ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-
(০১)
নারীরা হজ ও ওমরা পালনের জন্য ইহরামের পোশাক হিসেবে যে কোনো ধরনের শালীন পোশাকই পরিধান করতে পারবে। তারা এমন পোশাক পরিধান করবে যাতে পর্দার খেলাপ এবং কু-দৃষ্টি ও ফেতনার আশংকা না হয়।
আঁটোসাট পোশাক পরিধান করা যাবেনা।
চেহারা ব্যাতিত সম্পূর্ণ শরীর ঢাকতে হবে।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!
ইহরাম অবস্থায়ও মহিলাদের চেহারার পর্দা করার বিধান রয়েছে- ইহরাম অবস্থায় চেহারায় কাপড় লাগানো নিষেধ। তবে চেহারা ঢাকা নিষেধ নয়। হযরত আয়েশা রা. থেকে বার্ণিত আছে, তিনি বলেন-
كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّونَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحْرِمَاتٌ، فَإِذَا حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا عَلَى وَجْهِهَا فَإِذَا جَاوَزُونَا كَشَفْنَاهُ.
ইহরাম অবস্থায় আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। লোকেরা যখন আমাদের পাশ দিয়ে যেত তখন আমরা আমাদের চাদর মাথায় সামনে ঝুলিয়ে দিতাম। আর চলে যাওয়ার পর তা সরিয়ে ফেলতাম। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৮৩৩)
ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, মহিলারা মাথা ক্যাপ বা এ জাতীয় এমন কিছু বেঁধে নিবে যে,যার উপর দিয়ে মাথা থেকে কাপড় ছেড়ে দিলে উক্ত কাপড় চেহারা কে স্পর্শ না করে নিচের দিকে চলে যাবে।চেহারা বলতে মুখের ঐ অংশ যা অজুতে ধৌত করা হয়ে থাকে।অর্থাৎ কপালের উপরাংশের চুল থেকে নিয়ে থুতনি পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন্ত।(কিতাবুল ফাতাওয়া-৪/৩৭)
বিস্তারিত জানুনঃ-
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
আপনি বাংলাদেশ থেকে পর্দার যে পোষাক (বোরকা+নিকাব) পড়বেন, ঐটাই আপনার ইহরাম।
ইহরাম বেধে ২ রাকাআত নামাজ পড়ে ইহরামের নিয়ত করে নিবেন
اَللَّهُمَّ اِنِّي اُرِيْدُ العُمْرَةَ فَيَسِّرْهُ لِيْ وَ تَقَبَّلْهُ مِنِّي
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদুল উমরাতা ফাইয়াসসিরহু লি ওয়া তাকাব্বালহু মিন্নি’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি ওমরার ইচ্ছা করছি; আপনি আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন।’
★ আপনি মিকাতের জায়গা আসলে মনে নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ শুরু করলেও হবে।
(০২)
সময় সুযোগ থাকলে একাধিকবার ওমরাহ করাই ভালো।
কেননা এই সুযোগ তো সব সময় হয়না,তাই সময় সুযোগ থাকলে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একাধিকবার ওমরাহ করার পরামর্শ থাকবে।
(০৩)
তাওয়াফের পর যে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয় তা মাকামে ইবরাহীমের পিছনে পড়লে ভালো।
নারীদের নামাজের জন্য ওই দিকটায় নির্ধারিত স্থানও রয়েছে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কায় এলেন তখন বাইতুল্লাহর চারপাশে সাত বার তাওয়াফ করলেন। তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দু’ রাকাত নামায পড়লেন। এরপর সাফা-মারওয়ার দিকে গেলেন।’ [সহিহ বুখারি( ১/২২০]
যদি সেখানে পড়ার সুযোগ না পাওয়া যায় তাহলে মসজিদে হারামের যে কোনো স্থানে তা পড়া যাবে।
ইবনে আবী আম্মার বলেন, ‘আমি আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা.)কে তাওয়াফ করতে দেখেছি। তিনি তাওয়াফ শেষে দু’ রাকাত নামায পড়লেন। তখন তাঁর ও কিবলার মাঝে তাওয়াফকারীরা তাওয়াফরত ছিল।’ [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস: ১৫২৬৮]
★আপনি সেখানে নফল নামাজের নিয়ত করে ২ রাকাত নামাজ পড়বেন।
এ সালাত সাফা মারওয়া সাঈ করার আগে।
(০৪)
প্রথমে হাজারে আসওয়াদ এর নিকটে এসে এর মুখি হয়ে তাকবীর বলবেন।
এরপর ডানদিক ধরে চলতে থাকবে।
বায়তুল্লাহকে বামদিকে রাখবে।
তাওয়াফের সময় কাবা শরিফ ও হাজরে আসওয়াদকে বাম দিকে রেখে যখন রুকনে ইয়ামেনীতে (হাজারে আসওয়াদের পর তৃতীয় কর্নার) পৌঁছবেন তখন
এ স্থানে তালবিয়া, তাকবির তাসবিহ ইত্যাদি পড়বেন।অতঃপর (সম্ভব হলে) রুকনে ইয়ামেনি স্পর্শ করবেন। সম্ভব না হলে দূর থেকে ইশারা করে হাজরে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হবেন।
ভিড় করবেন না।
রুকনে ইয়ামেনী ও হাজারে আসওয়াদের মাঝখানে এলে বলবেন:
(رَبَّنَا آَتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ)
(অর্থ- হে আমাদের রব! আমাদিগকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করুন।)
[সুনানে আবু দাউদ]
যখনই হাজারে আসওয়াদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে তখনই হাজারে আসওয়াদ অভিমুখী হয়ে তাকবীর বলবে।
হাজরে আসওয়াদ পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে এক চক্কর সম্পন্ন হবে। এভাবে সাত চক্কর দেয়ার মাধ্যমে পুরো এক (ফরজ) তাওয়াফ সম্পন্ন হবে।
তওয়াফের অন্য অংশে যা কিছু খুশি যিকির, দুআ ও কুরআন তেলাওয়াত করবে।
(০৫)
এ সংক্রান্ত কমেন্ট বক্সে লিংকে দেয়া দোয়া গুলি পড়বেন।
(০৬)
মসজিদে নববীতে সালাত আদায়ের স্থানে সালাত আদায় করবেন,সম্ভব হলে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর রওজার পাশে যেখানে সালাত আদায়ের স্থান রয়েছে,সেই স্থানেও সালাত আদায় করতে পারেন।
(০৭)
আপনি যে পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন,তাহা সহীহ।
তবে হাতো মোজা খুলবেননা।
মাথারর উপর যেই কাপড় ছেড়ে দিতে হয়,সেটি ছেড়্রে দিবেন,তাহলে অনেকটা চেহারার পর্দা হবে।
★আপনি ওমরাহ এর আবশ্যকীয় সমস্ত কাজ চালাকালিন সময়ে নেকাব খোলা রাখবেন।
শুধু মাথার উপর থেকে কাপড় বিশেষ পদ্ধতিতে ছেড়ে দিতে পারবেন।
(০৮)
নারীগন ইহরাম অবস্থায় হাত মোজা,পা মোজা পরিধান করতে পারবে।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. মহিলাদেরকে ইহরাম অবস্থায় চামড়ার মোজা এবং পাজামা পরার অনুমতি দিতেন। তিনি বলেন, ছফিয়্যা রা. চামড়ার মোজা পরিধান করতেন, যা ছিল তাঁর হাটু পর্যন্ত।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস : ১৫৯৬৯, ১৫৯৬৫)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় হাত মোজা এবং পাজামা পরিধান করতে পারবে।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৪৪৪০)
বিখ্যাত তাবেয়ী কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ রাহ. বলেন, ইহরাম গ্রহণকারিনী হাত-মোজা ও পায়জামা পরিধান করবে।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫৯৬৮)