بسم الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
https://ifatwa.info/466/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ
করা হয়েছে যে, আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা হারাম।কোরআন এবং
হাদীসে তাকে শয়তানের কাজ বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। যা দ্বারা শয়তান মানুষদেরকে গোমরাহ
করে থাকে। যেমনঃ- আল্লাহ তা'আলা বলেন,
ﺇِﻥ ﻳَﺪْﻋُﻮﻥَ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻧِﻪِ ﺇِﻻَّ ﺇِﻧَﺎﺛًﺎ ﻭَﺇِﻥ ﻳَﺪْﻋُﻮﻥَ
ﺇِﻻَّ ﺷَﻴْﻄَﺎﻧًﺎ ﻣَّﺮِﻳﺪًﺍ
তরজমাঃ তারা আল্লাহকে পরিত্যাগ করে শুধুমাত্র নারীর
আরাধনা করে এবং তারা শুধুমাত্র অবাধ্য শয়তানের পূজা করে।
ﻟَّﻌَﻨَﻪُ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻟَﺄَﺗَّﺨِﺬَﻥَّ ﻣِﻦْ ﻋِﺒَﺎﺩِﻙَ
ﻧَﺼِﻴﺒًﺎ ﻣَّﻔْﺮُﻭﺿًﺎ
তরজমাঃ আল্লাহ তা'আলা তাকে(শয়তানকে) অভিসম্পাত করেছেন। শয়তান বললঃ
আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণ করব।
ﻭَﻷُﺿِﻠَّﻨَّﻬُﻢْ ﻭَﻷُﻣَﻨِّﻴَﻨَّﻬُﻢْ ﻭَﻵﻣُﺮَﻧَّﻬُﻢْ ﻓَﻠَﻴُﺒَﺘِّﻜُﻦَّ
ﺁﺫَﺍﻥَ ﺍﻷَﻧْﻌَﺎﻡِ ﻭَﻵﻣُﺮَﻧَّﻬُﻢْ ﻓَﻠَﻴُﻐَﻴِّﺮُﻥَّ ﺧَﻠْﻖَ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺘَّﺨِﺬِ
ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻭَﻟِﻴًّﺎ ﻣِّﻦ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻓَﻘَﺪْ ﺧَﺴِﺮَ ﺧُﺴْﺮَﺍﻧًﺎ ﻣُّﺒِﻴﻨًﺎ
তরজমাঃ তাদপশুদেরেরকে পথভ্রষ্ট করব,
তাদেরকে আশ্বাস দেব;
কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর
সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। (আল্লাহ তা'আলা বললেন)যে কেউ আল্লাহ-কে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে
গ্রহণ করবে,সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হবে। (সূরা নিসাঃ১৭-১৯)
হযরত ইবনে আব্বাস রাযি থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেনঃ-
ﻭﻋﻦ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗَﺎﻝَ : ﻟَﻌَﻦَ
ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﻮَﺍﺷِﻤَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟْﻤُﻮﺗَﺸِﻤَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟْﻤُﺘَﻨَﻤِّﺼَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟْﻤُﺘَﻔَﻠِّﺠَﺎﺕِ
ﻟِﻠْﺤُﺴْﻦِ ، ﺍﻟْﻤُﻐَﻴِّﺮَﺍﺕِ ﺧَﻠْﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﺒَﻠَﻎَ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓً ﻣِﻦْ ﺑَﻨِﻲ
ﺃَﺳَﺪٍ ﻳُﻘَﺎﻝُ ﻟَﻬَﺎ ﺃُﻡُّ ﻳَﻌْﻘُﻮﺏَ ، ﻓَﺠَﺎﺀَﺕْ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ : ﺇِﻧَّﻪُ ﺑَﻠَﻐَﻨِﻲ ﻋَﻨْﻚَ
ﺃَﻧَّﻚَ ﻟَﻌَﻨْﺖَ ﻛَﻴْﺖَ ﻭَﻛَﻴْﺖَ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻭَﻣَﺎ ﻟِﻲ ﺃَﻟْﻌَﻦُ ﻣَﻦْ ﻟَﻌَﻦَ ﺭَﺳُﻮﻝُ
ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢ
তরজমাঃ “আল্লাহর অভিশাপ হোক সেই সব নারীদের উপর,
যারা অন্যর দেহাঙ্গে উল্কি (ট্যাটু)
অংকন করে, এবং নিজ দেহাঙ্গে অন্যর মাধ্যমে উল্কি (ট্যাটু) করে,
এবং ভ্রু-কে চেঁছে সরু (প্লাক) করে,
ও সৌন্দর্য প্রদর্শনের মানসে দাঁতের
মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে,অর্থাৎ এসমস্তের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে।(তারা অভিশপ্ত) বনি
আসাদ গোত্রীয় উম্মে ইয়াক্বুব নামী জনৈক মহিলা এ ব্যাপারে তার (ইবনে মাসউদের বর্ণনার)
প্রতিবাদ করলে তিনি বলেন, ‘আমি কি তাকে অভিসম্পাত করব না, যাকে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) অভিসম্পাত করেছেন। এবং
অন্য বর্ণনায় এসেছে........ (এবং তা আল্লাহর কিতাবে আছে?
আল্লাহ বলেছেন,
"রাসুল যে বিধান তোমাদেরকে
দিয়েছেন তা গ্রহন কর, আর যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকো। (-সূরা হাশরঃ৭) [সহীহ বুখারী- ৪৮৮৬ এবং ৪৬০৪ হাদীস]
কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে উক্ত মহিলা ইবনে আব্বাস
রাযিঃকে অভিযোগ করল, এগুলা তো আপনার স্ত্রীও করেন। প্রতিউত্তরে ইবনে আব্বাস রাযি বললেন,
ঠিক আছে তাহলে আপনি গিয়ে দেখে আসতে
পারেন,ঐ মহিলা ইবনে আব্বাস রাযি এর ঘরে গিয়ে উনার স্ত্রীর কাছে তা পায়নি,
তখন ইবনে আব্বাস রাযি বললেনঃ এমন হলে
আমি তার সাথে ঘর-সংসার-ই করতাম না।
ইমাম নাসাঈ রাহ নিম্নোক্ত শব্দে উক্ত হাদীস বর্ণনা
করেন,
ﻟَﻌَﻦَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ
ﺍﻟْﻮَﺍﺷِﻤَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟْﻤُﺘَﻔَﻠِّﺠَﺎﺕِ ، ﻭَﺍﻟْﻤُﺘَﻨَﻤِّﺼَﺎﺕِ ﺍﻟْﻤُﻐَﻴِّﺮَﺍﺕِ ﺧَﻠْﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ
তরজমাঃ- নবীজী সাঃ অভিশাপ করেছেন সেই সব নারীদের
উপর, যারা দেহাঙ্গে উল্কি (ট্যাটু) অংকন করে, এবং সৌন্দর্য প্রদর্শনের মানসে দাঁতের মাঝে ফাঁক
সৃষ্টি করে, এবং ভ্রু-কে চেঁছে সরু (প্লাক) করে আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে। [সুনানে
নাসাঈ-৫২৫৩]
**সাজগোজ করা,
পরিপাটি থাকা এটি মহিলাদের স্বভাবজাত
বিষয়। ইসলাম মেয়েদের স্বভাবজাত এ সাজসজ্জার মানসিকতার বিরোধী নয়। তবে এক্ষেত্রে শরয়ী
সীমা অতিক্রম করা জায়েজ নয়। এমন কোন কাজ করা উচিত নয়,
যদ্ধারা আল্লাহ ও রাসূলের বিধান লঙ্ঘিত
হয়।
সুতরাং শরয়ী বিধান লঙ্ঘণ না হলে,
সেই সাথে শরীয়ত বিরোধী কাজ পার্লারে
না করলে বিউটি পার্লারের কাজ শেখা, কাউকে সাজিয়ে দেয়া ইত্যাদি করে পয়সা কামানো অবৈধ
হবে না।
তবে এক্ষেত্রে শরীয়ত বিরোধী কোন কাজ
করা যাবে না। যেমন-
১-গায়রে মাহরামকে দেখানোর জন্য সাজগোজ।
২-মাথার চুল কর্তন করা।
৩-ভ্রু উপড়ে ফেলা ইত্যাদি কাজ করা
শরীয়ত সম্মত নয়। এছাড়া অন্যান্য কাজ করাতে সমস্যা নেই।
**তবে যেহেতু অধিকাংশ বিউটি পার্লারেই
শরয়ী পর্দাসহ অন্যান্য বিধান পালন করা সম্ভব হয় না, এছাড়া এতে করে অহেতুক সাজগোজে অপচয় করা হয়ে থাকে,
তাই মুসলিম মা বোনদের উচিত এসব ব্যবসা
পরিত্যাগ করা।
শরীয়ত বিরোধী কার্যক্রম থেকে
মুক্ত হলে (শর্ত সাপেক্ষে) মহিলাদের বিউটি পার্লার খোলা বা তাতে কাজ করা জায়েজ রয়েছে।
যেমন: ১) কেবল মেয়েরাই মেয়েদের জন্য কাজ
করবে। সেখানে পুরুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
২) সাজসজ্জার ক্ষেত্রে ইসলামে নারীদের
জন্য যে সকল বিষয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেগুলো থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। যেমন: ভ্রু
প্লাগ, মাথায় কৃত্রিম চুল সংযোজন, শরীরে উল্কি অংকন, দাঁত চিকন করা, আতর সুগন্ধি লাগানো,
মাথার উপরে উঁচু করে চুলের খোপা বাধা
ইত্যাদি।
৩) কৃত্রিম নখ,
ভ্রূ,
ও চোখে কালার লেন্স ইত্যাদি না লাগানো।
কেননা একদিকে এগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক অন্যদিকে মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার নামান্তর।
৪) মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক বা হারাম
উপাদান থেকে তৈরি কেমিক্যাল ও রং ব্যবহার না করা।
৫) মহিলাকে সাজানোর সময় তার লজ্জা
স্থানের দিকে না তাকানো বা তার স্পর্শকাতর স্থান স্পর্শ না করা।
৬) কাফের-ফাসেক নায়িকা-গায়িকা বা
পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বনের উদ্দেশ্যে মাথার চুল খাটো না করা। (এই উদ্দেশ্য না হলে
প্রয়োজনে মহিলাদের মাথার চুল ছোট করা জায়েজ রয়েছে)
৭) যে সকল মহিলা পর্দা বিহীন ভাবে
চলাফেরা করে বা যারা বোরকা পরে কিন্তু মুখমণ্ডল খোলা রাখে তাদের অঙ্গসজ্জা না করা।
কেননা এতে তাদেরকে এ সকল গুনাহের কাজে সহযোগিতা করা হয়- যা ইসলামে নাজায়েজ।
৮) ফেতনা থেকে মুক্ত থাকা।
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/ বোন!
উপরোক্ত শর্তাবলী সাপেক্ষে মহিলাদের
জন্য বিউটি পার্লার খোলা, তাতে কাজ করা এবং এই উদ্দেশ্যে ঘর ভাড়া দেওয়া ইত্যাদিতে কোন বাধা নেই। কিন্তু
এসকল শর্তাবলী লঙ্ঘন হলে অবশ্যই তা বৈধ নয়।