আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
232 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (17 points)
reshown by
আসসালামু আলাইকুম। একটা হাদিস নিয়ে সংশয়ে ভুগছি যার লিংক: https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=54670

হাদিসটিতে বলা হয়েছে, ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! মু’মিনদের (নাবালেগ) বাচ্চাদের (জান্নাত-জাহান্নাম সংক্রান্ত ব্যাপারে) কী হুকুম? তিনি উত্তরে বললেন, তারা বাপ-দাদার অনুসারী হবে। আমি বললাম, কোন (নেক) ’আমল ছাড়াই? তিনি বললেন, আল্লাহ অনেক ভালো জানেন, তারা জীবিত থাকলে কী ’আমল করতো। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা মুশরিকদের (নাবালেগ) বাচ্চাদের কী হুকুম? তিনি বললেন, তারাও তাদের বাপ-দাদার অনুসারী হবে। (অবাক দৃষ্টিতে) আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন (বদ) ’আমল ছাড়াই? উত্তরে তিনি বললেন, সে বাচ্চাগুলো বেঁচে থাকলে কী ’আমল করত, আল্লাহ খুব ভালো জানেন। (আবূ দাঊদ)। হাদিসটির মান সহীহ।
এই হাদিসের বিপরীতধর্মী হাদিসও আছে যেখানে বলা হয়েছে প্রত্যেক শিশুই ইসলামের ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। সেই মোতাবেক এতদিন জানতাম যে কাফের-মুশরিকের শিশুও নাবালক অবস্থায় মারা গেলে জান্নাতি। আর এই কথাটির সাপোর্টে কুরআনের আয়াতও আছে, লা ইয়ুকাল্লিফুল্লাহা নাফসান ইল্লা ইউসআহা। কিন্তু আজকে এই হাদিসটি দেখে রীতিমতো টাস্কি খেয়ে গেলাম, আবার হদিসটি অস্বীকার করব তারও উপায় নেই, কারণ হাদিসটির মান সহীহ। যাচাই করে জানতে পারলাম যে এই বিষয়ে আলেমদের মধ্যে দ্বিমত আছে। প্রশ্ন হলো দ্বিমত থাকবে কেন? বিবেকের দাবি কী? হুযুর (সঃ) কেন দুইবারে দুইরকম হাদিস বর্ণনা করলেন? এই বিষয়ে একটা উত্তরই সুস্থ মানুষের ব্রেনে ধরে সেটা হচ্ছে নাবালক যারই সন্তান হোক তার ঠিকানা হচ্ছে জান্নাত। পিতার শাস্তি পুত্র পাবে কেন? নিজের জন্মের ক্ষেত্রে তার কোনো হাত ছিল না। বলতে পারেন, আল্লাহ তো জানেন যে সে বেঁচে থাকলে কী করত? জবাবে বলা যায়, আল্লাহ আপনি-আমি শেষ পর্যন্ত কী করব সেটাও জানেন, তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে কেন পরীক্ষা নিচ্ছেন, কেন আমল করার সুযোগ দিচ্ছেন? তো আমাদেরটা আমলের মাধ্যমে নির্ধারণ হচ্ছে আর নাবালক শিশুরটা নির্ধারণ হবে আল্লাহর অগ্রিম এলেম অনুযায়ী এটা কি ইনসাফ হলো?

1 Answer

0 votes
by (579,240 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,    
অমুসলিমদের নাবালেগ সন্তান মারা গেলে তারা জান্নাতে যাবে নাকি জাহান্নামে যাবে?
এইই ব্যাপারে প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীসে স্পষ্ট বাক্যে কিছুই বলা হয়নি।
হাদীসে মূলত তাদের দুনিয়াবি হুকুম বলা হয়েছে।

অমুসলিমদের নাবালেগ সন্তান মারা গেলে শরীয়তের বিধান মতে দুনিয়াবী হুকুমে তারা কাফের এর হুকুমেই হবে। তথা মিরাছ বিবাহ কিসাস দিয়ত ইত্যাদি ব্যাপারে তাদের কাফের ধরা হবে।
,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত তাদের লাশ গোসল,কাফন ইত্যাদি করা যাবেনা।
অমুসলিমরাই তাদের তার লাশ তাদের ধর্ম অনুযায়ী কাজ করবে।

এটিই মূলত উক্ত হাদীসের উদ্দেশ্য। 
হাদীসটি আবারো লক্ষ্য করুনঃ-

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ذَرَارِيُّ الْمُؤْمِنِينَ؟ قَالَ: «مِنْ آبَائِهِمْ» . فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ بِلَا عَمَلٍ؟ قَالَ: «اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ» . قُلْتُ فذاراري الْمُشْرِكِينَ؟ قَالَ: «مِنْ آبَائِهِمْ» . قُلْتُ: بِلَا عَمَلٍ؟ قَالَ: «اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ»

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! মু’মিনদের (নাবালেগ) বাচ্চাদের  কী হুকুম? তিনি উত্তরে বললেন, তারা বাপ-দাদার অনুসারী হবে। আমি বললাম, কোন ‘আমল ছাড়াই? তিনি বললেন, আল্লাহ অনেক ভালো জানেন, তারা জীবিত থাকলে কী ‘আমল করতো। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা মুশরিকদের (নাবালেগ) বাচ্চাদের কী হুকুম? তিনি বললেন, তারাও তাদের বাপ-দাদার অনুসারী হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন ‘আমল ছাড়াই? উত্তরে তিনি বললেন, সে বাচ্চাগুলো বেঁচে থাকলে কী ‘আমল করত, আল্লাহ খুব ভালো জানেন।
(আবূ দাঊদ ৪০৮৯.মিশকাত ১১১।)

এখানে অমুসলিমদের নাবালেগ সন্তান মারা গেলে তারা যে জাহান্নামী হবে,স্পষ্ট আকারে উল্লেখ নেই।
এখানে দুনিয়াবী হুকুমই উদ্দেশ্য হবে।

তাদের আখেরাতের জীবনে কি হবে,সে সংক্রান্ত আল্লাহই ভালো জানেন,এ সংক্রান্ত অন্য হাদীসে আছে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الْأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ وَيُنَصِّرَانِهِ، كَمَا تَنَاتَجُ الْإِبِلُ مِنْ بَهِيمَةٍ جَمْعَاءَ، هَلْ تُحِسُّ مِنْ جَدْعَاءَ؟ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَفَرَأَيْتَ مَنْ يَمُوتُ وَهُوَ صَغِيرٌ؟ قَالَ: اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ صحيح

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিটি সন্তানই ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহন করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাদেরকে ইয়াহুদী বা খৃষ্টান বানায়। যেভাবে উট পূর্ণাঙ্গ পশুই জন্ম দেয়, তাতে তোমরা কোনো কান কাঁটা দেখো কি? সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! অপ্রাপ্ত বয়সে মারা যায় এমন শিশু সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বলেনঃ আল্লাহই ভালো জানেন, তারা কিরূপ আমল করতো।
(আবু দাউদ ৪৭১৪ বুখারী মুসলিম)

حديث ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ أَوْلاَدِ الْمُشْرِكِينَ فَقَالَ: اللهُ، إِذْ خَلَقَهُمْ، أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মুশরিকদের শিশু সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আল্লাহ্ তাদের সৃষ্টি লগ্নেই তাদের ভবিষ্যৎ আমল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।
সহীহুল বুখারী, পর্ব ২৩: জানাযা, অধ্যায় ৯২, হাঃ ১৩৮৩; মুসলিম, পর্ব ৪৬: কাদর বা ভাগ্য, অধ্যায়, অধ্যায় ৬, হাঃ ২৬৬০
,
قال ابن القيم رحمه الله : " وَكَوْنُ الصَّغِيرِ يَتْبَعُ أَبَاهُ فِي أَحْكَامِ الدُّنْيَا هُوَ لِضَرُورَةِ حَيَاتِهِ فِي الدُّنْيَا ، فَإِنَّهُ لَا بُدَّ لَهُ مِنْ مُرَبٍّ يُرَبِّيهِ ، وَإِنَّمَا يُرَبِّيهِ أَبَوَاهُ ، فَكَانَ تَابِعًا لَهُمَا ضَرُورَةً " انتهى من "أحكام أهل الذمة" (2/1047).
সারমর্মঃ
 ইবনুল কয়্যিম রহঃ বলেছেন যে কাফেরদের ছোট সন্তান দুনিয়াবি হুকুমে কাফেরের হুকুমেই হবে।

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,    
অমুসলিমদের নাবালেগ সন্তান মারা গেলে তারা জান্নাতে যাবে নাকি জাহান্নামে যাবে? এই বিষয়ে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। 

ইমাম আবু হানিফা রহঃ এই বিষয়ে তাওক্কুফ করেছেন।
জান্নাত জাহান্নাম কোনো মতের দিকে যাননি।  

وقال القرطبي : إن قول أنهم في الجنة هو قول الأكثر ، وقال : وقد أنكر بعض العلماء الخلاف فيهم. " التذكرة " (2/328) 

সারমর্মঃ
তারা জান্নাতে যাবে,এটিই বেশিরভাগ উলামায়ে কেরামদের মত।     

বিস্তারিত জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (17 points)
জাঝাকাল্লাহ খাইর। দুনিয়াবি দিকে নিসবত করা হয়েছে জেনে কিছুটা আস্বস্ত হলাম। কিন্তু এই ব্যাপারে মতবিরোধ না থাকলে খুব ভাল হত, আর ইমাম আবু হানিফাও দ্বিধাদ্বন্দে না ভুগলে ভাল হত। কারণ আল্লাহ তাআলা জালেম না এটা সবাই মানেন। তাহলে মুসলমানের ঘরে জন্ম নেওয়া শিশুর পরিণতি জান্নাত এটা নিয়ে যেহেতু কোনো বিরোধ নেই, কাফেরের ঘরে জন্ম নেওয়া শিশুর পরিণতিও জান্নাত হবে এটা নিয়ে বিরোধ কেন হবে? মুসলমানের ছেলে যেমন মুসলামান হবে এই গ্যারান্টি নেই, কাফেরের ছেলেও কাফের হবে এই গ্যারান্টি নেই। অপরদিকে ভবিষ্যতে কে কী করবে সেটার উপর ভিত্তি করে আল্লাহ সে তা করার আগেই শাস্তি দেন না। কাজেই তাদের জান্নাত জাহান্নামের প্রশ্নে মুসলমানের ছেলে যে লজিকে এডভান্টেজ পাবে, কাফেরের ছেলেও সেই লজিকে এডভান্টেজ পাওয়ার কথা। কারণ আল্লাহ মূলত মানুষকে জান্নাতই দিতে চান, জাহান্নাম স্বেচ্ছায় দিতে চান না। অর্থাৎ, কারো জান্নাত কিংবা জাহান্নামে যাওয়ার মতো কোনো আমলই না থাকলে আল্লাহর টেন্ডেন্সি তাকে জান্নাতে দেওয়ার দিকে থাকে। সেই নিয়মে মুমিনের শিশু ও কাফেরের শিশু উভয়েই জান্নাতি হওয়ার কথা। আর এটা হলেই শরিয়তের ভিত্তি ঠিক থাকে, নইলে দ্বীনের অনেক কিছু হড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। আল্লাহ তাআলা কারো উপর সাধ্যাতিত বোঝা চাপিয়ে দেন না বা গাইরে এখতিয়ারি বিষয়ের উপর আল্লাহর ধরপাকড় নেই এই কথা যেহেতু ইমাম আবু হানিফা সহ সকল আলেমই মানেন, কাজেই এই বিষয়ে তাদের সন্দেহ রাখারও অবকাশ নেই। আল্লাহু আলাম। আপনার উত্তরের জন্য আবারও ধন্যবাদ।
by (15 points)
https://www.frommuslims.com/?p=49722 
এটা পড়ুন, কনফিউশন দূর হবে ইনশাআল্লাহ 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...