আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
189 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (13 points)
১) যদি কেউ ধারনা করে যে, শ্রীঘই আমি  মারা যেতে পারি। কিংবা কারও মৃত্যু ডেট ফিক্স করে দেই ডাক্তারগণ। কিংবা অনেকে আশঙ্কা করে যে সে মারা যেতে পারে তবে তখন করনীয় কি???? কিভাবে  এ মুল্যবান সময়টা কাজে লাগানো যায়।
২)  আমার বিবাহ করা খুবই জরুরী কিন্তু আবার কোন আয় ইনকাম নেই। চেষ্টা করতেছি কিন্তু হচ্ছে না। কি আমলে রুজি রোজগার বৃদ্ধি পেতে পারে?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
সারা জীবন আল্লাহর হক ও বান্দার হক আদায় করতে চেষ্টারত থাকা অবস্থায় যখন অনুভব হয় যে, আমি হায়াতের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি বা সম্ভবত আমার মৃত্যুর সময় নিকটবর্তী হয়ে গেছে, তখন প্রতিনিয়ত খালেস দিলে তওবা চালিয়ে যাবে।

খুব লক্ষ্য করে দেখবে যে, আল্লাহর হক নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি থেকে কোনটা বা কোনটার আংশিক অনাদায় রয়ে গেছে কি-না? 

যদি থেকে থাকে তাহলে তার জন্য ওসিয়্যত করে যাওয়া জরুরী। যেমন, উমরী কাযা পড়ার পরেও হয়ত কিছু নামায বা রোযা রয়ে গেছে, হয়ত কোন বছরের যাকাত আদায় করা হয়নি বা ফরয হজ্জ আদায় করা হয়নি। 
তাহলে অসিয়্যতের মাধ্যমে সেগুলো আদায়ের বন্দোবস্ত করে যাওয়া জরুরী। 

এমনিভাবে এটাও দেখবে যে, বান্দার কোন হক রয়ে গেছে কি-না? বাপ-মায়ের নাফরমানী বা তাদের যথাযথ খেদমত না করা, স্ত্রীর মহর ও হক আদায় না করা, বোন, মেয়ে বা এ জাতীয় অন্য কারো প্রাপ্য হক ঠিকমত না দেয়া বা কারো ঋণ পরিশোধ না করা, অর্থ-সম্পদের ঋণ হোক বা তাদের জান মাল বা ইজ্জতের ক্ষতি করার ঋণ হোক। যেমন- অবৈধভাবে কারো দোষ চর্চা করা, তার ইজ্জতের ক্ষতি করা- এ ধরনের কোন ঋণ বা বান্দার হক রয়ে গেলে তাও দ্রুত পরিশোধ করার ব্যবস্থা করবে বা তাদের থেকে মাফ চেয়ে নিবে। 

অর্থ-কড়ির ঋণ টাকা-পয়সা দ্বারা শোধ করতে হবে। সম্পূর্ণ না পারলে যতটুকু সম্ভব তা-ই দিয়ে অবশিষ্ট অংশের জন্য মাফ চেয়ে নিতে হবে। এমনকি যদি মোটেও না দিতে পারা যায়, তবুও লজ্জা না করে মাফ চেয়ে নিবে। কারণ, দুনিয়ার মা’মুলী লজ্জার চেয়ে আখিরাতের আগুন কোটি গুণ ভয়াবহ ও মারাত্মক। কারো গীবত করে থাকলে বা মৌখিকভাবে কাউকে গালমন্দ করে কষ্ট দিয়ে থাকলে তাদের থেকে মাফ চেয়ে নিতে হবে। তাদের কেউ যদি মৃত্যুবরণ করে থাকে তাহলে তার ওয়ারিশদেরকে দিয়ে দেবে, আর যদি তাদের কাউকে না পায় তাহলে তার জন্য ইস্তিগফার করবে এবং সম্ভব হলে তার জন্য কিছু দান-খয়রাত করবে। ইনশাআল্লাহ তাতে সে খুশি হয়ে ঋণ মাফ করে দিবে।

★এ অবস্থায় রোগীর উযূ, নামায, সতর ইত্যাদির ব্যাপারে খেয়াল করা হয় না, অথচ এ অবস্থায়ও তার উপর এগুলো জরুরী। তাই মৃত্যুরোগীর নিকটাত্মীয়দের এগুলোর ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিত। (আহকামে মায়্যিত-২২২, ২১৯)

★মুমূর্ষাবস্থায় মৃত্যুরোগী এক তৃতীয়াংশের অতিরিক্ত সম্পদে কারো জন্য ওসিয়্যত করবে না। কারণ, মৃত্যুরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর এর অতিরিক্ত সম্পদ থেকে তার মালিকানা খতম হয়ে যায়। (আহকামে মায়্যিত-২২৬)

★মুমূর্ষাবস্থায় সন্তানাদিকে সামনে এনে বিভিন্ন সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। যেমন: টাকা কোন্ ব্যাংকে রেখেছ? অমুক জমির পজিশন কি? ইত্যাদি। এগুলো একেবারেই অনুচিত। কারণ, এর দ্বারা মৃত্যুরোগীর অন্তর দুনিয়ামুখী হয়ে যায়। আর জীবনের শেষ মুহূর্তে তার অন্তরকে দুনিয়ামুখী করা মারাত্মক ভুল। (আহকামে মায়্যিত-২২৮) 

★মুমূর্ষাবস্থায় নিজের কোন অঙ্গ যেমন: চক্ষু, কিডনী ইত্যাদি দানের ওসিয়্যত করে যাবে না। কারণ, কারো কোন অঙ্গ তার মালিকানাধীন নয়, বরং সবকিছুতেই মালিকানা একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের। মানুষকে সাময়িকভাবে হেফাজত করা ও দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণে ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হয়েছে মাত্র। (কানযুল উম্মাল: ২/ ৯৩, ফাতাওয়ায়ে শামী-৫/ ৫৮)

ঐ মুহূর্তে নিম্নোক্ত আমলগুলো করবে বা অন্যের মাধ্যমে করিয়ে নিবেঃ-

(১) নিজে বেশি বেশি ইস্তিগফার, কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকবে, আর মৃত্যুর পর তাকে কেন্দ্র করে যাতে কোন রকম শরীআত বিরোধী কাজকর্ম না হয়, তার আত্মীয়-স্বজনদের কারো থেকে মৃত ব্যক্তির জন্য কষ্টদায়ক কোন কাজ যেমন: আওয়াজ করে ক্রন্দন করা, বুক-মাথা চাপড়ানো, পরিধেয় বস্ত্র ছিঁড়ে ফেড়ে ফেলা, মুখে জাহিলী যুগের শব্দ উচ্চারণ করা ইত্যাদির কোন কিছু যেমন প্রকাশ না পায়, বিশেষ করে দাফনে যাতে বিলম্ব না করা হয় বরং তাকে তাড়াতাড়ি তার ঠিকানা বেহেশতের বাগান কবরে পৌঁছে দেয়া হয় এবং তিন দিনা, সাত দিনা, ত্রিশা, চল্লিশা, কুলখানী বা অর্থের বিনিময়ে খতম, মীলাদ ইত্যাদির আয়োজন যেন কিছুতেই না করা হয়, সে জন্য আত্মীয়-স্বজনকে জোর তাকিদমূলক ওসিয়্যত করে যাবে। বরং আগেই ওসিয়্যত নামা লিখে যাবে। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং ১২৯৪, ১২৮৭, ১৩১৫, ২৬৯৭, ২৭২ৎ৩৮, মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৯৩৩, ১৭১৮, ১৬২৭)

(২) হায়াতে ছেলেদেরকে কোন কিছু হেবা করলে মেয়েদেরকেও সেই পরিমাণ হেবা করবে। তবে সন্তানাদির কেউ যদি বেশি দীনদার বা আলেম হয় এবং সে আর্থিক দিক দিয়ে অসচ্ছল হয়, আর অন্যরা সম্পদশালী হয়। কিংবা এমন হয় যে, তাদেরকে সম্পদ হেবা করে গেলে আল্লাহর নাফরমানীতে তা খতম করে ফেলবে, তাহলে এ ক্ষেত্রে দীনদার ছেলেকে সম্পদ বেশি দিলে শরীআতে কোন নিষেধ নেই। বরং এটা হবে উত্তম কাজ। কারণ, এ সুরতে ঐ সম্পদ আল্লাহর দীনের কাজে ব্যয় হবে। (আল বাহরুর রায়িক ৭/ ৪৯০)

(৩) যথাসম্ভব সর্বক্ষণ কোন না কোন আমলের মধ্যে নিমগ্ন থাকার চেষ্টা করবে। বিশেষ করে নিম্নোক্ত আমলগুলো গুরুত্ব সহকারে করবে:

(ক) বেশি বেশি কালিমায়ে তায়্যিবা ও কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করবে। (মুসতাদরাকে হাকেম-হাদীস নং-১২৯৯, মুসনাদে আহমদ-হাদীস নং-২২০৯৫, আবু দাউদ শরীফ- হাদীস নং-৩১১৬)

(খ) নিম্নের এই দু‘আ ৪০ বার পাঠ করবে-

لَا اِلٰهَ إِلَّا اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّـيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَالله اَكْبَرُ- لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، لَا اِلٰهَ إِلَّا اللهُ لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ لَا اِلٰهَ إِلَّا اللهُ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ

উপরোক্ত দু‘আ পাঠ করে মৃত্যুবরণ করলে বিছানায় মৃত্যুবরণ করেও শাহাদাতের মউত নসীব হয়। আর ঐ অসুখে মৃত্যু না আসলেও উক্ত দু‘আ পাঠের ফযীলতে সমস্ত সগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যায়।  (মুসতাদরাকে হাকেম-১/ ৫)

(গ) মৃত্যুর আলামত প্রকাশ পেলে কিবলামুখী হয়ে ডান কাতে শুয়ে পড়বে, বা অন্য কাউকে শুইয়ে দিতে বলবে এবং নিম্নোক্ত দু‘আ পাঠ করবে।

اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ فِىْ غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَسَكَرَاتِ الْمَوْتِ- 

উক্ত দু‘আ পাঠ করলে মৃত্যু কষ্ট অনেকটা লাঘব হয়। (তিরমিযী শরীফ-১/ ১৯২)

বি.দ্র.- মৃত্যুর আলামতসমূহ নিম্নরূপঃ

(১) নাক একদিকে সামান্য বাঁকা হয়ে যাওয়া।

(২) শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত বেগে প্রবাহিত হওয়া ও ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেয়া।

(৩) পা ঢিলা হয়ে যাওয়া এবং দাঁড়াতে না পারা।

(৪) কানপট্টি ভেঙ্গে যাওয়া। (আদ্ দুররুল মুখতার-২/ ১৮৯, আহকামে মায়্যিত-২২৬)

(ঘ) মৃত্যুর আলামত পুরোপুরি প্রকাশ পেলে পড়তে থাকবে-

اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِىْ وَارْحَمْنِىْ وَاَلْحِقْنِىْ بِالرَّفِيْقِ الْاَعْلٰى-

এবং সেই সাথে কালিমায়ে তায়্যিবা বা অন্য কোন যিকির করতে চেষ্টা করবে। (তিরমিযী শরীফ-২/১৮৭, আবু দাউদ শরীফ-হাদীস নং-৩১১৬)
(কিছু তথ্য সংগৃহীত)


(০২)
আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে হবে,দান সদকাহ করতে হবে,আল্লাহর কাছে দোয়া চালিয়ে যেতে হবে,নিজের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
ইনশাআল্লাহ সফলতা মিলবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...