আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
238 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (32 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম।

(১) কেউ যদি সাহু সিজদা দিতে ভুলে যায় এবং নামাজ শেষ করার অনেকক্ষন পর অন্য কাজ করার সময় হঠাৎ মনে পড়ে যে সে সেই নামাজে সাহু সেজদা দেয় নি, তাহলে কি নামাজ আবার পড়তে হবে? নাকি সেই নামাজ হয়ে যাবে? একটা ভিডিও তে দেখলাম সেই নামাজ নাকি হয়ে যাবে কারন সাহু সেজদা ওয়াজিব হওয়ার পরও যদি কেউ যদি সেজদা সাহু দিতে ভুলে যায় তাহলে নাকি এটা "সাকেত" হয়ে যাবে?

(২) যোহর ও আসর নামাজের সময় নামাজ শুরু করার সময় কেউ যদি তুলনামুলক কিছুটা জোড়ে "আল্লাহু আকবার" বলে হাত বেধে তারপর নামাজে দাঁড়ায় তাহলে "আল্লাহু আকবার" জোড়ে বলার কারনে কি নামাজের শেষে সেজদা সাহু দিতে হবে?
কারন আমি জানি যে,যোহর ও আসর নামাজে সুরা জোড়ে পড়লে সেজদা সাহু দিতে হয়। কিন্তু "আল্লাহু আকবার" জোড়ে বললে সেজদা সাহু দিতে হয় কিনা জানি না।

(৩) নামাজ পড়ার সময় এই সমস্যাটা হয়। সেজদা দেওয়ার সময় ১ম সেজদা দেওয়ার পরে সেজদা থেকে উঠে বসে তারপর ২য় সেজদা দেওয়া হয়। এখন হঠাৎ আমার মনে হয় যে, ১ম ও ২য় সেজদার মাঝখানে যেই বৌঠক সেই বৌঠকে কি আমি তাড়াহুড়ো করলাম কিনা, অর্থাৎ বসেই সাথে সাথে আবার ২য় সেজদা দিয়ে ফেললাম কিনা এরকম সন্দেহ হয়। তাড়াহুড়ো করলে তো আবার সেজদা সাহু দিতে হবে। ২য় রাকাতে গেলে মনে হয় ১ম রাকাতে কি তাড়াহুড়ো করে দুইবার সেজদা দিলাম কিনা। নামাজ পড়ার সময় প্রতিটি রাকাতে তো ১০০% মনে থাকে না যে আগের রাকাতে কি করেছি। তাই আগের রাকাতে কি করেছি তা যদি মনে না থাকে তাহলে কি করবো?

(৪) আস্তে নামাজ পড়ার সময় অনেক সময় সুরার কিছু (২/১ টা) শব্দ ঠোঁট দিয়ে উচ্চারণ করলেও একটু আস্তে পড়ার কারনে শুনা যায় না। যেমনঃ "আররাহমা-নির রাহি-ম।" এখানে "আর" একটু আস্তে উচ্চারণ হয়ে গেল,যাতে সেই শব্দটা নিজ কানে ঠিকমতো আসলো না, তাহলে কি সেই লাইনটি আবার পড়তে হবে যাতে পরেরবার নিজ কানে শুনা যায়? নাকি কিছু (২-১ টা) শব্দের উচ্চারণ না শুনা গেলেও সমস্যা নেই।

(৫) নামাজে সুরা ফাতিহার কোন লাইন ভুলে বা কোনো কারণে একাধিক বার পড়লেই কি সেজদা সাহু দিতে হবে? নাকি অধিকাংশ লাইন একাধিকবার পড়লে একমাত্র তখনই সেজদা সাহু দিতে হবে?
(৫.১) নামাজে সুরা ফাতিহার পর অন্য যে সুরা পড়া হয়, (যেমনঃ সুরা- নাস) সেখানে ১টি বা কয়েকটি বা অধিকাংশ লাইন একাধিকবার পড়লে কি সেজদা সাহু দিতে হবে? নাকি সেজদা সাহু শুধুমাত্র সুরা ফাতিহা এর ই কোন লাইন একাধিকবার পড়ার কারনে দিতে হয়? সুরা মিলানোর অন্য সুরার ক্ষেত্রে দিতে হয়না?

(৬) যদি এমন হয়, হাত কিছুটা কেটে/ ছুলে গেছে। তাই হাল্কা তরল পদার্থ বের হচ্ছে।
পানি দিয়ে ধোয়া হয়েছে। তারপরও বের হচ্ছে। এটা থেকে এখনো বারবার মুছার পর কিছুটা তরল বের হচ্ছে যা ক্ষতের আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। তাহলে এই ক্ষেত্রে নামাজ পড়বো কিভাবে?
#পদ্ধতি ১ঃ এক্ষেত্রে কি আমি ব্যান্ডেজ ব্যবহার করবো যেন সেই তরল পদার্থ ক্ষতের আশেপাশে ছড়িয়ে না যায়? (ক্ষত থেকে তরল সবসময় পড়ে না, ওজু/অন্য কাজ করার সময় ঘষা লাগলে তখন বের হয়) এবং ব্যান্ডেজ এর উপর দিয়েই ওজু করবো?
#পদ্ধতি ২ঃ নাকি মাযুর হিসেবে প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের আগে খালি একবার ওজু করে নামাজ পড়বো? (এক্ষেত্রে ওজু করার সময় ওজুর পানি ও ক্ষতের তরল মিশে যদি গায়ে লাগে,তাহলে তো ওজু ভেংগে যাবে, তাই এখানে একটু রিস্ক রয়েছে, তাই বুঝতেছি না কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবো)
কারন মাঝে মাঝেই কিছু করতে গেলে হাত-পা হাল্কা কেটে যেতেই পারে। তখন রক্ত অল্প কিন্তু অনবরত বের হতে থাকলে কি করবো?

(৭) কোন নাপাক বস্তু পাক করার জন্য কাপড় দিয়ে ১ম বার মুছার পর সেই মুছার জন্য ব্যবহৃত কাপড় আবার পানি দিয়ে কি ১বার ধৌত করে তারপর আবার ২য় বার সেই নাপাক বস্তুটি মুছবো নাকি নাকি নাপাক বস্তুটি ১বার কাপড় দিয়ে মুছার পর সেই কাপড় ৩ বার ধৌত করে আবার সেই নাপাক বস্তুটি ২য় বার মুছে আবার সেই কাপড়টি ৩ বার ধৌত করবো। এভাবে আবার ৩য় সেই নাপাক বস্তুটি মুছে আবার ৩ বার করে সেই কাপড় ধৌত করবো?
তাহলে তো সেই নাপাক বস্তুটি ৩ বার মুছতে গেলে সেই বস্তুটি মুছার জন্য ব্যবহৃত সেই কাপড়টি সর্বমোট ৯ বার ধৌত করা হলো।

(৮) নামাজ পড়ার পরে খেয়াল করলাম আমার প্যান্টের চেন (chain) খোলা ছিল। কিন্তু আমি আবশ্য পাঞ্জাবি পড়া ছিলাম। পাঞ্জাবি তো সামনের প্রায় হাটু পর্যন্ত থাকে। এখন তাও আমার সন্দেহ হচ্ছে যে, নামাজ অবস্থায় সতর দেখা গিয়েছিল কিনা। কিন্তু আমি পাঞ্জাবি পড়া ছিলাম। সতর তো দেখা যাওয়ার কথা না। কারন প্যান্টের চেন (chain) এর অনেক নিচ পর্যন্ত পাঞ্জাবি যায়।
এখন কি আমি এই নামাজ আবার পড়বো? নাকি এটা ওয়াসওয়াসার কারনে হচ্ছে? কারন আমি সম্পুর্ন সিওর হতে পারতেছিনা না যে সতর দেখা গিয়েছিল কিনা। কিন্তু আমার চিন্তায় বেশিরভাগ (৭০-৮০% এর মত) মনে হচ্ছে যে সতর হয়তো দেখা যায়নি।

1 Answer

0 votes
by (564,900 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী নামাযের ভিতর ভুলে কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে কিংবা কোনো ফরয বা ওয়াজিব বিলম্বিত হলে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়। 

হাদীস শরীফে এসেছে   

حدثنا عبد الله بن يوسف، أخبرنا مالك بن أنس، عن ابن شهاب، عن عبد الرحمن الأعرج، عن عبد الله بن بحينة رضي الله عنه، أنه قال: صلى لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم ركعتين من بعض الصلوات، ثم قام فلم يجلس، فقام الناس معه، فلما قضى صلاته ونظرنا تسليمه كبر قبل التسليم، فسجد سجدتين وهو جالس، ثم سلم.

আবদুল্লাহ ইবনে বুহায়না রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক নামায আমাদের দুই রাকাত পড়ান। তারপর না বসে দাঁড়িয়ে যান। মুকতাদীরাও তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে যায়। যখন তিনি নামায পূর্ণ করলেন এবং আমরা তাঁর সালাম ফিরানোর অপেক্ষা করছিলাম তখন সালাম ফিরানোর আগে তাকবীর দিলেন এবং বসা অবস্থায় দুটি সেজদা করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন। 
(সহীহ বুখারী, হাদীস ১২২৪. সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৭০)
۔
★★শরীয়তের বিধান হলো  সেজদায়ে সাহু ভুলে আদায় না করলে নামাজের পরই আদায় করবে।
নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেলে উক্ত নামাজ দোহরিয়ে (পুনরায়) পড়তে হয় না এমন একটি কওল রয়েছে। 

তবে রাজেহ তথা প্রাধান্য পাওয়া বক্তব্য হল, দোহরিয়ে (পুনরায় উক্ত নামাজ)  পড়তে হবে। সময় থাকুক বা না থাকুক। 
সতর্কতা এর মাঝেই।
(নাজমুল ফাতওয়া ২/২৮৯)

ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছে   
وقد علمت ايضا ترجيح القول بالوجوب فيكون المرجح وجوب الإعادة فى الوقت وبعده (رد المحتار-3/532
নামাজের ওয়াক্ত থাকুক বা না থাকুক,প্রাধান্য পাওয়া বক্তব্য হলো ওয়াক্তের মধ্যে হোক,বা অন্য যেকোনো সময়ে হোক,উক্ত নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে।  
,
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
আপনি যেই মাসয়ালা উল্লেখ করেছেন,তাহা উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ পূর্ণ মাসয়ালা। 
,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত "কেউ যদি সাহু সিজদা দিতে ভুলে যায় এবং নামাজ শেষ করার অনেকক্ষন পর অন্য কাজ করার সময় হঠাৎ মনে পড়ে যে সে সেই নামাজে সাহু সেজদা দেয়নি"
তাহলে সেক্ষেত্রে করনীয় হলোঃ
সতর্কতামূলক উক্ত নামাজ আবার আদায় করে নিবে।

তবে যেহেতু তার জিম্মা হতে ফরজ সাকেত হয়ে গিয়েছে,তাই আবারো আদায় না করলেও তাকে এই নামাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবেনা।

আরো জানুনঃ- 

(০২)
এতে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবেনা।
এতে নামাজের কোনো সমস্যা হবেনা।

(০৩)
প্রশ্নের বিবরণ মতে আপনার উপর এমতাবস্থায় সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবেনা। 

(০৪)
আস্তে পড়ার সময় কিছুটা এমন হতে পারে।
এতেও নামাজ হয়ে যাবে

(০৫)
নামাজে বিনা কারনে সুরা ফাতেহার অধিকাংশ আয়াত একাধিকবার পড়লে, সেজদা সাহু দিতে হবে।
নতুবা নয়।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

(৫.১)
এক্ষেত্রে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবেনা। 
এটি শুধু সুরা ফাতেহার ক্ষেত্রে বিধান।
তবুও যদি বিনা ওযরে হয়।

ওযর বশত হলে তথা আয়াতে ভুল পড়ার দরুন আবারো পড়লে এতে সুরা ফাতেহার ক্ষেত্রেও সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবেনা। 

(০৬)
প্রশ্নের বিবরণ মতে আপনি মাযুর নন।

যেহেতু ভিজে গেলেই তরল বের হচ্ছে,সুতরাং 
আপনি নামাজের আগে অযু করার সময় সেই নির্দিষ্ট স্থান ভিজাবেননা।
আপনি হালকা ভিজা হাত দিয়ে উক্ত স্থানের উপর মাসাহ করবেন,যাতে সেখান থেকে তরল বের না হয়। 

(০৭)
এখানে ২য় ছুরটিই সবচেয়ে উত্তম।

প্রথমে ছুরতেও ইসলামী স্কলারদের মতে নাপাক বস্তু পাক হয়ে যাবে।
তবে শর্ত হলো,প্রত্যেকবার নতুন পাক পানি নিতে হবে। 

(০৮)
প্রশ্নের বিবরণ মতে আপনার নামাজ হয়ে যাবে।
সমস্যা হয়নি।
উক্ত নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...