আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
603 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (12 points)
reshown by
আসসালামু আলাইকুম শায়েখ।

১/পর্নোগ্রাফি দেখার কারণে দুনিয়া ও আখিরাতের শাস্তি সম্পর্কে জানতে চাই।

পর্নোগ্রাফি দেখার কারণে দুনিয়া ও আখিরাতের শাস্তি সম্পর্কে জানতে চাই।

পর্নোগ্রাফি দেখার কারণে দুনিয়া ও আখিরাতের শাস্তি সম্পর্কে জানতে চাই।

২/জায়নামাজ ব্যবহারে কি কোনো সওয়াব আছে?ঘরে জায়নামাজ থাকা সত্ত্বেও মেঝেতে নামাজ পড়ে নিলে হবে?

৩/আসরের নামাজ প্রাইভেট পড়ার কারণে বিলম্ব হয়ে গেলে মাগরিবের পূর্ব পর্যন্ত কি ওয়াক্ত থাকে।অর্থাৎ মাগরিবের নামজের পূর্বে পড়ে নিতে পারব।

[(১) নং প্রশ্নের উত্তর বিস্তারিত জানিয়ে বাকিপ্রশ্নের উত্তরগুলো সংক্ষেপে জানালেও চলবে।]

1 Answer

+1 vote
by (565,920 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


(০১)
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠] 

মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।

فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}

★ইসলামী স্কলারগন বলেছেন যে,
পর্ণ ও অশ্লীল ভিডিও দেখার ফলে আখেরাতে তো তার জন্য কঠিন ও মারাত্মক শাস্তি রয়েছেই,সাথে সাথে এতে তার আমলনামা কলুষিত হয়, দীন ও চরিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অন্তর শয়তানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

পর্ণ ও অশ্লীলতায় ডুবে থাকা ব্যক্তির অন্তর রোগাক্রান্ত হয়। সে অন্তরে ভয়-ভীতি, অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা ও নি:সঙ্গতা অনুভব করে।

অন্তর থেকে লজ্জা শরম বিদায় নেয়, ঈমানের স্বাদ উঠে যায় এবং আল্লাহ ভীতি লোপ পায়।

(দুনিয়াবি ক্ষতি হলোঃ-)

উক্ত ব্যাক্তি ধীরে ধীরে নানা পাপাচারে লিপ্ত হয়, জিনা-ব্যভিচার ও নোংরামির পথ খুঁজতে থাকে, নিজের উপর জুলুম করতে থাকে, হস্তমৈথুন করে, তার শরীর ও চেহারায় পাপাচারের চিহ্ন ফুটে উঠে এবং শরীরে নানা রোগব্যাধি বাসা বাঁধে।

বিবাহিত হলে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মনোমালিন্য শুরু হতে পারে এবং প্রেম-পরকীয়া জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ তখন হালাল স্ত্রীও তার কাছে অপছন্দনীয় হয়ে যেতে পারে।
বা পূর্ণ শান্তি পায়না।
তাকে আর সহ্য হয়না।

বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।

আবার এক্ষেত্রে হস্তমৈথুনের ফলে এবং অন্যান্য আরো কিছু সমস্যার ফলে যৌন অক্ষমতাও চলে আসে,অনেক ক্ষতি হয়।

যার ফলেও স্ত্রী তৃপ্তি না পেয়ে বিষয়টি এক পর্যায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার দিকে যায়। 

একপর্যায়ে ইবাদত-বন্দেগিতে অনীহা সৃষ্টি হয়। এমনকি সম্ভাবনা আছে, একসময় সে আল্লাহর রাস্তা থেকে সরে যাবে। (আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন)

★আল্লাহ তাআলা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল প্রকার অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَن تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ

“আপনি বলে দিনঃ আমার পালনকর্তা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছে এবং হারাম করেছেন পাপাচার, অন্যায়-অত্যাচার, আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে অংশীদার করা, তিনি যার দলিল অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা, যা তোমরা জান না।” [সূরা আরাফ: ৩৩)

ইসলামে পরপুরুষ বা পরনারীর দিকে কামনা-বাসনা সহকারে তাকানো হারাম। অনুরূপভাবে পরপুরুষ-পরনারীর লজ্জা স্থানের দিকে তাকানো হারাম। চাই তা সরাসরি হোক, বা ছবি বা ভিডিও এর মাধ্যমে হোক। পর্ণ ও অশ্লীল ভিডিও দেখার ফলে চোখের গুনাহ হয়। 

অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا

“নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।” (সূরা ইসরা: ৩৬)

কিয়ামতের দিন আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَىٰ أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ

“আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।”
(সূরা ইয়াসিন: ৬৫)

★উল্লেখ্য যে, এক্ষেত্রে যদি বিষয়টি যেনা পর্যন্ত না যায়,তাহলে সেক্ষেত্রে শরীয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে দুনিয়াতে নির্দিষ্ট কোনো শাস্তির কথা উল্লেখ নেই।
বিচারক তা'যির হিসেবে যেই শাস্তি দিবেন,সেটিই হবে।

তবে আখেরাতে এর জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে।
যেটা আল্লাহ তায়ালা নিজ ইচ্ছা মোতাবেক প্রদান করবেন।

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” سَبْعَةٌ لَا يَنْظُرُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلَا يُزَكِّيهِمْ، وَلَا يَجْمَعُهُمْ مَعَ الْعَالَمِينَ، يُدْخِلُهُمُ النَّارَ أَوَّلَ الدَّاخِلِينَ إِلَّا أَنْ يَتُوبُوا، إِلَّا أَنْ يَتُوبُوا، إِلَّا أَنْ يَتُوبُوا، فَمَنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ النَّاكِحُ يَدَهُ، وَالْفَاعِلُ وَالْمَفْعُولُ بِهِ، وَالْمُدْمِنُ بِالْخَمْرِ، وَالضَّارِبُ أَبَوَيْهِ حَتَّى يَسْتَغِيثَا، وَالْمُؤْذِي جِيرَانَهُ حَتَّى يَلْعَنُوهُ، وَالنَّاكِحُ حَلِيلَةَ جَارِهِ “

হযরত আনাস বিন মালেক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: সাত প্রকার ব্যক্তি, যাদের দিকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকাবেন না। তাদেরকে পবিত্র করবেন না। তাদেরকে অন্যদের সাথে একত্রিত করবেন না। তাদেরকেই সর্বপ্রথম জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। তবে যদি তওবা করে তাহলে ভিন্ন কথা। তবে যদি তওবা করে, তাহলে ভিন্ন কথা। যদি তওবা করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাদের তওবা কবুল করবেন। সেসব লোক হল, হস্তমৈথুনকারী, সমকামী, মদে অভ্যস্ত,পিতা মাতাকে প্রহারকারী, অথচ তারা তার কাছে সাহায্যপ্রার্থী, প্রতিবেশীকে নিপিড়নকারী যখন তার উপর অভিশাপ করে,প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে পরকিয়াকারী। [শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৫০৮৭]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: يَجِيءُ النَّاكِحُ يَدَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَدُهُ حُبْلَى 
হযরত আনাস বিন মালেক রাঃ বলেন, কিয়ামতের ময়দানে হস্তমৈথুনকারী এমনভাবে উঠবে যে, তার হাত গর্ভবতী থাকবে। [শুয়াবুল ঈমান, বর্ণনা নং-৫০৮৭]

(০২)
এমন কোনো ছওয়াবের কথা হাদীস শরীফে নেই।
তবে এতে নামাজের প্রতি গুরুত্ব প্রকাশ পায়,মহান আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর মাহাত্ম্য উপলব্ধি হয়।
যাহা এমনিতে তেমন হয়না।

তাই এই দৃষ্টিকোন থেকে নিয়ত এমনটি করলে আল্লাহ তায়ালা চাইলে ছওয়াব দিতে পারেন। ইনশাআল্লাহ। 

(০৩)
মাগরিবের ওয়াক্ত আসার আগ পর্যন্ত তথা সূর্য ডুবে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আসরের নামাজ পড়া যাবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 271 views
...