলত তাকে বোঝাতে চেয়েছি অযথা কথায় কথায় কসম করা ঠিক না। কিন্তু শব্দগত দিক থেকে কসম করাকে খারাপ বলেছি। খারাপ বলার কারণে কি গোনাহ হতে পারে? যদি গোনাহ হয় তবে কি শুধু তওবা করলেই হবে, না কি অন্য কিছু করতে হবে?

২. মনে করুন, কেউ আমার থেকে কোনো পণ্য কিনলো (পণ্য যেকোনো ধরনের হতে পারে, সেটা দৈনন্দিন ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রীও হতে পারে আবার ডিজিটাল কোনো সার্ভিসও হতে পারে)। কিন্তু আমার মনে হলো অমুক কোনো ব্যক্তিকে মনে হয় আমি কম পণ্য দিয়েছি। এখন যদি আমি সেটার হক আদায় করতে চায় তাহলে কি টাকা ফেরত দিতে হবে? নাকি সেই পণ্য দিয়েও তার হক আদায় করা যাবে? কারন আমি টাকা দিতে চাইলে সে নিতে চাইবে না বলে আমার ধারণা। এর আগে একটি কারণে দিতে চেয়েছি নেয়নি। এক্ষেত্রে সেই পণ্য দিয়ে যদি তাকে বলি, আপনাকে এটা ফ্রি দেয়া হলো বা উপহার দেয়া হলো কিংবা যদি সে আবারও আমার থেকে সেই পণ্য নেয়, তাহলে তার থেকে টাকা না নিয়ে বললাম যে, এটার (পণ্যের) টাকা দেয়া লাগবে না। এভাবে হক আদায়ের নিয়তে পণ্য দিয়ে দিলে হক আদায় হবে?

এবং এরকমভাবে যাদেরকে কম পণ্য দেয়া হয়েছে। তাদেরকে টাকা না দিয়ে সেই পণ্য দিয়ে হক আদায় করা যাবে?
আবার যাদেরকে টাকা দিলে নিত, কিন্তু আমি তাদেরকে যদি সেই পণ্য দিই তাহলে কি হক আদায় হবে?

৩. যদি আমি কাউকে মজা করে বলি, এই জিনিসটি তোমাকে দিয়ে দিলাম কিংবা বললাম এটা নিয়ে নাও। এটা যাকে বলা হচ্ছে সেও জানে যে, মজা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে জিনিসটি তাকে না দিলে কি আমার গোনাহ হবে বা হক নষ্ট করা হবে?
এবং যাকে কথাটা বলা হচ্ছে সে মানুষটি কথাটা মজা হিসেবে নিচ্ছে কি না, যদি আমি সেটা সঠিক না জানি, এক্ষেত্রেও জিনিসটি না দিলে কি আমার গোনাহ হবে বা তার হক নষ্ট করা হবে?

৪. মনে করুন, আমার বাসার ওয়াইফাই সংযোগ থেকে আমি দুই জনকে টাকার বিনিময়ে ইন্টারনেট চালাতে দিলাম। একজনের থেকে একটু বেশি টাকা নিলাম ও আরেকজনের থেকে একটু কম টাকা নিলাম। এই কম বেশি নেওয়া জায়েজ আছে কি না? এবং যার থেকে বেশি টাকা নিচ্ছি, তাকে কম বেশি টাকা নেওয়ার ব্যাপারটি জানানো বাধ্যতামূলক কি না?

৫. দোকানে কোনো কিছু কিনতে গেলে দামাদামি করে যে জিনিস গুলো কেনা হয় সেগুলো দোকানদার অনেক সময় ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি করে থাকে। যেমনঃ কারোর কাছে একটি পণ্য ১০০ টাকা বিক্রি করলো, আবার আরেকজনের কাছে একই পণ্য ৯০ টাকা বিক্রি করলো। এরুপ ক্রয় বিক্রয় ক্রেতা এবং বিক্রেতার জন্য জায়েজ আছে কি না?

৬. রাগের বশে অনেক সময় অনেকে বলে "জাহান্নামে যাচ্ছি"। এরূপ কথায় কি ঈমানের ক্ষতি হবে?

৭. কাউকে কোনো বই উপহার কিংবা পড়ার জন্য ধার দেয়া হলো। যাকে বইটি দেয়া হলো সে বইটি পড়ে ভাল জ্ঞান লাভ করতে পারলো। এক্ষেত্রে যে উপহার কিংবা ধার দিল সে কি সওয়াব পাবে?
বই উপহার দেয়া কি সদকায়ে জারিয়া?

৮. কাউকে কোনো হাদিয়া বা উপহার দেয়ার নিয়ত করা হলো, কিন্তু তা আর দেয়া হলো না। এক্ষেত্রে কি গোনাহ হবে?

৯. কোনো মানুষের হক নষ্ট করা মানে কি সেই মানুষের কাছে ঋণী থাকা? হক এনং ঋণ কি একইরকম জিনিস?

১০. কোথায় যাওয়ার সময় গাড়ি ভাড়া আগে থেকে চালকের সাথে মিটমাট না করলে কি তা নাজায়েজ হবে?

1 Answer

0 votes
by (574,050 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


(০১)
কথায় কথায় কসম করা, বিনা প্রয়োজনে কসম করা এ সবকিছুই ঠিক নয়। 

হাদিস শরিফে এসেছে, 

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ الْكَبَائِرُ الإِشْرَاكُ بِاللهِ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ وَقَتْلُ النَّفْسِ وَالْيَمِينُ الْغَمُوسُ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- কবীরা গুনাহসমূহ হচ্ছে, আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা। পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম খাওয়া। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬৭৫) [৬৮৭০, ৬৯২০] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬২০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২১৯)

আর কসম করার প্রয়োজন দেখা দিলে শুধু আল্লাহর নামেই কসম করবে। অন্য কারো বা কিছুর নামে কসম করা জায়েয নয়। 

হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। 

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَدْرَكَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ وَهُوَ يَسِيرُ فِي رَكْبٍ يَحْلِفُ بِأَبِيهِ فَقَالَ أَلاَ إِنَّ اللهَ يَنْهَاكُمْ أَنْ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ مَنْ كَانَ حَالِفًا فَلْيَحْلِفْ بِاللهِ أَوْ لِيَصْمُتْ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- জেনে রাখ, আল্লাহ তোমাদের নিজের পিতার নামে কসম করতে নিষেধ করেছেন। যদি কসম করতেই হয় তবে যেন আল্লাহর নামেই কসম করে। নতুবা চুপ করে থাকে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬৪৬)[২৬৭৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬১৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৯১)

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
কাজটি উচিত নয়,এটি বলা উচিত ছিলো।
খারাপ বলা ঠিক হয়নি।

এর দরুন তওবা করলেই হবে,অন্য কিছু করতে হবেনা।

(০২)
এভাবে হক আদায়ের নিয়তে পণ্য দিয়ে দিলে হক আদায় হবে।

এবং এরকমভাবে যাদেরকে কম পণ্য দেয়া হয়েছে। তাদেরকে টাকা না দিয়ে সেই পণ্য দিয়ে হক আদায় করা যাবে।
আবার যাদেরকে টাকা দিলে নিত, কিন্তু আপনি তাদেরকে যদি সেই পণ্য দেন, তাহলে হক আদায় হবে।

(০৩)
প্রশ্নের বিবরণ মতে এক্ষেত্রে জিনিসটি তাকে না দিলে আপনার গোনাহ হবেনা,হক নষ্ট করাও হবেনা।

(০৪)
এই কম বেশি নেওয়া জায়েজ আছে।
এটি আপনার একান্তই নিজস্ব ব্যপার,আপনি চাইলে কাউকে ফ্রিতেও দিতে পারে, কেননা এটি আপনার মালিকানা,আপনার এতে নিজস্ব ইখতিয়ার রয়েছে।

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে এই কম বেশি নেওয়া জায়েজ আছে।

আপনি যার থেকে বেশি টাকা নিচ্ছেন, তাকে কম বেশি টাকা নেওয়ার ব্যাপারটি জানানো বাধ্যতামূলক নয়।

(০৫)
এরুপ ক্রয় বিক্রয় ক্রেতা এবং বিক্রেতার জন্য জায়েজ আছে। 

(০৬)
এরূপ কথায় ঈমানের ক্ষতি হবেনা।
তবে মুসলিমদের জন্য এরকম কথা বলা অনুচিত। 

(০৭)
এক্ষেত্রে যে উপহার কিংবা ধার দিল সে সওয়াব পাবে।
বই উপহার দেয়া সদকায়ে জারিয়া নয়।
তবে কাউকে সদকার নিয়তে কোনো ইসলামী বই দিলে সেটি সদকায়ে জারিয়াহ হবে।

(০৮)
এক্ষেত্রে যেহেতু শুধু নিয়ত করা হয়েছে,কাউকে বলা হয়নি,তাই এতে গুনাহ হবেনা।

(০৯)
কোনো মানুষের হক নষ্ট করা মানে কি সেই মানুষের কাছে ঋণী থাকার মতোই।
সেটি আর্থিক ভাবে হলে আর্থিক ঋণী হবে,আর ব্যবহার গত কষ্ট দেয়া হলে সেরকম ঋণী হবে।
মাফ চেয়ে নিতে হবে।

(১০)
আগে থেকেই মিটিয়ে নেয়াই ইসলাম শিক্ষা দেয়।
যাতে করে পরবর্তীতে ঝগড়াঝাটি না হয়।
,
তবে ভাড়া যদি চালক ও যাতায়াত কারী উভয়েই জানে,শেষে টাকা দেয়ার সময় যদি ঝগড়াঝাটি না হয়,
তাহলে না বলে নিলেও সমস্যা নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
৩ নং প্রশ্নের উত্তরে, গোনাহ হবে কি হবে না এটা সঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। কারণ ওখানে "বা" লেখা আছে। 
by (574,050 points)
গুনাহ হবেনা।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...