بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
কোন মৃত ব্যাক্তির স্মৃতি
রক্ষার উদ্দেশ্যে তথাকথিত স্মৃতি স্তম্ভ ও শহীদ মিনার নির্মাণ করা,
তাতে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করা ও সেনাবাহিনী
কর্তৃক স্যালুট জানানো, তাদের উদ্দেশ্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা, মোমবাতি জ্বালান, মশাল জ্বালানো, শিখা অনির্বাণ বা শিখা চিরন্তন প্রজ্বলন ইত্যাদি
হল, অমুসলিমদের সংস্কৃতি- যা অমুসলিম সংস্কৃতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ও ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ
মুসলিমরা অবলীলা ক্রমে তাদের অন্ধ অনুকরণ বশত: পালন করে থাকে। ইসলামের সাথে এগেুলোর
দূরতম কোন সম্পর্ক নাই।
অথচ ইসলামে অমুসলিমদের অনুসরণ-অনুকরণ
করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ-চাই তা ইবাদতের ক্ষেত্রে হোক অথবা আচার-আচরণ,
পোশাক-পরিচ্ছদ,
রীতি-নীতি বা কৃষ্টি-কালচারের ক্ষেত্রে
হোক। কেননা হাদিসে এসেছে:
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ
مِنْهُمْ
“যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।” [সুনানে আবু
দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ হা/৪০৩১-হাসান সহিহ]
এছাড়াও হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের পূর্বে অনেক মুসলিম ইহুদি-খৃষ্টানদের রীতি-নীতি অনুসরণ
করবে বলে ভবিষ্যতবাণী করেছেন-বর্তমানে যার বাস্তব প্রতিফলন আমরা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি।
সাহাবী আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত আছে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حذو القذة
بالقذة حَتَّى لَوْ دخلوا جُحْرَ ضَبٍّ لَدخلتتُمُوهُ قالوا: يَا رسول الله
الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى. قَالَ: فَمَنْ؟»
‘‘তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী উম্মতদের অভ্যাস ও রীতি-নীতির ঠিক ঐ রকম অনুসরণ করবে,
যেমন এক তীরের ফলা অন্য এক তীরের ফলার
সমান হয়। অর্থাৎ তোমরা পদে পদে তাদের অনুসরণ করে চলবে। এমনকি তারা যদি ষণ্ডা (মরুভূমিতে
বসবাসকারী গুই সাপের ন্যায় এক ধরণের জন্তু বিশেষ) এর গর্তে প্রবেশ করে থাকে,
তাহলে তোমরাও সেখানে প্রবেশ করবে।”
সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল!
পূর্ববর্তী উম্মত দ্বারা আপনি কি ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বোঝাচ্ছেন?
তিনি বললেন: তবে আর কারা?
[বুখারি, অধ্যায়: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী: ”তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী
লোকদের রীতি-নীতির অনুসরণ করবে।” তবে বুখারির বর্ণনায় حذو
القذة بالقذة – এই শব্দসমূহ নেই। তার স্থলে شبرا
بشبر وذراعا بذراع শব্দগুলো রয়েছে। অর্থাৎ
এক হাতের বিঘত যেমন অন্য হাতের বিঘতের সমান হয় এবং এক হাতের বাহু অন্য হাতের বাহুর
সমান হয়।]
এমন কি সরাসরি মৃতদের কবরেও এসব কার্যক্রম
করা দীনের মধ্যে চরম গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ। আর শহিদ মিনার বা স্মৃতি সম্ভে ফুল দেয়া
সরাসরি শিরক না হলেও তা শিরকের দিকে ধাবিত হওয়ার মাধ্যম। কাফেরদের অন্ধ অনুকরণ তো বটেই।
সব দিক থেকেই তা পালন করা হারাম। (আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন)
কেউ যদি বিশ্বাস করে যে,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
দীনের মধ্যে কোনও কমতি রেখে গেছেন তাহলে সে প্রকারান্তরে ইসলামকে অপূর্ণ এবং রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ‘রেসালাতের দায়িত্ব পালনে অবহেলা কারী’ হিসেবে
অভিযুক্ত করল। (নাউযুবিল্লাহ) অথচ ইসলাম পরিপূর্ণ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম পূর্ণাঙ্গভাবে তা উম্মতের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। সুতরাং তাতে সামান্যতম সংযোজন
ও বিয়োজনের কোনও সুযোগ নাই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই হওয়া সাল্লাম
দ্বীনের ভিতর নতুন নতুন বিদআত তৈরি করার ব্যাপারে কঠিন ভাবে সতর্ক করে গেছেন। তিনি
বলেন,
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ
الأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلالَةٌ
“দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্ট বিষয়াদি থেকে সাবধান! কারণ প্রতিটি নতুন আবিষ্কৃত বিষয়ই
গোমরাহি।[মুসতাদরাক, কিতাবুল ইলম, আলবানী রা. হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।( সিলসিলা সাহীহা, হাদিস নং- ২৭৩৫]
প্রশ্নোত্তরের সার কথা হল,
শহিদ মিনারে ফুল দেয়া সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে
অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন ও তাদের অন্ধ অনুকরণে কারণে হারাম। কোনও মুসলিমের জন্য
কথিত শহিদদের বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা এবং এর সাথে সম্পৃক্ত কোনও কার্যক্রমে অংশ
গ্রহণ করা জায়েজ নাই। কেউ অজ্ঞতা বশত: এমনটি করে থাকলে তার উচিৎ,
অনতি বিলম্বে আল্লাহর নিকট তওবা করা।
নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুল কারী।
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/ বোন!
১. উক্ত কথা ভুলক্রমে বলার দ্বারা
ঈমান নষ্ট হবে না। কালো যাদু ও তার প্রতিকার সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন: https://www.ifatwa.info/6735/
২. ইসলামের দৃষ্টিতে
কোন মুসলিম মৃত বরণ করলে (চাই স্বাভাবিক মৃত্যু হোক বা জিহাদের ময়দানে শাহাদত বরণ করুক
অথবা অন্যায়ভাবে জুলুমের শিকার হয়ে মৃত্যু হোক) তার জন্য কী কী করণীয় তা নির্দিষ্ট
করা আছে। যেমন: তাদের জন্য দোয়া করা, তাদের পক্ষ থেকে গরিব-অসহায় মানুষকে দান-সদকা করা
ও জন কল্যাণ মূলক কাজ করা, সকদায়ে জারিয়া মূলক কার্যক্রম করা, তাদের উদ্দেশ্যে হজ-উমরা আদায় করা ইত্যাদি। এগুলোর
মাধ্যমে তারা কবরে উপকৃত হবে ইনশাআল্লাহ।