আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
160 views
in সালাত(Prayer) by (15 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ,
(১)চার রাকাত বিশিষ্ট আসরের ফরজ নামাজ ইমামের পিছনে পড়ার সময় আমি সূরা ফাতিহা শেষ করে একলাইন কেরাত পড়তে পারি তখন ই দেখি ইমাম রুকুতে চলে যায়।ইমাম যদি তাড়াতাড়ি পড়ে রুকুতে চলে যায় এতে কী নামাজ বাতিল হওয়ার কোন সম্ভবনা আছে?তাড়াতাড়ি পড়া কারনে কী আল্লাহ তা'য়ালা নামাজ কে গ্রহন করবেন?

(২)শেষ বৈঠকে যখন আমি দরুদ শরীফ অর্ধেক পড়া শেষ করি তখন ইমাম সালাম ফিরিয়ে দেয়।আমার মনে হয় যে তাড়াতাড়ি পড়ার কারনে ইমামের তেলাওয়াতে ভুল হতে পারে।আল্লাহ তা'য়ালা এমন ইবাদত গ্রহন করবেন কী?

(৩)ইমাম যদি নামাজে শুরুতে সানা না পড়ে নামাজ হবে?

1 Answer

0 votes
by (559,140 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


হানাফি মাযহাব মতে ইমামের পিছনে কোনো নামাযেই মুক্তাদীদের কিরাআত পড়তে হবেনা।
এ সময়ে মুক্তাদীগন চুপ থাকবে। 
,
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ  

وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا لعلكم ترحمون ” يعني في الصلاة المفروضة

অর্থ : যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমাদের প্রতি করুণা করা হয় (ফরজ নামাজে)

হযরত ইবনে মাসঊদ রা. এর মতও তাই। তাফসীরে তাবারীতে বলা হয়েছে:

صلى ابن مسعود، فسمع أناسا يقرءون مع الامام، فلما انصرف، قال: أما آن لكم أن تفقهوا ؟ أما آن لكم أن تعقلوا ؟ وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا كما أمركم الله
অর্থাৎ হযরত ইবনে মাসঊদ রা. নামায পড়ছিলেন, তখন কতিপয় লোককে ইমামের সঙ্গে কেরাত পড়তে শুনলেন। নামায শেষে তিনি বললেন : তোমাদের কি অনুধাবন করার সময় আসেনি, তোমাদের কি বোঝার সময় হয় নি? যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং নীরব থাকবে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন। (৯ খ. ১০৩ পৃ.)

হযরত আবূ মূসা আশআরী রা. বলেছেন,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا قرأ الإمام فأنصتوا، فإذا كان عند القعدة فليكن أوّل ذكر أحدكم التشهد. أخرجه مسلم (৪০৪) في باب التشهد في الصلاة، وأحمد في المسند ৪/৪১৫ (১৯৯৬১)، وأبو داود (৯৭৩) وابن ماجه (৮৪৭) واللفظ له. ؟

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,যখন ইমাম কুরআন পড়বে,তোমরা তখন চুপ করে থাকবে। আর বৈঠকের সময় তাশাহহুদ-ই প্রথম পড়তে হবে।

(মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৪০৪; আবূ দাউদ, হাদীস নং ৯৭৩; ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৮৪৭; মুসনাদে আহমাদ, ৪খ, ৪১৫ পৃ, হাদীস নং ১৯৯৬১। ইমাম আহমদ, (দ্র. তামহীদ ১১/৩৪), ইমাম মুসলিম, ইবনুল মুনযির (দ্র. আল আওসাত, ৩/১০৫), ইমাম ইবনে জারীর তাবারী র. (দ্র. তাফসীরে তাবারী, ৯/১০৩) ও ইবনে হাযম জাহেরী (দ্র. আল মুহাল্লা, ২/২৭০) প্রমুখ এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন।
,
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)ইরশাদ করেছেন যে, 

 مَنْ كَانَ لَهُ إِمَامٌ فَقِرَاءَتُهُ لَهُ قِرَاءَةٌ

যে ব্যক্তির ইমাম আছে তার ইমামের কেরাতই তার জন্য কেরাত বলে ধর্তব্য হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৫০, সুনানুল বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৭২৩, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১১৮৬, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৬৪৩, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-১০৫০, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৮০০, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-২৭৯৭, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৭৫৭৯, মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ-৯৬, মুসনাদে ইমামে আজম-৬১)    
বিস্তারিত জানুনঃ-
,
★তবে অন্যান্য কিছু মাযহাব,ও কিছু ইসলামী স্কলারদের মত হলো মুক্তাদীদেরকে সুরা ফাতেহা পড়তে হবে।
সুতরাং তাদের মতানুসারীগন সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারবেন। 

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
আপনি যদি হানাফি মাযহাব অনুসারী হোন,সেক্ষেত্রে আপনাকে ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা সহ কোনো সুরাই তিলাওয়াত করতে হবেনা।
অনুমতি নেই।
,
তবে আপনি যদি গায়রে মুকাল্লিদ দের অনুসারী হোন বা ভিন্ন মাযহাব অনুসারী হোন,যাদের মাযহাবে ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা পড়াকে আবশ্যকীয় বলা হয়,সেক্ষেত্রে আপনি ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা ও কিরাআত পড়তে পারেন।

(০১)
এক্ষেত্রে দ্রুত সুরা শেষ করে ইমামের রুকুতে চলে যাওয়াতে নামাজ বাতিল হবেনা।

আল্লাহ তা'য়ালা উক্ত নামাজ কে গ্রহন করবেন।
তবে দ্রুত পড়ার দরুন যদি অর্থ বিকৃত হয়ে যায়, তাহলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে।

(০২)
দ্রুত পড়ার দরুন যদি অর্থ বিকৃত না হয়,তাহলে আল্লাহ তা'য়ালা এমন ইবাদত গ্রহন করবেন। 

(০৩)
নামাজের শুরুতে সানা পড়া সুন্নাত।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

حَدَّثَنَا حُسَيْنُ بْنُ عِيسَى، حَدَّثَنَا طَلْقُ بْنُ غَنَّامٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ السَّلَامِ بْنُ حَرْبٍ الْمُلَائِيُّ، عَنْ بُدَيْلِ بْنِ مَيْسَرَةَ، عَنْ أَبِي الْجَوْزَاءِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا اسْتَفْتَحَ الصَّلَاةَ قَالَ " سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ "

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আরম্ভকালে এই দু‘আ পড়তেনঃ ‘‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা‘আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা।’’
(আবু দাউদ ৭৭৬।)

حَدَّثَنَا عَبْدُ السَّلَامِ بْنُ مُطَهَّرٍ، حَدَّثَنَا جَعْفَرٌ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ عَلِيٍّ الرِّفَاعِيِّ، عَنْ أَبِي الْمُتَوَكِّلِ النَّاجِيِّ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ كَبَّرَ ثُمَّ يَقُولُ " سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ " . ثُمَّ يَقُولُ " لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ " . ثَلَاثًا ثُمَّ يَقُولُ " اللهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا " . ثَلَاثًا " أَعُوذُ بِاللهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ " . ثُمَّ يَقْرَأُ .

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে সালাতের জন্য দন্ডায়মান হলে তাকবীরে তাহরীমা বলার পর এই দু‘আ পড়তেনঃ ‘‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা‘আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা।’’ অতঃপর তিনবার ‘‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ ও তিনবার ‘‘আল্লাহু আকবার কাবীরান’’ বলার পর ‘‘আ‘উযু বিল্লাহিস সামি‘ইল-‘আলীমি মিনাশ-শয়তানির রজীম মিন হামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি’’ বলতেন। তারপর কিরাত পাঠ করতেন।

(আবু দাউদ ৭৭৫.তিরমিযী (অধ্যায়ঃ সালাত, অনুঃ সালাত শুরুর সময় যা বলবে, হাঃ ২৪২, ইমাম তিরমিযী বলেন, এ অনুচ্ছেদে আবূ সাঈদের হাদীসটি অধিক সহীহ), ইবনু মাজাহ (অধ্যায়ঃ সালাত ক্বায়িম, অনুঃ সালাতে আশ্রয় প্রার্থনা করা, হাঃ)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
নামাজ হয়ে যাবে।
সানা পড়া সুন্নাত,কেউ সানা না পড়লেও নামাজ শুদ্ধ হয়ে যায়।
তবে সুন্নাতের খেলাফ হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...