بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
প্রত্যেক
নামাযের একটি নির্ধারিত সময় আছে যে সময়ের পরে তা বিলম্বিত করা জায়েয নেই। আর ওলামায়ে
কেরামের ঐক্যমতে নামাযকে তার নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্বিত করা কবীরা গুনাহ।তবে যদি
ওজরের কারণে হয় বা ঘুমিয়ে থাকার কারণে হয় তাহলে ভিন্ন কথা।
কিন্তু যদি
কারো ক্ষেত্রে নামাযের সময় উপস্থিত হয়, আর সেই ব্যক্তি এমন হয় যার কিছু
পূর্ববর্তী কাযা নামায থাকে,যার সংখ্যা ছয় ওয়াক্তের কম হয়,তাহলে
অধিকাংশ ওলামায়ে
কেরামের মতে উক্ত ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হলো প্রথমে সে তার কাযা নামাযগুলো ধারাবাহিকভাবে
আদায় করবে,ওয়াক্তি নামায আদায়ের আগেই। তারপর
ওয়াক্তি নামায পড়বে।
কারণ নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনটি করেছিলেন খন্দকের যুদ্ধের দিন,যাতে চার ওয়াক্ত নামায কাযা হয়ে গিয়েছিল,অতঃপর সেগুলোকে তিনি ধারাবাহিকভাবে আদায় করেন,ওয়াক্তি নামাযের আগেই।তারপর ওয়াক্তি নামায
পড়েন।
শরীয়তের পরিভাষায়
“সাহেবে তারতীব” (তথা এরকম ব্যক্তি,যার উপর নামাযের সিরিয়াল ঠিক
রাখা আবশ্যক।)বলা হয় এমন ব্যক্তিকে,বালেগ হওয়ার পর থেকে যার যিম্মায়
ছয় ওয়াক্ত নামায কাযা না হয়। অর্থাৎ বালেগ হওয়ার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বা পৃথক পৃথকভাবে
যার ছয় ওয়াক্ত নামায কাযা হয়নি, অথবা কাযা হয়েছিল কিন্তু সে পরবর্তীকালে
তার সেই নামাযগুলোর কাযা আদায় করে ফেলে তাহলে উভয় অবস্থায় সে “সাহেবে তারতীব”বলে গণ্য
হবে।সাহেবে তারতীব ব্যক্তির জন্য নামায আদায়কালে তারতীব রক্ষা করা ওয়াজিব।অর্থাৎ প্রথমে
কাযা নামায গুলো ধারাবাহিক আদায় করতে হবে।তারপর ওয়াক্তের নামায আদায় করতে হবে।
কারণ হাদিস
শরীফে এসেছে,
عن عبد اللہ بن
عمر ان رسول اللہ ۖقال من نسی صلوة فلم یذکرھاالا وھو مع الامام فلیصل مع الامام
فاذا فرغ من صلوتہ فلیعد الصلوة التی نسی ثم لیعد الصلوة التی صلی مع الامام۔ (سنن
للبیھقی، باب من ذکر صلوة وھو فی اخری، نمبر ٣١٩٣)
আবদুল্লাহ
ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন সালাত ভুলে যায়
এবং তা স্মরণ না হয়।তবে এমতাবস্থায় স্মরণ হয় যে,সে ইমামের সাথে নামাযরত অবস্থায় থাকে,তাহলে সে যেন ইমামের সাথে সালাত আদায় করে।
অতঃপর যখন সে তার সালাত শেষ করে তখন সে যেন তার ভুলে যাওয়া নামাযগুলোর কাযা আদায় করে
এবং ঐ নামায যেন পুনরাই আদায় করে যেটা ইমামের সাথে পড়েছিল। সুনানে বায়হাকী-৩১৯৩
আর যদি ছয়
ওয়াক্ত থেকে বেশি নামায কাযা হয়ে থাকে। তাহলে তারতীব বা সিরিয়াল রক্ষা করা জরুরী
নয়। সুতরাং সে কাযা আদায় না করেই নতুন আসা ওয়াক্তি নামায পড়তে পারবে। কারণ কারো
যদি ছয় ওয়াক্ত বা ছয় ওয়াক্তের চেয়ে বেশী নামায কাযা হয়ে যায় তাহলে সে “সাহেবে তারতীব”
থাকে না।
কোনো
“সাহেবে তারতীব” ব্যক্তির যদি কোনো নামায কাযা হয়ে যায় এবং সে কাযা নামাযের কথা ভুলে
যায়। অতঃপর কোনো ওয়াক্তি নামাযের মধ্যে সেই কাযার কথা স্মরণ হয়,তাহলে এই নামায আদায় করার পর তার কাযা নামায
আদায় করবে। অতঃপর যে ওয়াক্তি নামায আদায়কালে কাযা নামাযের কথা স্মরণ হয়েছিল তা পুনরাই
আদায় করবে। (ফাতাওয়ায়ে কাসেমিয়া ৭/৫০৭)
যে
ব্যক্তি সাহেবে তারতীব হয়,তার তারতীব নিজের উপর বহাল রাখার
জন্য আবশ্যক হলো যদি তার বিতরের নামায কাযা হয়ে যায় তাহলে ফজরের নামায আদায়ের পূর্বেই
বিতরের নামায কাযা আদায় করবে,অতঃপর ফজরের নামায পড়বে।
বিতর নামায
পড়া ব্যতীতই যদি ছয় ওয়াক্তের কম নামায আদায় করে থাকে তাহলে তার এ নামাযগুলো নষ্ট হয়ে
যাবে,এবং বিতরের কাযা আদায় করার পর
সে নামাযগুলো পুনরাই আদায় করা ওয়াজিব।আর এই অবস্থায় তার তারতীব বাকী থাকবে।
আর যদি সে
বিতর না পড়ে পরবর্তী ছয় ওয়াক্ত নামায (অর্থাৎ ছুটে যাওয়া বিতরের পরের ফজর থেকে পরের
দিনের ফজরের নামায পর্যন্ত) নামায আদায় করে ফেলে,তাহলে এখন তার তারতীব রহিত হয়ে যাবে। তাই সেক্ষেত্রে
এই ছয়টি নামায বৈধ হয়ে যাবে এবং সেগুলো পুনরাই আদায় করা আবশ্যক হবে না। (বিন্নুরি
টাউন,ফতোয়া নং ১৪৪১১২২০০৯৬৩)
রহিত হয়ে
যায় তিন কারণে
ویسقط الترتیب
بضیق الوقت، والنسیان، وصیرورتہا ستا: أي بصیرورۃ الفوائت ستا، وبکل واحد من ہذہ
الثلاثۃ یسقط الترتیب۔ (الفتاویٰ ہندیۃ، کتاب الصلاۃ، الباب الحادي العشر في قضاء
الفوائت، ۱/۱۸۲)
এক.নামাযের
সময় সংকীর্ণ হয়ে গেলে, দুই.কাযা নামাযের কথা ভুলে গেলে, তিন কাযা নামাযের সংখ্যা ছয় বা তার অধিক হয়ে
গেলে। হিন্দিয়া ১/১৮২
তবে কোনো
সাহেবে তারতীব ব্যক্তি যদি তার ছয় এর অধিক নামায কাযা হয়ে যাওয়ার পর তা আদায় করে ফেলে
তাহলে তার তারতীব ফিরে আসবে এবং সে ব্যক্তি পুনরাই সাহেবে তারতীব বলে গণ্য হবে। এমনিভাবে
কোনো ব্যক্তি যদি তার জিবনের সকল কাযা নামায আদায় করে ফেলে তাহলে সেও সাহেবে তারতীব
বলে গণ্য হবে। ফাতাওয়া কাসেমিয়া ৭/৫০৫