بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
যিহার যার শাব্দিক অর্থ হলো পিঠ। পরিভাষায় যিহার হল, স্ত্রীর সঙ্গে নিজের মা বা মাহরাম (যাদের সঙ্গে
চিরতরে বিয়ে হারাম) তাদের সঙ্গে তুলনা করা যে তুমি আমার কাছে আমার মায়ের মত, আমার বোনের মতো,
আমার খালার মত অথবা স্ত্রীর
কোন অঙ্গ কে নিজের মা বা মাহরামের এমন কোন অঙ্গের সঙ্গে তুলনা করা যা পর্দার অন্তর্ভুক্ত
যেমন স্ত্রীকে বলা তোমার পেট আমার মায়ের পেটের মত,
তোমার পিঠ আমার মায়ের
পিঠের মত ইত্যাদি ইত্যাদি । তাহলে যিহার হবে ।
স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে কথাবার্তায়
সতর্ক থাকা চাই। স্বামী-স্ত্রী হাসি-কৌতুক করতে গিয়ে যেন সীমা ছাড়িয়ে না যায়। যিহার
খুব কঠিন জিনিস কোন স্বামী যিহার করলে বৈবাহিক সম্পর্কে সমস্যা তৈরি হবে। কাফফারা আদায়
ব্যতীত স্বামীর জন্য স্ত্রীকে স্পর্শ করা বা তার সঙ্গে একত্রে সংসার করা হারাম।
কেউ যদি স্ত্রীকে এই ভুল কথা বলে যিহার
করে ফেলে তাহলে এর সমাধান কি?
হজরত খাওলা (রা.) ছিলেন হজরত আওস ইবনে
সামেতে (রা.) এর স্ত্রী। আওস (রা.) বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি রাগের বশে স্ত্রীকে বলে
ফেললেন, ‘তুমি আমার জন্য আমার মায়ের পিঠের মতো’, অর্থাৎ, ‘তোমাকে আমার জন্য আমার
মায়ের মতো হারাম করলাম।’ ইসলামপূর্ব যুগে আরবে এই বাক্যটি স্ত্রীকে চিরতরে হারাম করে
দেওয়ার জন্য বলা হতো। তো আওস (রা.) রাগের মাথায় উত্তেজিত হয়ে যিহার করে ফেললেও একটু
পরই অনুতপ্ত হন। অন্যদিকে খাওলা (রা.) পেরেশান হয়ে রাসুলের (সা.) দরবারে সমাধানের জন্য
ছুটে যান। রাসুল (সা.) জানালেন, এই বিষয়ে আমার কাছে কোনো
অহি অবতীর্ণ হয়নি। তাই পূর্ব প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তুমি তোমার স্বামীর জন্য হারাম হয়ে
গিয়েছ।
এ কথা শুনে খাওলা (রা.) বিলাপ শুরু
করে দিলেন। বলতে লাগলেন, আমি আমার যৌবন তার কাছে
শেষ করেছি, এখন বার্ধক্যে এসে সে আমার সঙ্গে এই
ব্যবহার করল! এখন আমার বাচ্চাদের ও আমার ভরণপোষণের কী হবে? তারপর এই বিষয় নিয়ে রাসুলের (সা.) সঙ্গে বাদানুবাদ শুরু করে
দিলেন যে, আমার স্বামী তো আমাকে ‘তালাক’ শব্দ উচ্চারণ করেনি, তাহলে তালাক হবে কেন?’। রাসুল (সা.) ফের একই
কথা জানালেন। কয়েকবার এমন করার পর খাওলা (রা.) আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বললেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অভিযোগ করছি এবং আমার এই বিপদে আপনার
একান্ত সাহায্য প্রার্থনা করছি। এভাবে আল্লাহর কাছে নিজের ছোট ছোট সন্তানদের কথা স্মরণ
করে বারবার কাকুতি-মিনতি করছিলেন।
এরই মধ্যে আল্লাহ তায়ালা হজরত খাওলার
(রা.) দোয়া কবুল করে নেন। আসমান থেকে আয়াত নাজিল হয়ে গেল। যিহার এবং যিহার প্রত্যাহার
সম্পর্কে ইসলামের বিধান ঘোষিত হলো। আল্লাহ তায়ালা বলে দিলেন, ‘হে নবী! অবশ্যই আল্লাহ শুনেছেন সেই নারীর কথা, যে তার স্বামীর ব্যাপারে আপনার সঙ্গে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহর
কাছে ফরিয়াদ করেছে। আল্লাহ আপনাদের কথোপকথন শোনেন। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’
(সুরা মুজাদালা : ১; মুসতাদরাকে হাকেম : ২/৪৮১; মুসনাদে আহমাদ : ১/৪৬)
وَالَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِن نِّسَائِهِمْ ثُمَّ
يَعُودُونَ لِمَا قَالُوا فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مِّن قَبْلِ أَن يَتَمَاسَّا ۚ
ذَٰلِكُمْ تُوعَظُونَ بِهِ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ٭ فَمَن
لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ مِن قَبْلِ أَن يَتَمَاسَّا ۖ
فَمَن لَّمْ يَسْتَطِعْ فَإِطْعَامُ سِتِّينَ مِسْكِينًا ۚ ذَٰلِكَ لِتُؤْمِنُوا
بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ۚ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ ۗ وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ
أَلِيمٌ
‘যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে যিহার
করে, পরবর্তীতে তাদের সে কথা প্রত্যাহার করে নেয়, তাদের কাফফারা হচ্ছে একটি গোলাম মুক্ত করা; তারা একে অন্যকে স্পর্শ করার আগে। এই উপদেশ তোমাদেরকে দেওয়া
হচ্ছে। তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত। কিন্তু যার এটা করার সামর্থ্য
নেই তার কর্তব্য হচ্ছে একটানা দুই মাস রোজা রাখা;
তারা একে অন্যকে স্পর্শ
করার আগে। আর যে ব্যক্তি এটাও করার সক্ষমতা রাখে না,
তার কর্তব্য হচ্ছে ৬০
জন মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো। এটা এ জন্য,
যেন তোমরা আল্লাহ ও তার
রাসুলের প্রতি ঈমান রাখ। এটা আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত বিধান। (সুরা মুজাদালা : ৩-৪)।
যিহার ও ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গের কাফফারা
একই ।
(১) গোলাম আজাদ করা ।
(২) দুই মাস একটানা রোজা রাখা ।
(৩) ৬০ জন মিসকিন কে পেট ভর্তি করে
খাবার খাওয়ানো ।
বর্তমানে গোলাম আজাদ করার রেওয়াজ
নেই বলে এটার উপর আমল করা সম্ভব নয় ফলে বাকি দুটোর মধ্যে যেকোন একটি আদায় করলে কাফফারা
আদায় হয়ে যাবে।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি
ভাই/বোন,
১. প্রিশ্নেল্লিখিত বিষয়টি যিহারের
অন্তর্ভূক্ত হবে না।
২. জ্বী না। এটিও যিহারের মধ্যে শামিল
হবে না। বরং এজাতীয় ভাবনা ওয়াসওয়াসার কারণেই হয়ে থাকে।