আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
268 views
in সালাত(Prayer) by (32 points)
closed by
আসসালামু 'আলাইকুম,
নামাজে তো সর্বোত্তম পোশাক পড়ার কথা কুরআনে বলা হয়েছে যদিও আমরা অনেকেই তা করি না।
অনেকে লেখা(নাম/নাম্বার বা অন্য কিছু)সম্বলিত শার্ট,টিশার্ট কিংবা জার্সি পড়ে অনেকসময় নামাজ পড়ে।
পিছনের কাতার থেকে কেউ যদি নামাজরত অবস্থায় ঐদিকে তাকায় এবং ওই লেখা পড়ে ফেলে তাহলে কি পিছন থেকে তাকানো ব্যক্তির নামাজ ভঙ্গ হবে?  নাকি মাকরুহ হবে? আর যিনি লেখা সম্বলিত শার্ট-টিশার্ট/জার্সি পড়ে নামাজ পড়ছেন তিনিও কি গুনাহের ভাগীদার হবেন??
[ফুটবল তো সরাসরি হারাম আওরাহ এর কারণে, প্রফেশনাল ক্রিকেটও তো হারাম! কিন্তু  অনেকে অনেকসময় এমনেই জার্সি পড়ে, বাট কখনও খেলা দেখে না এবং কোনো দলকে সাপোর্টও করে না,জাস্ট এমনেই জার্সি পড়ে ]

প্লিজ জানাবেন নামাজে লেখা(কারো নাম কিংবা সংখ্যা বা কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম) পড়লে কি  নামাজ ফাসেদ হবে নাকি মাকরুহ হবে? এবং মাকরুহ কি তাহরীমী নাকি তানজিহী?
[অনেক স্কুল কলেজ ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেরা টিশার্ট/জার্সি গায়ে দেয় যাতে তার নিজের নাম, ভার্সিটি/স্কুল/কলেজের নাম এবং ডিপার্টমেন্ট লেখা থাকে।এগুলা উত্তম পোশাক না অবশ্যই।বাট এগুলোর পিছন থেকে পড়ে ফেললে পিছনের ব্যক্তির নামজ হবে কিনা এবং জার্সি/টিশার্ট পরিহিত ব্যক্তির গুনাহ হবে কিনা]
closed

1 Answer

+1 vote
by (59,190 points)
selected by
 
Best answer

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

যেসব কারণে নামাজ ফাসেদ হয়ে যায়:

  ১. নামাজে অশুদ্ধ কিরাত পড়া। যতটুকু অশুদ্ধ পড়লে কোরআনের অর্থ ও উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই নামাজ আবার পড়তে হবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬৩৩-৬৩৪, হিন্দিয়া : ১/৮০, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৩/৩৪৪)

২. নামাজের ভেতর কথা বলা।

নামাজে এমন কোনো অর্থবোধক শব্দ করা, যা সাধারণ কথার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬১৩, আল বাহরুর রায়েক : ২/২)

৩. নামাজরত অবস্থায় কোনো লোককে সালাম দেওয়া।   (ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/৯২, আল বাহরুর রায়েক : ২/১২০)

৪. কারো সালামের উত্তর দেওয়া। (বুখারি, হাদিস : ১২১৭)

৫. ব্যথা কিংবা দুঃখে ‘উহ-আহ’ শব্দ করা। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/৬১৯, আল বাহরুর রায়েক : ২/৪, মারাকিল ফালাহ : ১/১২১)

৬. বিনা কারণে কাশি দেওয়া। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৩/৬১৮, মারাকিল ফালাহ : ১/১২১, আল বাহরুর রায়েক : ২/৫)

৭. আমলে কাসির করা। ফিকহবিদরা আমলে কাসিরের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। তার মধ্যে বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য অভিমত হলো, কোনো মুসল্লি এমন কাজে লিপ্ত হওয়া, যার কারণে দূর থেকে কেউ তাকে দেখলে তার মনে প্রবল ধারণা জন্মাবে যে ওই ব্যক্তি নামাজরত নয়। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৩/৪৮৫, ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬২৪-৬২৫, বায়েউস সানায়ে : ১/২৪১)

৮. দুনিয়াবি কোনো বিপদে কিংবা বেদনায় শব্দ করে কাঁদা। (হাশিয়াতু তাহতাবি : ১/৩২৫, ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬১৯, নুরুল ইজাহ, পৃ. ৬৮)

৯. তিন তাসবিহ পরিমাণ সতর খুলে থাকা। নামাজি ব্যক্তির নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত শরীরের কোনো স্থান যদি তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় অনাবৃত থাকে, তাহলে তার নামাজ ভেঙে যাবে। (ফাতওয়ায়ে শামি : ১/২৭৩, কাফি : ১/২৩৮, মাওয়াহিবুল জলিল : ১/৩৯৮, মুগনিল মুহতাজ : ১/১৮৮, হাশিয়াতুত তাহতাবি : ১/৩৩৭)। উল্লেখ্য, নারীদের মাথাও সতর। কোনো কারণে মাথার ওড়না সরে গেলে নামাজ ভেঙে যাবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৬৪১, তিরমিজি, হাদিস : ৩৭৭, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৬৫৫

১০. মুক্তাদি ছাড়া অন্য ব্যক্তির লোকমা (ভুল সংশোধন) লওয়া। যেমনইমাম সাহেব কিরাতে ভুল করছেন, সঙ্গে সঙ্গে নামাজের বাইরের কোনো লোক লোকমা দিলে তা গ্রহণ করা। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬২২, হিন্দিয়া : ১/৯৮)

১১. সুসংবাদ বা দুঃসংবাদের প্রতিউত্তর করা। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬১৩, আল বাহরুর রায়েক : ২/২)

১২. অপবিত্র জায়গায় সিজদা করা। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/১১৫, আল বাহরুর রায়েক : ২/৩৭, তাবয়িনুল হাকায়েক : ১/৯৫)

১৩. কিবলার দিক থেকে সিনা (বুক) ঘুুরে যাওয়া। তবে অপারগতাবশত যানবাহনে নামাজের ক্ষেত্রে মাসআলা ভিন্ন। (মারাকিল ফালাহ : ১/১২১, নুরুল ঈজাহ : ১/৬৮)

১৪. নামাজে কোরআন শরিফ দেখে পড়া। (মারাকিল ফালাহ ১/১২৪, হাশিয়াতুত তাহতাবি ১/৩৩৬)। তবে সৌদি আরবের আলেমরা এ মাসআলার ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করেন।

১৫. নামাজে শব্দ করে হাসা। (কানযুদ্দাকায়েক : ১/১৪০)

১৬. নামাজে সাংসারিক (দুনিয়াবি) কোনো বিষয় প্রার্থনা করা। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬১৯, আল বাহরুর রায়েক : ২/৩)। তবে এ মাসআলার ক্ষেত্রে অন্য মাজহাবের ভিন্নমত আছে

১৭.হাঁচির জবাব দেওয়া। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/১১৭)

১৮.নামাজরত অবস্থায় খাওয়া ও পান করা। (মারাকিল ফালাহ : ১/১২১, নুরুল ঈজাহ : ১/৬৮)

১৯.ইমামের আগে মুক্তাদি দাঁড়ানো। মুক্তাদির পায়ের গোড়ালি ইমামের আগে চলে গেলে নামাজ ভেঙে যাবে। তবে যদি (দুজনের জামাতে নামাজের ক্ষেত্রে) মুক্তাদি ইমামের পায়ের গোড়ালির পেছনেই দাঁড়ায়, কিন্তু তিনি লম্বা হওয়ার কারণে তাঁর সিজদা ইমাম সাহেবকে অতিক্রম করে যায়, তাহলে তাঁর নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/১৫৯, আল মাবসুত লিস সারাখসি : ১/৪৩)

এখানে নামাজ ভঙ্গের প্রসিদ্ধ ১৯টি কারণ তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও নামাজ ভঙ্গ হওয়ার আরো কারণ আছে। যেমনপুরুষের পাশে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী এসে নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়া, ইমামের আগে কোনো রোকন আদায় করে ফেলা, ইচ্ছাকৃত অজু ভাঙার মতো কোনো কাজ করে ফেলা, পাগল, মাতাল কিংবা অচেতন হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নামাজ ভঙ্গের কারণ।

নামাজের ভেতর কথা বললে কিংবা এমন কোনো অর্থবোধক শব্দ করা, যা সাধারণ কথার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬১৩; আল বাহরুর রায়েক : ২/২)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

নামাজে সামনের মুসাল্লির টিশার্টে কোন লেখা মুখে উচ্চারণ করে পড়লে নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে। এমতাবস্তায় উক্ত নামাজ পুনরায় পড়তে হবে। তবে লেখাটি মনে মনে পড়লে নামাজ নষ্ট হবে না। তবে মাকরুহ হবে। এমনটি করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে। অবশ্য ওই নামাজ আদায় হয়ে যাবে। তা পুনরায় পড়তে হবে না। (আলবাহরুর রায়েক ২/১৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৫৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২২৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৪)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...