ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/48097?show=48111#a48111 নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি যে,
তালাকের কথা চিন্তা করল কিন্তু সে শব্দ করে উচ্চারন করল না, বা তার জিহবা নড়ল না, অর্থাৎ সে মনে মনে বলল, তাহলে তালাক
পতিত হবে না। কারণ শুধু অন্তরে
উদিত ওয়াসওয়াসা (পাপের ভাব ও চেতনা) আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন।
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ
ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ اللَّهَ
تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي مَا وَسْوَسَتْ بِهِ صُدُورُهَا، مَا لَمْ تَعْمَلْ
أَوْ تَكَلَّمْ ".
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (আমার বরকতে) আল্লাহ আমার উম্মতের অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা (পাপের ভাব ও চেতনা)
মাফ করে দিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তা কাজে পরিণত করে অথবা মুখে বলে। (সহীহ
বুখারী ২৫২৮)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
مُسْلِمُ بْنُ
إِبْرَاهِيمَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ عَنْ زُرَارَةَ بْنِ
أَوْفٰى عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ
اللهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي مَا حَدَّثَتْ بِه„ أَنْفُسَهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ
أَوْ تَتَكَلَّمْ
قَالَ قَتَادَةُ إِذَا
طَلَّقَ فِي نَفْسِه„ فَلَيْسَ بِشَيْءٍ.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি
বলেছেনঃ আল্লাহ আমার উম্মতের হৃদয়ে যে খেয়াল জাগ্রত হয় তা ক্ষমা করে দিয়েছেন, যতক্ষণ না সে তা কার্যে পরিণত করে বা মুখে
উচ্চারণ করে।
ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেনঃ মনে মনে তালাক দিলে তাতে কিছুইতালাক হবে না। [বুখারী
শরীফ ৫২৬৯.২৫২৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৮)
ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছেঃ-
قال في الدر فلو طلق أو
استثنی ولم یسمع نفسہ لم یصح في الأصح (درمختار شامی: ۱/۳۹۵)
সারমর্মঃ কেহ যদি তালাক দেয়,বা ইস্তেছনা
করে,নিজে নিজে যদি তাহা শুনতে না পারে,তাহলে উক্ত তালাক সহীহ হবেনা।
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ،
قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " ثَلاَثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ
وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ النِّكَاحُ وَالطَّلاَقُ وَالرَّجْعَةُ " . قَالَ أَبُو
عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ .
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি বিষয় এমন যেগুলির যথার্থ তো যথার্থই এমনকি সেগুলোর কৌতুকের ব্যবহারও
যথার্থ: বিবাহ, তালাক, রাজআত। - ইবনু মাজাহ ২০৩৯, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১১৮৫ ইমাম আবূ ঈসা
(রহঃ) বলেন, এই হাদীসটি
হাসান-গারীব।
ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার আমলঃ
ইবনে হাজার আল-হাইছামি তাঁর ‘আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা’ গ্রন্থে
(১/১৪৯) এসেছে, তাঁকে এর
প্রতিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
له دواء نافع وهو
الإعراض عنها جملة كافية ، وإن كان في النفس من التردد ما كان – فإنه متى لم يلتفت
لذلك لم يثبت بل يذهب بعد زمن قليل كما جرب ذلك الموفقون , وأما من أصغى إليها
وعمل بقضيتها فإنها لا تزال تزداد به حتى تُخرجه إلى حيز المجانين بل وأقبح منهم
অর্থাৎ, এর ঔষধ
একটাই সেটা হচ্ছে– ওয়াসওয়াসাকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা
সত্ত্বেও। কেননা কেউ যদি সেটাকে ভ্রুক্ষেপ না করে তাহলে সেটা স্থির হবে না। কিছু
সময় পর চলে যাবে; যেমনটি
তাওফিকপ্রাপ্ত লোকেরা যাচাই করে পেয়েছেন। আর যে ব্যক্তি ওয়াসওয়াসাকে পাত্তা দিবে
এবং সে অনুযায়ী কাজ করবে সে ব্যক্তির ওয়াসওয়াসা বাড়তেই থাকবে; এক পর্যায়ে তাকে পাগলের কাতারে নিয়ে পৌঁছাবে
কিংবা পাগলের চেয়েও নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছাবে।
এর সর্বোত্তম প্রতিকার হচ্ছে– বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা, لَا حَوْلَ
وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ পড়া, আউযুবিল্লাহ্ পড়া তথা বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
اَلْحَمْدُ لِلهِ الَّذِىْ رَدَّ اَمْرَهُ عَلَى الْوَسْوَسَة
‘সমস্ত প্রশংসা ওই আল্লাহর যিনি শয়তানের
বিষয়টি কুমন্ত্রণা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছেন।’ (নাসাঈ )
ইবনে হাজার আল-হাইতামি রহ. বলেন,
له دواء نافع وهو الإعراض عنها جملة كافية ، وإن كان في النفس من
التردد ما كان
‘ওয়াসওয়াসার কার্যকরী চিকিৎসা হল, একে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা
সত্ত্বেও।’ (আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা ১/১৪৯)
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!
১. না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তালাকের ভয়ে ব্লক করার কারণে কোনো তালাক হবে না।
২. আপনার আগের প্রশ্নের
লিংকটা দিলে বিস্তারিত উত্তর দিতে সুবিধা হতো। তবে যতটুকু বুঝতে পারছি যে, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রেও আপনি
মুখে উচ্চারণ করে তালাক না দেওয়া পর্যন্ত অটোমেটিক কোনো তালাক পতিত হবে না।
উল্লেখ্য যে, ‘ওয়াসওয়াসার কার্যকরী চিকিৎসা হল, একে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা
সত্ত্বেও।’ (আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা ১/১৪৯)
তাই আপনি তালাক নিয়ে খুব
বেশী চিন্তা ফিকির করবেন না। এসব আলোচনা ও চিন্তা ফিকির করা থেকে বিরত থাকবেন।