বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
প্রচলিত জমি বন্ধক ও শরয়ী বিধি-বিধান।
বর্তমান সমাজে জমি বন্ধকের প্রচলন রয়েছে।অহরহ জমি বন্ধক দেওয়া হচ্ছে বা নেওয়া হচ্ছে।কিন্তু জমি বন্ধকের ইসলামী নিয়মনীতি কি এ সম্পর্কে অনেকেরই কোনো ধারণা নেই।
ইসলাম এ প্রচলিত পদ্ধতি সম্পর্কে কি বলে?আসুন কিছুটা সময় ব্যয় করে এ সম্পর্কে কিছু শরয়ী বিধি-বিধান জেনে নেই।
যাতে ইহকাল ও পরকালের সঠিক রাস্তা অর্জন করতে সহায়ক হয়।
বন্ধকের সংজ্ঞা বর্ণনা করতে যেয়ে আল্লামা হাসক্বফী রাহ বলেনঃ
(هُوَ) لُغَةً: حَبْسُ الشَّيْءِ. وَشَرْعًا (حَبْسُ شَيْءٍ مَالِيٍّ) أَيْ جَعْلُهُ مَحْبُوسًا لِأَنَّ الْحَابِسَ هُوَ الْمُرْتَهِن(ُبِحَقٍّ يُمْكِنُ اسْتِيفَاؤُهُ)
তরজমাঃরেহেন(বন্ধক)এর শাব্দিক অর্থ কোনো কিছুকে বন্ধী করে রাখা।পারিভাষায় রেহেন বলা হয়,কোনো জিনিষকে হক্ব বা কোনো প্রাপ্তধনের মুকাবেলায় বন্ধী করে রাখা।যাতে পরিবর্তীতে তা দিয়ে নিজ প্রাপ্যকে উসূল করা যায়।(আদ-দুর্রুল মুখতার-৬/৪৭৭)
বন্ধক পদ্ধতি বৈধ তবে এক্ষেত্রে শরয়ী নীতিমালাকে মানতে হবে।বুঝতে হবে বন্ধক পদ্ধতি কি? এবং কি জন্য শরীয়ত বন্ধক পদ্ধতিকে বৈধ ঘোষণা করেছে।সুতরাং শরীয়তের গন্ডীর ভিতর থেকে বন্ধক দিতে বা নিতে হবে।বন্ধক পদ্ধতির বৈধতা কোরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।যেমনঃবন্ধক পদ্ধতির বৈধতা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা নিজেই বলেনঃ
ﻭَﺇِﻥكُنْتُمْْ ﻋَﻠَﻰ ﺳَﻔَﺮٍ ﻭَﻟَﻢْ ﺗَﺠِﺪُﻭﺍْ ﻛَﺎﺗِﺒًﺎ ﻓَﺮِﻫَﺎﻥٌ ﻣَّﻘْﺒُﻮﺿَﺔٌ ﻓَﺈِﻥْ ﺃَﻣِﻦَ ﺑَﻌْﻀُﻜُﻢ ﺑَﻌْﻀًﺎ ﻓَﻠْﻴُﺆَﺩِّ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺍﺅْﺗُﻤِﻦَ ﺃَﻣَﺎﻧَﺘَﻪُ ﻭَﻟْﻴَﺘَّﻖِ ﺍﻟﻠّﻪَ ﺭَﺑَّﻪُ ﻭَﻻَ ﺗَﻜْﺘُﻤُﻮﺍْ ﺍﻟﺸَّﻬَﺎﺩَﺓَ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﻜْﺘُﻤْﻬَﺎ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺁﺛِﻢٌ ﻗَﻠْﺒُﻪُ ﻭَﺍﻟﻠّﻪُ ﺑِﻤَﺎ ﺗَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ﻋَﻠِﻴﻢٌ
তরজমাঃ আর তোমরা যদি প্রবাসে থাক এবং কোন লেখক না পাও,তবে (ঋণের মুকাবেলায়)বন্ধকী বন্তু হস্তগত করে রাখা উচিত। যদি একে অন্যকে বিশ্বাস করে, তবে যাকে বিশ্বাস করা হয়, তার উচিত অন্যের প্রাপ্য পরিশোধ করা এবং স্বীয় পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করা।তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে কেউ তা গোপন করবে, তার অন্তর পাপপূর্ণ হবে। তোমরা যা করা, আল্লাহ সে সম্পর্কে খুব জ্ঞাত।(সূরা বাক্বারা-২৮৩)
বন্ধকের বৈধতা সম্পর্কে এক হাদীসে এসেছে, নবীজী সাঃ নিজেও বন্ধক সুবিধা গ্রহণ করেছেন।যেমনঃ হযরত আয়েশা রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেনঃ
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻗﺎﻟﺖ ﺍﺷﺘﺮﻯ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﻦ ﻳﻬﻮﺩﻱ ﻃﻌﺎﻣﺎ ﺑﻨﺴﻴﺌﺔ ﻓﺄﻋﻄﺎﻩ ﺩﺭﻋﺎ ﻟﻪ ﺭﻫﻨﺎ
ভাবার্থ: নবীজী সাঃ এক ইহুদির কাছ থেকে বাকীতে(নির্দিষ্ট সময়ে মূল্য পরিশোধের শর্তে) খাদ্য ক্রয় করেছেন,অতঃপর মূল্যর জামিন হিসাবে নিজ বর্মকে বন্ধক রেখেছেন।(সহীহ মুসলিম-১৬০৩)
ইমাম নববী রাহ,উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় বলেনঃ
ﻭﻓﻴﻪ ﺟﻮﺍﺯ ﺍﻟﺮﻫﻦ ، ﻭﺟﻮﺍﺯ ﺭﻫﻦ ﺁﻟﺔ ﺍﻟﺤﺮﺏ ﻋﻨﺪ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺬﻣﺔ ، ﻭﺟﻮﺍﺯ ﺍﻟﺮﻫﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﻀﺮ ، ﻭﺑﻪ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ﻭﻣﺎﻟﻚﻭﺃﺑﻮ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻭﺃﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻛﺎﻓﺔ ﺇﻻ ﻣﺠﺎﻫﺪﺍ ﻭﺩﺍﻭﺩ ﻓﻘﺎﻻ : ﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﺇﻻ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻔﺮ
ভাবার্থ-উক্ত হাদীস দ্বারা বন্ধকের বৈধতা প্রমাণিত হলো।এমনকি কাফিরের কাছে যুদ্ধাস্ত্র বন্ধক রাখারও বৈধতা প্রমাণিত হলো।
শুধু তাই নয় বরং মুক্বিম অবস্থায় ও বন্ধক রাখার বৈধতা প্রমাণিত হলো।
এটাই ইমাম শাফেয়ী রাহ,ইমাম আবু হানিফা রাহ,ও ইমাম মালিক রাহ,এবং ইমাম আহমদ রাহ,এর মাযহাব ও অভিমত।(আল-মিনহাজ,শরহে নববী-পৃঃ২১৮)
ইবনে আবেদীন শামী রাহ,বন্ধক পদ্ধতির বৈধতা সম্পর্কে বলেনঃ
[ كِتَابُ الرَّهْنِ] هُوَ مَشْرُوعٌ، لِقَوْلِهِ تَعَالَى - {فَرِهَانٌ مَقْبُوضَةٌ} [ البقرة: 283] - وَبِمَا رُوِيَ «أَنَّهُ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ - اشْتَرَى مِنْ يَهُودِيٍّ طَعَامًا وَرَهَنَهُ بِهِ دِرْعَهُ» وَانْعَقَدَ عَلَيْهِ الْإِجْمَاعُ.
ভাবার্থঃ-বন্ধক পদ্ধতি কোরআনে কারীমের সূরা বাকারার ২৮৮নং আয়ত দ্বারা প্রমাণিত এবং নবীজী সাঃ কর্তৃক নিজ বর্মকে বন্ধক রাখা দ্বারাও প্রমাণিত হয়।সর্বোপরি বৈধতার উপর উলমায়ে কেরামদের ইজমা বা ঐক্যমত ও রয়েছে।(রদ্দুল মুহতার-৬/৪৭৭)
সমাজে জমি বন্ধকের প্রচলিত কিছু পদ্ধতি-
এসমস্ত পদ্ধতিগুলোর হুকুম নিয়ে এখন আলোচনার প্রয়াস পাবো।
- এক.বন্ধকদাতা বন্ধক গ্রহীতার নিকট থেকে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা গ্রহণ করে আর বন্ধকগ্রহীতা জমি ভোগ করতে থাকে।যখন টাকা ফিরিয়ে দেয় তখন জমি হস্তান্তর করে।
- দুই.এটিও উপরের মতোই। তবে পার্থক্য হল, এক্ষেত্রে যখন টাকা ফিরিয়ে দেয় তখন বছর হিসাব করে বন্ধকগ্রহীতা কিছু টাকা কম নেয়।যেমন-কেউ এক কাঠা জমি বন্ধক নিল দশ হাজার টাকায় এবং সে দু বছর এ জমি ভোগ করে। দু বছর পর টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার সময় পাঁচশ টাকা করে এক হাজার টাকা কম নেয়।
এখন প্রশ্ন জাগো আমাদের সমাজে প্রচলিত এ পদ্ধতিগুলো সহীহ কি না? উপরন্তু এ সম্পর্কে বিকল্প কোনো বৈধ পদ্ধতি রয়েছে কি না?
এ নিয়ে আজকের নিম্নোক্ত কিছু পর্যালোচনা।ধৈর্য্য সহকারে পড়ার অনুরুধ রইলো।
ঋণদাতার জন্য বন্ধকি জমি ভোগ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয।এটি মূলত ঋণ প্রদান করে বিনিময়ে সুদ গ্রহণেরই একটি প্রকার।
সুতরাং উপরোল্লেখিত প্রথম পদ্ধতিটি নাজায়েয হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট।এ সম্পর্কে আল্লামা হাসক্বফী রাহ, বলেন।
(لَا انْتِفَاعَ بِهِ مُطْلَقًا) لَا بِاسْتِخْدَامٍ، وَلَا سُكْنَى وَلَا لُبْسٍ وَلَا إجَارَةٍ وَلَا إعَارَةٍ، سَوَاءٌ كَانَ مِنْ مُرْتَهِنٍ أَوْ رَاهِنٍ (إلَّا بِإِذْنِ) كُلٍّ لِلْآخَرِ، وَقِيلَ لَا يَحِلُّ لِلْمُرْتَهِنِ لِأَنَّهُ رِبًا، وَقِيلَ إنْ شَرَطَهُ كَانَ رِبًا وَإِلَّا لَا.وَفِي الْأَشْبَاهِ وَالْجَوَاهِرِ: أَبَاحَ الرَّاهِنُ لِلْمُرْتَهِنِ أَكْلَ الثِّمَارِ أَوْ سُكْنَى الدَّارِ أَوْ لَبَنِ الشَّاةِ الْمَرْهُونَةِ فَأَكَلَهَالَمْ يَضْمَنْ وَلَهُ مَنْعُهُ، ثُمَّ أَفَادَ فِي الْأَشْبَاهِ أَنَّهُ يُكْرَهُ لِلْمُرْتَهِنِ الِانْتِفَاعُ بِذَلِكَ،
তরজমাঃ বন্ধককৃত জমি দ্বারা কোনোভাবেই উপকৃত হওয়া যাবে না।না বন্ধককৃত জিনিষ থেকে কোনোপ্রকার খেদমত গ্রহণ করা যাবে,না তাকে বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করা যাবে,না পোষাক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে,এমনকি উক্ত জিনিষ কাউকে ভাড়া বা আরিয়ত (ব্যবহার অনুমিত)হিসেবেও দেওয়া যাবে না।বন্ধকদাতা বা বন্ধকগ্রহীতা কেউ-ই তা পারবে না।তবে বন্ধকদাতা ও বন্ধকগ্রহীতা একে অপরের অনুমতি সাপেক্ষে উপরোক্ত বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণ করতে পারবে।কেউ কেউ বলেন বন্ধকগ্রহীতা কখনো উক্ত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণ করতে পারবে না।কেননা তা সুদ হয়ে যাবে।আবার কেউ কেউ বলেন,বন্ধক চুক্তির সময় বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণের চুক্তি থাকলে সুদ হবে নতুবা সুদ হবে না।আল-আশবাহ ওয়াল জাওয়াহির নামক কিতাবে বর্ণিত আছে,যদি বন্ধকদাতা বন্ধকগ্রহীতার জন্য গাছের ফলমূল বা তাতে বসবাস বা বকরী হলে তা থেকে দুধ খাওয়ার অনুমতি দিয়ে থাকে, তাহলে বৈধ হবে। এবং যদি সে উক্ত সুবিধাদি গ্রহণ করে ফেলে তাহলে সে যামিন হবে না।তবে বন্ধকগ্রহীতা তাকে বাধা প্রদানও করতে পারবে।অতঃপর আশবাহ ওয়াল জাওয়াহির নামক কিতাবে উল্লেখ করা হয়,বন্ধকগ্রহীতার জন্য সাধারণত বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণ করা মাকরুহ। আদ-দুর্রুল মুখতার-( ৬/৪৮২-৮৩)
আমীন ইবনে উমর ইবনে আব্দুল আজীজ আবেদীন "শামী" রাহ উক্ত ইবারত সমূহের বিস্তারিত ব্যখার এক পর্যায়ে বলেনঃ
(قَوْلُهُ وَقِيلَ لَا يَحِلُّ لِلْمُرْتَهِنِ) قَالَ فِي الْمِنَحِ: وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ أَسْلَمَ السَّمَرْقَنْدِيِّ وَكَانَ مِنْ كِبَارِ عُلَمَاءِ سَمَرْقَنْدَ أَنَّهُ لَا يَحِلُّ لَهُ أَنْ يَنْتَفِعَ بِشَيْءٍ مِنْهُ بِوَجْهٍ مِنْ الْوُجُوهِ وَإِنْ أَذِنَ لَهُ الرَّاهِنُ، لِأَنَّهُ أَذِنَ لَهُ فِي الرِّبَا لِأَنَّهُ يَسْتَوْفِي دَيْنَهُ كَامِلًا فَتَبْقَى لَهُ الْمَنْفَعَةُ فَضْلًا فَيَكُونُ رِبًا، وَهَذَا أَمْرٌ عَظِيمٌ.
ভাবার্থঃ- মিনাহ কিতাবে বর্ণিত আছে,সমরক্বন্দ এলাকার একজন বিজ্ঞ হানাফী আলেম-"আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আসলাম আস-সামারক্বান্দী" থেকে বর্ণিত আছে,তিনি বলেনঃ বন্ধকগ্রহীতার জন্য বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণ করা কোনো ভাবেই বৈধ হবে না।যদিও বন্ধকদাতা তাতে অনুমতি প্রদান করুক না কেন? কারণ প্রথমতঃ বন্ধকদাতা সুদের মধ্যে অনুমতি প্রদান করছে।দ্বিতীয়তঃ বন্ধকগ্রহীতা পরবর্তীতে তার পূর্ণ ঋণ-ই সে উসূল করবে অথচ বন্ধককৃত জিনিষ থেকে সে ইতিপূর্বে ফায়দা গ্রহণ করেছে,সুতরাং ফায়দা গ্রহণটা অতিরিক্ত থেকে যাবে, আর এটাই সূদ,যা অনেক বড় গোনাহ।(রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২)
তবে শর্তসাপেক্ষে বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণের কিছু মতামত ও তিনি উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু তিনি বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণের বৈধতা ও অবৈধতা সম্পর্কীয় উভয় মতামত পর্যালোচনা শেষে সিদ্ধান্তমূলক আলোচনা করে বলেনঃ
ﻗَﺎﻝَ ﻃ: ﻗُﻠْﺖُ ﻭَاﻟْﻐَﺎﻟِﺐُ ﻣِﻦْ ﺃَﺣْﻮَاﻝِ اﻟﻨَّﺎﺱِ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﺇﻧَّﻤَﺎ ﻳُﺮِﻳﺪُﻭﻥَ ﻋِﻨْﺪَ اﻟﺪَّﻓْﻊِ اﻻِﻧْﺘِﻔَﺎﻉَ، ﻭَﻟَﻮْﻻَﻩُ ﻟَﻤَﺎ ﺃَﻋْﻄَﺎﻩُ اﻟﺪَّﺭَاﻫِﻢَ ﻭَﻫَﺬَا ﺑِﻤَﻨْﺰِﻟَﺔِ اﻟﺸَّﺮْﻁِ، ﻷَِﻥَّ اﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑَ ﻛَﺎﻟْﻤَﺸْﺮُﻭﻁِ ﻭَﻫُﻮَ ﻣِﻤَّﺎ ﻳُﻌَﻴِّﻦُ اﻟْﻤَﻨْﻊَ، ﻭَاَﻟﻠَّﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺃَﻋْﻠَﻢُ اﻩـ.
ভাবার্থঃ-আমার ধারণা-মানুষের বর্তমান অবস্থা এমন যে তারা ঋণ দিয়ে বন্ধককৃত জিনিষ গ্রহণের সময় উক্ত জিনিষ থেকে উপকার গ্রহণের-ই নিয়্যাত করে থাকে।এবং বাস্তবতাও এমন যে, উপকার না থাকলে সে ঋণ দেবে না। কেনই বা সে ঋণ দেবে?সুতরাং ফায়দা গ্রহণটা শর্তের স্থলাভিষিক্ত হয়ে যাবে।কেননা প্রসিদ্ধ প্রথা বা পদ্ধতি শর্তের মতই হয়ে থাকে।যে জন্য তথাকথিত বন্ধক পদ্ধতিক নিষিদ্ধ হবে।আল্লাহ-ই ভালো জানেন।(রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২)
বিদগ্ধ গবেষক, বিশিষ্ট মুহাক্কিক- আল্লামা আব্দুল হাই লেখনৌভী রাহ, বন্ধককৃত জমি থেকে ফায়দা গ্রহণের শরয়ী বিধি-বিধান বর্ণনায় ফুকাহায়ে কেরামদের মতবিরোধকে সামঞ্জস্য সাধন করে একটি সিদ্ধান্তমূলক অালোচনা করতে যেয়ে ২১ পৃষ্টার আলাদ একটি পুস্তিকা রচনা করেছেন। যার নাম হল-
ﺍﻟﻔﻠﻚ ﺍﻟﻤﺸﺤﻮﻥ ﻓﻴﻤﺎ ﻳﺘﻌﻠﻖ ﺑﺎﻧﺘﻔﺎﻉ ﺍﻟﻤﺮﺗﻬﻦ ﺍﻟﻤﺮﻫﻮﻥ
-আলফালাকুল মাশহুন ফিমা য়াতা'আল্লাকু বি-ইনতেফায়িল মুরতাহিনিল মারহুন-
যেহেতু বিষয়টা স্পর্শকাতর, এবং বর্তমান সামাজিক প্রচলনের বিরোধী বিধান, তাই হুবহু উনার ইবারত উল্লেখ করে তরজমা করার মনস্থ করলাম। যাই হোক উনার স্বভাবজাত তাত্ত্বিক আলচনার এক পর্যায়ে তিনি তাতে উল্লেখ করেন:
বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণ করা যাবে কি না?এ সম্পর্কে চার মাযহাবে ভিন্নতর মতামত রয়েছে।এ মতবিরোধের সূচনা মূলত নিম্নোক্ত হাদীসকে ঘিরেই হয়েছিলো।যা হাদীসে মাশহুর গ্রন্থ সমূহে ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে বর্ণিত রয়েছে।
নিম্নে সহীহ বুখারীর বর্ণনা উল্লেখ করা হলঃ-ইমাম বুখারী হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণনা করেন,
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻘﻮﻝ ﺍﻟﺮﻫﻦُ ﻳُﺮﻛﺐ ﺑﻨﻔﻘﺘﻪ ﻭﻳُﺸﺮﺏ ﻟﺒﻦُ ﺍﻟﺪَّﺭِّ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻣﺮﻫﻮﻧﺎ(ﺍﻟﻜﺘﺐ » ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ » ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺮﻫﻦ » ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺮﻫﻦ ﻣﺮﻛﻮﺏ ﻭﻣﺤﻠﻮﺏ)
খাদ্যর বিনিময়ে বন্ধককৃত জানোয়ারের উপর সওয়ার হওয়া যাবে,এবং দুধাল জানোয়ারের দুধও পান করা যাবে।(সহীহ বুখারী-২৩৭৬)
অতঃপর তিনি ৬নং পৃষ্টায় চার মাযহাবের ভিন্নতর মতামত উল্লেখ পূর্বক আলোচনা করেনঃ-
و قد ظهر من هذه العبارات وغيرها من كلمات الثقات أنهم اختلفوا في الحديث المذكور علي أقوال أحدها :حمله علي ارتفاع الراهن وهو مسلك الشافعية وثانيها حمله علي ارتفاع المرتهن مطلقا وإن لم يأذن له الراهن وهو مسلك إمام الحنابلة وثالثها حمله علي ارتفاع المرتهن بإذن الراهن وهو مذهب جمهور علماء الأمة - ورابعها كونه منسوخا بتحريم القرض مع جر المنفعة،"ولا يخفى علي المنصف الغير المتعسف ان أعلى الأقوال فيه هو حمله علي انتفاع المرتهن عند إذن الراهن ،لكن بشرط أن لا يكون مشروطا حقيقية او حكما كما سيأتي فيما يأتي
উপরোক্ত হাদীসের আলোকেবন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা সম্পর্কীয় হুকুম-আহকাম বর্ণনায় ফুকাহায়ে কেরামগণ ভিন্নতর মতামত ব্যক্ত করেন।যথাঃ-
- (১)ইমাম শা'ফী এর মতে বন্ধককৃত জিনিষ থেকে রাহিন(বন্ধকদাতা)এর জন্য ফায়দা গ্রহণ করা জায়েয।
- (২)হাম্বলী মাযহাব অনুসারেমুরতাহিন(বন্ধকগ্রহীতা)এর জন্য উক্ত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণ জায়েয।এক্ষেত্রে বন্ধকদাতার অনুমতি কোনো প্রয়োজন নেই।
- (৩)জমহুর উলামায়ে কেরামের মতে বন্ধকদাতার অনুমতিক্রমে বন্ধকগ্রহীতা উক্ত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণ করতে পারবে।
- (৪)রেহেন পদ্ধতির বৈধতা রহিত হয়ে গেছে।নবীজী সাঃ ঐ হাদীসের মাধ্যমে যেথায় তিনি বলেছেনঃ" যে সমস্ত ঋণ লাভকে টেনে নিয়ে আসবে তা হারাম"একজন নিরপেক্ষ বিচারকের সামনে নিঃসন্দেহে এ বিষয়ে কোনো অস্পষ্টতা থাকবে না যে,পুর্বে উল্লেখিত মতামত সমুহের মধ্যে সর্বোত্তম অভিমত হচ্ছে,"বন্ধকদাতার অনুমতিক্রমে বন্ধকগ্রহীতা উক্ত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণ করতে পারবে।"তবে শর্ত হচ্ছে,ফায়দা গ্রহণের জন্য কোনোপ্রকার শর্তারোপ থাকতে পারবে না।না হাক্বীকি (প্রকাশ্যে) শর্ত থাকতে পারবে, বা উরফি (অপ্রকাশ্যে) শর্ত থাকতে পারবে।
অতঃপর তিনি হানাফী মাযহাবের উলামায়ে কেরামদের বিরোধমূলক মতামত উল্লেখ করে একটি সিদ্ধান্তমূলক আলোচনার একপর্যায়ে ৯নং পৃষ্টায় উল্লেখ করেনঃ
إعلم أنهم بعد ما اتفقوا على انه لا يجوز للمرتهن الانتفاع بالرهن بدون إذن الراهن ،اختلفوا فى جوازه بالإذن على أقوال عديدة كما دلت عليها عباراتهم المختلفة ،(الأول) أنه جائز (الثاني)انه ليس بجائز ،(الثالث)انه جائز قضاء غير جائز ديانة (الرابع)ان الإذن ان كان مشروطا فهو غير جائز وإلا فهو جائز (الخامس)أنه ان كان الاذن مشروطا فهو حرام وان لم يكن مشروطا فهو مكروه ،واولى الأقوال المذكورة واصحهاواوفقها بالروايات الحديثية هو القول الرابع أن ما كان مشروطا يكره وما لم يكن مشروطا لا يكره ،أما كراهة المشروط فلحديث كون القرض الذي جر منفعة فهو ربا ،أما عدم كراهة غيرالمشروط فلحديث الظهر يُركب بنفقته ولبن الدر يشرب ،والمراد بالكراهة التحريمية كما يفيده تعليلهم بأنه ربا،وهي المرادة من الحرمة في قول من تكلم بحرمة المشروط ،فإن المكروه التحريمي قريب من الحرام ،بل كأنه هو ،ثم المشروط اعم من ان يكون مشروطا حقيقيا او حكما ،
বন্ধকদাতার অনুমতি সাপেক্ষে বন্ধককৃত মাল থেকে বন্ধকগ্রহীতার জন্য ফায়দা গ্রহণ সম্পর্কে হানাফী উলামায়ে কেরামদের মতবিরোধ পরিলক্ষিত হচ্ছে,যা তাদের স্ব সস্ব কিতাবের ইবারত থেকে তাই পরিলক্ষিত হচ্ছে।যথাঃ-
- (১)জায়েয।
- (২)না জায়েয।
- (৩)কাযাআন (দুনিয়ার বৈচারিক নিমিত্তে) জায়েয,কিন্তু দিয়ানাতান(আল্লাহর কাছে)না জায়েয।
- (৪)শর্ত থাকলে নাজায়েয,নতুবা জায়েয।
- (৫)শর্ত থাকলে হারাম নতুবা মাকরুহ।(এভাবে অনেক মতামত পাওয়া যায় তবে)
চতুর্থ শ্রেণীর মতামতই হচ্ছে হাদীসের সাথে সবচেয়ে বেশী সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সর্বোত্তম বিশুদ্ধ।অর্থাৎ ফায়দা গ্রহণের শর্ত থাকলে মাকরুহ (তাহরীমি)নতুবা জায়েয।শর্ত থাকলে মাকরুহ কেননা হাদীসে এসেছে,"প্রত্যেক ঐ ঋণ যা মুনাফাকে টেনে নিয়ে আসবে তা সুদের অন্তর্ভুক্ত।আর শর্ত না থাকলে বৈধ মাকরুহ নয়।যেমন হযরত আবু হুরায়রা রাযি এর উপরোক্ত হাদীসে বৈধতার কথা এসেছে।মাকরুহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মাকরুহে তাহরীমি কেননা ফুকাহাগণ মাকরুহ হওয়ার কারণ রিবা উল্লেখ করছেন।এবং শর্ত থাকা ধরুণ যারা হারাম বলে থাকেনঃ তাদের হারাম বলা দ্বারা মাকরুহে তাহরীমি-ই উদ্দেশ্য।কেননা মাকরুহে তাহরীমি হারামের প্রায় কাঁছাকাঁছিই ।এমনকি মাকরুহে তাহরীমি দ্বারা কখনো স্বয়ং হারামকেই উদ্দেশ্য নেয়া হয়।ফায়দা গ্রহণমূলক শর্তারোপ ব্যাপকতর প্রকাশ্যে শর্ত হোক বা অপ্রকাশ্যে শর্ত হোক।সবধরণের শর্তের কারণেই হারাম বলে প্রমাণিত হবে।
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
শর্তারোপ দু-ভাবে হতে পারে।হয়তো হাক্বীকি(প্রকাশ্য)হবে অথবা উরফি(অপ্রকাশ্য)হবে।
এখন প্রশ্ন জাগে হাক্বীকি ও উরফি শর্ত কি এবং কাকে বলে?এর পূর্ণ পরিচয় কি?
এ সম্পর্কে তিনি উল্লেখ করেনঃ
أما الحقيقة ;فبأن يشترط المرتهن في نفس عقد الرهن أن يأذن له الراهن بالإرتفاع من الرهن علي ما هو المتعارف في أكثر العوام ،أنهم اذا إرتهنوا شيئا ودفعوا الدين يشترطون إجارة الانتفاع ويكتبون ذالك في الصك الرهن ،ولو لم يأذن له الراهن او لم يكتب في الصك لم يدفع المرتهن الدين ولم يرتهن،أما حكما ;فهو ما تعارف في ديارنا ،أنهم لا يشترطون ذالك في نفس المعاملة لكن مرادهم و منويهم إنما هو الانتفاع ،فلولاه لما دفع المرتهن الدين حتى لو دفع الدين ولم يأذن له الراهن في مجلس آخر او أذن ثم رجع من إذنه يغضب المرتهن ويريد أخذ دينه فالاشتراط وان لم يكن مذكورا في كلامهم لكنه عين مرامهم ،ومن المعلوم أن المعروف كالمشروط ،كما حققه صاحب الأشباه ،وفرع عليه فروعا كثيرة،فكما ان المشروط حقيقية يتضمن الربا كذالك المشروط حكما من أفراد الربا ،فإن لم يكن ربا حقيقية فلا من أن يكون فيه شبهة الربا ،ومن المعلوم أن شبهة الربا في حكم الربا كما بسطه الفقهاء في باب القرض والبيع ،
প্রকাশ্য শর্তারোপঃ
বন্ধকগ্রহীতা বন্ধক চুক্তির সময়ে এ শর্ত করবে যে বন্ধকদাতা আমাকে উক্ত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণের অনুমতি প্রদাণ করবে।যেমন অধিকাংশ আওয়ামদের কাছে প্রচলিত যে,যখন বন্ধক চুক্তিতে বন্ধকগ্রহীতা বন্ধকদাতাকে ঋণ প্রদাণ করে তখন তারা ফায়দা গ্রহণের শর্ত উল্লেখপূর্বক বন্ধক রেজিস্ট্রি পত্রে তা লিখে রাখে।যদি বন্ধকদাতা বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণের অনুমতি প্রদান না করত বা এ সম্পর্কীয় চুক্তিনামা রেজিস্ট্রি পত্রে উল্লেখ না থাকত,তাহলে কখনো বন্ধকগ্রহীতা বন্ধকদাতাকে ঋণ দিত না এবং বন্ধক চুক্তিও করত না।
অপ্রকাশ্য শর্তারোপঃ
যা আমাদের দেশে প্রচলিত,লোকজন বন্ধক চুক্তির সময় ফায়দা গ্রহণের শর্ত উল্লেখ করে না।কিন্তু বন্ধক চুক্তির দ্বারা নিয়ত বা উদ্দেশ্য-ই থাকে উক্ত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণ করা।যদি ফায়দা গ্রহণ না করা যায়,তাহলে বন্ধকগ্রহীতা কখনো ঋণ দেবে না।এমনকি যদি বন্ধকগ্রহীতা ঋণ দিয়ে দেয়,এবং(উক্ত মজলিসে ফায়দা সম্পর্কে কোনো প্রকার আলোচনা না হয়) ঘটনাক্রমে অন্য কোনো বৈঠকে বন্ধকদাতা বন্ধকগ্রহীতাকে ফায়দা গ্রহণের সুযোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায় বা প্রথমে অনুমতি দিয়ে থাকে এবং পরবর্তিতে অনুমিত ছিনিয়ে নেয়,তাহলে বন্ধকগ্রহীতা অত্যন্ত রাগান্বিত হবে এবং সে তৎক্ষনাৎ তার প্রদানকৃত ঋণকে উসূল করার চেষ্টা করবে।সুতরাং যদিও তাদের কথাবার্তার প্রাথমিক পর্যায়ে শর্তের আলোচনা নেই কিন্তু বন্ধকের মাধ্যমে আসল উদ্দেশ্য-ই হচ্ছে ফায়দা গ্রহণ।সর্বজন স্বীকৃত যে,প্রসিদ্ধ জিনিষ শর্তের মতই হয়ে থাকে।(যেমন বিশিষ্ট উসূলবিদ ইবনে নুজাইম আশবাহ নামক কাতাবে বলেছেন)এত্থেকে অনেক শাখাপ্রশাখা বের হয়,অর্থাৎ বাহ্যিক শর্ত যেভাবে হারাম ঠিকতেমনিভাবে গোপন শর্তারোপও হারাম।যদি তাকে সরাসরি সুদ বলা যাবে না,কিন্তু অন্ততপক্ষে তাতে সুদের সন্দেহ তো নিশ্চয় রয়েছে।সুদ যেভাবে হারাম ঠিকতেমনি সুদের সন্দেহজনক জিনিষ ও হারাম।যেমন ফুকাহায়ে কিরামগণ ব্যবস্যা এবং ঋণ অধ্যায়সমূহে এ বিষয়ে সবিস্তারে আলোচনা কর থাকেন।
এখন প্রশ্ন জাগে তাহলে শর্ত ব্যতীত বৈধতার কি কোনো পদ্ধতি রয়েছে?
এ সম্পর্কে তিনি বলেনঃ
وصورة الإذن الغير المشروط أن لا يشترط المرتهن ذالك في نفس العقد ولا يدفع الدين بهذا الشرط ولا ينوي أيضا بدفع الدين اباحته وانه لولاه لما دفع بل قصد مجرد الحبس والتوثق ،وهذا لا شبهة في جوازه ،فإنه ليس فيه ربا ولا شبهة الربا ،فإن كان الانتفاع في هذه الصورة مورثا إلي شيئ فليس الا هو شبهة شبهة الربا ،وهي غير معتبرة ،هذا كما إذا أذن رجل لغيره في الانتفاع بملكه بطيب خاطره من غير رهنه فإنه يجوز بلا شبهة ،فكذا إذا اجاز المالك وهو الراهن الانتفاع بملكه وهو المرهون للمرتهن بطيب خاطره يجوز للمرتهن ذالك ،لأنه أذن علي حدة ليس بشرط في الرهن ،لا حقيقية ولا عرفا ،لكن مع ذلك الانتفاع خلاف الأولى ،والاحتراز عنه أولى ،فالإحتراز في هذه الصورة تقوى،والإنتفاع فتوى،
শর্ত ব্যতীত বন্ধকদাতা কর্তৃক বন্ধকগ্রহীতাকে ফায়দা গ্রহণের অনুমতির নমুনারূপ হলোঃ-
বন্ধক চুক্তির সময় বন্ধকগ্রহীতা ফায়দা গ্রহণের কোনোরূপ চুক্তি করবেনা।এবং ফায়দা গ্রহণের উদ্দেশ্যে উক্ত ঋণও দিবে না।এবং ঋণ প্রদানের সময় বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়েদা গ্রহণ যে বৈধ তারও নিয়্যাতও সে করবে না।এবং ফায়দা গ্রহণের বৈধতা না থাকলে ঋণ দিবেনা, এমন নিয়্যাত ও সে তার নেই।বরং বন্ধককৃত জিনিষকে সিকিউরিটি হিসেবে নিজ আয়ত্বে হস্তগত রাখার নিয়্যাত থাকবে।এ পদ্ধতির বৈধতা সম্পর্কে কোনো প্রকার মতবিরোধ নেই।কেননা তা সুদও নয়,এবং তাতে সুদের সন্দেহও নেই।যদিও তাতে সন্দেহ জাগে কিন্তু তা সুদের সন্দেহের সন্দেহ বলে পরিগণিত হবে।এতে অবশ্য কোনো সমস্যা নেই।বন্ধকের উক্ত পদ্ধতি সেই (বন্ধক ব্যতীত)সাধারণ বৈধ পদ্ধতির মত যেখানে একজন মানুষ অন্য কাউকে সন্তুষ্টচিত্তে নিজ কোনো বস্তু থেকে ফায়দা গ্রহণের অনুমতি প্রদাণ করলো,যা নিঃসন্দেহে বৈধ।ঠিকতেনি যদি বন্ধকদাতা বন্ধকগ্রহীতাকে বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণের অনুমিত দিয়ে দেয় তাহলে তাও বৈধ হবে।কেননা এক্ষেত্রে তা পৃথক অনুমতি বলে গণ্য হবে।বন্ধক চুক্তির কোনো শর্ত বলে পরিগণিত হবে না।না হাক্বীকি(প্রকাশ্য) শর্ত বলে পরিগণিত হবে, না উরফি(অপ্রকাশ্য) হিসেবে পরিগণিত হবে।তবে সর্বোপরি উপরোক্ত অবস্থায় ফায়দা গ্রহণ না করা উত্তম,এত্থেকে বেচে থাকা উত্তম।ফায়েদা গ্রহণ থেকে বেছে থাকা হল তাকওয়া এবং গ্রহণ করা হল ফাতাওয়া।
শর্ত না থাকাবস্থায় অনুমতিক্রমে বন্ধকগ্রহীতা র ফায়দা গ্রহণ বর্তমানে কি বৈধ হবে?
এ সম্পর্কে তিনি লিখেনঃ
وهذه الصورة يعز وجودفهي في زماننا و يندر،ولا يرتكبها الا الأقل الأندر فهي في زماننا كالكبريت الأحمر والشائع في زماننا هوالمشروط حقيقية والمشروط حكما ،وقد اغترَّ كثير من علماء عصرنا ومن سبقنا بظاهر عبارات الفقهاء أنه يجوز الانتفاع للمرتهن بالاذن فافتوا به مطلقا من دون ان يفرقوا بين المشروط وغيره ،ومن دون ان يتأملوا في ان المعروف كالمشروط فضلوا و اضلوا ،وقد التزمت انا من مدة مديدة أني كلما سئلت عن الانتفاع بالاذن أجبت بالكراهة، لعلمى منهم ان الإذن عندهم يكون مشروطا حقيقية أو عرفا ،والأذن المجرد عن شوب الاشتراط الحقيقي العرفي نادر قطعاً،
উপরোক্ত বৈধ পদ্ধতি পাওয়া যাওয়া আজ বড়ই দুস্কর,এবং নিতান্তই কম।লাল কিবরিত পদার্থের ন্যায় তা আজ আর পাওয়া যাবে না।আমাদের সমাজে প্রচলিত বন্ধক পদ্ধতিতে প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য শর্ত নিয়োজিত রয়েছে।কিন্তু আফসোস! আমাদের সময়কার অনেকেই- ফুকাহায়ে কেরামগণের প্রকাশ্য ইবারত সমূহ বুঝতে ধোকাগ্রস্ত হচ্ছেন।এভাবে যে তারা মনে করেন বন্ধকদাতার অনুমতিতে বন্ধকগ্রহীতার জন্য বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণ জায়েয।তারা শর্তারোপ হওয়া না হওয়ার মধ্যকার কোনো পার্থক্য করেন না এমনকি পৃথকতাও বোঝেন না।এবং প্রসিদ্ধ ফেকহী উসূল "প্রসিদ্ধি শর্তারোপের মত"এ কোনোপ্রকার চিন্তা গবেষনা করেন না।বরং তারা অনায়াসেই সর্বক্ষেত্রে বৈধতার ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছেন।এক্ষেত্রে তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হচ্ছেন এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করছেন।বন্ধকদাতার অনুমিত সাপেক্ষে বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণ সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হলে,বরাবরই আমি মাকরুহে তাহরীমির ফতোয়া দিয়ে আসছি।মানুষদের হাল-সমাচার জেনে যে, তাদের মধ্যকার বন্ধক পদ্ধতিকে প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্যে শর্তারোপ অবশ্যই রয়েছে।প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে শর্তারোপ ব্যতীত শুধুমাত্র ফায়দা গ্রহণের অনুমিত আজকাল নেই বললেও চলে।
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
উপরুক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম যে,প্রচলিত বন্ধকের প্রথম পদ্ধতিতে বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণ সম্পূর্ণটাই না জায়েয ও হারাম।(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)
এখন প্রশ্ন জাগে তাহলে দ্বিতীয় পদ্ধতিতে বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণ করা যাবে কি?
এ সম্পর্কে হুকুম হলোঃ-
দ্বিতীয় পদ্ধতিটি মূলত ঋণ প্রদান করে বন্ধকি জমি ভোগ করার একটি অবৈধ ছুতা।
কারণ এক্ষেত্রে আলাদাভাবে ইজারা চুক্তি করা হয় না; বরং জমি ভোগ করার শর্তেই ঋণ দেওয়া হয় এবং ঋণের সুবিধা পাওয়ার কারণেই জমির মালিক নামমাত্র মূল্যে ভাড়া হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং উপরোল্লেখিত দ্বিতীয় পদ্ধতিটাও নাজায়েয।কেননা নবীজী সাঃ বলেনঃ
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻗﺎﻝ ﻧﻬﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻦ ﺑﻴﻌﺘﻴﻦ ﻓﻲ ﺑﻴﻌﺔ(الترمذي 1231 المرقاة 2868)
হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত,নবীজী সাঃএক লেনদেন অনুষ্ঠানে দুই দুইটি লেনদেন/ক্রয়-বিক্রয় থেকে নিষেধ করেছেন।অর্থাৎ এক চুক্তিতে অন্য চুক্তি করতে নিষেধ করেছেন।(সুনানে তিরমিযি-১২৩১;মিরক্বাতুল মাফাতিহ-২৮৬৮)
বন্ধক চুক্তি থাকাবস্থায় ইজারা চুক্তি করা যাবে না।এ সম্পর্কে ইবনে আবেদীন শামী রাহ বলেনঃ
وأما الإجارة فالمستأجر إن كان هو الراهن فهي باطلة،.............. وإن كان هو المرتهن وجدد القبض للإجارة أو أجنبيا بمباشرة أحدهما العقد بإذن الآخر بطل الرهن والأجرة للراهن وولاية القبض للعاقد ولا يعود رهنا إلا بالاستئناف.
বন্ধককৃত জিনিষকে ভাড়ায় খাটাতে ভাড়া প্রদানকারী যদি বন্ধকদাতাই হয়ে থাকেন,তাহলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।
আর যদি ভাড়া প্রদানকারী বন্ধকগ্রহীতা থাকেন, এবং ভাড়া প্রদানের নিমিত্তে ক্ববযাকে নতুনত্ব করে নেন,অথবা কোনো আজনবী তাদের একজনের উপস্থিতি ও অন্যজনের অনুমিত সাপেক্ষে ভাড়া প্রদান করেন, তাহলে এমতাবস্থায় বন্ধকচুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে।ভাড়া বাবৎ প্রদত্ত টাকা বন্ধকদাতাই পাবে।এবং ভাড়ায় গ্রহণকারীর জন্য উক্ত জিনিষে হস্তক্ষেপ করার শরয়ী অধিকার থাকবে।এখন আর তাতে বন্ধকচুক্তি থাকবে না।এক্ষেত্রে বন্ধকগ্রহীতা নিজ ঋণকে উসুল করে নিবে।কেননা বন্ধক চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে।(রদ্দুল মুহতার-৬/৫১১)
ولو آجره المرتهن بإذن الراهن فالأجر للراهن، وبطل الرهن،
যদি বন্ধকগ্রহীতা বন্ধকদাতার অনুমতি সাপেক্ষে বন্ধককৃত জিনিষকে কোথাও ভাড়ায় প্রদান করে,তাহলে প্রদত্ত ভাড়া বন্ধকদাতাই পাবে,এবং বন্ধকচুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৪৭৮)
وكذلك لو استأجره المرتهن صحت الإجارة، وبطل الرهن
যদি বন্ধকগ্রহীতা বন্ধককৃত জিনিষকে ভাড়ায় নিয়ে নেয়,তাহলে ভাড়া নেওয়া বিশুদ্ধ হবে এবং বন্ধকচুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৪৬৫)
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা বুঝতে পারলাম,বন্ধকচুক্তিতে নতুনভাবে ইজারাচুক্তি করলে পুর্বের বন্ধকচুক্তি বাক্বী থাকবে না।বরং বাতিল হয়ে যাবে।সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য প্রচলিত বন্ধক পদ্ধতি অনুযায়ী চুক্তি করে ফায়দা গ্রহণ করা যাবে না।চায় প্রতি মাস/বৎসরে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ বন্ধকদাতা ফায়দা গ্রহণের বিনিময়ে কেটে রাখুক না কেন? কেননা তা মাকরুহে তাহরীমি।তাই আমাদেরকে অবশ্যই বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
বিকল্প বৈধ পদ্ধতিসমূহঃ
গবেষনা করলে বৈধতার অনেক পদ্ধতি বের হতে পারে,তবে সবচেয়ে সহজ ও সুন্দর পদ্ধতির একটা হচ্ছে
যেমন
- (১) উক্ত লেনদেনকে বৈধভাবে করতে চাইলে শুরু থেকেই বন্ধকি চুক্তি না করে ভাড়া বা লীজ চুক্তি করতে হবে।যার বিবরণ হল, জমির মালিক জমি ভাড়া দিবে। তার যত টাকা প্রয়োজন সেজন্য যত বছর ভাড়া দিতে হয় একত্রে তত বছরের জন্য ভাড়া দিবে। যেমন-এক বিঘা জমির বার্ষিক ভাড়া ৫ হাজার টাকা। মালিকের ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন। তাহলে সে ৪ বছরের জন্য জমি ভাড়া দিবে। এক্ষেত্রে অগ্রিম ২০ হাজার টাকা নিয়ে নিবে। এক্ষেত্রে জমির ভাড়া স্থানীয় ভাড়া থেকে সামান্য কম বেশিও হতে পারে। এরপর ভাড়ার মেয়াদ শেষ হলে অর্থ দাতা জমি ফেরত দিবে, কিন্তু প্রদেয় টাকা ফেরত পাবে না। অবশ্য সময়ের আগে ফেরত দিলে যে কয়দিন ভাড়ায় ছিল সে পরিমাণ ভাড়া কর্তন করে অবশিষ্ট টাকা ভাড়াটিয়া ফেরত পাবে।
- (২) বয় বিল ওয়াফাঃ অর্থ্যাৎ জমিকে প্রথমে বিক্রয় করা হবে। তারপর বিক্রেতা ক্রেতাকে বলবে যখন আমার কাছে টাকা হবে তখন আপনাকে উক্ত জমি বিক্রি করতে হবে।এবং তাকে বয়য়ে আমানতও বলা হয়ে থাকে। এভাবে হলে উক্ত লেনদেন বৈধ হবে।যেমন ফাতাওয়ায়ে কাযীখানে বর্ণিত আছে,যদিও তাতে এক আকদের মধ্য দ্বিতীয় আকদের শর্ত করা হচ্ছে কিন্তু মানুষের প্রয়োজনীয়তার প্রতি লক্ষ্য করে ফুকাহায়ে কেরাম তাতে বৈধতার ফতোয়া দিচ্ছেন।
والصحيح ان العقد الذي جرى بينهما ان كان بلفظ البيع لا يكون رهنا ثم ينظر إن ذكرا شرط الفسخ في البيع فسد البيع ،وإن لم يذكرا ذلك في البيع وتلفظا بلفظة البيع بشرط الوفاء وتلفظا بالبيع الجائر ،وعندهما هذا البيع عبارة عن عقد غير لازم فكذلك ،وإن ذكر البيع من غير شرط ثم ذكر الشرط على وجه المواعدة جاز البيع ويلزمه الوفاء بالوعد،لأن المواعدة قد تكون لازمة فتجعل لازمة لحاجة الناس ،
(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ার টীকায় লিখিত ফাতাওয়া কাযীখান-২/১৬৫)
তথ্যসূত্রঃ-
সহীহ বুখারী
সুনানে তিরমিযি-১২৩১
মিরক্বাতুল মাফাতিহ-২৮৬৮;
মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৮/২৪৪-২৪৫;
শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৩/১৪৯;
রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২;
বাদায়েউস সানায়ে ৫/২১২;
শরহুল মাজাল্লা, খালেদ আতাসী ৩/১৯৬-১৯৭;
ইলাউস সুনান ১৮/৬৪
ফাতাওয়া উসমানী ৩/৪২২;
(মাকতাবাতু মা'রিফুল কুরআন-করাছী)
মাসিক আল-কাউছার থেকে চয়নকৃত কিছু অংশও তাতে রয়েছে।
কিতাবুন নাওয়াযিল,১৭/১২৯
ফাতাওয়া কাযীখান-২/১৬৫;
আদ-দুর্রুল মুখতার-৬/৪৭৭।
আল-মিনহাজ,শরহে নববী-পৃঃ২১৮।
সূরা বাক্বারা-২৮৩।
সহীহ মুসলিম-১৬০৩।
আলফালাকুল মাশহুন ফিমা য়াতা'আল্লাকু বি-ইনতেফায়িল মুরতাহিনিল মারহুন-১-২১
ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৪৬৫