আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
529 views
in সালাত(Prayer) by (4 points)
মেয়েরা কি জুমআর নামাজ পড়তে পারবে? এ ব্যপারে জানালে উপকৃত হতাম।

1 Answer

0 votes
by (590,550 points)

ﺑﺴْﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮّﺣْﻤﻦ ﺍﻟﺮّﺣﻴْﻢ

ﺣﺎﻣﺪﺍ ﻭ ﻣﺼﻠﻴﺎ ﻭﻣﺴﻠﻤﺎ

ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﻻَ ﻋِﻠْﻢَ ﻟَﻨَﺎ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﻋَﻠَّﻤْﺘَﻨَﺎ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧﺖَ ﺍﻟْﻌَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴﻢُ

আপনি পবিত্র ! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে আপনি আমাদিগকে যা শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় তুমিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা।(২/৩২)

জবাবঃ

সমস্ত উলামায়ে কেরাম এ কথার উপর একমত যে,মহিলাদের উপর জুমু'আর নামায ওয়াজিব নয়।মহিলারা জুমু'আর  দিন ঘরে জোহরের চার রাকা'আত নামায আদায় করবে।ইবনুল মুনযির রাহ বলেনঃসমস্ত উলামায়ে কেরাম এ কথার উপর একমত যে,মহিলাদের উপর জুমু'আর নামায নেই।(আল-ইজমা-৫২)
প্রমানস্বরুপ হযরত ত্বারিক ইবনে শিহাব রাঃ এর নিম্নোক্ত হাদিসটি প্রদান করা হল,
ﻃﺎﺭﻕ ﺑﻦ ﺷﻬﺎﺏ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ :( ﺍﻟﺠُﻤُﻌَﺔُ ﺣَﻖٌّ ﻭَﺍﺟِﺐٌ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﻣُﺴﻠِﻢٍ ﻓِﻲ ﺟَﻤَﺎﻋَﺔٍ ﺇِﻻَّ ﺃَﺭﺑَﻌَﺔ : ﻋَﺒﺪٌ ﻣَﻤﻠُﻮﻙٌ ، ﺃَﻭ ﺍﻣﺮَﺃَﺓٌ ، ﺃَﻭ ﺻَﺒِﻲٌّ ، ﺃَﻭ ﻣَﺮِﻳﺾٌ
তরজমাঃ-হযরত ত্বারিক ইবনে শিহাব রাঃ থেকে বর্ণিত,নবী কারীম সাঃ বলেনঃ গোলাম,মহিলা,শিশুএবং অসুস্থব্যক্তি, এই  চারজন ব্যতীত  প্রত্যেক মুসলমানের উপর(মসজিদে এসে) জামাতের সাথে জুমু'আর নামায আদায় করা ওয়াজিব এবং তা কোরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত ।(আবু-দাউদ,১০৬৭)

হাদিসের মানঃ-
) ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﻮﻭﻱ ﻓﻲ " ﺍﻟﻤﺠﻤﻮﻉ " ( 4/483 ) : ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﺻﺤﻴﺢ ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ ﺍﻟﺸﻴﺨﻴﻦ ، ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺭﺟﺐ ﻓﻲ " ﻓﺘﺢ ﺍﻟﺒﺎﺭﻱ " ( 5/327 ) : ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﺻﺤﻴﺢ ، ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻛﺜﻴﺮ ﻓﻲ " ﺇﺭﺷﺎﺩ ﺍﻟﻔﻘﻴﻪ " ( 1/190 ) : ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﺟﻴﺪ ، 
ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ (3111 )
অর্থাৎ-ইমাম নববী,ইবনে রজব,ইবনে ক্বাসির, ইমাম আলবানী রহ গন বলেনঃ উক্ত হাদিস বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত।

জুমুআর নামাজ ওয়াজিব হওয়ার জন্য  নিম্নোক্ত শর্তাবলী ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে....
وَهِيَ الْحُرِّيَّةُ وَالذُّكُورَةُ وَالْإِقَامَةُ وَالصِّحَّةُ، كَذَا فِي الْكَافِي، وَالْقُدْرَةُ عَلَى الْمَشْيِ، كَذَا فِي الْبَحْرِ الرَّائِقِ، وَالْبَصَرُ، هَكَذَا فِي التُّمُرْتَاشِيِّ، 
তরজমাঃ- (১)স্বাধীন ব্যক্তি হওয়া (২)পুরুষ হওয়া(৩)মুক্বিম (মুসাফির না)হওয়া(৪)সুস্থ থাকা(৫)জামে মসজিদে হেটে যাওয়ার সামর্থ্য থাকা(৬)দৃষ্টি সম্পন্ন থাকা।
حَتَّى لَا تَجِبَ الْجُمُعَةُ عَلَى الْعَبِيدِ وَالنِّسْوَانِ وَالْمُسَافِرِينَ وَالْمَرْضَى، 
সুতরাং গোলাম, মহিলা, মুসাফির এবং অসুস্থ ব্যক্তির উপর জুমুআহ ওয়াজিব হবে না।(ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১৪৪)

তবে কোন মহিলা যদি এর পরেও মসজিদে এসে জুমু'আর নামায পড়ে নেয়,তাহলে শুদ্ধ হয়ে যাবে অর্থাৎ  জোহরের পরিবর্তে তার আদায়কৃত জুমু'আর নামায বিশুদ্ধ হবে। এ সম্পর্কে ফুকাহায়ে কিরামগণ বলেনঃ
وَمَنْ لَا جُمُعَةَ عَلَيْهِ إن أَدَّاهَا جَازَ عَنْ فَرْضِ الْوَقْتِ، كَذَا فِي الْكَنْزِ. 
তরজমাঃ-যার উপর জুমুআর নামায ওয়াজিব নয় সে যদি জুমুআর নামায পড়ে নেয় তাহলে সে নামায জোহরের নামাযের  স্থলাভিষিক্ত হয়ে যাবে,কানযুদ্দাক্বাইক্বে এরকম-ই বর্ণিত আছে।(ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১৪৫)

 .ﻭﺇﺫﺍ ﺍﻟﺘﺰﻣﺖ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺑﺎﻟﺸﺮﻭﻁ ﺍﻟﺸﺮﻋﻴﺔ ﻟﺨﺮﻭﺟﻬﺎ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ، ﻛﻌﺪﻡ ﺗﺰﻳﻨﻬﺎ ﻭﺗﻄﻴﺒﻬﺎ ، ﻓﻼ ﺣﺮﺝ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻓﻲ ﺣﻀﻮﺭ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ، ﻭﺗﺼﻠﻴﻬﺎ ﻣﻊ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ ، ﻭﺗﺠﺰﺋﻬﺎ ﺣﻴﻨﺌﺬ ﻋﻦ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻈﻬﺮ .
অর্থাৎ-যদি মহিলা মসজিদে যাওয়ার জন্য শরয়ীত নির্ধারিত সমস্ত বিধি-বিধান পালন করে এবং সৌন্দর্য ও সুগন্ধি ব্যবহার না করে,তাহলে মসজিদে জুমু'আর নামায পড়তে কোনো অসুবিধা নেই।এবং মহিলা ইমামের সাথে দু-রাকাত নামায পড়বে।এবং এ দু-রাকাত নামায জোহরের স্থলাভিষিক্ত হয়ে যাবে,আর জোহর পড়া লাগবে না।(বাদায়েউস সানায়ে,১/১৫৮;)

ইবনুল মুনযির রাহ বলেনঃসমস্ত উলামায়ে কেরাম এ কথার উপর একমত যে,মহিলারা মসজিদে এসে জুমু'আর নামায পড়ে নেয় তা তাদের জন্য জোহরের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে যথেষ্ট হয়ে যাবে। (আল-ইজমা-৫২-৫৩)

ইবনে ক্বুদামা রাহ বলেনঃ
" ﻭﻟﻜﻨﻬﺎ ﺗﺼﺢ ﻣﻨﻬﺎ - ﺃﻱ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ - ؛ ﻟﺼﺤﺔ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻣﻨﻬﺎ ،
অর্থাৎ-মহিলারা জুমু'আ পড়ে নিলে যথেষ্ট হবে,কেননা তাদের জামাতে নামাযও ক্ষেত্র বিশেষে বৈধ ছিল,(কিন্তু পরবর্তিতে সাহাবায়ে কেরামদের সর্বসম্মতিক্রমে মহিলাদের মসজিদে গিয়ে নামায রহিত হয়ে যায় )আল-মুগনি-২/৮৮)

এখন প্রশ্ন হতে পারে তাহলে কি মেয়েরা নিজঘরে জুমু'আর নামায পড়তে পারবে? 
উত্তরঃ না। পারবে না। মহিলারা ঘরে জুমু'আর নামায পড়তে পারবে না,পুরুষ হোক বা মহিলা হোক কেউ ঘরে জুমু'আর নামায পড়তে পারবে না।
 لِأَنَّهَا لَا تَصِحُّ إِلَّا بِجَمَاعَةٍ مَخْصُوصَةٍ بِالْإِجْمَاع
অর্থাৎ-সমস্ত উলামায়ে কেরাম একমত যে, জুমু'আর নামায "বিশেষ জামাত"অর্থাৎ মসজিদ  ব্যতীত শুদ্ধ হয় না।সুতরাং কোন মহিলা বা পুরুষ যদি ঘরের মধ্যে জুমু'আহ পড়ে নেয়,তাহলে তাকে আবার জোহরের নামায পড়তে হবে।

সর্বাবস্থায় মহিলার জন্য উত্তম হল ঘরের মধ্যে নামায পড়া,কেননা নবী কারীম সাঃ বলেন
ﻻ ﺗﻤﻨﻌﻮﺍ ﻧﺴﺎﺀﻛﻢ ﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ، ﻭﺑﻴﻮﺗﻬﻦ ﺧﻴﺮ ﻟﻬﻦ 
তোমরা মহিলাদিগকে মসজিদ থেকে বাধা প্রদান করবেনা এবং ঘর-ই হল তাদের জন্য ইবাদতের উত্তম স্থান।(আবু-দাউদ,৫৬৭)

মহিলাদের উপর জুমু'আহ ওয়াজিব না হওয়ার হেকমত হল,শরীয়ত মহিলাদিগকে পুরুষদের মিলনক্ষেত্রে যোগ না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেননা তার পরিনতি কখনো শুভকর হয় না,যেমন আজকের রঙ্গিন  দুনিয়ায় পুরুষ-মহিলাদের সমবিচরণে সেই সমস্ত অশুভ বিষয়সমূহক প্রতিনিয়ত আমরা পত্যক্ষ্য করছি ।এ জন্য ফিতনার আশংকা থাকায় মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়াকে ফুকাহায়ে কেরাম মাকরুহে তাহরিমী বলেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...