জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
আগরবাতি একটি সুগন্ধি।
এটার ব্যবহার জায়েজ আছে।
হযরত না'ফে রাহ বলেন,
ﻋَﻦْ ﻧَﺎﻓِﻊٍ ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻥَ ﺍﺑْﻦُ ﻋُﻤَﺮَ ﺇِﺫَﺍ ﺍﺳْﺘَﺠْﻤَﺮَ ﺍﺳْﺘَﺠْﻤَﺮَ ﺑِﺎﻟْﺄَﻟُﻮَّﺓِ ﻏَﻴْﺮَ ﻣُﻄَﺮَّﺍﺓٍ ﻭَﺑِﻜَﺎﻓُﻮﺭٍ ﻳَﻄْﺮَﺣُﻪُ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﺄَﻟُﻮَّﺓِ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﻫَﻜَﺬَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺴْﺘَﺠْﻤِﺮُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ .
হযরত ইবনে উমর (রাযিঃ) অভ্যস্ত ছিলেন যে, যখন তিনি সুগন্ধির ধোয়া নিতেন, তখন সুগন্ধিযুক্ত কাঠের উদ (চন্দন কাঠ) ধোয়া নিতেন। তিনি এর সাথে কোন কিছু মিলাতেন না। আবার (কখনো) চন্দন কাঠের সঙ্গে কর্পূর ছিটিয়ে দিতেন। তারপর বলতেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রকমভাবে সুগন্ধি জ্বালাতেন।
সহীহ মুসলিম-২২৫৪(শামেলা)(ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৬৮৮, ইসলামিক সেন্টার ৫৭১৯)
মিশকাতুল মাসাবিহ-৪৪৩৬
আরো জানুনঃ
,
সুতরাং কেহ মারা গেলে যেহেতু দুর্গন্ধ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে,তাই সুগন্ধি স্বরুপ আগরবাতি জালানো যাবে।
এতে কোনো সমস্যা নেই।
তবে এটি আবশ্যকীয় নয়।
কেহ যদি এটাকে দ্বীনের কাজ বলে মনে করে,তাহলে তা বিদআত হবে।
★★কেউ মারা গেলে তার জানাজা এবং দাফনের আগে এবং দাফনের পরে করনীয়ঃ
মৃত্যুর সংবাদ শোনামাত্র ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়বে। ইন্তেকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার হাত-পা সোজা করে দেওয়া। চোখ-মুখ বন্ধ করে দেওয়া। খাটিয়ার ওপর শুইয়ে সম্পূর্ণ শরীর চাদর দ্বারা ঢেকে দেবে। যত দ্রুত সম্ভব দাফনের ব্যবস্থা করবে। (মুসলিম, হাদিস : ৯১৮, তিরমিজি : ১/২০৬, ফাতাওয়া শামি : ২/১৯৩, ৩/১৫১-১৫২)
কেউ মৃত্যুবরণ করলে চওড়া পট্টি দিয়ে তার চোয়াল বেঁধে দেওয়া মুস্তাহাব (ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য) এবং তার চোখ বন্ধ করে দেওয়া। (মুসলিম, হাদিস : ১৫২৮)
চোখ বন্ধ করার সময় এ দোয়া পাঠ করবে—
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ, আল্লাহুম্মা ইয়াসসির আলাইহি আমরাহু ওয়া সাহহিল আলাইহি মা-বাদাহু, ওয়াস আদহু বি-লিকাইকা, ওয়াজআল মা খারাজা ইলাইহি মিনমা খারাজা মিনহু।
অর্থ : আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়ে আসা দ্বিন অনুযায়ী। হে আল্লাহ! তার বিষয়াদি সহজ করে দিন এবং পরের বিষয়গুলোও তার জন্য সহজ করে দিন। আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য তাকে দান করুন। তার কাছে আগন্তুক বস্তুগুলোকে প্রস্থানকৃত বস্তু থেকে উত্তম করে দিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৭)
মৃত ব্যক্তির হাতদ্বয় সিনার ওপর রাখবে না, বরং তার দুই পাশেই রাখতে হবে। (সুনানে কুবরা, হাদি : ৬৮৪৯, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৪১)
গোসল দেওয়ার আগে মৃত ব্যক্তির পাশে উচ্চৈঃস্বরে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা মাকরুহ। (আবদুর রাজ্জাক : ৩/৩৮৬)
অনতিবিলম্বে কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা মুস্তাহাব। (বুখারি, হাদিস : ১১৬৮, আবু দাউদ, হাদিস : ২৮৪৭)
★মৃত ব্যক্তিকে কিভাবে গোসল দেবেন
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজে কেফায়া। কিছু লোক যদি তাকে গোসল করিয়ে দেয়, তাহলে সবার পক্ষ থেকে সে ফরজ আদায় হয়ে যাবে। যদি কেউ তাকে গোসল করিয়ে না দেয়, তাহলে সবাই গুনাহগার হবে। (বুখারি, হাদিস : ১১৮৬, ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৭০)
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পদ্ধতি হলো—এমন চকিতে তাকে রাখবে, যার ওপর বেজোড়সংখ্যক সুগন্ধি দিয়ে ধুনি দেওয়া হয়েছে। তার সতর তথা পুরুষের ক্ষেত্রে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত কাপড় দ্বারা আবৃত করবে। এরপর তার শরীর থেকে কাপড় খুলবে। নামাজের অজুর মতো তাকে অজু করাবে। তবে কুলি করাবে না এবং নাকে পানি দেবে না। বরং পানিতে কাপড় ভিজিয়ে ওই কাপড় দ্বারা মুখ মুছবে। এরপর বরইপাতার সিদ্ধ পানি তার ওপর ঢালা হবে। যদি বরইপাতা ইত্যাদি পাওয়া না যায়, তাহলে বিশুদ্ধ পানি দ্বারা গোসল দেওয়া যাবে। তার মাথা ও দাড়ি সাবান ইত্যাদি দ্বারা ধৌত করা যাবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৩২, বুখারি, হাদিস : ১৬২)
এরপর তাকে বাঁ পাশ করে রেখে তার ওপর পানি ঢালতে হবে, যাতে নিচেও পানি পৌঁছে। এরপর ডান পাশ করে শুইয়ে পানি ঢালতে হবে, যাতে সেদিকে নিচে পর্যন্ত পানি পৌঁছে। এরপর তাকে ঠেক লাগিয়ে বসানো হবে। পেট বিনম্রভাবে দাবানো হবে। কোনো মলমূত্র বের হলে সেগুলো ধুয়ে দিতে হবে। পুনরায় গোসল দিতে হবে না। এরপর কাপড় দিয়ে মুছে দেবে। (বুখারি, হাদিস : ১৬২, ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৪৫)
এরপর তার দাড়িতে ‘হনুত’ এবং সিজদার স্থানগুলোতে কর্পূর দেওয়া হবে। (বুখারি, হাদিস : ১১৮০, সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ৬৯৫২)
তবে মৃতের নখ ও চুল কাটা যাবে না। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৬৮৭৬)
আর মৃত ব্যক্তি নারী হলে তাকে পরিপূর্ণভাবে সতর আবৃত করে গোসল দেবে। মৃতের মাহরাম বা অন্য নারী ওই মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেবে।
মৃত ব্যক্তিকে কিভাবে কাফন পরাবেন
মৃত ব্যক্তিকে কাফন দেওয়া মুসলমানদের ওপর ফরজে কেফায়া। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৮১৯)
তাই কমপক্ষে এমন পরিমাণ কাফন পরিধান করাবে, যা দিয়ে মৃত ব্যক্তির পুরো শরীর আবৃত হবে। (বুখারি, হাদিস : ১১৯৮, সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি : ৬৯৩৭)
মৃত ব্যক্তিকে তার নিজস্ব সম্পদ থেকে কাফন দেবে, যাতে অন্যের হক সংশ্লিষ্ট না থাকে। (বুখারি : ৫/১৪)
যদি নিজের কোনো সম্পদ না থাকে, তাহলে তাকে কাফন দেওয়ার দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে—জীবিত অবস্থায় যাদের আহারবিহারের দায়িত্ব তার ওপর ছিল। যদি তাদের কাছেও কোনো সম্পদ না থাকে, তাহলে কাফনের ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে করতে হবে। যদি রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে সক্ষম ও সচ্ছল মুসলমানদের ওপর তার কাফনের ব্যবস্থা করা ওয়াজিব।
কাফন তিন প্রকার ১. সুন্নত কাফন, ২. কেফায়া কাফন এবং ৩. প্রয়োজনীয় কাফন।
পুরুষের সুন্নত কাফন হলো—কমিস, ইজার ও লেফাফা। (মুসলিম, হাদিস : ১৫৬৫, মুআত্তা মুহাম্মদ ২/৮৮)
পুরুষের কেফায়া কাফন হলো ইজার ও লেফাফা। এর চেয়ে কম করা মাকরুহ। (বুখারি, হাদিস : ১১৮৬)
পুরুষের জন্য প্রয়োজনীয় কাফন হলো, প্রয়োজনের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ কাফন পাওয়া যায়। সেটা শুধু সতর ঢাকা পরিমাণই হোক না কেন। (বুখারি, হাদিস : ১১৯৭)
নারীদের সুন্নত কাফন হলো লেফাফা, ইজার, কমিস, ওড়না ও সিনাবন্দ। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৪৫)
নারীদের কেফায়া কাফন হলো ইজার, লেফাফা ও ওড়না। (হেদায়া : ১/৮৯)
নারীদের জরুরি কাফন হলো প্রয়োজনের সময় যতটুকু পাওয়া যায়। উত্তম হলো সিনাবন্দ বক্ষ থেকে রান পর্যন্ত হওয়া। (বুখারি, হাদিস : ১১৯৭)
কাফনের কাপড় সাদা হওয়া উত্তম। (তিরমিজি, হাদিস : ৯১৫, মুসলিম, হাদিস : ১৫৬৩)
ইজার মাথা থেকে পা পর্যন্ত হবে। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৬৯৩৭, মুআত্তা মুহাম্মদ : ২/৮৮)
লেফাফা ইজার থেকে এক হাত লম্বা হবে। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৬৯৩৭)
কমিস কাঁধ থেকে পা পর্যন্ত হবে। কমিসে হাতা হবে না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৬০)
পুরুষকে কাফন পরানোর নিয়ম হলো—প্রথমে লেফাফা রাখবে। তারপর লেফাফার ওপর ইজার রাখবে, অতঃপর কমিস রাখবে। এরপর মৃত ব্যক্তিকে এর ওপর রেখে প্রথমে কমিস পরাবে। অতঃপর ইজারকে বাঁ দিক থেকে চড়ানো, এরপর ডান দিক থেকে চড়ানো। এরপর বাঁ দিক থেকে লেফাফা মুড়ে দেওয়া, তারপর ডান দিক থেকে লেফাফা মোড়ানো। উভয় দিক থেকে কাফনকে বেঁধে দেওয়া, যাতে কাফন এলোমেলো না হয়ে যায়। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৪৫, বাদায়ে : ৩/২৫৮)
নারীদের কাফন দেওয়ার পদ্ধতি হলো—প্রথমে লেফাফা বিছাবে। লেফাফার ওপর ইজার, তার ওপর কমিস বিছাবে। প্রথমে কমিস পরাবে। চুলগুচ্ছকে দুই ভাগ করে সিনার দুই পাশে কমিসের ওপর রেখে দেওয়া। এরপর ওড়না মাথার ওপর রাখা। ওড়না পেঁচানোও যাবে না, বাঁধাও যাবে না। বরং শুধু রেখে দিতে হবে। এরপর ইজারকে প্রথমে বাঁ দিক থেকে, তারপর ডান দিক থেকে পেঁচিয়ে সিনার দিক থেকে বেঁধে দেওয়া। অতঃপর লেফাফা পেঁচিয়ে দেওয়া। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৫২, ২৬৪, আবু দাউদ : ২৭৪৫)
★জানাযার পর মৃতদেহ বহন করে কবরের জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।
মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া মুসলমানদের ওপর ফরজে কেফায়া। অনুরূপ মৃতদেহ বহন করাও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা মুরসালাত, আয়াত : ২৫, ২৬, সুরা মায়েদা, আয়াত : ৩১)
উত্তম হলো মৃত ব্যক্তির খাট সবার আগে ওঠানোর ক্ষেত্রে ইখলাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাদ ইবনে মাআজের মৃতদেহ নিজ হাতে উঠিয়েছিলেন। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৪৭, মুসলিম, হাদিস : ১৫৭১)
মৃত ব্যক্তির খাট চার ব্যক্তি কর্তৃক ওঠানো মুস্তাহাব। উত্তোলনকারী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য সুন্নত হলো মৃতদেহ নিয়ে ৪০ কদম হাঁটা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৬৭)
মৃত ব্যক্তির খাট এমনভাবে ওঠানো মুস্তাহাব, যাতে মৃতদেহ নড়াচড়া না করে। (বুখারি, হাদিস : ৫০৬৭, মুসলিম ১৪৬৫, তিরমিজি, হাদিস : ৯৩৬)
মৃতদেহের পশ্চাতে গমন করা তার অগ্রভাগে গমন থেকে উত্তম। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৩২)
মৃতদেহ মাটিতে রাখার আগে বসা মাকরুহ। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৪১)
কবর কমপক্ষে কোমর পরিমাণ গভীর হওয়া মুস্তাহাব। তার চেয়ে বেশি হলে আরো উত্তম। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৮০০)
কবরকে ‘লাহাদ’ বানানো উত্তম। যদি মাটি নরম হয়, তবে ‘শক’ বানানো যায়। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৬)
মৃত ব্যক্তিকে কবরে ডান পাশ করে কিবলামুখী রাখা। মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় ‘বিসমিল্লাহি ওয়ালা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ’ বলা।
মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার পর কাফনের গিরা খুলে দেওয়া।
মৃত ব্যক্তি নারী হলে তাকে কবরে রাখার সময় পর্দা দেওয়া। আর পুরুষ হলে কবরে পর্দা না দেওয়া।
মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার পর ওপরে কাঁচা ইট বা বাঁশ ইত্যাদি দিয়ে আগে কবরের মুখ বন্ধ করে দেওয়া। পাকা ইট দেওয়া মাকরুহ। যদি কাঁচা ইট বা বাঁশ ইত্যাদি পাওয়া না যায়, তবে পাকা ইট দেওয়া মাকরুহ নয়।
মৃত ব্যক্তির দাফনে শরিক সবাই নিজের উভয় হাতে কবরে তিনবার মাটি দেওয়া মুস্তাহাব।