بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
বিয়ের আগে
পাত্রপাত্রীর যে বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে তার মধ্যে ‘কুফু’ অন্যতম।
আরবি ‘কুফু’
শব্দের অর্থ সমতা, সমান, সাদৃশ্য, সমকক্ষ, সমতুল্য ইত্যাদি। বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনের
দ্বীনদারি, সম্পদ, বংশ, সৌন্দর্যতা সব কিছু সমান সমান বা কাছাকাছি
হওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় কুফু বলে।
একজন দ্বীনদার
পাত্রপাত্রীর সাথে একজন ধর্মবিষয়ে উদাসীন পাত্রপাত্রীর জীবনাচার নাও মিলতে পারে। দ্বীনদার
চাইবে সব কিছুতে ধর্মের ছাপ থাকুক। আর দীনহীন চাইবে সব কিছু ধর্মের আবরণমুক্ত থাকুক।
সুতরাং এ দুইয়ের একত্রে বসবাস কখনো শান্তি-সুখের ঠিকানা হতে পারে না। তাই পবিত্র কুরআনও
বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতে সমতা রক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে।
আল্লাহ
বলেন, ‘দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র
পুরুষদের জন্য; দুশ্চরিত্র
পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য; সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ
সচ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযুক্ত।’ (সূরা নূর : ২৬)।
কুরআনের
পাশাপাশি রাসূল সা:-এর পবিত্র হাদিস শরিফেও ‘কুফু’ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া
যায়।
রাসূল সা:
‘কুফু’র বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَابُورَ الرَّقِّيُّ حَدَّثَنَا عَبْدُ
الْحَمِيدِ بْنُ سُلَيْمَانَ الْأَنْصَارِيُّ أَخُو فُلَيْحٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ
عَجْلَانَ عَنْ ابْنِ وَثِيمَةَ النَّصْرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا أَتَاكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ خُلُقَهُ
وَدِينَهُ فَزَوِّجُوهُ إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ
عَرِيضٌ
আবূ হুরাইরাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের
নিকট এমন কোন ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এলে, যার চরিত্র ও ধর্মানুরাগ সম্পর্কে তোমরা
সন্তুষ্ট, তার সাথে (তোমাদের মেয়েদের)
বিবাহ দাও। তোমরা যদি তা না করো, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়বে। (ইবনে মাজাহ ১৯৬৭,তিরমিযী ১০৮৪, ইরওয়াহ ১৮৬৮, সহীহাহ ১০২২।)
কুফু না মেনে বিবাহ করলে কি
কি সমস্যা হতে পারে, বিস্তারিত
জানুনঃ https://ifatwa.info/4541/
হাদীস শরীফে
এসেছেঃ
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «تُنْكَحُ
الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا
فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدَّيْنِ تَرِبَتْ يَدَاكَ». مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মূলত)
চারটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করা হয়- নারীর ধন-সম্পদ, অথবা বংশ-মর্যাদা, অথবা রূপ-সৌন্দর্য, অথবা তার ধর্মভীরুর কারণে। (রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) সুতরাং ধর্মভীরুকে প্রাধান্য দিয়ে বিবাহ করে
সফল হও। আর যদি এরূপ না কর তাহলে তোমার দু’ হাত ধূলায় ধূসরিত হোক (ধর্মভীরু মহিলাকে
প্রাধান্য না দিলে ধ্বংস অবধারিত)। (বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, নাসায়ী ৩২৩০, আবূ দাঊদ ২০৪৭, ইবনু মাজাহ ১৮৫৮, আহমাদ ৯৫২১, ইরওয়া ১৭৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৩০০৩)
★সুতরাং পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বীনদারকে
গুরুত্ব না দিলেও সমস্যা অবধারিত।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি
বোন!
প্রথমেই
আপনার প্রতি পরামর্শ থাকবে যে আপনি ইস্তেখারা করুন। এ লক্ষ্যে নামাজ আদায় করে দোয়া
করুন। যদি সেই
পাত্র আপনার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য কল্যাণকর হলে তাকে বিবাহ করুন।
ইস্তেখারার
পদ্ধতি,দোয়া সংক্রান্ত জানুনঃ- https://ifatwa.info/12037/
তবে ‘হ্যাঁ’, ছেলে যদি সৎ, দ্বীনদার হয়; তবে বিয়ে-শাদি করা যাবে। পাপাচার বা হারাম
কাজে জড়িত ব্যক্তির ছেলে কিংবা মেয়ের সঙ্গে বিয়ে-শাদির সম্পর্ক স্থাপনে কোনো বাধা নেই।
বরং তা জায়েজ এবং বৈধ। কেননা বাবা-মায়ের অন্যায় কাজের জন্য ছেলে
কিংবা মেয়ে দায়ী নয়। বরং বিয়ের ক্ষেত্রে চারটি জিনিস লক্ষণীয় যা উপরের হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।