ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-
(০১)
নামাযে যেকোনো ভুলের কারণে সেজদা সাহু ওয়াজিব হয়ে যায় না। বরং ভুলে নামাযের কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে কিংবা কোনো ফরয বা ওয়াজিব বিলম্বিত হলে ওয়াজিব হয়। আর যদি ভুলে কোনো ফরয ছুটে যায়, তবে সেজদা সাহু করা যথেষ্ট নয়, বরং পুনরায় নামায আদায় করতে হবে। আর কোনো সুন্নত বা মুস্তাহাব ছুটে গেলে সেজদা সাহু করার বিধান নেই।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حدثنا عبد الله بن يوسف، أخبرنا مالك بن أنس، عن ابن شهاب، عن عبد الرحمن الأعرج، عن عبد الله بن بحينة رضي الله عنه، أنه قال: صلى لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم ركعتين من بعض الصلوات، ثم قام فلم يجلس، فقام الناس معه، فلما قضى صلاته ونظرنا تسليمه كبر قبل التسليم، فسجد سجدتين وهو جالس، ثم سلم.
আবদুল্লাহ ইবনে বুহায়না রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক নামায আমাদের দুই রাকাত পড়ান। তারপর না বসে দাঁড়িয়ে যান। মুকতাদীরাও তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে যায়। যখন তিনি নামায পূর্ণ করলেন এবং আমরা তাঁর সালাম ফিরানোর অপেক্ষা করছিলাম তখন সালাম ফিরানোর আগে তাকবীর দিলেন এবং বসা অবস্থায় দুটি সেজদা করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন।
(সহীহ বুখারী, হাদীস ১২২৪ সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৭০)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
শরীয়তের বিধান হলো যদি কাহারো উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব না হয়,তাহলে শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে সেজদায়ে সাহু না করা উচিত।
যদি ভুলে সেজদায়ে সাহু করে নেয়,তাহলেও নামাজ হয়ে যাবে,২য় বার উক্ত নামাজ আদায় করার প্রয়োজনীয়তা নেই।
তবুও ভবিষ্যতে শুধুমাত্র এহেন সন্দেহের ভিত্তিতে সেজদায়ে সাহু করবেনা।
المحتار على الدر المختار
وَلَوْ ظَنَّ الْإِمَامُ السَّهْوَ فَسَجَدَ لَهُ فَتَابَعَهُ فَبَانَ أَنْ لَا سَهْوَ فَالْأَشْبَهُ الْفَسَادُ لِاقْتِدَائِهِ فِي مَوْضِعِ الِانْفِرَادِ.
(قَوْلُهُ: فَالْأَشْبَهُ الْفَسَادُ) وَفِي الْفَيْضِ: وَقِيلَ لَا تَفْسُدُ وَبِهِ يُفْتِيَ. وَفِي الْبَحْرِ عَنْ الظَّهِيرِيَّةِ قَالَ الْفَقِيهُ أَبُو اللَّيْثِ: فِي زَمَانِنَا لَا تَفْسُدُ لِأَنَّ الْجَهْلَ فِي الْقُرَّاءِ غَالِبٌ. اهـ. وَاَللَّهُ أَعْلَمُ.
( كتاب الصلاة، باب الإمامة، فُرُوعٌ اقْتِدَاءُ مُتَنَفِّلٍ بِمُتَنَفِّلٍ وَمَنْ يَرَى الْوِتْرَ وَاجِبًا بِمَنْ يَرَاهُ سُنَّةً، ١ / ٥٩٩، ط: دار الفكر)
সারমর্মঃ-
যদি ইমাম ভুলের ধারণা করে সেজদায়ে দেয়,আর মুক্তাদীরা তার অনুসরণ করে,তারপর যদি প্রকাশ পায় যে তার কোনক ভুল হয়নি,তাহলে তার নামাজ ভেঙ্গে যাবে কিনা,এই মর্মে মতবিরোধ রয়েছে।
কেহ কেহ বলেছেন নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
আবার কেহ কেহ বলেছেন নামাজ ভেঙ্গে যাবেনা,আর এই মতটির উপরেই ফতোয়া।
خلاصۃ الفتاوی (۱/۱۶۳، امجد اکیڈمی):
"إذا ظن الإمام أنه عليه سهواً فسجد للسهو وتابعه المسبوق في ذلك ثم علم أن الإمام لم يكن عليه سهو فيه روايتان ... وقال الإمام أبو حفص الكبير: لايفسد، والصدر الشهيد أخذ به في واقعاته، وإن لم يعلم الإمام أن ليس عليه سهو لم يفسد صلاة المسبوق عندهم جميعاً".
সারমর্মঃ-
যদি ইমাম ভুলের ধারণা করে সেজদায়ে দেয়,আর মাসবুক ব্যাক্তি তার অনুসরণ করে,তারপর যদি প্রকাশ পায় যে তার কোনক ভুল হয়নি,তাহলে তার নামাজ ভেঙ্গে যাবে কিনা,এই মর্মে মতবিরোধ রয়েছে।
ইমাম আবু হাফস কাবির রহঃ বলেন, নামাজ ভেঙ্গে যাবেনা।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব না হওয়া সত্ত্বেও ওয়াজিব হয়েছে ধরে যদি কেহ সেজদায়ে সাহু আদায় করে,পরবর্তীতে যদি প্রকাশ পায় যে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়েছিলোনা,তাহলে উক্ত নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবেনা।
★তাই প্রশ্নে উল্লেখিত নামাজ হয়ে গিয়েছে, পুনরায় তাহা আদায় করতে হবেনা।
তবে এইভাবে ভবিষ্যতে আর শুধু শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে সেজদায়ে সাহু আদায় করবেননা।
(০২)
আপনি নিজে কানে আসার মতো আওয়াজ করে তিলাওয়াত করবেন,আর অহেতুক সন্দেহকে পাত্তা দিবেননা।
(০৩)
প্রশ্নের বিবরণ মতে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবেনা।
ভুল হলে বা আটকিয়ে গেলে আবার উক্ত আয়াত শুরু করলেও সমস্যা নেই।
তবে অহেতুক সুরা ফাতেহার কোনো আয়াত এভাবে আবারো পড়লে নামাজ মাকরুহ হবে।
এভাবে অহেতুক সুরা ফাতেহার অধিকাংশ আয়াত আবার পড়লে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
বিস্তারিত জানুনঃ-
(০৪)
এরপর সে সেজদায়ে দিয়ে তাশাহুদ, দরুদ,দোয়ায়ে মাছুরা পুনরায় পাঠ করে নামাজ শেষ করবে।
(০৫)
আবার কি ভুল হবে?
হ্যাঁ, যদি এক্ষেত্রে সে সালাম ফিরানোর আগে পরবর্তী রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যায়,তাহলে আবার সেজদায়ে সাহু দিতে হবে।
(৫.১)
এক্ষেত্রে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবেনা।
(০৬)
অযু করার পর রক্ত বের হলে তাহা মুছে ফেলার পর আবারো রক্ত বের হলে অযু করার পর যতটুকু রক্ত বের হয়েছে,সব মিলে যদি গড়িয়ে পড়ার সমপরিমাণ বের হয় তাহলে অযু ভেঙ্গে যাবে,নতুবা নয়।
(৬.১)
হ্যাঁ, হাত ও কাপড় নাপাক হবে।
তবে এক দিরহাম চেয়ে কম লাগলে সমস্যা নেই।
(৬.২)
কাপড় নাপাক হবে।
এক দিরহাম সমপরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি হলে তাহা মাফ হবেনা।
পাক করতেই হবে।
(০৭)
ইচ্ছাকৃতভাবে জেনে বুঝে কুফরি বাক্য মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলে ঈমান চলে যাবে।
(৭.১)
এ সময় শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবেন।
أعوذ بالله من الشيطان الرجيم
لا حول ولا قوة الا بالله العلي العظيم
পড়বেন।
(০৮)
আপনি আপনার সুবিধামতো যেকোনো সুরা পড়তে পারেন।
সমস্যা নেই।