আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
130 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (22 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম,
শায়েখ, সহশিক্ষা ত্যাগ সংক্রান্ত মিথ্যা বলা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
আমি এক ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছিলাম। পরিপূর্ণ পর্দা করেই আলহামদুলিল্লাহ। যেহেতু আমি আগে পর্দা করতাম না, তাই রেজিস্ট্রেশন কার্ডের ছবি হিজাববিহীন ও মেকাপ ও লিপস্টিক দেয়া ছিলো।
অনার্সে রেজিস্ট্রেশনের ছবিটিই গ্র‍্যাজুয়েশন অব্দি ব্যবহার করতে হয়। পরিবর্তনের সুযোগ নেই।
তাই বাধ্য হয়েই পরিবার ননপ্র‍্যাক্টিসিং হয়ায় আমি পর্দাসহ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি।
পরীক্ষা হলে নানা কারণে কিছু শিক্ষক পর্দাকে হেয় করে, আমাকে পুরো ক্লাসের সামনে অপমান করা হয়। আমি সব সহ্য করে দিতে থাকি।

" সামনের কম্পিটিটিভ এক্সামে  এসব কিন্তু এলাউ করবেনা। বুঝেছ? "

" নাকমুখ কেন এভাবে ঢেকে রেখেছো "

" চোখ কেন ঢেকেছো। চোখ খোলা রাখতেই হবে"

"কীভাবে বুঝবো তুমি ছাড়া অন্য কেউ পরীক্ষা দিচ্ছেনা?"( ম্যাম দিয়ে চেক করাতে বলেও লাভ হতোনা। মুলতো আমাকে হেয় করাই উদ্দেশ্য)
চেকিং এর সময় তারা আমার ছবিটা দেখতো।  তখন মুলতো আমি চোখ খোলা রাখতাম। পরে নামিয়ে দিতাম। কেননা আমার সামনে ও পাশে ছেলেরা এক্সাম দেয়।
কিন্তু তারা এটাও মানতে নারাজ। একটু একটু করে ছাড়তে বলছিল পর্দাকে।
এক বোন যিনি খিমার পরেছেন,নেকাব নয়। তা দিয়ে মুখ ঢেকেছেন তবে কপাল খোলা ও হাত খোলা তাকে দেখিয়ে তার মত করে পর্দা করতে বলেছেন।
আমাকে যেন সিসি ক্যামেরার মত স্ক্যান করা হতো। আমি কোনো রুলস ব্রেক করিনি। না কারো থেকে দেখতাম না দেখাতাম। নিশব্দে পরীক্ষা দিতাম।
তাছাড়া সামনে ও পাশে ছেলেরা এক্সাম দেয় যা অত্যন্ত ফিতনার। রিলেশন, ছেলেমেয়ে অবাধ কথাবার্তা বলতেই থাকে এরা। পরীক্ষার হলেও।
যাইহোক  আমি নাজেহাল হয়ে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নি। কারণ আমি চাকরী করবোনা ইনশাআল্লাহ । আমি এখনো হারাম হালাল মেইনটেইন করায় আর্থিক ভাবে দূর্বল, তবুও আমি কোনো কিছুর সিদ্ধান্ত নি নাই। কারণ আমি বাইরের জগত জানি তা কতটা নিকৃষ্ট হতে পারে। জায়েজ ভাবেও সেখানে যাওয়ার প্রশ্ন আসেনা। আল্লাহ হেফাজত করুক।
যেহেতু আমি নিজের খরচেই পড়ি, সেহেতু বাবা মায়ের টের পাওয়ার কথা না। যদিনা আমি বলি বা কেউ বলে দেয়।

কিন্তু আমাকে স্বাভাবিক দেখাতে হবে যে আমি পড়ছি। ভর্তি হয়েছি। বই কিনেছি।
পরীক্ষাতেও যাব কিন্তু এক্সাম দিবোনা। ভিতরে অন্য কোথাও বসে থাকবো।
এক্ষেত্রে আমি মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারবো কিনা?
ব্যাসিক ফরজের বিরুদ্ধে তারা। (পর্দা,গায়রে মাহরাম,হারাম হালাল খাবার ইত্যাদি)  সেক্ষেত্রে জানলে কোনোদিন মেনে নিবেনা।
এদিকে এত অপমান মাথায় নিয়ে আমার পরীক্ষা দেয়া সম্ভব না। তারা দয়া করে আমাকে এক্সাম দিতে দিবে এটা আমি মেনে নিতে পারিনা। আমাকে নিয়ে পুরো ক্লাসের সামনে দফায় দফায় অপমান করে, হাসাহাসি করেছে যা আমার রক্ত গরম করে দিতো। ( নিজের চোখে না দেখলে আমি বিশ্বাস করতাম না এমন হতে পারে।এভাবেও অপমান করা যায়!)
ভাইবা এক্সামে সামনে বসিয়ে তারা হাসবে, টিপ্পনী কাটবে, অপমান করবে ইত্যাদি আরো সমস্যা হবে। আর নেকাব খুলার প্রশ্নই আসেনা। সেক্ষেত্রে ইয়ারগুলো শেষ করেও শেষে ভাইবাতে গিয়ে  আমি আটকে যেতে পারি।
প্রত্যেকদিন এক্সাম দেয়ার আগে ভয় নিয়ে যেতাম। কি বলবে, অপমান করবে কিনা। পরীক্ষা দিতে দিবে কিনা। ইত্যাদি।
এই মানসিক অত্যাচারের পাশাপাশি তাদের অপমানে আমি পুরো ট্রমায় চলে গিয়েছিলাম। পুরো ক্লাস আমাকে জানতো। আমি অত্যন্ত পারসোনালিটি মেইনটেইন করতাম।
আমার পুরো শিক্ষাজীবনে এভাবে অপমান করার রেকর্ড তেমন নেই। সারাজীবন প্রশংসা করেছে।
সেই আমাকে এভাবে অপমান করবে তা আমি মানতে পারিনি।
আমি পুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ট্রমায় চলে গিয়েছিলাম। যা থেকে স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছে। কাউন্সেলিং নিয়েছি।
আমি চেষ্টা করেছি, ইস্তিখারা করেছি, বুঝেছি, সব জেনে বুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, না সম্ভব না।
আমার বাবা মা আমাকে বিশ্বাস করে। জানে আমি মিথ্যা পছন্দ করিনা। কিন্তু এখন সেই মিথ্যের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। আমি তাদের কষ্ট দেয়া ও নিজেকে বিপদে ফেলতে চাইনা। তাই অত্যন্ত সুকৌশলে আমাকে বিষয়টা গোপন রেখে ছেড়ে দিতে হবে।
আমি আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিনা আলহামদুলিল্লাহ। যেটা একেবারে নতুন দ্বীনে ফিরেছে বোনরা করেন।
আমি এসংক্রান্ত ফতোয়া, লেকচার, পরামর্শ, অভিজ্ঞতা নেয়া সাধ্যমতো করেছি প্রায় দেড় বছর। সব জেনে বুঝেই ছেড়ে দেয়াই সমীচীন মনে করি।
১/ আমার পুরো পরিস্থিতি জেনে এভাবে মিথ্যের আশ্রয় নেয়া জায়েজ হবে কিনা?

২/ আমি স্টুডেন্ট পড়াই অনেক বছর যাবত। সেক্ষেত্রে আমি যতটুকু  পড়েছি ততটুকু বলে বা অনার্সে  পড়ছি -এভাবে বলে টিউশন নিতে পারবো কিনা? ( পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছি এটা সমাজ ভালভাবে নেয়না। এখন আমার নিযের খরচ নিজেকেই চালাতে হয়। এটাই একমাত্র ইনকাম সোর্স)
জাজাকাল্লাহ খাইরান।

1 Answer

0 votes
by (583,410 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
https://www.ifatwa.info/434 নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছিলাম যে,
এ সম্পর্কে পাকিস্তান শরয়ী কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি মুফতী তাক্বী উসমানী (দাঃবাঃ) এক প্রশ্নের জবাবে বলেনঃ
সহশিক্ষা নাজায়েয ও হারাম। তবে বর্তমান সময়ে জেনারেল শিক্ষায় দ্বীনদারের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য।সরকারী-বেসরকারি সমস্ত পদ-পদবীতে অমুসলিম -ফাসিকদের জয়জয়কার।
(আমি বলবঃআজ এই দেখুন আমাদের বাংলাদেশ! যেখানে সব কর্তৃত্ব অমুসলিম এবং বেদ্বীনদের হাতে।তাই বললে ভূল হবে না যে,
অমুসলিমরা জনসংখ্যা অনুপাতে সংখ্যালগু হলেও তারা সরকারী পদ-পদবীতে সংখ্যাগরিষ্ঠ)

সুতরাং বর্তমানে জেনারেল শিক্ষার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে,
যেমন ইবনে আবেদীন শামী রাহ,কতটুকু জ্ঞানার্জন ফরযে কেফায়া শীর্ষক আলোচনা করতে যেয়ে এক পর্যায়ে  বলেনঃ
وَأَمَّا فَرْضُ الْكِفَايَةِ مِنْ الْعِلْمِ، فَهُوَ كُلُّ عِلْمٍ لَا يُسْتَغْنَى عَنْهُ فِي قِوَامِ أُمُورِ الدُّنْيَا كَالطِّبِّ وَالْحِسَابِ.........................إلي أن قال............................................................................... وَالْعِلْمِ بِأَعْمَارِهِمْ وَأُصُولِ الصِّنَاعَاتِ وَالْفِلَاحَةِ كَالْحِيَاكَةِ وَالسِّيَاسَةِ وَالْحِجَامَةِ.
ফরযে কেফায়া মূলক জ্ঞানার্জন হচ্ছে।
(কেফায়া মানে যা কিছুসংখ্যক মুসলমান আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হয়ে যায়)
ঐ সমস্ত জ্ঞান যা পৃথিবীতে জীবনাতিপাতের ভিত্তি যেমনঃচিকিৎসাবিজ্ঞান,হিসাববিজ্ঞান,............
এবং শিল্পবিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান, র্রাষ্টবিজ্ঞান,ও হেজমাত তথা তৎকালিন এক প্রকার চিকিৎসাবিজ্ঞান।
(দ্বীনের ফরয জ্ঞানার্জনের পর যা অর্জন করা কিছু সংখ্যক মুসলমানের উপর ফরয)(রদ্দুল মুহতার,১/৪২)

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/434

সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
যেহেতু বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ফুকাহায়ে কেরাম সহশিক্ষার অনুমতি দিয়ে থাকেন, তাই আপনি যথাসম্ভব নিজেকে ফিতনা মুক্ত রাখার চেষ্টা করে কলেজ ভার্সিটিতে লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন।
যথাসম্ভব বিপরিত লিঙ্গকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। দ্বীন ও ইসলামের খাতিরে আপনি সকল প্রকার অপমান এবং তিরস্কারকে সহ্য করার চেষ্টা করবেন। বর্ণিত পরিস্থিতি অনুযায়ী মাতাপিতার সাথে কোনও প্রকার মিথ্যা বলার অবকাশ নাই। বরং আপনি প্রয়োজনে কলেজ পরিবর্তন করবেন।কলেজ পরিবর্তন সম্ভব না হলে, এই ক'দিন তাদের অপমান সহ্য করে লোখাপড়া সমাপ্ত করবেন। পাশাপাশি দ্বীন শিখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।এবং এ চেষ্টা প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখবেন। হ্যা,অার্থিক সমস্যা না হলে আপনি চাকুরী করবেন না। এজন্য অবশ্যই আপনি আখেরাতে পুরুস্কৃত হবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...