আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
509 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (28 points)
আসসালামু আলাইকুম

কুনুতে নাযেলা কোনটা? কখন কিভাবে পড়তে হয়? মহিলা রা কিভাবে পড়বে?

1 Answer

+1 vote
by (566,790 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

শরীয়তের বিধান অনুযায়ী  কুনুতে নাজেলাহ
মহিলা,এবং মুনফারিদ (একাকি নামাজ আদায় কারীরা)ও পড়তে পারবে।
তবে মহিলারা জোড়ে আওয়াজ পড়বেনা।
(ফাতাওয়ায়ে  রহিমিয়্যাহ ৬/২৪)
মহিলারা ইমাম হয়ে জামাতের সহিত কুনুতে নাজেলাহ পড়বেনা।
মহিলাদের ইমামতি মাকরুহে তাহরিমি। 
তাই তারা একাকি নামাজেই কুনুতে নাজেলাহ পড়তে পারবে।  

মুসলমানদের উপর কোন বিপদ আপদ আসলে, ইসলামের শত্রুদের জন্য হেদায়াতের দুআ বা বদদুআ করার জন্য ফজরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে কুনুতে নাজেলা পড়া মুস্তাহাব।সর্বদা ফজরের নামাযের সময় এমনটি করবে না। বাকি যদি কেউ করে, তাহলে সেটিকে বাতিল বলে বাঁধা দেবারও প্রয়োজন নেই। তবে কথা হল, কুনুতে নাজেলা শুধু বিশেষ মুহুর্ত তথা ব্যাপক বিপদ, যুদ্ধকালীন সময় ইত্যাদি মুসিবতের সময় পড়াই মুস্তাহাব।

أَبُو مَالِكٍ، قَالَ: قُلْتُ لِأَبِي: يَا أَبَتِ  إِنَّكَ قَدْ ” صَلَّيْتَ خَلْفَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ “، وَأَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ، وَعُثْمَانَ، وَعَلِيٍّ هَاهُنَا بِالْكُوفَةِ، قَرِيبًا  مِنْ خَمْسِ سِنِينَ، أَكَانُوا يَقْنُتُونَ؟ قَالَ: أَيْ بُنَيَّ، مُحْدَثٌ

হযরত আবু মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বললাম, হে আমার পিতা! নিশ্চয় আপনি রাসূল সাঃ, হযরত আবু বকর রাঃ, হযরত উমর রাঃ, হযরত উসমান রাঃ ও হযরত আলী রাঃ এর পিছনে কুফায় প্রায় পঞ্চাশ বছর নামায পড়েছেন, তারা কি ফজরের নামাযে সর্বদা কুনুত [নাজেলাহ] পড়তেন? তিনি বললেন, হে আমার বৎস! না এটি নতুন করে শুরু হয়েছে। [আগে পড়া হতো না]। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৮৭৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১২৪১, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৪০২, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১৪৭৪, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-১২৯২}
হাদীসটি সহীহ।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ يَقْنُتُ إِلَّا أَنْ يَدْعُوَ لِقَوْمٍ عَلَى قَوْمٍ، فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَدْعُوَ عَلَى قَوْمٍ أَوْ يَدْعُوَ لِقَوْمٍ، قَنَتَ حِينَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ مِنَ الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ مِنْ صَلَاةِ الْفَجْرِ

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ফজরের নামাযের সময় সর্বদা কুনুত [নাজেলাহ] পড়তেন না। শুধু পড়তেন কোন জাতির জন্য দুআ করতে বা বদদুআ করার প্রয়োজন হলে।তিনি কুনুত পড়তেন যখন ফজরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতের রুকু থেকে মাথা উঠাতেন। {সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১০৯৭, নসবুর রায়াহ, আলমুসনাদুল জামে, আসারুস সুনান-২/২০}

আল্লামা নিমাভী রহঃ বলেন, এ হাদীসের সনদ সহীহ।

عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَقْنُتْ فِي الْفَجْرِ إِلَّا شَهْرًا وَاحِدًا، لَمْ يُرَ قَبْلَ ذَلِكَ، وَلَا بَعْدَهُ يَدْعُو عَلَى أُنَاسٍ مِنَ الْمُشْرِكِينَ»

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল সাঃ ফজরের নামাযের সময় কুনুত পড়তেন না, শুধুই একমাস পড়েছিলেন। এর আগে বা পড়ে আর এমনটি করতে দেখা যায়নি। সে সময় তিনি কিছু মুশরিকদের উপর বদদুআ করতে পড়েছিলেন। {মুসনাদে আবী হানীফা বিরিওয়াতে হিসকাফী, হাদীস নং-৩৪}

ان قنوت النوازل لم ينسخ بل هو مشروع اذا نزل بالمسلمين نازلة ان يقنت الامام في الفجر –

অর্থাৎ, কুনুতে নাজেলা রহিত হয়নি বরং তা এখনো বহাল রয়েছে। মুসলমানদের দুর্যোগ কালে ফজরের নামাজে ইমাম কুনুত পড়বে। (এলাউস সুনান – ৬/৮১)

মুসলমানদের উপর যদি ব্যাপক বালা-মুসিবত ও বিপদ আসে, তাহলে সেক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার নিকট সাহায্য কামণার্থে কুনুতে নাজেলা পড়া মুস্তাহাব। রাসূল সাঃ বিপদ আপতিত হলে ফজরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন সময় কুনুতে নাজেলা পড়েছেন। {সহীহ বুখারী-২/৬৫৫, তাহাবী শরীফ-১/১৭৪, সহীহ মুসলিম-১/২৩৭}

তাই হানাফী মাযহাব মতে কাফের, মুশরিক ও জালেমদের পক্ষ থেকে বা আসমানী কোন বিপদ আসলে কুনুতে নাজেলা পড়া উচিত। {ফাতওয়ায়ে শামী ২/৪৪৮-৪৪৯}

কুনুতে নাজেলা পড়ার পদ্ধতি
ফজরের নামাযের ফরজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে উঠে ইমাম আওয়াজ করে দু’আ পড়বেন, আর মুসল্লিগণ আস্তে আস্তে আমীন বলবেন। দুআ শেষে নিয়ম মোতাবিক সেজদা, শেষ বৈঠক ইত্যাদির মাধ্যমে নামায শেষ করবেন। (এলাউস সুনান – ৬/৮১)

★কুনুতে নাজেলা
اللَّهُمَّ اهْدِنَا فِيمَنْ هَدَيْتَ ، وَعَافِنَا فِيمَنْ عَافَيْتَ ، وَتَوَلَّنَا فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ ، وَبَارِكْ لَنَا فِيمَا أَعْطَيْتَ ، وَقِنَا شَرَّ مَا قَضَيْتَ ، إِنَّكَ تَقْضِى وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ ، إِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ (سنن البيهقى الكبرى، رقم الحديث-2960)

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا ، وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ ، وَأَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ ، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ ، وَانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوِّكَ وَعَدُوِّهِمْ ، اللَّهُمَّ الْعَنْ كَفَرَةَ أَهْلِ الْكِتَابِ الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِكَ ، وَيُكُذِّبُونَ رُسُلَكَ ، وَيُقَاتِلُونَ أَوْلِيَاءَكَ اللَّهُمَّ خَالِفْ بَيْنَ كَلِمَتِهِمَ ، وَزَلْزِلْ أَقْدَامَهُمْ ، وَأَنْزِلْ بِهِمْ بَأْسَكَ الَّذِى لاَ تَرُدُّهُ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُثْنِى عَلَيْكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ ، وَلَكَ نُصَلِّى وَنَسْجُدُ ، وَلَكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ ، نَخْشَى عَذَابَكَ الْجَدَّ ، وَنَرْجُو رَحْمَتَكَ ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكَافِرِينَ مُلْحَقٌ. (سنن البيهقى الكبرى، رقم الحديث-2962

★ইমাম তহাবী রহঃ এবং অন্যান্য  মুহাক্কিক উলামায়ে কেরামদের  মতে কুনুতে নাজেলাহ ফজরের নামাজের সাথেই খাছ। 
ফাতাওয়ায়ে শামীতে এসেছেঃ   
ان قنوت النازلۃ عندنا مختص بصلوٰۃ الفجر دون غیر ھا من الصلوٰۃ الجھریۃ اوالسریۃ 
 (ج۱ ص۶۲۸باب متفرقات صلوٰۃ مطلب فی قنوت النازلۃ) 
নিশ্চয়ই কুনুতে নাজেলাহ আমাদের নিকটে ফজরের নামাজের সাথে খাছ,,অন্যান্য নামাজে নয়,, ,,।   

তবে কিছু উলামায়ে  কেরামগন  বলেছেন  যে এটা ফজরের নামাজের সাথে খাছ  নয়। 
বরং ফজর,মাগরিব,ঈশা,জুমআর নামাজেও পড়া যাবে।
এই জন্যা অন্যান্য নামাজেও পড়া যাবে,নিষেধ নেই।
(ফাতাওয়ায়ে  রহিমিয়্যাহ ৬/২০)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 243 views
...