বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
★ স্বামীর
জন্য জরুরি হলো স্ত্রীর অধিকার রক্ষা করা,তার
সাথে সদব্যবহার করা।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন
ألا واستوصوا بالنساء خيرا، فإنما هن عوان عندكم ليس تملكون منهن
شيئا غير ذلك
শোন হে! তোমরা আমার পক্ষ হতে নারীদের
প্রতি সদাচরণের উপদেশ গ্রহণ কর। তারা তো তোমাদের কাছে আটকে আছে। তোমরা তাদের কাছ
থেকে এছাড়া আর কিছুর অধিকার রাখো না। (জামে তিরমিযী, হাদীস: ১০৮৩
সুতরাং স্ত্রীর উপর স্বামীর খেদমত
আবশ্যক,শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা স্ত্রীর জন্য একটি অতিরিক্ত কাজ। এটা
তার দায়িত্ব নয়,আবশ্যক নয়, কিন্তু
বর্তমান সমাজে মনে করা হয়, এটা তার অপরিহার্য দায়িত্ব বরং এটিই যেন তার প্রধান
দায়িত্ব। আমাদের সমাজের আবহমান কালের চলমান
রীতি হলো, যৌথ পরিবারগুলোতে পুত্রবধূরা শ্বশুর-শাশুড়ির সেবাযত্ন করে
থাকেন। এটাকে পারিবারিক দায়িত্ব হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে।
ছেলের জন্য বউ আনাই হয়
শ্বশুর-শাশুড়ির সেবার জন্য। এ সবই পরিমিতিবোধের চরম লঙ্ঘন। মা-বাবার সেবা করা
সন্তানের দায়িত্ব, পুত্রবধূর নয়। (আল-বাহরুর রায়েক ৪/১৯৩, কিফায়াতুল মুফতি ৫/২৩০)
যদি স্বামীর মা-বাবার খেদমতের
প্রয়োজন হয়, তাহলে স্বামীর কর্তব্য হলো তাঁদের সেবা-যত্ন করা। তবে কোনো
স্ত্রী যদি সন্তুষ্টচিত্তে স্বামীর মা-বাবার সেবা করেন, এটা তাঁর পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। এর বিনিময়ে তিনি অনেক
সওয়াব পাবেন। তবে এসব করতে আইনত তিনি বাধ্য নন। যদিও কাম্য এটাই যে স্বামীর
মা-বাবাকে নিজের মা-বাবার মতো সম্মান ও সমীহের চোখে দেখবেন। তাঁদের মনেপ্রাণে
ভালোবাসবেন এবং তাঁদের সেবা করতে পারাকে নিজের জন্য পরম সৌভাগ্য মনে করবেন। অনুরূপ
শ্বশুর-শাশুড়িও পুত্রবধূকে নিজের মেয়ের মতো আদর ও খাতির করবেন। তার সুখ-সুবিধার
প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন।
★ইসলামের
দিক-নিদের্শনা হচ্ছে বিবাহের পরে স্বামীর প্রথম কতর্ব্য হলো স্ত্রীর জন্য এমন একটি
বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যেখানে স্ত্রী মানুষের দৃষ্টি থেকে নিরাপদ থাকবে। কেননা
পর্দা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। আর এই বিধান পালন করার জন্য স্বামীর
কতর্ব্য স্ত্রীকে সাহায্য করা। সেই সাথে অন্যান্য সকল কষ্ট থেকে স্ত্রীর আরামের
ব্যবস্থা করতে হবে। তবে স্ত্রীকে শ্বশুর ও শাশুড়ির সাথেই থাকতে হবে এমন বাধ্যও করা
যাবে না। কেননা এমন কোন অধিকার স্বামীর নেই। তবে এই ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী উভয়কে
সামাজিক অবস্থার উপর বিবেচনা করেও কিছু কাজ করতে হবে।
যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে
স্বামীর পরিবারের সাথে অথবা অন্য আত্মীয়ের সাথে থাকার কথা বলে কিন্তু স্ত্রী কারো
সাথে থাকার কথা রাজি না হয় তাহলে স্ত্রীকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা স্বামীর
কতর্ব্য। কেননা স্ত্রীর সকল কিছু রক্ষা করা ও নিরাপদে বসবাস করার দায়িত্ব স্বামীর।
https://ifatwa.info/38511/ নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি যে,
স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণ করাও স্বামীর দায়িত্ব। এর জন্য নির্ধারিত সময় ধার্য
নেই; বরং চাহিদা, শারীরিক সক্ষমতা ইত্যাদি অনুপাতে করতে হবে।
তবে দীর্ঘদিন বিরত থাকাও নিষেধ। ওমর (রা.) একদা রাতের বেলা একটি ঘরের পাশ দিয়ে
যাওয়ার সময় শুনতে পেলেন যে জনৈক মহিলা বিরহের কবিতা পড়ছে। তখন এর কারণ জিজ্ঞেস
করলে সে বলে যে তার স্বামী দীর্ঘদিন জিহাদে রত, বাড়িতে আসছে না। তখন ওমর (রা.) হাফসা (রা.)-কে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন যে নারী
স্বামীবিহীন কত দিন ধৈর্য ধারণ করতে পারে? হাফসা (রা.) লজ্জায় বলতে চাচ্ছিলেন না। তখন ওমর (রা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা হক কথায় লজ্জা করেন না।
তখন হাফসা (রা.) ইশারায় তিন বা চার মাসের কথা বলেন। অতঃপর ওমর (রা.) সেনাপতিদের
নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন যে চার মাসের বেশি যেন কোনো সৈন্যকে আটকে রাখা না হয়; বরং অনূর্ধ্ব চার মাস পর পর তাদের ছুটি দেবে।
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস :
১২৫৯৩)
উক্ত ঘটনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে স্বাভাবিকভাবে চার মাসের বেশি স্ত্রী সহবাস
থেকে কখনো বিরত থাকবে না।
যেনা করলে যেমন গুনাহ হয় ঠিক তেমনি ভাবে স্ত্রী সহবাস করলেও সওয়াব হয়।
এ মর্মে আবু যার রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে,
وَفِي بُضْعِ
أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِي أَحَدُنَا
شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ؟ قَالَ : أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا
فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي
الْحَلاَلِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ
স্ত্রী সহবাসও সদকা। তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কেউ যদিস্ত্রী সহবাস এতেও কি সে সাওয়াব পাবে? তিনি বললেন, তোমরা কি মনে কর যদি সে কামাচার করে হারাম পথে তাতে কি তার গুনাহ হবে না? অনুরূপভাবে যদি সে কামাচার করে হালাল পথে তবে
সে সাওয়াব পাবে। (মুসলিম ২২০১)
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
তিনি তার পরিবারকে সব বিস্তারিত বলে উভয়
পরিবারের লোকজন এক জায়গায় বসে সমাঝোতা করার চেষ্টা করতে পারেন অথবা উভয় পরিবার
মিলে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন বা এলাকার
মাতব্বরদের সাহায্য নিতে পারেন। এরপরও কোনো ভাবেই কাজ না হলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন
করতে পারেন।