بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
মহান আল্লাহ
জান্নাতের বাগানসমূহের বিবরণ দিয়ে বান্দার মনকে আকৃষ্যমান করেছেন। সুতরাং যেখানেই তিনি জান্নাতের কথা বলেছেন, প্রায়
সেখানেই নদীমালার কথা উল্লেখ করেছেন। যেমনঃ
وَبَشِّرِ
الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن
تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
অর্থাৎ, যারা বিশ্বাস
করে ও সৎকর্ম করে তাদের শুভ সংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত; যার তলদেশে
নদী প্রবাহিত। (সূরা বাক্বারাহঃ ২৫)
إِنَّ
الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ يَهْدِيهِمْ رَبُّهُم بِإِيمَانِهِمْ
ۖ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই
যারা বিশ্বাস করেছে এবং ভাল কাজ করেছে তাদের প্রতিপালক তাদের বিশ্বাসের কারণে তাদেরকে
পথ প্রদর্শন করবেন, শান্তির উদ্যানসমূহে তাদের
(বাসস্থানের) তলদেশ দিয়ে নদীমালা প্রবাহিত থাকবে। (সূরা ইউনুসঃ ৯)
أُولَٰئِكَ
لَهُمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ
অর্থাৎ, তাদেরই
জন্য আছে স্থায়ী জান্নাত; যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত।
(কাহফঃ ৩১)।
মহানবী
(ﷺ) মিরাজে গিয়ে জান্নাতের
চারটি নদী দর্শন করেছিলেন। দু’টি বাহ্যিক ও দু’টি আভ্যন্তরিক। বাহ্যিক নদী দু’টি দুনিয়ায়
প্রবহমান, নীল ও ফুরাত। (মুসলিম -১৬৪)
অন্য এক
বর্ণনায় আছে, রাসুলল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “(শামের) সাইহান ও জাইহান, (ইরাকের)
ফুরাত এবং (মিসরের) নীল প্রত্যেক নদীই জান্নাতের নদ-নদীসমূহের অন্যতম। (মুসলিম- ২৮৩৯)।
জান্নাতের
নদীমালার মধ্যে একটির নাম কাউষার; যা শেষ নবী (ﷺ)-কে হওযরূপে দান করা হয়েছে। (সুরা কাউষার) এ নদীর মাটি-কাদাও কস্তুরী।
(বুখারী) যেখান হতে মহানবী (ﷺ)
তাঁর উম্মতকে কিয়ামতে পানি পান করাবেন।
সুর্ববৃহৎ
হওয ও কাউসার নহর (অমৃত নদী) থাকবে জান্নাতী শারাবে পরিপূর্ণ। যে পবিত্র শারাব বা পানীয়
দুগ্ধ হতেও সাদা, বরফ হতেও শীতল, মধু হতেও
মিষ্ট এবং মিসক চেয়েও সুগন্ধময়। যে একবার সে পানি পান। করবে তাকে আর কোনদিন পিপাসা
স্পর্শ করবে না। (বুখারী ৬৫৭৯নং)
জান্নাতের
নিম্নদেশে চারটি নহর প্রবাহিত। নির্মল পানির নহর, দুগ্ধের নহর; যার স্বাদ
অপরিবর্তনীয়, সুস্বাদু সুধার নহর এবং পরিশোধিত মধুর
নহর। মহান আল্লাহ বলেন,
مَّثَلُ
الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ ۖ فِيهَا أَنْهَارٌ مِّن مَّاءٍ غَيْرِ
آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِّن لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِّنْ
خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى ۖ وَلَهُمْ
فِيهَا مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ
অর্থাৎ, সাবধানীদেরকে
যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হলঃ ওতে আছে নির্মল পানির নদীমালা, আছে দুধের
নদীমালা যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু
সুরার নদীমালা, আছে পরিশোধিত মধুর নদীমালা। আর সেখানে
তাদের জন্য আছে বিবিধ ফলমূল ও তাদের প্রতিপালকের ক্ষমা। সাবধানীরা কি তাদের মত, যারা জাহান্নামে
স্থায়ী হবে এবং যাদেরকে পান করতে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি; যা তাদের
নাড়ীভুড়ি ছিন্ন-ভিন্ন করে দেবে? (মুহাম্মাদঃ ১৫)।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
উক্ত নদীগুলি
জান্নাতের এই অর্থে বলা হয়েছে যে, সেগুলির মূল জান্নাতের; যেমন মানুষের
মূল হল জান্নাত। অথবা উক্ত নদীগুলির বিশেষ বরকতের জন্য
জান্নাতের নদী বলা হয়েছে অথবা অন্যান্য সাধারণ নদীসমূহের চেয়ে উক্ত
নদীসমূহে বিশেষ বৈশিষ্ট রয়েছে, বিধায় পৃথক ভাবে সেগুলির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যথায় উক্ত নদীগুলি সরাসরি জান্নাত থেকে প্রবাহিত হয়েছে, এরকম
কোন বর্ণনা সুস্পষ্ট ভাবে কুরআন ও সুন্নাহে পাওয়া যায় না। তবে এর প্রকৃত অর্থ আল্লাহই ভাল জানেন।