আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
236 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (11 points)
আসসালামু আলাইকুম। আমি আলহামদুলিল্লাহ হালাল উপার্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা করি।  আমার নিজের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে এই টাকাগুলো জমাই ও খরচ করি। এখন আসল ব্যাপার হল আমার এমন এক আত্মীয়া বোন আছে। সে শুনেছে হালাল উপার্জনের চেষ্টা করছি। সে আশা করতেই আছে যে, আমি আমার বেতন পেলে তার জন্য শপিং, মার্কেট করে দিব।সে বার বার জানতে চায় এখন কত আছে,সামনের কোনদিন বেতন পাবো, মোট কত পাবো  ইত্যাদি। আমার খুব বিরক্ত লাগে।কারন আমি যদি আমার আসল সত্য এমাউন্টের টাকা তাকে বলি সে খুব বেশি মনঃক্ষুণ্ন হবে আর খোটা দিবে যে আমি রেখেও তাকে দিচ্ছি না,  শপিং, রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাচ্ছি না। অথচ আমার এত  এমাউন্টের টাকা  গুলো আমার সব কাজের জন্য কড়ায় গন্ডায় লেগে যাবে। সে এটা কোনো মতেই বুঝবে না। আমি যতদুর তাকে    বুঝাতে চেয়েছি আমার কাছে  একেবারে টাকা নেই ।  এখন ঝামেলা হচ্ছে এই মাসে যে টাকা পাব সে তার  পরিমান হিসাব করে অপেক্ষা করেতেছে।কবে পাবো আর কবে খরচ করবো। এখন আমি তো মিথ্যা বলতে পারবো না এতে আল্লাহর নাফরমানি হবে। আর সত্যি বললে আমাকে খুব লজ্জা দিবে, ছোট করবে পরিবারের কাছে কৃপন বলে৷ এখন আমি  কি ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলতে পাবো। ধরেন আমি ৮/৯ হাজার পেলাম৷ কিন্তু বললাম এই মাসে ২/৪ হাজার পেয়েছি। বা বললাম অমুক আমাকে বেতন ৪ হাজারের জায়গায় বললাম ১/২ হাজার দিয়েছে।  বাকি যে আরো কয়েক হাজার  টাকা বেশি পেয়েছি বা  আছে ওগুলা নেই বলে মিথ্যাচার করলাম না। আবার আছে বলেও প্রকাশ করলাম না।  বাকি টাকা ব্যাপারে সে কিছুই আন্দাজ করতে পারবে না। আছে নাকি নেই বুঝবে না ।  এমনটা করে ঘুরিয়ে বলা কি জায়েজ হবে ?  আর এমন নয় যে তার চাহিদা পুরনের কেউ নেই৷ তার ভাইয়েরাও আছে। সব কিছুই মোটামোটি আছে। বেহুদা তার জন্য আমার এত টাকা খরচের ইচ্ছে নেই৷ কিন্তু  সে নাছোড়বান্দা আমাকে কয়েক দিক দিয়ে প্রশ্ন করে আসল কথা বের করতেই চেষ্টা করবে। আর তার জবাব না দিলে ধরে নেয় আমার কাছে অনেক টাকা আছে আর আমার আত্মীয়দের কাছে কৃপনতা করছি এটা বলবে।আমি চাই না তার জন্য আমার আত্মীয়রা আমাকে কৃপন ভাবুক।
দয়া করে   আল্লাহকে নারাজ না করে এর সমাধানে কি করা যেতে পারে পরামর্শ দিয়ে উপকৃত করবেন।
জাযাকাল্লাহু খইরান।

1 Answer

0 votes
by (59,940 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/4573/ নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি যে,

মিথ্যা কথা বলা শরীয়ত অনুমোদিত নয়। নিঃসন্দেহে মিথ্যা বলা হারাম। 

শরিয়তে সত্যকে সর্বত্রই উৎসাহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সত্য মুক্তি দেয়, মিথ্যা ধ্বংস আনে।

যদিও শরয়ী কিছু ওযরের কারনে বিশেষ শর্তসাপেক্ষে তা বৈধ। 

তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে সত্য বলাই শরিয়তের মৌল দর্শনের দাবি।

 

পবিত্র কুরআন শরিফে এসেছে   

لَّعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ [٣:٦١

তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী। {সূর আলেইমরান-৬১}

 

হাদিস শরিফে এসেছে,

 সাফওয়ান ইবন সুলাইম বলেন,

قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ ﷺ : أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ جَبَانًا ؟ فَقَالَ: ( نَعَمْ ) ، فَقِيلَ لَهُ: أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ بَخِيلًا؟ فَقَالَ: ( نَعَمْ ) ، فَقِيلَ لَهُ: أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ كَذَّابًا ؟ فَقَالَ: ( لَا )

রসুলুল্লাহ -কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি কাপুরুষ হতে পারে? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি কৃপণ হতে পারে। তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি মিথ্যাবাদী হতে পারে? তিনি উত্তর দিলেন, না। (মুয়াত্তা মালিক ২/৯৯০) অর্থাৎ মুমিনের বিভিন্ন চারিত্রিক ত্রুটি থাকতে পারে, তবু সে মিথ্যা বলতে পারে না।

 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا»

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৩১৪৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬৪, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৫৮৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৯০৫}

 

আবুল ফরয ইবনুল জাওযী রাহ বলেনঃ

ﻭﺿﺎﺑﻄﻪ ﺃﻥ ﻛﻞ ﻣﻘﺼﻮﺩ ﻣﺤﻤﻮﺩ ﻻ ﻳﻤﻜﻦ ﺍﻟﺘﻮﺻﻞ ﺇﻟﻴﻪ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﻜﺬﺏ، ﻓﻬﻮ ﻣﺒﺎﺡ ﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻤﻘﺼﻮﺩ ﻣﺒﺎﺣﺎ، ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻭﺍﺟﺒﺎ، ﻓﻬﻮ ﻭﺍﺟﺐ 

প্রত্যেক ঐ ভালো উদ্দেশ্য যে পর্যন্ত মিথ্যার আশ্রয় ব্যতীত পৌছা  প্রায় অসম্ভব, সেখানে মিথ্যা বলা বৈধ।মাকসাদ(উদ্দেশ্য) মুবাহ হলে,মিথ্যা বলা মুবাহ।মাকসাদ ওয়াজিব হলে মিথ্যা বলা ওয়াজিব

(ফাতাওয়া দারাল ইফতা আল-মিছরিয়্যাহ)

 

ব্যাখ্যাঃ

 কোন সৎ উদ্দেশ্য যদি মিথ্যার আশ্রয় ব্যতিরেকে সাধন সম্ভবপর হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া বৈধ নয়। পক্ষান্তরে সে সৎ উদ্দেশ্য যদি মিথ্যা বলা ছাড়া সাধন সম্ভব না হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা বৈধ। পরন্তু যদি বাঞ্ছিত লক্ষ্য বৈধ পর্যায়ের হয়, তাহলে মিথ্যা বলা বৈধ হবে। 

 

আর যদি অভীষ্ট লক্ষ্য ওয়াজেবের পর্যায়ভুক্ত হয়, তাহলে তা অর্জনের জন্য মিথ্যা বলাও ওয়াজেব হবে। যেমন কোন মুসলিম এমন অত্যাচারী থেকে আত্মগোপন করেছে, যে তাকে হত্যা করতে চায় অথবা তার মাল-ধন ছিনিয়ে নিতে চায় এবং সে তা লুকিয়ে রেখেছে। এখন যদি কেউ তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয় [যে তার ঠিকানা জানে], তাহলে সে ক্ষেত্রে তাকে গোপন [ও নিরাপদ] রাখার জন্য তার পক্ষে মিথ্যা বলা ওয়াজেব। 

 

অনুরূপভাবে যদি কারো নিকট অপরের আমানত থাকে, আর কোন জালেম যদি তা বলপূর্বক ছিনিয়ে নিতে চায়, তাহলে তা গোপন করার জন্য মিথ্যা বলা ওয়াজেব। অবশ্য এ সমস্ত বিষয়ে সরাসরি স্পষ্টাক্ষরে মিথ্যা না বলে ‘তাওরিয়াহ’ করার পদ্ধতি অবলম্বন করাই উত্তম।

 

তাওরিয়াহ’ হল এমন বাক্য ব্যবহার করা, যার অর্থ ও উদ্দেশ্য শুদ্ধ তথা তাতে সে মিথ্যাবাদী নয়; যদিও বাহ্যিক শব্দার্থে এবং সম্বোধিত ব্যক্তির বুঝ মতে সে মিথ্যাবাদী হয়। 

,

হযরত আসমা বিনতে ইয়াযিদ রাঃ থেকে বর্ণিত,

 ﻋَﻦْ ﺃَﺳْﻤَﺎﺀَ ﺑِﻨْﺖِ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ( ﻟَﺎ ﻳَﺤِﻞُّ ﺍﻟْﻜَﺬِﺏُ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﺛَﻠَﺎﺙٍ : ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗَﻪُ ﻟِﻴُﺮْﺿِﻴَﻬَﺎ ، ﻭَﺍﻟْﻜَﺬِﺏُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﺮْﺏِ ، ﻭَﺍﻟْﻜَﺬِﺏُ ﻟِﻴُﺼْﻠِﺢَ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ) 

তরজমাঃ নবীজী সাঃ বলেনঃ তিনস্থান ব্যতীত অন্য কোথাও মিথ্যা বলা জায়েয নয়, ১/স্ত্রীর সাথে ভালবাসার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে। ২/যুদ্ধের ময়দানে কাফিরের সাথে যুদ্ধ বিষয়ে। ৩/দু-ভাইয়ের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করতে। (তিরমিযি-১৯৩৯,আবু-দাউদ-৪৯২১)

 

আরো জানুনঃ

https://www.ifatwa.info/644

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

 

. আপনি প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মিথ্যা না বলে তাওরিয়াহ করে বলবেন। তাওরিয়াহ’ হল এমন বাক্য ব্যবহার করা, যার অর্থ ও উদ্দেশ্য শুদ্ধ তথা তাতে সে মিথ্যাবাদী নয়; যদিও বাহ্যিক শব্দার্থে এবং সম্বোধিত ব্যক্তির বুঝ মতে সে মিথ্যাবাদী হয়। 

 

২. তাওরিয়াহ করে এভাবে বলতে পারেন যে, মনে করুন আপনি ৮ হাজার টাকা বেতন পেয়েছেন। তো আপনি এভাবে বলবেন যে, ৪ হাজারের থেকে একটু বেশী পেয়েছি। অথবা বলবেন হাতে বা কাছে তেমন বেশী কোনো টাকা নেই। (যদিও আপনার একাউন্টে বা বাড়ীতে যথেষ্ট টাকা থাকে)। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...