আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
127 views
in কুরবানী (Slaughtering) by (20 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু। এই কুরবানির ঈদে আমার আব্বু একটা ছাগী কিনে আনেন সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে, ছাগী কারো ঘরে খুব যত্ন করে পালা হয়েছিলো এবং গৃহকর্তা বলেছিলেন এটার পেটে বাচ্চা থাকতেও পারে নাও পারে।ছাগীটার পেট অনেক বড় ছিলো আর সবাই এটা প্রেগন্যান্ট বলছিলো,এতে আমি ছাগী টাকে রেখে দিতে বলি , পালার জন্য, ছাগীটা অনেক সুন্দরও ছিলো আর জবাই দিতে মানা করি, যেহেতু তার পেটে বাচ্চা, আর আমার কাছে থাকা ৩হাজার টাকা আব্বুকে দিয়ে বলি আরেকটা ছাগল কিনে আনো বাকি টাকা ফুরায়ে, কিন্তু আব্বু যাই যাচ্ছি করে আর যায়নাই, আমি বায়না ধরায় বলছে কুরবানি ৩দিন পর্যন্ত দেওয়া যায় ঈদের দিন হাটে যাবে, কিন্তু হাট কি ঈদের দিন খোলা থাকে? ফাকিঁদিয়ে আর যায় নাই।আর আম্মু ওটাকে নিয়ে নিয়ত করেছিলো যে তার পেটে বাচ্চা হলে সামনের বছর কুরবানি দিয়ে দিবে।

কিন্তু সাংঘাতিক ঘটনা হচ্ছে কুরবানির ৭/৮দিন পর স্পষ্ট হয়ে গেলো ওটা প্রেগন্যান্ট নাহ, পেটও একেবারে ছোট হয়ে যায়। আর গত মাসে আব্বু আর আম্মু ঝগড়া করে, ছাগলটাকে আম্মু ডক্টর দেখাইতে নিয়ে যাবে (অনেক ডাকাডাকি করতো)এমন টাইমে আব্বু ওটাকে একাই ধরে পায়ের নিচে ফেলে জবাই করে ফেলে, (আমিজবাই করতে দেখিনি, আম্মু বলেছে) আর একা একাই চামড়া ছিলে, মাংস কাটে, আর আম্মুকে বুঝায় যে, সে একাই একটা ছাগল জবাই করতে পারলে আম্মুকেও মারতে পারে। এরপর এই মাংস কাউকে দেয়ও নি, দিতে মানাও করে দেয় আম্মুকে যে কাউকে যদি একটুকরা মাংসও দেয় কিয়ামতের দিন নাকি জবাব্দিহি করতে হবে।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে এটার মাংস খাওয়া কি হালাল? অলরেডি ২বার রান্না করা হয়েছে এবং আমি খেয়েছি, প্রত্যেকবারই সন্দেহ লাগে, কোরবানির পশু আমি কোরবানি দিতে মানা করলাম, যদিও টাকা দিয়েছিলাম,আরেকটা ছাগলের জন্য কিন্তু আব্বু তো আনে নাই,এরপর ঠিকই জবাই করা হইছে,অন্যদের হক্ব তাও দেয়া হচ্ছে নাহ, খাচ্ছি, গুনাহ হচ্ছে কি? হালাল তো খাবারটা?হালাল না হলে কি করবো?এটা কি হারাম? একটু সাহায্য করুন, এখানে আমার গুনাহ হলে উস্তাদ কি করবো? আমি এই ক্ষোভে সামনের বছর একাই কুরবানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর ৩হাজার টাকা জমিএও ছিলাম,ওইটাকার হাফ টাকাই আব্বু আর আমার চাচা ধার /পাওনা নিয়েছিলো৷ এক হাজার আম্মুকে দিয়ে এখন এক হাজার পড়ে রয়েছে, আমি আবার হতাশ হয়ে গিয়েছি, টাকাও যে শেষ, অথচ আমার কাছে এখন কিচ্ছু নেই কিভাবে আমি কুরবানি দিবো! আমার উপর কি কুরবানি এখন ফরজ নাকি ওয়াজিব হবে? যেহেতু নিয়ত করেছিলাম? আগেরটায় আমি বাধা দেওয়ায় আমার কি কুরবানিই করা উচিত?

1 Answer

0 votes
by (59,190 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

কুরবানী সংক্রান্ত হাদীস শরীফে এসেছেঃ

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কুরবানী করে না, সে যেন অবশ্যই আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়। (মুসনাদ আহমাদ ৮২৭৩, ইবনে মাজাহ ৩১২৩, হাকেম ৭৫৬৫-৭৫৬৬)

ফাতওয়ার কিতাবে আছেঃ

ولو كان فى ملك انسان شاة فنوى أن يضحى بها أو اشترى شاة ولم ينو الأضحية وقت الشراء ثم نوى بعد ذلك أن يضحى بها لا يجب عليه سواء كان غنيا أو فقيرا لأن النية لم تقارن الشراء فلا تعتبر (بدائع الصنائع، كتاب الأضحية-4/193، هندية-5/291، جديد-5/336)

সারমর্মঃ কোনো ব্যাক্তি মালিকানায় যদি ছাগল থাকে,অতঃপর সে যদি তাতে কুরবানীর নিয়ত করে অথবা কেহ যদি ছাগল ক্রয় করে,কিন্তু ক্রয়ের সময় কুরবানীর নিয়ত না করে,তারপর নিয়ত করে যে সেটা দিয়ে কুরবানী দিবে।

তাহলে উপরোক্ত ছুরত গুলোতে তার উপর এই নিয়তের দ্বারা কুরবানী ওয়াজিব হবেনা। চাই সে ধনী হোক বা ফকির হোক। কেননা ক্রয়ের সময় কুরবানীর নিয়ত ছিলোনা, সুতরাং এটির গ্রহনযোগ্যতা নেই।

*শরীয়তের বিধান হলো কুরবানীর পশু ক্রয় করার পর যদি তার বাচ্চা হয়, তাহলে মায়ের সাথে তাকেও কুরবানী করতে হবে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، أَخْبَرَنَا شَرِيكٌ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ، عَنْ حُجَيَّةَ بْنِ عَدِيٍّ، عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ، . قُلْتُ فَإِنْ وَلَدَتْ قَالَ اذْبَحْ وَلَدَهَا مَعَهَا . قُلْتُ فَالْعَرْجَاءُ قَالَ إِذَا بَلَغَتِ الْمَنْسِكَ . قُلْتُ فَمَكْسُورَةُ الْقَرْنِ قَالَ لاَ بَأْسَ أُمِرْنَا أَوْ أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ نَسْتَشْرِفَ الْعَيْنَيْنِ وَالأُذُنَيْنِ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ

আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, সাতজন ব্যক্তি পর্যন্ত একটি গরুতে অংশীদার হওয়া যায়। আমি (হুযাইয়্যা) বললাম, বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হলে (অর্থাৎ পেটে বাচ্চা পাওয়া গেলে) তিনি বললেন, বাচ্চাটিকেও এর সাথে যবেহ কর। আমি বললাম, গরুটি খোড়া হলে? তিনি বললেন, যদি তা কুরবানীর স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে (তবে তা কুরবানী করা যাবে)। আমি বললাম, তার শিং ভাঙ্গা হলে? তিনি বললেন, এতে কোন সমস্যা নেই। আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে অথবা আমরা যেন কুরবানীর পশুর (কেনার সময়) দুই চোখ ও দুই কান - ভালভাবে দেখে নেই। (ইবনু মা-জাহ -৩১৪৩)

এ হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন।(তিরমিজি ১৫০৩)

ঐ বাচ্চাটিকেও কুরবানী করতে হবে,তবে শর্ত হল, যেন ঐ বাচ্চা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয়। (বাইহাকী ৯/২৮৮, আল-মুমতে ৭/৫১০)

কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে।(কাযীখান ৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

প্রথম দেখার বিষয় আপনার বাবার উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল কি না? যদি কুরবানী ওয়াজিব না হয় তাহলে কুরবানীর নিয়তে যেই ছাগল ক্রয় করেছে তাই কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। আর যদি আপনার বাবা সাহেবে নিসাব হয় তাহলে যেকোন পশু কুরবানী করলেই হবে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। নেসোব সম্পর্কে জানতে: https://www.ifatwa.info/1642

প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে আপনার বাবা যদি সেই ছাগলটি আল্লাহর নাম নিয়ে কুরবানীর নিয়তে জাবাই করে থাকে তাহলে ওয়াজিব আদায় হয়ে গেছে। কিন্তু আপনার প্রশ্নের ধরণ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, আপনার বাবা মনে হয় ছাগলটি রাগের বশে জবাই করেছেন যাতে তার কুরবানীর নিয়ত ছিল না। যদি বাস্তবতা তাই হয়, তাহলে জেনে রাখা উচিত যে,

 কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে ছিল, কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিবে।(বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪, ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫)

সুতরাং আপনার বাবা যদি কুরবানীর নিয়ত না করে আল্লাহর নামে জবাই করে তাহলে তার গোশ্ত খাওয়া যাবে। কিন্তু যদি কুরবানীর নিয়তে জবাই করে তাহলে তার গোশ্ত মানতের হুকুমে হয়ে যাবে। যা নিজে খেতে পারবে না। বরং সদকা করে দিতে হবে। মানতের গোশ্তের বিধান জানতে: https://ifatwa.info/38016/?show=38016#q38016


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...