بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
https://www.ifatwa.info/50907/নং
ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মনের মাঝে শুধুমাত্র বাজে চিন্তা বা কুফরী
চিন্তা আসলেই ব্যক্তি কাফের হয়ে যায় না। বরং ইচ্ছাকৃতভাবে জেনে শুনে মুখ দিয়ে কুফরী
কথা উচ্চারণ করলে ব্যক্তি কাফের হবে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ، قَالَ جَاءَ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
فَسَأَلُوهُ إِنَّا نَجِدُ فِي أَنْفُسِنَا مَا يَتَعَاظَمُ أَحَدُنَا أَنْ
يَتَكَلَّمَ بِهِ . قَالَ ” وَقَدْ وَجَدْتُمُوهُ ” . قَالُوا نَعَمْ . قَالَ ”
ذَاكَ صَرِيحُ الإِيمَانِ ”
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা
করেন যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় সাহাবী তাঁর সমীপে এসে বললেন, আমাদের অন্তরে এমন কিছু সংশয়ের
উদয় হয়, যা আমাদের কেউ মুখে উচ্চারণ করতেও মারাত্মক মনে করে। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেনঃ সত্যই তোমাদের তা হয়? তারা জবাব
দিলেন, জ্বী, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটই স্পষ্ট ঈমান। (কারণ ঈমান আছে বলেই সে সম্পর্কে ওয়াসওয়াসা
ও সংশয়কে মারাত্মক মনে করা হয়।) [সহীহ মুসলিম-১/৭৯, হাদীস নং-১৩২, ইফাবা, হাদীস নং-২৪০]
عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللهَ تَجَاوَزَ لِي
عَنْ أُمَّتِي مَا وَسْوَسَتْ بِهِ صُدُورُهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَكَلَّمْ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (আমার বরকতে)
আল্লাহ আমার উম্মতের অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা (পাপের ভাব ও চেতনা) মাফ করে দিয়েছেন। যতক্ষণ
পর্যন্ত না সে তা কাজে পরিণত করে অথবা মুখে বলে। [সহীহ বুখারী-১/৩৪৩, হাদীস নং-২৫২৮, ইফাবা, হাদীস নং-২৩৬১]
শয়তানের উক্ত ওয়াসওয়াসাকে
প্রতিহত করার লক্ষে নিমোক্ত হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করতে পারেন–
১. আনাস রাযি. বলেন, রাসুল ﷺ (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় এই দোয়া করতেন, يَا
مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِىْ عَلىٰ دِيْنِكَ
হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর আপনার দীনের উপর দৃঢ় করে
দিন।
আনাস রাযি. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর
রাসুল! আমরা আপনার উপর এবং আপনার আনিত শিক্ষার উপর ঈমান এনেছি। এখন আপনার মনে কি আমাদের
সম্পর্কে কোনো সন্দেহ আছে? ( যে বেশি বেশি এই দোয়া করেন!)
রাসুল ﷺ উত্তর দিলেন হ্যাঁ! সব অন্তর আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে পড়ে
আছে। আল্লাহ যেভাবে চান, এগুলোকে পরিবর্তন করেন। (তিরমিযি
২১৪০ তাকদির অধ্যায়)
সুতরাং এই হাদিসের শিক্ষা
অনুযায়ী আপনিও উক্ত দোয়া অধিকহারে করুন।
২. এই রোগ থেকে আল্লাহর কাছে
আরোগ্য লাভের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করুন। বিশেষত যে সকল স্থানে শয়তানের
কুমন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভের জন্য আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনার দোয়া শিক্ষা দেয়া হয়েছে, সেখানে
ওই দোয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিন। যেমন,
টয়লেটে ঢোকার সময় পড়ুন–اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ
مِنْ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ ( হে আল্লাহ! আমি
আপনার নিকট অপবিত্র জিনিস ও শয়তান থেকে তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি।)
গোস্বা উঠলে পড়ুন– أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ
الشَّيْطَانِ الرَّجِيم (আমি আল্লাহর নিকট
বিতাড়িত থেকে তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি।)
স্ত্রীসহবাসের সময় পড়ুন-–بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا
الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
(আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি
শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে তুমি যা দান করবে তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ।)
ঘরে প্রবেশ করার পর এবং ফজর
ও মাগরিবের নামাজের পর পড়ুন– أَعُوذُ بِكلِمَاتِ الله التّامّاتِ
مِن شَرّ مَا خَلَقَ (আমি আল্লাহ তাআলার
পূর্ণাঙ্গ কালামের কাছে তাঁর সৃষ্টির সকল অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই।)
সকাল ও সন্ধ্যায় পড়ুন-–أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ
التَّامَّةِ، مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ
وَأَنْ يَحْضُرُونِ (আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ
কালেমার আশ্রয় প্রার্থনা করি তার অসম্ভষ্টি ও শাস্তি থেকে এবং তার বান্দার অনিষ্ট
থেকে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে ও শয়তানের সংস্পর্শ থেকে।)
ফজর ও মাগরিবের পর এবং ঘুমানোর আগে সূরা ফালাক ও নাস পড়ুন। হাদিসে
এসেছে, উকবা ইবনে আমের রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ﷺ বলেছেন,
أَلَمْ تَرَ
آيَاتٍ أُنْزِلَتِ اللَّيْلَةَ ، لَمْ يُرَ مِثْلُهُنَّ قَطُّ ؟ قُلْ أَعُوذُ
بِرَبِّ الْفَلَقِ ، وَقُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ
তোমার কি জানা নেই আজ রাতে
আমার ওপর যে আয়াতগুলো নাজিল হয়েছে এগুলোর মতো কোনো আয়াত দেখা যায় নি। আর তা হলো কুল
আয়ুজু বি রাব্বিল ফালাক ও কুল আয়ুজু বি রাব্বিন নাস। (মুসলিম ৮১৪)
৩. বেশী করে আল্লাহর জিকির
করুন। কেননা, জিকির শয়তান থেকে আত্মরক্ষার শক্তিশালী
দুর্গ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اسْتَحْوَذَ
عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنسَاهُمْ ذِكْرَ اللَّهِ أُوْلَئِكَ حِزْبُ
الشَّيْطَانِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُونَ
শয়তান তাদেরকে বশীভূত করে
নিয়েছে, অতঃপর আল্লাহর জিকির ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান, শয়তানের
দলই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা মুজাদালাহ ১৯)
৪. ঈমান ও ইসলামের পরিবেশে
সময় ব্যয় করুন। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
فَمَنْ
أَرَادَ مِنْكُمْ بَحْبَحَةَ الْجَنَّةِ فَلْيَلْزَمُ الْجَمَاعَةَ، فَإِنَّ
الشَّيْطَانَ مَعَ الْوَاحِدِ، وَهُوَ مِنَ الِاثْنَيْنِ أَبْعَدُ
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি
জান্নাতের মাঝখানে থাকতে ইচ্ছুক, সে যেন অবশ্যই জামাতবদ্ধ জীবন
যাপন করে। কেননা শয়তান একাকী মানুষের সঙ্গী এবং দু’জন থেকে সে অপেক্ষাকৃত দূরে থাকে।
(তিরমিযি ২২৫৪)
★প্রিয় প্রশ্নকারী
দ্বীনি ভাই/বোন!
প্রশ্নের বিবরণ মতে আপনি কাফের
হয়ে যাননি। তবে যেই হারাম কাজটি করছেন তা যদি হারাম মনে করেই করেন
তাহলে কবীরা গুনাহ হবে। যা থেকে তওবা করা আবশ্যক। কিন্তু হারাম কাজকে কেউ হালাল
মনে করে করলে ঈমান নষ্ট হবে। আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে বাজে চিন্তা ও খারাপ কল্পনা
থেকে বাঁচতে উপরেল্লিখিত আমলগুলি করতে থাকুন।