জবাবঃ
ওয়াসওয়াসা যা মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে,এ গুলোর উৎস কয়েক প্রকারের হতে পারে।
ওয়াসওয়াসা সর্বমোট তিন প্রকার।যথা (১)নফসের ওয়াসওয়াসা।(২)শয়তান জিনদের ওয়াসওয়াসা।(৩)শয়তান মানুষদের ওয়াসওয়াসা।
নফসের ওয়াসওয়াসা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ
আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।(সূরা ক্বাফ-১৬)
শয়তান জিনদের ওয়াসওয়াসা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
فَوَسْوَسَ إِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَا آدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَّا يَبْلَى
অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রনা দিল, বললঃ হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্তকাল জীবিত থাকার বৃক্ষের কথা এবং অবিনশ্বর রাজত্বের কথা?(সূরা তো-হা-১২০)
শয়তান মানুষদের ওয়াসওয়াসা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ
বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি মানুষের পালনকর্তার,
مَلِكِ النَّاسِ
মানুষের অধিপতির,
إِلَهِ النَّاسِ
মানুষের মা’বুদের
مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ
তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্নগোপন করে,
الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ
যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে
مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ
জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।
অর্থাৎ, ওয়াসওয়াসা হয়তো জিন থেকে হবে বা মানুষ থেকে হবে কিংবা নফস থেকে হবে।
অজু এবং নামাযে যে ওয়াসওয়াসার সৃষ্টি হয়।সে জানে না যে, কয় রা'কাত নামায পড়েছে,বা অজুতে কয়বার ধৌত করেছে?'এগুলো শয়তানের পক্ষ্য থেকেই হয়ে থাকে।সে যদি আল্লাহর নিকট পানাহ চায়,তাহলে এটাই তার জন্য যথেষ্ট হবে।আর যদি সে আল্লাহর নিকট পানাহ না চায়,তাহলে শয়তান তার উপর সর্বদাই রাজত্ব করবে।এবং শেষপর্যন্ত সাধারণ ওয়াসওয়াসা থেকে ধংসকারী অসুস্থতার দিকে সে অগ্রসরমান হবে।
শয়তানের ওয়াসওয়াসা ইস্তে'আযা তথা আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া দ্বারা দূর হয়ে যায়।আর নফসের ওয়াসওয়াসা ইস্তে'আযা দ্বারাও দূর হয়।এবং আল্লাহর সাথে বান্দার সুসম্পর্কর দ্বারাও দূর হয়।নেক কাজ করার মাধ্যমে এবং বদ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখার মাধ্যমে।
শয়তানের ওয়াসওয়াসা এবং নফসের ওয়াসওয়াসার মধ্য সুক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে।
ইবনে আবু হাযিম রাহ লিখেন,
" ما كرهتْه نفسُك لنفسِك فهو من الشيطان فاستعذ بالله منه، وما أحبَّته نفسُك لنفسِك فهو من نفسك فانْهَها عنه "
নফস এবং শয়তানের ওয়াসওয়াসার মধ্যে পার্থক্য হল,নিজের জন্য যা অপছন্দনীয় মনে হবে,সেটা শয়তানের পক্ষ্য থেকে হয়ে থাকে।সুতরাং এত্থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতে হবে।আর নফস নিজের জন্য যা পছন্দ করবে,সেটা মূলত নফসের পক্ষ্য থেকেই হয়।(মাজমুউল ফাতাওয়া-১৭/৫৩০)
অর্থাৎ নফস অধিকাংশ সময় শাহওয়াতের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়,সেই সব বিষয়ে,যা সাধারণত মানুষ করে থাকে।
অন্যান্য উলামায়ে কেরাম আরও একটি পার্থক্য নির্ণয় করেন।সেটা হল,শয়তানের ওয়াসওয়াসা হল,গোনাহকে সুসজ্জিত করে মানুষের সামনে পেশ করা,শেষপর্যন্ত লোকজন তাতে পতিত হয়।যদি শয়তান পরাজিত হয়ে যায়,তাহলে সে আরেকটি গোনাহ মানুষের সামনে উপস্থাপন করে।সে বান্দাকে নির্দিষ্ট কোনো গোনাহে পতিত করতে চায় না। বরং সে চায়,বান্দা তার রবের নাফরমানি করুক।আর নফসের ওয়াসওয়াসা হল,নির্দিষ্ট কোনো গোনাহ সম্পর্কে বারবার মনে উক্ত গোনাহ সম্পর্কে উদ্রেক হওয়া।বারবার উক্ত কাজ নিজ মনে উকি দেয়া।
কেউ কেউ বলেন,নফসের ওয়াসওয়াসা বলতে যা নফস কামনা করে ও যাকে পছন্দ করে।আর শয়তানের ওয়াসওয়াসা বলতে যে গোনাহসমূহ বান্দার সামনে সুসজ্জিত আকারে উপস্থাপিত হয়।কখনো কখনো নফসের ওয়াসওয়াসা এবং শয়তানের ওয়াসওয়াসা একই অর্থে ব্যবহৃত হয়।