আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
156 views
in পবিত্রতা (Purity) by (23 points)

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় ইসলামিক ফতোয়া ওয়েব সাইডের দ্বীনী ওলামায়ে কেরাম আল্লাহ পাক আপনাদের নেক হায়াত দান করুন। সম্প্রতি কালে একটা জিনিস আমরা লক্ষ করছি হক্কানী ওলামায়ে কেরাম পীর মাশায়েখদের বিরুদ্ধে , তাদের সহবতে যারা সময় দেন তাদের বিরুদ্ধে এক শ্রেনীর মানুষ বিভিন্ন গালি গালাজ, দেওবন্দ , সারছিনা, উজানী, চরমোনাই ইত্যাদি আলেমদের গালাগালি করে আর পীর ব্যবসা ইত্যাদি নানান বাজে কথা বলে যা আপনাদের অজানা নেই। তারা বলে পীর মুরিদি, এসব আত্মার চিকিৎসা কিছু না , খালি টাকার ব্যাবসা। আমি আপনাদের কাছে আকুল আবেদন জানাবো আপনারা যদি ##মানুষের আত্মিক পবিত্রতা ও আল্লাহওয়ালাদের সহবত সম্পর্কে কুরআন হাদিস থেকে বিস্তারিত আলোচনা করতেন তাহলে আমরা অনেক উপকৃত হতাম। ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম

1 Answer

0 votes
by (62,670 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/5483/?show=5493#a5493 নং ফাতওয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,

পবিত্র কাবা ঘর নির্মাণ করার সময় হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আ. ও হযরত ইসমাঈল আ. আল্লাহ তাআলার দরবারে এ দুআও করেছিলেন যে, (তরজমা) হে আমাদের রব! তাদের নিকট তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যিনি তাদের সামনে আপনার আয়াতসমূহ পাঠ করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন।- সূরা বাকারা : ১২৯

 

উপরোক্ত আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাতের তিনটি উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়েছে :

এক. আয়াত পাঠ করা,

দুই. কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেওয়া ও

তিন. মানুষের স্বভাব-চরিত্রের তাযকিয়া করা।

 

তাযকিয়ার অর্থ হচ্ছে, বাহ্যিক ও আত্মিক অপবিত্রতা থেকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করা। বাহ্যিক অপবিত্রতার অর্থ তো সাধারণ মুসলমানেরও জানা আছে। আর আত্মিক অপবিত্রতা হচ্ছে, কুফর, শিরক, গায়রুল্লাহর উপর ভরসা, ভুল আকিদা-বিশ্বাস এমনিভাবে অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ, দুনিয়ার মোহ ইত্যাদি।

 

قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ [٨٧:١٤

নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে,যে তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে। {সূরা আলা-১৪}

 

قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا [٩١:٩

যে নিজেকে শুদ্ধ করে,সেই সফলকাম হয়। {সূরা শামস-৯}

 

আত্মশুদ্ধির উপায়ঃ

প্রথমত: নিজের গোনাহর ব্যাপারে অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করুন। কেননা আত্মশুদ্ধির প্রথম ধাপই হল, তাওবা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ

মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে তওবা কর-আন্তরিক তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।’ (সূরা আত-তাহরীম ০৮)

 

দ্বিতীয়ত: আসলে আত্মশুদ্ধির এই পবিত্র সফরের মোড়ে মোড়ে প্রয়োজন হয় একজন পূর্ণাঙ্গ (কামেল) শায়েখের সাহচর্য বা নির্দেশনা। কারণ আত্মিক ব্যাধিগুলো চিহ্নিত করা যার তার পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা এগুলো সাধারণত অতিসূক্ষ্ম ও অস্পষ্ট হয়ে থাকে। অনেক সময় ব্যাধি বাহ্যতঃ ভালো গুণ বলে প্রতিভাত হয়। অথচ উভয়ের মাঝে তারতম্য করা কঠিন। যেমন অহংকার ও দাম্ভিকতা হারাম। এটা সব ধরনের আত্মিক ব্যাধির মূল উৎস, যা থেকে মুক্তি লাভ খুবই জরুরি। অন্যদিকে আত্মমর্যাদাবোধ একটা মহৎ গুণ। এ গুণ অর্জন করা অপরিহার্য। এই বৈশিষ্ট্য দুটি বাহ্যত একই রকম মনে হলেও বাস্তবে উভয়ের মধ্যে বিরাট তফাৎ রয়েছে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এ দু’য়ের মাঝে তারতম্য করার শক্তি সবার নেই। এ ক্ষেত্রে কোনো কামেল বুজুর্গের সান্নিধ্য কিংবা নির্দেশনাই সঠিক সমাধান।

 

যেহেতু প্রবৃত্তির ইসলাহ বা আত্মশুদ্ধির জন্য একজন শায়খ বা মুরব্বির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য, তাই ইসলামি-শরিয়তে নেককার ও ওলামায়ে কেরামের সংসর্গ অবলম্বনের প্রতি জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে অসৎ সঙ্গ বর্জনের জন্যও কঠোরভাবে নির্দেশ করা হয়েছে।

 

যেমন  পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেনوَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ

যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে।’ (সূরা লোকমান ১৫)

 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।’ (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

 

বাইয়াত সংক্রান্ত  সহীহ বুখারীর এক হাদীসে এসেছে-

উবাদা ইবনুস সামিত রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পার্শ্বে একদল সাহাবীর উপস্থিতিতে তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা আমার কাছে এই মর্মে বায়আত গ্রহণ কর যে, আল্লাহ্র সঙ্গে কিছু শরীক করবে না, চুরি করবে না, যিনা করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দেবে না এবং নেক কাজে নাফরমানী করবে না। তোমাদের মধ্যে যে তা পূরণ করবে, তার বিনিময় আল্লাহ্র কাছে। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং দুনিয়াতে তার শাস্তি পেয়ে গেলে, তবে তা হবে তার জন্য কাফ্ফারা। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং আল্লাহ্ তা অপ্রকাশিত রাখলে, তবে তা আল্লাহ্র ইচ্ছাধীন। তিনি যদি চান, তাকে মাফ করে দেবেন আর যদি চান, তাকে শাস্তি দেবেন। আমরা এর উপর বায়আত গ্রহণ করলাম। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৭)

 

আশরাফ আলী থানবী রহঃ পীর মুরীদির বিষয়ে পরিস্কার ভাষায় বলেছেন যে, পীরের কাছে বাইয়াত হওয়ার বিষয়টি সর্বোচ্চ মুস্তাহাবের পর্যায়ে। কাজেই এটিকে কাজে-বিশ্বাসে অধিক মর্যাদা দেয়া, যেমন বাইআতকে নাজাতের শর্ত মনে করা অথবা বাইআত পরিত্যাগকারীকে তিরস্কার করা এ সবই বিদআত ও দ্বীনী বিষয়ে সীমালঙ্ঘণ ছাড়া কিছু নয়। {ইমদাদুল ফাতওয়া-৫/২৩৭-২৩৮

 

বিজ্ঞ উলামাদের অনুসরণের ব্যাপারে আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহঃ লিখেন-

فَيَجِبُ عَلَى الْمُسْلِمِينَ -بَعْدَ مُوَالَاةِ اللَّهِ تعالى وَرَسُولِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- مُوَالَاةُ الْمُؤْمِنِينَ كَمَا نَطَقَ بِهِ الْقُرْآنُ. خُصُوصًا الْعُلَمَاءُ, الَّذِينَ هُمْ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ الَّذِينَ جَعَلَهُمْ اللَّهُ بِمَنْزِلَةِ النُّجُومِ, يُهْتَدَى بِهِمْ فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ . وَقَدْ أَجْمَعَ الْمُسْلِمُونَ عَلَى هِدَايَتِهِمْ وَدِرَايَتِهِمْ.

إذْ كَلُّ أُمَّةٍ -قَبْلَ مَبْعَثِ نبيِّنا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- فَعُلَمَاؤُهَا شِرَارُهَا, إلَّا الْمُسْلِمِينَ فَإِنَّ عُلَمَاءَهُمْ خِيَارُهُمْ؛ فَإِنَّهُمْ خُلَفَاءُ الرَّسُولِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أُمَّتِهِ, والمحيون لِمَا مَاتَ مِنْ سُنَّتِهِ. بِهِمْ قَامَ الْكِتَابُ, وَبِهِ قَامُوا, وَبِهِمْ نَطَقَ الْكِتَابُ وَبِهِ نَطَقُوا.

অনুবাদ- কুরআনে কারীমের ভাষ্য অনুযায়ী মুসলমানদের উপর অপরিহার্য যে, তারা আল্লাহ তাআলা ও তদীয় রাসূল সাঃ এর মোহাব্বতের পর মুমীনদের সাথে মোহাব্বত ও হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক রাখবে। বিশেষতঃ উলামায়ে কেরামের সাথে। যারা নবীগণের ওয়ারিস তথা উত্তরসূরী। আল্লাহ তাআলা যাদেরকে বানিয়েছেন নক্ষত্রতূল্য। যাদের মাধ্যমে জল ও স্থলের ঘোর অন্ধকারে মানুষ হেদায়াতের আলো লাভ করে। যাদের ব্যাপারে মুসলমানরা একমত যে, তারা রয়েছেন জ্ঞান ও হেদায়াতের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত।

 

উল্লেখ্য যে মহিলারা  কারো হাতে বাইয়াত গ্রহন করবেনা, তারা হক্কানী আলেমদের কিতাবাদী পড়বেকোনো শায়েখ থেকে স্বামীর মাধ্যমে, চিঠির মাধ্যমে সবক নিতে পারবে।

আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/5483/?show=5493#a5493

প্রচলিত পীর-মুরিদি সম্পর্কে জানুন- https://ifatwa.info/19319/?show=19319#q19319

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

নি:শন্দেহে পীর মুরিদি কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হক্কানী পীরের হাতে বাইয়াত গ্রহণ এবং তাদের সোহবতে কিছু দিন অবস্থান করে আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করা এটা কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাই পীর-মরিদি কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় এ জাতীয় কথা বার্তা বলা নি:সন্দেহে বাড়া বাড়ি ও কুরআন হাদীস বিরোধী কথা বার্তা। সুতরাং এ জাতীয় কথা বার্তা পরিহার করা চায়।

 

উল্লেখ্য যে, উত্তর পত্রে শব্দ উল্লেখের লিমিট থাকার কারণে বিস্তারিত উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়নি। সুতরাং বিস্তারিত উত্তরের জন্য উক্ত লিংকে প্রবেশ করে দেখতে পারেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by (23 points)
মাশাআল্লাহ, অনেক সুন্দর আলোচনা করেছেন হজরত। আমার আর এ বিষয়ে আর একটি বিষয় জানার আছে। আমরা অনেক সময় দেখি চরমোনাই, উজানী পীর সাহেব দা,বা, গণ যখন বয়ান করেন, তখন অনেকে লাফালাফি করেন , জিকিরের সময় লাফালাফি করেন বাঁশে উঠে যান, অনেক সময় হুজুরদের মাইক ছিনিয়ে নেয়। আসলে এটা কি আর কেনো এরা এমন করে?? যদি বিস্তারিত বলতেন তাহলে বাতিলদের প্রশ্নের আমিও জবাব দিতে পারতাম। ১। এসব কি আর কেনো এরা এমন করে , ২। আর এটা কি কুরআন সুন্নাহ ইজমা কিয়াস দিয়ে আলোচনা করলে একটু সুবিধা। বাতিলেরা সব কিছুই শুধু কুরআন আর হাদিসে খোঁজে । ভালো থাকবেন। দোয়া চাই। আচ্ছালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 113 views
...