আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
119 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (4 points)
reshown by
আসসালমুআলাইকুম,
আমি এর আগে একটা সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম । আপনারা আমাকে  সাহায্য করেছেন তার জন্য  আপনাদেরকে শুকরিয়া।

আজ আমি চাকরির জন্য  ইন্টারভিউ দিতে এসেছি, আমার  কিছু নথিপত্র হারিয়ে যাই তাই নিয়ে আমার মাথা খুব গরম হয়ে যায়।  আমার স্ত্রী ফোনে কথা বলে আমি তাকে সবকিছু বলি , এবং আমার স্ত্রী জানে আমি মানসিক রুগী তাই আমাকে বেশি ভালো করে বুঝিয়ে বলতে চাই যেনো আমি চিন্তা না করি। আর যখন এই সব বলে তখন আমার হুট করে রাগ উঠে যায় আমি তাকে বলি চুপ করো।  আমার রাগ হচ্ছে। আমার স্ত্রী চুপ করেনা । তখন আমার ভয় হয়ে যায় এর আগের বার এমন রাগে  ওই শব্দ ব্যাবহার করেছি( তালাক)! আমি আর কখনও এই শব্দ ব্যাবহার করবো না এটা আমি তখনই প্রতিজ্ঞা করেছি সেই ভয় এ আমার মুখ থেকে কোনো রকম খারাপ কথা যেনো না বেরিয়ে যায় এমন কি গালি পর্যন্ত সেই ভয় এ ফোন অফ করে দিই ।

কিছুক্ষন পর অন করলাম এবং আমার স্ত্রী ফোন করলো আমি রেগে বললাম , যত দিন না বাড়ি যাচ্ছি ফোন করবে না । সে বলল ঠিক আছে আমি আর ফোন করে বিরক্ত করবো না কষ্ট পেয়ে বললো , কিন্তু আমার স্ত্রী চাই আমি যেনো কোনো চিন্তা না করি সেই জন্য আমাকে বুঝায় আমি খুব বেশি চিন্তা প্রবণ , মানসিক রোগ ও আছে।  দিয়ে আমি ১ ঘণ্টা পর আমার স্ত্রী কে ম্যাসেজ করে বলি যে প্রথম কথা তে কেনো সুননা, এক কথা তে কথা শুনতে পারো না। এর জন্য একবার কত বড় কাণ্ড হলো। দিয়ে আমি রেগে  গালি দিয়ে দিবো বা খারাপ কিছু বলবো যাঁর জন্য কেনেয়া তালাক বা এমনি তালাক হয়ে যাবে সেই ভয় এ আমি তাকে ফোনে ব্লক করে দি।

কিছু ক্ষন পর রাগ থামলে আবার ফোনে কথা বলি।
১.হুজুর ঝামেলার সময় তালাকে এর ভয় বা কেনিয়া তালাকের ভয় এ যদি ব্লক করেছি, বা কথা না বলি   এক্ষেত্রে কি কোনো কিছু হবে।

২. এর আগে আমি বলেছিলাম এর পর আবার কিছু কথা বললে বা এক কথা না শুনলে আবার বলবো তালাক। এখন  এই ভয় কাজ করছিলো যদি আমার স্ত্রী আবার আমাকে রাগিয়ে দেই তাহলে কি অটোমেটিক তালাক হবে ?  তখন আপনরা  বলেছিলেন আমার স্ত্রী যদি একই ভুল করে তাহলে তাও তালাক হবে না  ।   আমার স্ত্রী তো আমাকে ভালোবেসে আমাকে বুঝতে চেয়েছিল আমি শুধু শুধু রেগে গিয়েছিলাম তাহলে কি আবার তালাক  হবে?

 বিশাল চিন্তা হচ্ছে  হুজুর  , আমার স্ত্রী কে ছাড়া থাকতে পারবো না।

1 Answer

0 votes
by (63,560 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/48097?show=48111#a48111 নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি যে,

তালাকের কথা চিন্তা করল কিন্তু সে শব্দ করে উচ্চারন করল নাবা তার  জিহবা নড়ল নাঅর্থাৎ সে মনে মনে বললতাহলে তালাক পতিত হবে না। কারণ শুধু অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা (পাপের ভাব ও চেতনা) আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন।

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي مَا وَسْوَسَتْ بِهِ صُدُورُهَا، مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَكَلَّمْ ".

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেননবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (আমার বরকতে) আল্লাহ আমার উম্মতের অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা (পাপের ভাব ও চেতনা) মাফ করে দিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তা কাজে পরিণত করে অথবা মুখে বলে। (সহীহ বুখারী ২৫২৮)

 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ عَنْ زُرَارَةَ بْنِ أَوْفٰى عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ اللهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي مَا حَدَّثَتْ بِه„ أَنْفُسَهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَتَكَلَّمْ

قَالَ قَتَادَةُ إِذَا طَلَّقَ فِي نَفْسِه„ فَلَيْسَ بِشَيْءٍ.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ আমার উম্মতের হৃদয়ে যে খেয়াল জাগ্রত হয় তা ক্ষমা করে দিয়েছেনযতক্ষণ না সে তা কার্যে পরিণত করে বা মুখে উচ্চারণ করে।

ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেনঃ মনে মনে তালাক দিলে তাতে কিছুইতালাক হবে না। [বুখারী শরীফ ৫২৬৯.২৫২৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৮৩ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৮)

 

ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছেঃ-   

قال في الدر فلو طلق أو استثنی ولم یسمع نفسہ لم یصح في الأصح (درمختار شامی: ۱/۳۹۵)

সারমর্মঃ কেহ যদি তালাক দেয়,বা ইস্তেছনা করে,নিজে নিজে যদি তাহা শুনতে না পারে,তাহলে উক্ত তালাক সহীহ হবেনা।

 

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " ثَلاَثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ النِّكَاحُ وَالطَّلاَقُ وَالرَّجْعَةُ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ .

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনতিনটি বিষয় এমন যেগুলির যথার্থ তো যথার্থই এমনকি সেগুলোর কৌতুকের ব্যবহারও যথার্থ: বিবাহতালাকরাজআত। - ইবনু মাজাহ ২০৩৯তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১১৮৫ ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেনএই হাদীসটি হাসান-গারীব।

 

ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার আমলঃ 

ইবনে হাজার আল-হাইছামি তাঁর ‘আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা’ গ্রন্থে (১/১৪৯) এসেছেতাঁকে এর প্রতিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

له دواء نافع وهو الإعراض عنها جملة كافية ، وإن كان في النفس من التردد ما كان – فإنه متى لم يلتفت لذلك لم يثبت بل يذهب بعد زمن قليل كما جرب ذلك الموفقون , وأما من أصغى إليها وعمل بقضيتها فإنها لا تزال تزداد به حتى تُخرجه إلى حيز المجانين بل وأقبح منهم

অর্থাৎএর ঔষধ একটাই সেটা হচ্ছে– ওয়াসওয়াসাকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়াএমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও। কেননা কেউ যদি সেটাকে ভ্রুক্ষেপ না করে তাহলে সেটা স্থির হবে না। কিছু সময় পর চলে যাবেযেমনটি তাওফিকপ্রাপ্ত লোকেরা যাচাই করে পেয়েছেন। আর যে ব্যক্তি ওয়াসওয়াসাকে পাত্তা দিবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করবে সে ব্যক্তির ওয়াসওয়াসা বাড়তেই থাকবেএক পর্যায়ে তাকে পাগলের কাতারে নিয়ে পৌঁছাবে কিংবা পাগলের চেয়েও নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছাবে।

 

এর সর্বোত্তম প্রতিকার হচ্ছে– বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করাلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ পড়াআউযুবিল্লাহ্ পড়া তথা বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।

 

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

اَلْحَمْدُ لِلهِ الَّذِىْ رَدَّ اَمْرَهُ عَلَى الْوَسْوَسَة

সমস্ত প্রশংসা ওই আল্লাহর যিনি শয়তানের বিষয়টি কুমন্ত্রণা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছেন।’ (নাসাঈ )

 

ইবনে হাজার আল-হাইতামি রহ. বলেন,

له دواء نافع وهو الإعراض عنها جملة كافية ، وإن كان في النفس من التردد ما كان

ওয়াসওয়াসার কার্যকরী চিকিৎসা হলএকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়াএমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও।’ (আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা ১/১৪৯)

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!

 

১. না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তালাকের ভয়ে ব্লক করার কারণে কোনো তালাক হবে না।

২. আপনার আগের প্রশ্নের লিংকটা দিলে বিস্তারিত উত্তর দিতে সুবিধা হতো। তবে যতটুকু বুঝতে পারছি যে, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রেও আপনি মুখে উচ্চারণ করে তালাক না দেওয়া পর্যন্ত অটোমেটিক কোনো তালাক পতিত হবে না।

উল্লেখ্য যে, ওয়াসওয়াসার কার্যকরী চিকিৎসা হলএকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়াএমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও।’ (আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা ১/১৪৯)

তাই আপনি তালাক নিয়ে খুব বেশী চিন্তা ফিকির করবেন না। এসব আলোচনা ও চিন্তা ফিকির করা থেকে বিরত থাকবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...