আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
177 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (2 points)
সম্মানিত শায়েখ আসসালামু'আলাইকুম। প্রশ্নটি নিম্নে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো, প্রশ্নটি দীর্ঘ হওয়ার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
[১৯ ডিসেম্বর ২০১৯] তিন মাসের গর্ভবতী স্ত্রীকে তার স্বামী বিদেশে যাওয়ার পর পূর্বের মনোমালিন্যের জেরে মোবাইলের মাধ্যমে বলে ( শান্ত ও স্বাভাবিক অবস্থায় )–"গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে কথা বলার জন্য তোমাকে কল করেছি, আমি সত্যিই তোমার সাথে আর সংসার করবোনা, তোমাকে আমি 'তালাক' দিলাম। এখন ফোনটা তোমার মায়ের কাছে দাও।"

মায়ের কাছে দেওয়ার পর বলে– "আপনার মেয়েকে যা বলার বলে দিয়েছি, তবুও বলি, আপনার মেয়ের সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সত্যিই আর সম্ভব না। পানি অনেকদূর গড়িয়ে গেছে, আপনার মেয়েকে আমি 'বাইন তালাক' দিলাম।"
( ঐদিন থেকে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগ ও ভরনপোষণ বন্ধ রাখে। ৮ মার্চ ২০২০ তারিখে কল করে তবে কথা কাটাকাটি হয় এবং তিক্ততা থাকেই। কথাবার্তা স্বাভাবিক হয় ২৩ মার্চ ২০২০ তারিখের পর থেকে। )

তালাক দেওয়ার কয়েকদিন পরপর স্বামী তার স্ত্রীর চাচা, ফুফুদের কাছে কল করে অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করে এবং বলে যে পানি অনেকদূর গড়িয়ে গেছে, অলরেডি তালাক দিয়ে দিয়েছি, আমার সিদ্ধান্ত আর পরিবর্তন হবেনা। ( চাচা-ফুফুদের সাথে বলা ডায়ালগগুলোর ব্যাপারে আমি নিশ্চয়তা দিতে পারছিনা যে, কথাগুলো সে এভাবেই বলেছে, যেহেতু তা আমি নিজের কানে শুনিনি। )
[ বিঃদ্রঃ- তালাকের এই ঘটনার পর স্বামী ১৮ দিনের জন্য দেশে আসে ঠিক তখন, যখন সন্তানের বয়স ৮ মাস। স্ত্রী তার বাড়িতে ফাতাওয়া নেওয়া ছাড়া যেতে অস্বীকৃতি জানালে তখন স্বামী অনেক অনুরোধ করে, বিদেশ থেকে আসার পর বাড়িতে বউ না আসলে এলাকায় তার মানসম্মান নষ্ট হবে ইত্যাদি বলে সে তার স্ত্রীকে অনুরোধ করে আর ফাতাওয়া নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। তবে এরপর স্বামী তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে এবং বিষয়টিকে পুরোপুরি অবহেলা করে আর বিদেশে চলে যায়।
বাচ্চার বয়স এখন ২ বছর, এইবারও স্ত্রী ফাতাওয়া নেওয়ার ব্যাপারে স্থীর থাকায় স্বামী পূর্বের মতোই প্রতিজ্ঞা করে আর অনুরোধ করে তার বাড়িতে নিয়ে আসে, ২০ দিন পর ফাতাওয়া না নিয়েই বিদেশে চলে যায়। আর স্ত্রীর পরিবার দরিদ্র থাকায় আর তাদের মধ্যে এবং অন্যান্য মানুষদের মধ্যেও সঠিক জ্ঞানের অভাব থাকায়, এই তালাকের ব্যাপারটা সবাই এড়িয়ে যায়, আর বলে গর্ভবতী অবস্থায় কোনো তালাক হয়না। আর তালাক প্রাপ্তা মেয়েটিকে মানুষ বলে যে এতো বেশি বুঝা ভালোনা।
আবার স্বামী তালাকের ব্যাপারটা এতোদিন স্বীকার করলেও বর্তমানে সে তালাকের সঠিক ঘটনাটাকে অস্বীকার করছে আর তা ঘুরিয়ে অন্যভাবে উপস্থাপন করছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। সাথে সে এটাও বলে যে তালাক দিয়েছি তাহলে আমার বাড়িতে আসছো কেনো? তোমার বাবা-মা তোমাকে এখানে পাঠাইছে কেনো?

 আর স্ত্রীকে তার বাড়িতে থাকতে বাধ্য করছে যদিও সে তার স্ত্রীর অমতে, অনুমতি ছাড়াই জোর করে বিদেশে থাকে। ]

এক্ষেত্রে এখন করণীয় কি এবং এর সঠিক সমাধান কি? অনুগ্রহ করে জানালে উপকৃত হতাম।

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


‘গর্ভাবস্থায় তালাক পতিত হয় না’ এমন একটা কথা সাধারণ লোকদের মাঝে প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু এটা নিতান্তই ভ্রান্ত এবং অজ্ঞতা পূর্ণ কথা। বরং গর্ভাবস্থায়ও তালাক পতিত হবে- এ ব্যাপারে আলেমদের মাঝে কোন দ্বিমত নেই।

গর্ভাবস্থায় তালাক দিলে সেই তালাক পতিত হয়ে যায়। 
এমন অবস্থায় তালাক দেওয়া জায়েজ আছে।
(ফাতাওয়ায়ে হিকমত ২/২১২)
,
তিরমিজি শরীফের ১১৭৬ নং হাদীসে এসেছেঃ

حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، مَوْلَى آلِ طَلْحَةَ عَنْ سَالِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ فِي الْحَيْضِ فَسَأَلَ عُمَرُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " مُرْهُ فَلْيُرَاجِعْهَا ثُمَّ لْيُطَلِّقْهَا طَاهِرًا أَوْ حَامِلاً " . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ يُونُسَ بْنِ جُبَيْرٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَكَذَلِكَ حَدِيثُ سَالِمٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ وَقَدْ رُوِيَ هَذَا الْحَدِيثُ مِنْ غَيْرِ وَجْهٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم . وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَغَيْرِهِمْ أَنَّ طَلاَقَ السُّنَّةِ أَنْ يُطَلِّقَهَا طَاهِرًا مِنْ غَيْرِ جِمَاعٍ . وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنْ طَلَّقَهَا ثَلاَثًا وَهِيَ طَاهِرٌ فَإِنَّهُ يَكُونُ لِلسُّنَّةِ أَيْضًا . وَهُوَ قَوْلُ الشَّافِعِيِّ وَأَحْمَدَ بْنِ حَنْبَلٍ . وَقَالَ بَعْضُهُمْ لاَ تَكُونُ ثَلاَثًا لِلسُّنَّةِ إِلاَّ أَنْ يُطَلِّقَهَا وَاحِدَةً وَاحِدَةً . وَهُوَ قَوْلُ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ وَإِسْحَاقَ . وَقَالُوا فِي طَلاَقِ الْحَامِلِ يُطَلِّقُهَا مَتَى شَاءَ . وَهُوَ قَوْلُ الشَّافِعِيِّ وَأَحْمَدَ وَإِسْحَاقَ . وَقَالَ بَعْضُهُمْ يُطَلِّقُهَا عِنْدَ كُلِّ شَهْرٍ تَطْلِيقَةً .

সালিম (রাহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত আছে, আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তার স্ত্রীকে হায়িয থাকা অবস্থায় তালাক দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উমার (রাঃ) এর বিধান জানতে চাইলেন। তিনি বললেনঃ তাকে তার স্ত্রীকে ফিরত নেওয়ার হুকুম দাও। অতঃপর সে যেন তাকে তুহরে (পবিত্র অবস্থা চলাকালে) অথবা গর্ভাবস্থায় তালাক দেয়।
(সহীহ, ইবনু মাজাহ (২০২৩), মুসলিম)

বিস্তারিত জানুনঃ- 

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নের বিবরণ মতে উক্ত স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়েছে।
স্বামী যে স্ত্রীর সাথে ফোনে কথা হলে তালাক দেয়ার পর স্ত্রীর মাকে ফোনে বলেছিলো,"আপনার মেয়েকে যা বলার বলে দিয়েছি, তবুও বলি, আপনার মেয়ের সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সত্যিই আর সম্ভব না। পানি অনেকদূর গড়িয়ে গেছে, আপনার মেয়েকে আমি 'বাইন তালাক' দিলাম।"

এখানে বাইন তালাক দ্বারা স্বামীর কি উদ্দেশ্য ছিলো?
স্ত্রীকে দেয়া আগের তালাকের কথার খবর দেয়া? নাকি ২য় নাম্বার তালাক দেয়া?

যদি স্ত্রীকে দেয়া আগের তালাকের কথার খবর দেয়া উদেশ্য হয়,তাহলে এক্ষেত্রে স্ত্রীর উপর এক তালাক পতিত হবে। 

আর যদি ২য় নাম্বার তালাক দেয়া উদ্দেশ্য হয়,তাহলে দুই তালাক পতিত হবে। 

প্রশ্নের বিবরণ মতে যেহেতু স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়া হয়নি,তাই উক্ত স্বামী যদি সেই স্ত্রীকে পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে ঘর সংসার করতে চাই,তাহলে নতুন করে বিবাহ পড়িয়ে নিতে পারবে।

এক্ষেত্রে নতুন ভাবে বিবাহ পড়িয়ে নেয়ার পর তাদের ঘর সংসার বৈধ হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...