আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
5,382 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (18 points)
reshown by
সম্মানিত শায়েখ,
আমি গত সাড়ে তিন বছর যাবত বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক। স্নাতক শেষ করে বছর তিনেক বেকার থাকার পর আমি এখন স্বচ্ছল। মাসে কম-বেশি লাখ তিনেক মত আয় আমার গত বছর থেকে। আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর পেলে কৃতজ্ঞ হব।

১. আমাদের বিয়ের সময় কাবিনে উল্লেখ ছিল যে স্ত্রীর ভরনপোষণ আমি আদায় করব। বেকার থাকার কারণে আমি দিতাম না।স্ত্রীও তখন কোনো দাবী করে নি। কিছু দিন সংসার করার পর, পারিবারিক এক সমস্যার সূত্র ধরে আমার মা আমার স্ত্রীর বাবাকে ফোন করে আমার স্ত্রীকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যেতে বলে। সেই পারিপার্শ্বিক ঘটনার জেরে মোটামুটি ১০ মাস আমার স্ত্রীর সাথে কোনো যোগাযোগ হয় নি। এ সময়ের এক পয়সা খরচ আমি তাকে দেয় নি। পরবর্তীতে তাকে বুঝিয়ে সংসারে আনার পর আমার ক্ষুদ্র স্বামর্থ অনুযায়ী এক সঙ্গে থেকেছি। সত্যি বলতে, আমি নিজে ফুটপাতের ৫০০ টাকার পায়জামা-পান্জাবি সেট পড়তাম। এখনও ৫০০-১০০০ এর মধ্যে প্যান্ট কেনার চেষ্টা করি। তবে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিভিন্ন সময় অনেক আত্মীয় দামী জিনিস দিলে পড়ি।
আমি বিদেশে আসার সময় স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ি রেখে আসি, যেহেতু সে সন্তান সম্ভবা ছিলেন। তখন থেকেই যেহেতু আমার আয়রোজগার শুরু হয়েছে, আমি তাকে হাজার পাচেক টাকা হাত খরচ দিতে শুরু করলাম।
আমার স্ত্রী একদিন আব্দুর রাজ্জাক হুজুরের ফতোয়া দেখালেন, সেখানে হুজুর বলেছেন যে স্ত্রীকে ৩ দিনের বেশি বাপেরবাড়ি রাখলে তার খাওয়ার খরচ দেয়া লাগবে যেহেতু ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর।
আমার সন্তান জন্ম লাভের পর থেকে আমি শ্বশুরকে হাজার দশেক টাকা পাঠাতে শুরু করলাম। আমার খাওয়ার খরচও কম বেশি এরকমই।
কিন্তু স্ত্রী এতে নারাজ।সে অনলাইনে বিভিন্ন পড়াশোনার জন্য তার খরচ হয় দাবী করায়, গত মাস থেকে তাকে হাত খরচও দিচ্ছি হাজার পাচেক। বলেছিলাম আরো লাগলে যেন জানায়।
কিন্তু অবাক ব্যাপার যে সে আরো দাবি করছে। আমার বিয়ে হয়েছে সাড়ে তিন বছর হলো, বিয়ের সময় একজন একটা জিলবাব দিয়েছিল আমার স্ত্রীকে; পাশাপাশি আমার স্ত্রী নিজের টাকায় আরো দু-একটি কিনেছে। আমি ৩-৪ টা গজ কাপড়ের জামা ছাড়া আর কিছু দিই নি। এক ভাইয়ের স্ত্রীর জন্য কয়েকদিন আগে বোরখা কিনে গিফট করার সময় আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম লাগবে কি না, সে বলেছিল লাগবে না।
অথচ ইদানীং সে সাড়ে চার হাজার টাকার একটা জিলবাব কিনতে চাচ্ছে, সে বলতেছে যে এত কম দামে মিশরীয় জিলবাব আর পাওয়া যাবে না তাই কিনবে।
আরো দাবী করতেছে যে অনলাইনে রান্না কোর্স করতেছে তাই অনেক জিনিস কিনতে হবে। তবে সে একটু মিতব্যয়ীতা দেখায়ে ইলেক্ট্রিক ওভেন না কিনে সাশ্রয়ে গ্যাস ওভেন কিনতে চাচ্ছে।
হুজুর স্ত্রীর এত অহেতুক দাবি দাওয়া নাকচ করে এক টাকাও দেয় নি। এতে কি আমার পাপ হবে?

২. আমার স্ত্রী যেহেতু আমার দেয়া টাকায় সন্তুষ্ট না, সে একটা ল্যাপটপ চাচ্ছে যেন অনলাইনে দ্বীনি কিছু কাজ আর কিছু আয় রোজগার করতে পারে টুকটাক। আমি এটা দিতে ইচ্ছুক না, তাই সরাসরি না বলে অজুহাত দেখাচ্ছি। হুজুর, এতে কি গুনাহ হবে?

৩. যেই সময় আমার সামর্থ্যহীনতার জন্য ভরোনপোষন দিই নি, এখনকি সেটা আদায় করতে হবে?

৪. আমার স্ত্রীর ইচ্ছে ছিল মোহর হিসেবে সে হজ করার খরচ নিবে। অত টাকা আমার ছিল না। আমার মা তার গহনার কিছু অংশ দিয়েছিলেন মোহরে ফাতেমী আদায় করার জন্য।যেহেতু দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব ঠিকঠাক করা হয়েছিল, তাই ঘটকের পিড়াপিড়িতে মোহরে ফাতেমীতে রাজি হন পাত্রীপক্ষ।আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে ছেলের সামর্থ্য হলে ভবিষ্যতে অনেক হজ করা যাবে। কোনো কথা দেয়া হয় নি এই মর্মে। আমি আমার স্ত্রীকে পাসপোর্ট করে দিয়েছি এবং বলেছি যে উমরার টাকা রেডি। এখন কোনো কারণে যদি ডিভোর্স হয়ে যায় আমাদের তাহলে কি হজ-উমরার টাকা তাকে দিয়ে দিতে হবে?
৫. আল্লাহ আমাকে অনেক সামর্থ্য দিয়েছেন, সেই সুবাদে ভাই- খালাত ভাইরা কম্পিউটার, ক্যামেরা এসব দামী জিনিস গিফট চাইলেও দিয়ে দিয়। কিন্তু আমি নিজের খাওয়া-পরাতে কম খরচ করি। এখন আমার স্ত্রীকে কিভাবে নসিহত করব এ ব্যাপারে একটু পরামর্শ চাই।
৬. আমার স্ত্রী ভেবেছিলেন যে পাত্র দ্বীনদার, তাই বরযাত্রী অধিক হতে পারে এরকম ধারণাও করেনি। আমাদের বাসা থেকে ৭০ জন মত যেতে চাইলে আমার শ্বশুর তার সম্মান বাচাতে রাজি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে আমি জানতে পারি যে আপ্যায়নের পুরো টাকায় একদিনের মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার করে বহু কস্টে যোগাড় করেছিলেন শ্বশুর।
বিয়ের মাস ছয়েক পরে, আমার ফুপা শ্বশুরকে ফোন করে যৌতুকের কথা বলে।সেই জন্য আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে ৩ লাখ টাকার ফার্নিচার বানানো হয়। ওগুলো আমার স্ত্রী আনতে রাজি না। আমি বা আমার মা বাবা এ ব্যাপারে কিছু বলিনি শ্বশুর বাড়িতে। কিন্তু উনাদের বাড়িতে ওগুলো শুধু শুধু নস্ট হওয়ার থেকে যদি আমাদের উপহার দেন, তাহলে তো গ্রহণ করা উচিৎ। আমার স্ত্রী দাবি করে যে বরযাত্রী আর যৌতুক চেয়ে তার বাবার ওপর জুলুম করা হয়েছে। সে কি ঠিক বলে?

জাযাকাল্লাহ

1 Answer

+2 votes
by (573,240 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
বিয়ের সাথে সাথেই স্বামীর উপর স্ত্রীর বাসস্থান এবং ভরণপোষণ ওয়াজিব। (ভরণপোষণের ভিতরে, খাবার ও কাপড় অন্তর্ভুক্ত এবং কেউ কেউ প্রয়োজনীয় হত খরচকেও ভরণপোষণের অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন।) 

বাসস্থানের ধরণ কি রকম হওয়া চাইঃ স্ত্রীকে পৃথক ঘর দিতে হবে, নাকি পৃথক বাসা-বাড়ি দিতে হবে?
এ সম্পর্কে ইবনে আবেদীন শামী রহ.বলেনঃ-
قُلْت: وَالْحَاصِلُ أَنَّ الْمَشْهُورَ وَهُوَ الْمُتَبَادَرُ مِنْ إطْلَاقِ الْمُتُونِ أَنَّهُ يَكْفِيهَا بَيْتٌ لَهُ غَلَقٌ مِنْ دَارٍ سَوَاءٌ كَانَ فِي الدَّارِ ضَرَّتُهَا أَوْ أَحْمَاؤُهَا.
আমি মনে করি ফুকাহায়ে কিরামদের আলোচনা থেকে এটাই বুঝা যাচ্ছে যে,বাসস্থানের জন্য পৃথক একটি রুম-ই যথেষ্ট হবে, যদি সেই রুমের সমস্ত কর্তৃত্ব স্বীকে দিয়ে দেয়া হয় ,চায় ঐ বাড়ির অন্যান্য রুম গুলাতে স্বামীর আত্বীয়-স্বজন থাকুক অথবা স্বামীর অন্যকোনো স্ত্রী(সতীন)থাকুক।এতে কোনো অসুবিধা নেই (যদি শরয়ী অন্যান্য বিধি-বিধান লঙ্ঘনের আশংকা না থাকে)
لَا يَكْفِي ذَلِكَ إذَا كَانَ فِي الدَّارِ أَحَدٌ مِنْ أَحْمَائِهَا يُؤْذِيهَا، وَكَذَا الضَّرَّةُ بِالْأَوْلَى
যদি স্বামীর আত্বীয়-স্বজন স্ত্রীকে কোনো কষ্ট দেয় অথবা শরয়ী বিধি-বিধান লঙ্ঘনের আশংকা থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে স্ত্রীকে পৃথক বাসা-বাড়ি দিতে হবে। পৃথক রুম দিলে এক্ষেত্রে ওয়াজিব আদায় হবে না।

أَنَّ ذَلِكَ يَخْتَلِفُ بِاخْتِلَافِ النَّاسِ، فَفِي الشَّرِيفَةِ ذَاتِ الْيَسَارِ لَا بُدَّ مِنْ إفْرَادِهَا فِي دَارٍ، وَمُتَوَسِّطِ الْحَالِ يَكْفِيهَا بَيْتٌ وَاحِدٌ مِنْ دَارٍ. وَمَفْهُومُهُ أَنَّ مَنْ كَانَتْ مِنْ ذَوَاتِ الْإِعْسَارِ يَكْفِيهَا بَيْتٌ وَلَوْ مَعَ أَحْمَائِهَا وَضَرَّتِهَا كَأَكْثَرِ الْأَعْرَابِ وَأَهْلِ الْقُرَى وَفُقَرَاءِ الْمُدُنِ الَّذِينَ يَسْكُنُونَ فِي الْأَحْوَاشِ وَالرُّبُوعِ، وَهَذَا التَّفْصِيلُ هُوَ الْمُوَافِقُ، لِمَا مَرَّ مِنْ أَنَّ الْمَسْكَنَ يُعْتَبَرُ بِقَدْرِ حَالِهِمَا، وَلِقَوْلِهِ تَعَالَى - {أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنْتُمْ مِنْ وُجْدِكُمْ} [ الطلاق: 6]
তবে এ বিষয়টা স্থান-কাল-পাত্র বেধে ভিন্নও হতে পারে।সুতরাং স্ত্রী পর্দানশীন- সচ্চরিত্রা ও ধনী হলে তাকে পৃথক /বাসা-বাড়ি দিতে হবে।মাধ্যম পর্যায়ের হলে পৃথক ঘর-ই যথেষ্ট হবে।আর একেবারে নিম্ন পর্যায়ের হলে একটি ঘর-ই যথেষ্ট হবে, যদিও তাতে স্বামীর আত্বীয়-স্বজনরা(নারী) থাকে,যেমন বেদুইন জাযাবর ও নেহায়েত গরীবদের পারিবারিক জীবনযাপন। এ ব্যখ্যা-ই সূরা ত্বালাকের ৬নং আয়াতের সাথে বেশী সঙ্গতিপূর্ণ।

"তোমরা তোমাদের সামর্থানুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস করো, তাদেরকেও বসবাসের জন্যে সেরূপ গৃহ দাও। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন করো না"।

إذْ لَا شَكَّ أَنَّ الْمَعْرُوفَ يَخْتَلِفُ بِاخْتِلَافِ الزَّمَانِ وَالْمَكَانِ، فَعَلَى الْمُفْتِي أَنْ يَنْظُرَ إلَى حَالِ أَهْلِ زَمَانِهِ وَبَلَدِهِ، إذْ بِدُونِ ذَلِكَ لَا تَحْصُلُ الْمُعَاشَرَةُ بِالْمَعْرُوفِ، وَقَدْ قَالَ تَعَالَى - {وَلا تُضَارُّوهُنَّ لِتُضَيِّقُوا عَلَيْهِنَّ} [ الطلاق: 6]
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ-
ﻭَﻋَﺎﺷِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑ
নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। (সূরা নিসা-১৯)
এতে কোনো সন্দেহ নেই মা'রুফ বা সদ্ভাবে জীবন-যাপন স্থান-কাল-পাত্র বেধে ভিন্নতর হয়ে থাকে,সুতরাং মুফতী মহোদয় স্থান-কাল দেখে উক্ত বিষয়ে সিদ্বান্ত নিবেন।স্থান-কালের প্রতি লক্ষ্য না করে সিদ্বান্ত নিলে তা কখনো কোরআনে বর্ণিত সদ্ব্যবহার হবে না, আর অসদ্ব্যবহার কখনো বৈধ হবে না। কেননা আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ- তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন করো না।(রদ্দুল মুহতার৩/৫৯৯-৬০০-৬০১- (দারুল ফিকর বাইরুত, মাকতাবা থেকে ৬ খন্ডে প্রকাশিত, ১৪১২হিঃ-১৯৯২ইং) এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন - 430


হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রাহ, বলেন,
বিবিকে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু হাত খরচ দেওয়াও প্রত্যেক স্বামীর উপর বিবিদের একটি হক। এটাও ভরণপোষণের অন্তর্ভুক্ত।
"بیوی کا یہ بھی حق ہےکہ اس کو کچھ رقم ایسی بھی دے جس کو وہ اپنی مرضی کے مطابق خرچ کرسکے۔ اس کی تعداد اپنی بیوی اور اپنی حیثیت کے موافق ہوسکتی ہے."
(منتخب انمول موتی، ص:142، ادارہ تالیفات اشرفیہ)

"হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত,
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ : ﺃﻥ ﻫﻨﺪ ﺑﻨﺖ ﻋﺘﺒﺔ ﻗﺎﻟﺖ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ، ﺇﻥ ﺃﺑﺎ ﺳﻔﻴﺎﻥ ﺭﺟﻞ ﺷﺤﻴﺢ ﻭﻟﻴﺲ ﻳﻌﻄﻴﻨﻲ ﻣﺎ ﻳﻜﻔﻴﻨﻲ ﻭﻭﻟﺪﻱ ﺇﻻ ﻣﺎ ﺃﺧﺬﺕ ﻣﻨﻪ ﻭﻫﻮ ﻻ ﻳﻌﻠﻢ، ﻓﻘﺎﻝ : ﺧﺬﻱ ﻣﺎ ﻳﻜﻔﻴﻚ ﻭﻭﻟﺪﻙ ﺑﺎﻟﻤﻌﺮﻭﻑ .
হিনদ বিনতে উতবা রাঃ নবী কারীম সাঃ এর কাছে (নিজ স্বামীর অভিযোগ নিয়ে এসে) বললেনঃহে রাসুলুল্লাহ সাঃ আবু সুফিয়ান একজন কৃপন মানুষ, সে আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভরণ-পোষণ দেয় না,যদ্দরুন তার অজান্তে তার মাল থেকে আমি খরছ করে ফেলি, (এ বিষয়ে শরীয়তের দিকনির্দেশনা আমাদেরকে বলুন)রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেনঃ ন্যায়সঙ্গত ভাবে তোমার ও তোমার সন্তানদের যা প্রয়োজন তা (তার অজান্তে)নিয়ে নিতে পারো(এতে কোনো অসুবিধা হবে না)।" (সহীহ বুখারীঃ৫৩৬৪)


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
(১)প্রথমত আপনি আপনার স্ত্রীর সম্পূর্ণ মহর এখনই আদায় করে দিবেন। কেননা আপনি সম্পূর্ণ সামর্থ্যবান। অতঃপর স্ত্রী তার বাবার বাড়ী যে কয়দিন ছিলো, একজন মানুষের মধ্যম ধরণের থাকার খাওয়ার খরচ যত হতে পারে, অতীতের সবগুলো দিনের ভরণপোষণ আপনি আদায় করে দিবেন। সমাজের একজন ধনী মানুষ তার বিবিকে মধ্যম ধরণের যেই খরচ দেয়, আপনি আপনার বিবিকে সেটাই দিবেন। দ্বীনি পড়াশোনার জন্য ল্যাপটপ সহ যাবতীয় সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করাও আপনার নৈতিক দায়িত্ব। হজ্ব উমরার ওয়াদা করে থাকলে সেটা আদায় করাও আপনার জন্য উচিৎ।

لما في الفتاوی الشامية:
"قال في البحر: واتفقوا على وجوب نفقة الموسرين إذا كانا موسرين، وعلى نفقة المعسرين إذا كانا معسرين وإنما الاختلاف فيما إذا كان أحدهما موسرا والآخر معسرا، فعلى ظاهر الرواية الاعتبار لحال الرجل، فإن كان موسرا وهي معسرة فعليه نفقة الموسرين، وفي عكسه نفقة المعسرين. وأما على المفتى به فتجب نفقة الوسط في المسألتين وهو فوق نفقة المعسرة ودون نفقة الموسرة"۔(کتاب الطلاق، باب النفقة، ص:574، ج:3، ط:سعید)

(২) গোনাহ হওয়া না হওয়ার দিকে না থাকিয়ে, স্ত্রী দ্বীনি পড়াশোনা করলে যে আপনি সওয়াব পাবেন, তাতে তো কোনো সন্দেহ নাই।

’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত।
وَعَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي وَإِذَا مَاتَ صَاحِبُكُمْ فَدَعُوهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ. والدارمي
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম যে স্বীয় পরিবারের নিকট উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের নিকট সর্বোত্তম। আর যখন তোমাদের যে কেউ মারা যায়, তখন তার (নিন্দা করা) হতে বিরত থাক। (তিরমিযী ৩৮৯৫, দারিমী ২৩০৬, সহীহাহ্ ২৮৫)

وَلَسْتَ بِنَافِقٍ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلاَّ آجَرَكَ اللَّهُ بِهَا، حَتَّى اللُّقْمَةَ تَجْعَلُهَا فِي فِي امْرَأَتِكَ
আর তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা ব্যয় করবে, আল্লাহ তাঁর প্রতিদান তোমাকে দেবে। তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোকমাটি তুলে দিবে এর প্রতিদানও আল্লাহ তোমাকে দেবে।(সহীহ বোখারী-৩৫৬২)

(৩) জ্বী, এখনই দিতে হবে।

(৪) যেহেতু মহরের সাথে হজ্ব উমরার আলোচনা ছিলো, যদিও মেয়ে পক্ষ অবশেষে মহরে ফাতেমীর উপর সন্তুষ্ট হয়েছে, তবে হজ্ব উমরার বিষয়কে সরাসরি অস্বীকার যেহেতু আপনারা করেন নি, তাই আপনার উচিৎ হজ্ব উমরা করিয়ে দেয়া । ডিভোর্স হয়ে গেলেও করিয়ে দেওয়া উচিৎ। ওয়াদাকে পূরণ করা প্রত্যেকের জন্য উচিত।

(৫) মামাতো ভাই, খালাতো ভাই, ওদেরকে দিচ্ছেন! বিবিকে নয় কেন? অবশ্যই ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। বিশেষ করে স্ত্রীর আবদার পূরণ করা অন্যদের তুলনায় অগ্রগণ্য। হ্যা, অপচয় রোধ করে চলাফেরা করা প্রত্যেক ঈমানদারের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

(৬) ৭০ জনকে খাওয়ানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করা এবং ফার্ণিচারের জন্য চাপ প্রয়োগ করানো, কোনোটাই জায়েয হয় নাই। যেহেতু মেয়ের বাবা তার অন্তরের সন্তুষ্টি ব্যতিত এগুলো করেছে, ধারদেনা করে মেয়ের ইজ্জত রক্ষার জন্যই এগুলো করেছে , কাজেই এগুলোর মূল্য এখন স্বামী ফিরিয়ে দিয়ে নিজে দায়মুক্তি গ্রহণের চেষ্টা করবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
+1
এটা দেখে এতো খারাপ লেগেছে!আল্লাহ হয়তো এতেই কল্যাণ রেখেছেন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার কাছে দু'আ করি,বোন টা কে যেন আল্লাহ খুব খুব ভালো রাখেন,দুনিয়া-আখিরাত উভয় জায়গায় ই সম্মানিত যেন করেন
by (597,330 points)
আমরা ফাতাওয়াকে পাল্টিয়েছি, সেটা বলাও উচিৎ হবে না। পূর্বের ফাতাওয়া আর এখনকার সংশোধিত রূপের মধ্যে ভাবধারার পরিবর্তন ছাড়া মূলনীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমাদের সমস্ত কার্যক্রম আল্লাহকে খুশী করার জন্যই হয়ে থাকে।  আমরা বাঙ্গালী জাতি, কোনো বিষয় আমাদের পক্ষে মনে হলে, আমরা তাকে আকাশে তুলে ফেলি, নচেৎ গভীর গর্তে ফেলে দিতেও দ্বিধাবোধ করি না।

যারা ফাতাওয়া নিয়ে উচ্ছবাক্য করেছেন? আপনাদের কি উচিৎ নয় যে, আপনারা শুধুমাত্র এতটুকু বলবেন, 
উস্তাদ কষ্ট পেলে ক্ষমা করে দিবেন।  

স্বামীর বক্তব্য 
'আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে ছেলের সামর্থ্য হলে ভবিষ্যতে অনেক হজ করা যাবে। কোনো কথা দেয়া হয় নি এই মর্মে। আমি আমার স্ত্রীকে পাসপোর্ট করে দিয়েছি এবং বলেছি যে উমরার টাকা রেডি।'

এখানে স্ত্রীকে আশা দেয়া হচ্ছে, আপাতত মহরে ফাতেমী মেনে নাও, ছেলের সামর্থ্য হলে, অনেকবার হজ্ব উমরাহ করতে পারবে। এ কথা বলার পর 'কথা দেয়া হয়নি', বলাটা অনর্থক। এজন্যই আমরা বলেছি, হজ্ব করিয়ে দেওয়া উচিৎ। কিন্তু হজ্ব করানোকে আমরা মহরের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে ওয়াজিব বলিনি। তাছাড়া যেহেতু মহরের সময় হজ্বের আলোচনা হয়েছিলো, তাই ডিভোর্সের আগে হোক বা পরে, সর্বাবস্থায় আমরা উচিৎ বলেছি।

৭০ জনের খাবার ও ফার্ণিচার যেহেতু মেয়ের বাবা চাপে পড়ে তার অন্তরের সন্তুষ্টি ব্যতিত মেয়ের ইজ্জত রক্ষার জন্য করেছে, তাই এটা কখনো পাত্রপক্ষের জন্য গ্রহণ জায়েয হয়নি। যেহেতু গ্রহণ করে নেয়া হয়েছে, পাত্রপক্ষ অন্যায়ভাবে গ্রহণ করেছ, তাই তো মূল্য ফেরত দেওয়ার কথা বলেছি।
by
জাযাকাল্লাহু খাইরান হুজুর।
by
edited
১. প্রশ্নে বর্ণিত "স্বামী" প্রশ্নকারী না। 
২. যেহেতু তাদের মধ্যে আর কোন বৈবাহিক সম্পর্ক নেই তাই তিনি এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা পছন্দ করছেন না। 
৩. যদি "উক্ত প্রশ্নের" জবাব নিয়ে আলেমদের  academic আলোচনা হয় সেটা ভিন্ন কথা 
৪. এই ফতোয়ার কারণে তাদের তালাক হয় নি। 
৫. তবে যাহাই হোক - আমরা সবাই আমাদের এই বোন, বোনটির ছেলে, এবং প্রশ্নে বর্নিত স্বামীটির জন্য দোয়া করি। আল্লাহ তায়ালা যেন তাদের দুনিয়া ও আখিরাত সুন্দর করেন। তাদের ভুল ত্রুটিগুলো মাফ করে দেন। তাদের দুনিয়া প্রশস্ত করে দেন। 
(আমীন) 







by
প্রশ্নকর্তা  অত্যন্ত চালাক অথবা অত্যধিক বোকা। অকৃতজ্ঞও, তার বেকারত্বের সময় যখন তার স্ত্রী সবর করেছে, বাপের বাড়ি থেকেছে। সেই স্ত্রীর উপর তার মা জুলুম করে বাপের বাড়িতে পাঠালো দশ মাস, তার ফুপা(!) তার শশুরের কাছে যৌতুক চাইলো অথচ সে কিছুই বলতে পারল না। সে খালাতো ভাইদের ল্যাপটপ, ক্যামেরা কিনে দিতে পেরেছে। অথচ স্ত্রী একটা ভালো জিলবাব কিনতে টাকা চেয়েছে, অনলাইন ক্লাসের জন্য একটা ল্যাপটপ চেয়েছে তখন এসে যুহদ উপচে পড়ছে।  নিজের জন্য তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকার শার্ট প্যান্ট কিনছে তখন তার যুহদ কোথায় যাচ্ছে? সে কথায় কথায় দ্বীনের কথা উল্লেখ করছে, অথচ হাদিসে যে এসেছে 'তুমি যা খাও অধীনস্থদেরকে তাই খাওয়াও, তুমি যা পরো অধীনস্থদেরকেও তাই পরাও' মানে লেভেলটা ঠিক রাখো। এই যে বিধান এইটা কি সে জানে না?

আর এইসব জায়গায় এসে মানুষ সবরের কথা বলে। ভাই ইমোশনাল টর্চার বলেও একটা কথা আছে। না বুঝলে বাদ দেন।

এমন বলদ মেরুদণ্ডহীন পুরুষের বিয়ে না করাই উচিত।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...