بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
মসজিদে অতিরিক্ত শব্দ করে কোনো কাজ করা ঠিক নয়।
দরজা-জানালা ব্যবহারের সময়, হাঁটা-চলার সময় অতিরিক্ত শব্দ যাতে না হয়, সে ব্যাপারেও সচেতন থাকতে হবে। হট্টগোল করা বা উচ্চৈঃস্বরে
কথা বলা যাবে না। পাশের লোকের অসুবিধা হয় এমন উচ্চৈঃস্বরে কোরআন তেলাওয়াত করাও জায়েজ
নেই। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘নামাজি ব্যক্তি তার প্রভুর সঙ্গে গোপনে কথা বলে। তার খেয়াল রাখা
উচিত, সে কি বলছে। তোমরা কোরআন শরিফ তেলাওয়াতের মাধ্যমে একে অন্যের ওপর শব্দ করো না।
’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৪৪৮০)
উচ্চৈঃস্বরে কোরআন তেলাওয়াত করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা
থাকলে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা কতটা অমার্জনীয় বলাই বাহুল্য।
*সকল ফুকাহায়ে কেরাম
এ ব্যাপারে একমত যে, বিকট স্বরে যে কোনো কাজ করা, যা দ্বারা লোকদের স্বাভাবিক কর্মকান্ড ব্যাহত হয় (যেমন: কেউ
ঘুমাতে চাইলে ঘুমাতের পারে না, অসুস্থ মানুষ বিশ্রাম নিতে চাইলেও সম্ভবপর হয়ে উঠে না) এ জাতীয়
কাজ সম্পূর্ণ হারাম। আর যদি এ জাতীয় কাজ দ্বীনের নামে করা হয় তাহলে দ্বিগুণ হারাম।
কেননা এ দ্বারা সাধারণ মানুষের মনে দ্বীনের ব্যাপারে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।
ফুকাহায়ে কেরাম আরো লিখেছেন,
যেখানে কেউ ঘুমাচ্ছে সেখানে উচ্চ স্বরে
কোরআন তেলাওয়াত করবে না। এমনিভাবে যেখানে লোকেরা এমন কোনো কাজে ব্যস্ত রয়েছে যে,
সেখানে কোরআন পড়া হলে তারা সেদিকে
লক্ষ্য করবে না বা কোরআনের আদব রক্ষা করবে না তাহলে সেখানেও উঁচু স্বরে কোরআন তেলাওয়াত
করবে না। এমনিভাবে যেখানে উঁচু স্বরে কোরআন তেলাওয়াত করলে মানুষের কাজের ব্যাঘাত ঘটে
সেখানেও জোরে তেলাওয়াত করবে না। এরূপ অগণিত মাসআলা শরীয়ত আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছে যে,
দ্বীনের কাজও এমনভাবে করতে হবে যেন
অপরের কষ্ট না হয়।
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে নবী করিম
(সা.) যখন তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন তখন পাশে স্ত্রী ঘুমন্ত থাকতেন। সে সময়ে তিনি (সা.)
কীভাবে উঠতেন?
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন قام
رويدا و فتح الباب رويدا অর্থাৎ তিনি (সা.) অতি
সন্তর্পনে ধীরে ধীরে উঠতেন এবং অতি সাবধানে শব্দ না করে দরজা খুলতেন যেন পাশে শায়িত
স্ত্রীর ঘুম না ভেঙে যায়। অথচ মহানবী (সা.) এর সকল স্ত্রীই তাঁর জন্য এতো নিবেদিত প্রাণ
ছিলেন যে, যদি মহানবীর (সা.) কোনো কাজে তাঁদের ঘুম ভেঙেও যেত কেউ বিরক্ত হতেন না,
বরং একে সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করতেন।
তবুও নবী করিম (সা.) এতোটা সতর্ক থাকতেন যে, আমার কোনো কাজে যেন স্ত্রীর সামান্যতম কষ্টও না হয়।
আমরা তো দ্বীনী শিক্ষা ও আহকাম সম্পর্কে গাফেল হয়ে নিজে যা বুঝি তাই করি আর দ্বীনী
শিক্ষার ওপর দোষ চাপিয়ে দেই। এটা অত্যন্ত খারাপ। আল্লাহ আমাদের সকলকে বেঁচে থাকার তৌফীক
দিন।
*এক সাথে তেলাওয়াত করা
হলে নিম্ন আওয়াজে তেলাওয়াত করা উত্তম। হ্যাঁ! শব্দ করে তেলাওয়াত করার অনুমতি রয়েছে।
এতে وإذا قرئ القرأن فاستمعو له
وأنصتوا إلخ আয়াতের বিপরীত হবেনা। কারণ বহু ওলামায়ে কেরামের মতে
ঐ আয়াত নামাযে তেলাওয়াতের বেলায় প্রযোজ্য। আর নামাযের বাহিরে তেলাওয়াতের বেলায় প্রযোজ্য
নয়। উপরন্তু তেলাওয়াতে কোরআন শরীফের সম্মান ও হক আদায় করণার্থে استماع
وإنصات (শোনা আর চুপ থাকা)-এর হুকুম। সুতরাং যারা স্বয়ং
তেলাওয়াতে রত আছে তারা কোরআনের বড় হক্ব তথা তেলাওয়াতে রত রয়েছে। তাদের জন্য استماع وإنصات (শোনা আর চুপ থাকা)-এর হুকুম
হবে না। কাজেই সকলেই উচ্চস্বরে পাঠ করলে ঐ আয়তের বিপরিত হবেনা। যেমনিভাবে হেফয বিভাগের
ছাত্ররা একসাথে বড় আওয়াজে তেলাওয়াত করে থাকে।
فروع في القراءة خارج الصلاة
قوله: (يجب الاستماع للقراءة مطلقا) أي في الصلاة وخارجها، لان الآية وإن كانت
واردة في الصلاة على ما مر فالعبرة لعموم اللفظ لا لخصوص السبب، ثم هذا حيث لا
عذر، ولذا في القنية: صبي يقرأ في البيت وأهله مشغولون بالعمل يعذرون في ترك الاستماع
إن افتتحوا العمل قبل القراءة وإلا فلا، وكذا قراءة الفقه عند قراءة القرآن.
অর্থ,
কুরআনের তিলাওয়াত শুনা সর্বক্ষেত্রে
ওয়াজিব, তথা নামাযের ভিতরে হোক, কিংবা বাহিরে। কেননা, আয়াতটি যদিও নামায সম্পর্কে নাযিল হয় (যেমন পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) কিন্তু শব্দের
ব্যাপকতাই উদ্দেশ্য হয়, অতরণের বিশেষ পেক্ষাপট নয়। কিন্তু এটি দর্তব্য হবে যেখানে কোন উজর-অপারগতা নেই
সেখানে। কারণ, ‘কুনইয়্যা’ নামক কিতাবের লিখক লিখেছেন, একজন ছোট ছেলে ঘরে তিলাওয়াত করছে আর তার পরিবারের
লোকেরা কাজে ব্যস্ত আছে। তাহলে তারা যদি তিলাওয়াত আরম্ভ করার পূর্বে কাজ আরম্ভ করে
থাকেন তাহলে তিলাওয়াত না শুনার ক্ষেত্রে তাদেরকে অপরাগ ধরা হবে,
অন্যথায় নয়। তেমনি কুরআন তিলাওয়াতে। (আদ্দররুল মুখতার-১/৩৬৬)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
যদি আপনি এমন আওয়াজে তেলাওয়াত করে
থাকেন যাতে কোন ব্যাক্তির সালাতে কোন সমস্যা তৈরী হবে না, তাহলে তা আপনার জন্য জায়েয
আছে। এতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এমতাবস্থায় যেই ব্যাক্তি আপনার সাথে ধমক দিয়ে কথা
বলেছেন এটি তার জন্য মোটেও উচিত হয়নি। এমন অন্যায়ের জন্য আপনি তাকে ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে
দেখবেন বলে আশা রাখি। সাথে হেকমতের সাথে তাকে দাওয়াত দিবেন ও বুঝাবেন যে, সে যেন পরবর্তিতে
অন্য কারো সাথে এমন আচরণ না করেন।