আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
164 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (63 points)
১. দ্বীনের অকাট্য বিষয় কোনগুলো যেগুলোর বিপক্ষে বললে/অস্বীকার করলে/ঠাট্রা করলে ইমানে সমস্যা হবে?অর্থাৎ কোনগুলোর বিপক্ষে বলে ফেললেও  অন্তত ইমান বাচবে আর কোন গুলের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না,এটা আমরা কিভাব বুঝবো?আমাদের দ্বারা সম্ভব? থাকলে যদি পদ্ধতি টা বলেদেন আমরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। অনেক ভয়ে থাকি কুফরি নিয়ে।ভয় নিজের ও নিজের পরিবারের জন্য।

২. কেও মনে করে য়ে , স্বামী তার স্ত্রীকে  হারাম মাল থেকে সদকা দিতে পরবে। এইটা কি তার কুফরির কারণ হতে পারে? এটাকি দ্বীনের অকাট্য বিষয়ের মাঝে পরে?

৩.আমার বাবা একদিন ব্যাংকে চাকরীজীবী একজনের আয় নিয়া কথা উঠার পরে বলেন," সে চাইলে সব বেতন তার স্ত্রীকে দিয়ে দিতে পারে, দিয়ে বলবে সব খরচ তুমি করো এগুলা তোমার" এমনই হয়তো একটা কথা বলেছিলেন। অনেক আগের কথা। হয়তো তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে এটা করলে আর সরাসরি হারাম থাকতেছে না। যতোটুকু মনে হচ্ছে তিনি এই মাসআলা জানেন না ভালো  করে, মনে করেছেন বউকে সদকা করলেই হবে। এর জন্য কি উনার কুফর হবে? আমার কি করনীয়?

৪. একবার আমার এক বন্ধু একটা অদ্ভুত ঘটনা শুনায় তার পর সে হেসে বলে এই ঘটনার রাবী দূর্বল (যে বলেছিলো সে সিএনজি চালক, মনে হচ্ছিলো বানোয়াট বলছে)  এইটা শুনে আমি হেসে দেই এবং আমিয়ো বলি,  যে রাবি দূর্বল। আসলে হাসির কারণ হলো তার হঠাৎ অন্য রকম শব্দের ব্যবহার করা। বাংলা ভাষায় ও হঠাৎ আনকমন শব্দের ব্যবহার শুনলে যেমন হাসি তেমন, এভাবে বলা বা হাসার ফলে কি ইমানে সমস্যা হবে? এই সব শব্দ এভাবে ব্যবহার করা যাবে?

৫. আজকে মিলাদুন্নআী উপলক্ষে কনফারেন্স করতেছিলো মাইকে। কি অনুষ্ঠান হচ্ছে তা না বুঝে আমার বউ বলে, "কি শুরু করলো এই খাটাসেরা"। তার পর তাকে বলি এভাবে বলো না, এর মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান করছে। কিছুক্ষন অন্য কথা বলার পর,হঠাৎ সে আবার বলে এরা "কি আজাইরা কাজ শুরু করছে" এটা বলে বললো "মাইকের শব্দ সে কিছু বুঝে না"।  তার এইসব কথায় কি কুফরি হবে? সে নামাজ পরে, দ্বীনের ব্যাপারেও আগ্রহী।

৬.একজন নামাজ পরে নিয়মিত কিন্তু মেয়েদের সাথে বাজে সম্পর্কে জড়িত থাকে, তার এই কাজের ফলে আমার আম্মা একদিন বলেছিলো, (কিছু মানুষকে দেখিয়ে) এরা নামাজ পরে না, তাও ভালো /তাও একদিকে ভালো, এইরকম কিছু এ্টা কথা,ৃনে পরছে না। এগুলোর জন্য কি কুফর হবে?

1 Answer

0 votes
by (574,470 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
মোল্লা আলী কারী রহঃ শরহুর ফিক্বহুল আকবারে “আহলে কিবলা” এর ব্যাখ্যায় লিখেন-
اعلم ان المراد باهل القبلة الذين اتفقوا على ما هو من ضروريات الدين كحدوث العالم وحشر الاجاد وعلم الله تعالى بالكليات والجزئيات وما اشبه ذلك من المسائل المهمات، فمن واذب طول عمره على الطاعات والعبادات مع اعتقاد قدم العالم ونفى الحشر او نفى علمه سبحانه وتعالى بالجزئيات لا يكون من اهل القبلة، وان المراد بعدم تكفير احد من اهل القبلة عند اهل السنة انه لا يكفر احد ما لم يوجد شيئ من امارات الكفر وعلاماته، ولم يصدر عنه شيئ من موجباته، (شرح الفقه الاكبر-189

ভাল করে জেনে রাখ যে, আহলে কিবলা দ্বারা উদ্দেশ্য হল ঐ ব্যক্তি, যে ঐ সকল আক্বিদাকে মান্য করে, যা দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়। যেমন পৃথিবী সৃজিত বস্তু, কিয়ামত, হাশর-নশর, আল্লাহ তাআলার ইলম সমস্ত দেখা অদেখা বস্তুর উপর বিস্তৃত। এমন ধরণের অন্যান্য আক্বিদা। যে ব্যক্তি সারা জীবন ইবাদত বন্দেগীতে কাটায়, কিন্তু এর সাথে পৃথিবী সৃজিত নয় বরং প্রাকৃতিক বলে বিশ্বাস করে, কিংবা কিয়ামতে মানুষের জীবিত হওয়াকে বা অথবা আল্লাহ তাআলার ইলম বিস্তৃত হওয়াকে অস্বিকার করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি আহলে কেবলার অন্তুভূক্ত নয়। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে আহলে কেবলাকে কাফের না বলার দ্বারা উদ্দেশ্য এটাই যে, এসব ব্যক্তিদের মাঝে কাউকে ততক্ষণ পর্যন্ত কাফের বলা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের থেকে এমন কোন কাজ সংঘটিত হয় যা কুফরীর আলামত বা কুফরকে আবশ্যক করে। (শরহুল ফিক্বহিল আকবার-১৮৯} 

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহঃ তার বিখ্যাত ফাতওয়া গ্রন্থ ফাতওয়া শামীতে উল্লেখ করেন-

لا خلاف في كفر المخالف في ضروريات الإسلام من حدوث العالم وحشر الأجساد ونفي العلم بالجزئيات وإن كان من أهل القبلة المواظب طول عمره على الطاعات كما في شرح التحرير (رد المحمتار، كتاب الصلاة، باب الإمامة، مطلب البدعة خمسة أقسام -2/300)

 আহলে কিবলার মধ্য থেকে যে ব্যক্তি দীর্ঘ জীবন পর্যন্ত ইবাদত বন্দেগীর করার পরও যদি পৃথিবী সৃজিত, সশরীরে হাশরের ময়দানে উঠতে হবে, বা আল্লাহ তাআলার জ্ঞান সর্বত্র বিস্তৃত এরকম আবশ্যকীয় দ্বীনী বিষয়কে অস্বিকার করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি যে, কাফের এতে কোন মতভেদ নেই। {ফাতওয়া শামী-২/৩০০} শরহে আকাইদে নাসাফিয়্যাহ এর ব্যখ্যাগ্রন্থ নিবরাস গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

اهل القبلة فى اصطلاح المتكلمين من يصدق بضروريات الدين (الى قوله) فمن انكر شيئا من الضروريات (الى قوله) لم يكن من اهل القبلة، ولو كان مجاهد بالطاعات وكذالك من باشر شيئا من امارات التكذيب كسجدة الصنم ولاإهانة بامر شرعى والإستهزاء عليه فليس من اهل القبلة ان لا يكفر بارتكاب المعاصى ولا بانكار الامور الخفية غير المشهورة هذا ما حققه المحققون، 

আহলে কিবলা মুতাকাল্লিমীন তথা আক্বায়িদবীদতের পরিভাষায় ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যিনি দ্বীনের আবশ্যকীয় সকল বিষয়কে বিশ্বাস স্বীকার করেন। জরুরিয়্যাতে দ্বীন তথা দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়ের কোন একটিকেও যদি অস্বিকার করে তাহলে সে আহলে কিবলা নয়। যদিও সে ইবাদত বন্দেগীতে খুবই তৎপর হয়। এমনিভাবে ঐ ব্যক্তি ও আহলে কিবলা নয়, যে কুফরী বা বাতিলের কোন একটি বিষয়ও করে থাকে, যেমন মুর্তিপূজা করা, অথবা শরয়ী কোন বিষয়কে ঠাট্টা করা, মজা করা, তাহলে এ ব্যক্তিও আহলে কিবলা নয়। আর আহলে কিবলাকে কাফির না বলার দ্বারা উদ্দেশ্য হল, গোনাহ করার কারণে কোন আহলে কিবলাকে কাফের বলা হবে না। সাথে এমন বিষয়কে অস্বিকার করলেও কাউকে কাফের বলা যাবে না যা জরূরিয়্যাতে দ্বীন তথা দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত নয়। {নিবরাস} 

আরো জানুনঃ- 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
দ্বীনের অকাট্য বিষয়, যেগুলোর বিপক্ষে বললে/অস্বীকার করলে/ঠাট্রা করলে ইমানে সমস্যা হবে,তাহা হলো কুরআন দ্বারা প্রমানীত কোনো বিধান।

তবে এক্ষেত্রে কুরআনের যেকোনো আয়াত,যেকোনো হাদীস অস্বীকার করলে/ঠাট্রা করলে ইমানে সমস্যা হবে।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

 قُلْ أَبِاللهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُوْلِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُوْنَ، لاَ تَعْتَذِرُوْا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيْمَانِكُمْ 

‘আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে তাঁর হুকুম-আহকামের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা কর না, ঈমান আনার পর তোমরা যে কাফির হয়ে গেছ’ (তওবা ৬৫-৬৬)। 

 فَنَذَرُ الَّذِيْنَ لاَ يَرْجُوْنَ لِقَاءَنَا فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ 

‘সুতরাং যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে না, আমি তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে ব্যতিব্যস্ত করে রাখি’ (ইউনুস ১১)। 

وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ آيَاتِ اللهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلاَ تَقْعُدُوْا مَعَهُمْ حَتَّى يَخُوْضُوْا فِيْ حَدِيْثٍ غَيْرِهِ إِنَّكُمْ إِذًا مِثْلُهُمْ إِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا-
‘আর কুরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারী করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহর আয়াত সমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রূপ করতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে। অন্যথা তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদেরকে জাহান্নামে একই জায়গায় সমবেত করবেন’ (নিসা ১৪০)। 

আরো জানুনঃ- 

(০২)
এইটা তার কুফরির কারণ হতে পারেনা।
এটা দ্বীনের অকাট্য বিষয়ের মাঝে পরেনা।

(০৩)
এর জন্য তার কুফর হবেনা। 

(০৪)
এভাবে বলা বা হাসার ফলে ইমানে সমস্যা হবেনা।
এই সব শব্দ এভাবে ব্যবহার করা উচিত নয়।

(০৫)
তার এইসব কথায় কুফরি হবেনা।

(০৬)
এগুলোর জন্য কুফরি হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...