জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ;১৯/১৯৩ এ নারীদের আওয়াজ সতরের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার (মারজুহ) রেওয়াতকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে অগ্রাধিকার দিয়ে বলা হয়েছে যে,পর-পুরুষের সামনে মহিলা বক্তৃতা দিতে পারবে না।বক্তৃতা প্রদান জায়েয হবে না।
★নারীকন্ঠ সতরের অন্তর্ভুক্ত কি না?
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট-
কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে,আল্লাহ তা'আলা বলেন,
ﻳَﺎ ﻧِﺴَﺎﺀ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﻟَﺴْﺘُﻦَّ ﻛَﺄَﺣَﺪٍ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﺇِﻥِ ﺍﺗَّﻘَﻴْﺘُﻦَّ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﺨْﻀَﻌْﻦَ ﺑِﺎﻟْﻘَﻮْﻝِ ﻓَﻴَﻄْﻤَﻊَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻓِﻲ ﻗَﻠْﺒِﻪِ ﻣَﺮَﺽٌ ﻭَﻗُﻠْﻦَ ﻗَﻮْﻟًﺎ ﻣَّﻌْﺮُﻭﻓًﺎ
(তরজমা) তোমরা (পর পুরুষের সাথে) বাক্যালাপে কোমলতা অবলম্বন কর না। যাতে এরূপ লোকের অন্তরে আকাঙ্ক্ষা (সঞ্চার) হয়, যার অন্তরে কুপ্রবৃত্তি রয়েছে। (সূরা আহযাব : ৩২)
লক্ষণীয় বিষয় হল, কন্ঠস্বরের কোমলতা পরিহারের নির্দেশ সরাসরি নবীযুগের নারীদেরকে দেয়া হয়েছে। এখন কথা হল, তাদের ব্যাপারেই যদি এমন নির্দেশ হয়ে থাকে তাহলে এ যুগের মহিলা বক্তাদের মাইকে আলোচনা করা এবং সুরেলা কন্ঠ দেয়া কতটা শরীয়ত বিরোধী কাজ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মোটকথা প্রশ্নোক্ত মহিলা সম্মেলনে শরীয়ত নিষিদ্ধ একাধিক কর্মকাণ্ড ও আপত্তি বিদ্যমান, তাই ভবিষ্যতে এ ধরনের সম্মেলন আয়োজন করা থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরত থাকা আবশ্যক।
ওয়ায নসীহত, দ্বীনী আলোচনা নিঃসন্দেহে মুমিনদের জন্য উপকারী। পুরুষের মত মহিলাদের মাঝেও দ্বীনী তালীম-তরবিয়ত, ওয়ায-নসীহত শরীয়তসম্মত পন্থায় ব্যাপকভাবে হওয়া দরকার। বিশেষত বর্তমানে ফেতনা -ফাসাদের ব্যাপকতার যুগে তাদের মাঝে ওয়ায-নসীহত ও তালীম-তরবিয়তের প্রয়োজনীয়তা যে কত বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু মহিলাদের মাইকে ওয়াজ করা, প্রচলিত মাহফিল/ সম্মেলন করা এবং মহিলা বক্তা কর্তৃক সেখানে মাইকে আলোচনা করার প্রচলিত পন্থাটি শরীয়তসম্মত নয় । এ পদ্ধতির সম্মেলন বা ওয়ায মাহফিল বর্জনীয়। কেননা,
প্রচলিত পদ্ধতির উক্ত মহিলা সম্মেলন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তালীম-তরবিয়ত সাহাবা- তাবেয়ীনের অনুসৃত তরীকা পরিপন্থী। দ্বীন-শেখা শেখানো, ওয়ায-নসীহতের পথ ও পন্থা শরীয়ত নির্দেশিত উপায়ে হওয়া আবশ্যক। শরীয়ত সমর্থন করে না এমন সব পন্থা বর্জন করা জরুরী।
নবীযুগের নারীরা পরবর্তী যে কোনো যুগের নারী অপেক্ষা দ্বীন শেখার প্রতি অধিক আগ্রহী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মুখ থেকে ওয়ায নসীহত শোনার প্রবল আকাঙ্ক্ষা রাখতেন। তিনি তাদেরকে যে পন্থায় ওয়ায নসীহত করেছেন মূলত সেটাই আমাদের অনুসরণীয়। সে পদ্ধতি কী ছিল লক্ষ্য করুন।
সহীহ বুখারী ও সহীহ ইবনে হিব্বানে বর্ণিত হয়েছে, একবার কিছু সংখ্যক নারী সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আপনার মজলিসে পুরুষদের সাথে বসতে পারি না। আমাদের জন্য একটি দিন ধার্য করুন যাতে সেদিনটিতে আমরা আপনার নিকট আসতে পারি। তিনি বললেন موعدكن بيت فلانة অর্থাৎ নির্ধারিত দিন অমুক মহিলার ঘরে জমায়েত হও। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে তাদেরকে ওয়ায-নসীহত করলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১০১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২৯৪১
লক্ষ করুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের ওয়ায নসীহত করার জন্য পুরুষদের দৃষ্টির আড়ালে কেমন ঘরোয়া পরিবেশ ও স্থান নির্বাচন করেছেন। তাদের আবদারের প্রেক্ষিতে প্রকাশ্য স্থান যেমন মসজিদে নববী, ঈদগাহ বা ঘরের আঙ্গীনার কথা না বলে সরাসরি বলে দিলেন موعدكن بيت فلانة অমুক মহিলার গৃহে অবস্থান কর। মূলত তাঁর এ নির্দেশ মহিলাদের গৃহাভ্যন্তরে অবস্থানের যে কুরআনী নির্দেশনা রয়েছে তারই অংশ।
মহিলা বক্তা কর্তৃক মাইকে আলোচনা করা, সুরেলা কন্ঠে বয়ান করা,যার আওয়াজ সভাস্থলের গণ্ডি পার হয়ে কেবল আশপাশের পুরুষগণই নয়; বরং দূর দূরান্তের লোকদের কাছেও পৌঁছে যায়, তা শরীয়তের নির্দেশনার যে সুস্পষ্ট সীমালংঘন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নারীর প্রতি শরীয়তের বিধান ও চাহিদা হল, তার কন্ঠস্বর যেন প্রয়োজন ছাড়া পরপুরুষ শুনতে না পায়। এ বিধান কেবল সাধারণ ক্ষেত্রেই নয়; বরং ইবাদত বন্দেগী ও আমলের ক্ষেত্রেও তা পূর্ণমাত্রায় লক্ষ রাখা হয়েছে।
,
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দ্বীনের জরুরী ইলম শিক্ষা করা নারীদের উপরও ফরয। তাদেরকে সঠিক ঈমান-আকীদা শিক্ষা দেয়া, তালীম-তরবিয়ত করা, ওয়ায-নসীহত শোনানো খুবই দরকারি। তবে এর পদ্ধতি হতে হবে অবশ্যই শরীয়তসম্মত। আর এর অনুসৃত পদ্ধতি তো তা-ই যা হাদীস শরীফে এসেছে। অর্থাৎ ঘরের পুরুষরা দ্বীন শিখে তাদের নারীদেরকে শেখাবে। এতে প্রত্যেক ঘরেই দ্বীনী তালীমের চর্চা হবে এবং ঘরে ঘরে দ্বীনী পরিবেশ কায়েম হবে। পুরুষদের কর্মব্যস্ততার কারণে যদি অধিক সময় না পায় তবে তাদের থেকে নারীরা শিখে ঘরের মেয়েদেরকে অনুরূপ আশপাশের মেয়েদেরকে সহীহ-শুদ্ধভাবে কুরআন মাজীদ শেখাবে, প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল শেখাবে, হক্কানী উলামায়ে কেরামের রচিত কিতাব থেকে ওয়ায-নসীহত শুনাবে। মাঝে মাঝে হক্কানী আলেম ও বুযুর্গদের এনে ঘরোয়াভাবে পর্দা-পুশিদার সাথে ওয়ায-নসীহত শুনবে। ইনশাআল্লাহ শরীয়তসম্মত উক্ত পদ্ধতিতে তাদের অধিক ফায়েদা হবে।
★ইউটিউবে মহিলাদের ওয়াজের পুরুষদের দেখা জায়েজ নয়।
কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
إِنَّ السَّمْعَ وَالبَصَرَ وَالفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا.
...নিশ্চয় কান, চোখ, হৃদয় এর প্রতিটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ৩৬
আলী রা.-কে নবীজী বলেছেন,
يَا عَلِيُّ لَا تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ، فَإِنَّ لَكَ الأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الآخِرَةُ.
হে আলী! (হঠাৎ) দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার পর আবার দ্বিতীয়বার তাকিয়ো না। কারণ, (হঠাৎ অনিচ্ছাকৃত পড়ে যাওয়া) প্রথম দৃষ্টি তোমাকে ক্ষমা করা হবে, কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না। জামে তিরমিযী, হাদীস ২৭৭৭