আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
159 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (14 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহ মাতুল্লাহ
আমি ছোট বেলায় কুরআন হিফয করেছি আলহামদুলিল্লাহ।
এখন কিছু কিছু আয়াত অনেক সময় ভুল হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করছি মনে রাখার। কিন্তু অনেক সময় মনে হয় আমার সম্পুর্ণভাবে আমি সব ভুলে গিয়েছি। এমন আয়াত ভুলে গেলে কি আমার হিফয বাতিল হয়ে যাবে?

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

বিষয়টি নিয়ে ফুক্বাহায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ আছে। হানাফী মাযহাব মতে কোন ব্যক্তি যদি তিলাতওয়াতই ভুলে যায়, তাহলে তার জন্য হাদীসে বর্ণিত গোনাহের অধিকারী হবে। কিন্তু ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর মতে মুখস্ত করা অংশ ভুলে গেলেই সেই গোনাহের অংশিদার হবে।

সতর্কতা স্বরূপ ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর বক্তব্যের উপর আমল করা উচিত বলেই মনে হয়। তাই হাফেজ সাহেবগণ কুরআন মুখস্ত করার পর ভুলে যাওয়া থেকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত।

عن انس بن مالك، قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ” عرضت على اجور امتي حتى القذاة يخرجها الرجل من المسجد وعرضت على ذنوب امتي فلم ار ذنبا اعظم من سورة من القران او اية اوتيها رجل ثم نسيها ”

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের সাওয়াবসমূহ (কাজের বিনিময়গুলো) আমার সামনে পেশ করা হয়েছে, এমনকি কোন ব্যক্তি কর্তৃক মাসজিদ থেকে ময়লা-আবর্জনা দূর করার সাওয়াবও। অপরদিকে আমার উম্মাতের পাপরাশিও আমাকে দেখানো হয়েছে। আমি তাতে কুরআনের কোন সূরাহ বা আয়াত শেখার পর তা ভুলে যাওয়ার চাইতে বড় গুনাহ আর দেখিনি। [সূনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-৪৬১]

**নিঃসন্দেহে কোরআন ভুলে যাওয়া গর্হিত কাজ। তাই রাসূলুল্লাহ্ বহু হাদিসে ভুলে যাওয়ার আশংকা রোধ করার জন্য নিয়মিত তেলাওয়াত করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। যেমন, এক হাদিসে তিনি বলেছেন,

مَثَلُ الَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَهْوَ حَافِظٌ لَهُ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ، وَمَثَلُ الَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَهْوَ يَتَعَاهَدُهُ وَهْوَ عَلَيْهِ شَدِيدٌ، فَلَهُ أَجْرَانِ

কোরআনের তেলাওয়াতকারী হাফেজ লিপিকর সম্মানিত ফেরেশতার মত। অতি কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যাক্তি বারবার কোরআন তেলাওয়াত করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে। (বুখারী ৪৫৭৩)

কোরআন ভুলে গেলে ‘আমি ভুলে গেছি’ বলা উচিত নয়। বরং বলতে হয়, ‘আমাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে’। কেননা, হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ বলেছেন,

بِئْسَمَا لأَحَدِهِمْ يَقُولُ نَسِيتُ آيَةَ كَيْتَ وَكَيْتَ بَلْ هُوَ نُسِّيَ اسْتَذْكِرُوا الْقُرْآنَ فَلَهُوَ أَشَدُّ تَفَصِّيًا مِنْ صُدُورِ الرِّجَالِ مِنَ النَّعَمِ بِعُقُلِهَا

যদি কেউ এভাবে বলে যে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছি তাহলে তা তার জন্য খুবই খারাপ। বরং তাকে তো ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা কোরআনকে স্মরণ রাখ। কারণ কোরআন মানুষের হৃদয় থেকে পা বাঁধা পলায়নপর চতুস্পদ জন্তুর চেয়েও অধিক পলায়নপর। ছাড়া পেলেই পালিয়ে যায় অর্থাৎ স্মরণ রাখার চেষ্টা না করলেই ভুলে যায়। (মুসলিম ১৭২৬)

 কোরআন ভুলে যাওয়ার হুকুম কি এ ব্যাপারে আলেমগণ মতানৈক্য করেছেন,

ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন, فإن نسيان القرآن من الذنوب কোরআন ভুলে যাওয়া গুনাহ। (মাজমু’উল ফাতাওয়া ১৩/৪২৩)

শায়খ জাকারিয়া আলআনসারি রহ. বলেন, অবহেলা ও অলসতার কারণে কোরআন ভুলে যাওয়া কবিরা গুনাহ। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ বলেছেন,

عُرِضَتْ عَلَىَّ ذُنُوبُ أُمَّتِي فَلَمْ أَرَ ذَنْبًا أَعْظَمَ مِنْ سُورَةٍ مِنَ الْقُرْآنِ أَوْ آيَةٍ أُوتِيَهَا رَجُلٌ ثُمَّ نَسِيَهَا

আমার উম্মাতের গুনাহসমূহ আমাকে দেখানো হয়েছে। আমি তাতে কোরআনের কোন সূরাহ বা আয়াত শেখার পর তা ভুলে যাওয়ার চাইতে বড় গুনাহ আর দেখি নি। (আবু দাউদ ৪৬১ তিরমিযী ১৯৭৬ ইবনু খুযাইমাহ ১৯১৬)

مَا من امْرِئٍ يَقْرَأُ الْقُرْاٰنَ ثُمَّ يَنْسَاهُ إِلَّا لَقِىَ اللّٰهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَجْذَمَ

যে ব্যক্তি কোরআন শিখে ভুলে গিয়েছে, সে কিয়ামাতের দিন অঙ্গহানি অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে। (আবু দাউদ ১৪৭৪ মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ ১০/৪৭৮)

সাহাবী আবূ ‘আলিয়্যাহ্ রাযি. বলেন,

كنا نعد من أعظم الذنوب أن يتعلم الرجل القرآن ثم ينام عنه حتى ينساه

আমরা সবচাইতে বড় গুনাহ বলে আখ্যায়িত করতাম কোন ব্যক্তির কোরআন শিক্ষা গ্রহণের পর অবহেলাবশত তা ভুলে গেলে। (ফাতহুল বারী ১১/২৮৫)

কারো কারো মতে, এটি এমন একটি মুসিবত যা বান্দার অন্তর ও দ্বীনদারিকে আক্রান্ত করে। এর ফলে বান্দার কোন কোন আমলের উপর আল্লাহর শাস্তি নামতে পারে। যদিও এটি কবিরা গুনাহ নয় বা পাপ নয়। (প্রাগুক্ত ৯/৮৬) কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ

তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন। (সুরা শূরা ৩০)

চার: ‘ভুলে যাওয়া’ শব্দের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম আবু ইউসুফ রহ. বলেছেন, المراد بالنسيان : أن لا يمكنه القراءة في المصحف দেখে দেখে তেলাওয়াত করার যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলা। (মাতালিব উলিন্নুহা ১/৬০৪)

আর কোনো কোনো মুহাক্কিক ব্যাখ্যাকার ‘ভুলে যাওয়া’-এর ব্যাখ্যা করেছেন মুখস্ত পড়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলা। (বারীকা মাহমুদিয়া ৪/১৯৪)

ইমাম রাফি‘ঈ রহ. বলেন, কোরআন শিক্ষার বিভিন্ন ধরণ হতে পারে। যেমন দেখে পড়া, মুখস্থ রাখা, অর্থ বুঝা। যাই হোক না কেন তা ভুলে গেলে তার কাবীরাহ্ গুনাহ হবে। (ফাতহুল বারী ১১/২৮৫)

কেউ কেউ বলেন, النسيان بمعنى ترك العمل لا نسيانه بعد حفظه এখানে ভুলে যাওয়া মানে কোরআনের তিলাওয়াত ও তার প্রতি ‘আমাল থেকে বিরত থাকা। (আল ইস্তিযকার ২/৪৮৭)

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে আপনি যদি ভুলে যাওয়া আয়াতগুলি রিভিশন দিতে থাকেন তাহলে আপনার হিফজ ভুলে যাওয়ার গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...