আসসালামু আলাইকুম,
শায়েখ, সহশিক্ষা ত্যাগ সংক্রান্ত মিথ্যা বলা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
আমি এক ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছিলাম। পরিপূর্ণ পর্দা করেই আলহামদুলিল্লাহ। যেহেতু আমি আগে পর্দা করতাম না, তাই রেজিস্ট্রেশন কার্ডের ছবি হিজাববিহীন ও মেকাপ ও লিপস্টিক দেয়া ছিলো।
অনার্সে রেজিস্ট্রেশনের ছবিটিই গ্র‍্যাজুয়েশন অব্দি ব্যবহার করতে হয়। পরিবর্তনের সুযোগ নেই।
তাই বাধ্য হয়েই পরিবার ননপ্র‍্যাক্টিসিং হয়ায় আমি পর্দাসহ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি।
পরীক্ষা হলে নানা কারণে কিছু শিক্ষক পর্দাকে হেয় করে, আমাকে পুরো ক্লাসের সামনে অপমান করা হয়। আমি সব সহ্য করে দিতে থাকি।
" সামনের কম্পিটিটিভ এক্সামে এসব কিন্তু এলাউ করবেনা। বুঝেছ? "
" নাকমুখ কেন এভাবে ঢেকে রেখেছো "
" চোখ কেন ঢেকেছো। চোখ খোলা রাখতেই হবে"
"কীভাবে বুঝবো তুমি ছাড়া অন্য কেউ পরীক্ষা দিচ্ছেনা?"( ম্যাম দিয়ে চেক করাতে বলেও লাভ হতোনা। মুলতো আমাকে হেয় করাই উদ্দেশ্য)
চেকিং এর সময় তারা আমার ছবিটা দেখতো। তখন মুলতো আমি চোখ খোলা রাখতাম। পরে নামিয়ে দিতাম। কেননা আমার সামনে ও পাশে ছেলেরা এক্সাম দেয়।
কিন্তু তারা এটাও মানতে নারাজ। একটু একটু করে ছাড়তে বলছিল পর্দাকে।
এক বোন যিনি খিমার পরেছেন,নেকাব নয়। তা দিয়ে মুখ ঢেকেছেন তবে কপাল খোলা ও হাত খোলা তাকে দেখিয়ে তার মত করে পর্দা করতে বলেছেন।
আমাকে যেন সিসি ক্যামেরার মত স্ক্যান করা হতো। আমি কোনো রুলস ব্রেক করিনি। না কারো থেকে দেখতাম না দেখাতাম। নিশব্দে পরীক্ষা দিতাম।
তাছাড়া সামনে ও পাশে ছেলেরা এক্সাম দেয় যা অত্যন্ত ফিতনার। রিলেশন, ছেলেমেয়ে অবাধ কথাবার্তা বলতেই থাকে এরা। পরীক্ষার হলেও।
যাইহোক আমি নাজেহাল হয়ে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নি। কারণ আমি চাকরী করবোনা ইনশাআল্লাহ । আমি এখনো হারাম হালাল মেইনটেইন করায় আর্থিক ভাবে দূর্বল, তবুও আমি কোনো কিছুর সিদ্ধান্ত নি নাই। কারণ আমি বাইরের জগত জানি তা কতটা নিকৃষ্ট হতে পারে। জায়েজ ভাবেও সেখানে যাওয়ার প্রশ্ন আসেনা। আল্লাহ হেফাজত করুক।
যেহেতু আমি নিজের খরচেই পড়ি, সেহেতু বাবা মায়ের টের পাওয়ার কথা না। যদিনা আমি বলি বা কেউ বলে দেয়।
কিন্তু আমাকে স্বাভাবিক দেখাতে হবে যে আমি পড়ছি। ভর্তি হয়েছি। বই কিনেছি।
পরীক্ষাতেও যাব কিন্তু এক্সাম দিবোনা। ভিতরে অন্য কোথাও বসে থাকবো।
এক্ষেত্রে আমি মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারবো কিনা?
ব্যাসিক ফরজের বিরুদ্ধে তারা। (পর্দা,গায়রে মাহরাম,হারাম হালাল খাবার ইত্যাদি) সেক্ষেত্রে জানলে কোনোদিন মেনে নিবেনা।
এদিকে এত অপমান মাথায় নিয়ে আমার পরীক্ষা দেয়া সম্ভব না। তারা দয়া করে আমাকে এক্সাম দিতে দিবে এটা আমি মেনে নিতে পারিনা। আমাকে নিয়ে পুরো ক্লাসের সামনে দফায় দফায় অপমান করে, হাসাহাসি করেছে যা আমার রক্ত গরম করে দিতো। ( নিজের চোখে না দেখলে আমি বিশ্বাস করতাম না এমন হতে পারে।এভাবেও অপমান করা যায়!)
ভাইবা এক্সামে সামনে বসিয়ে তারা হাসবে, টিপ্পনী কাটবে, অপমান করবে ইত্যাদি আরো সমস্যা হবে। আর নেকাব খুলার প্রশ্নই আসেনা। সেক্ষেত্রে ইয়ারগুলো শেষ করেও শেষে ভাইবাতে গিয়ে আমি আটকে যেতে পারি।
প্রত্যেকদিন এক্সাম দেয়ার আগে ভয় নিয়ে যেতাম। কি বলবে, অপমান করবে কিনা। পরীক্ষা দিতে দিবে কিনা। ইত্যাদি।
এই মানসিক অত্যাচারের পাশাপাশি তাদের অপমানে আমি পুরো ট্রমায় চলে গিয়েছিলাম। পুরো ক্লাস আমাকে জানতো। আমি অত্যন্ত পারসোনালিটি মেইনটেইন করতাম।
আমার পুরো শিক্ষাজীবনে এভাবে অপমান করার রেকর্ড তেমন নেই। সারাজীবন প্রশংসা করেছে।
সেই আমাকে এভাবে অপমান করবে তা আমি মানতে পারিনি।
আমি পুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ট্রমায় চলে গিয়েছিলাম। যা থেকে স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছে। কাউন্সেলিং নিয়েছি।
আমি চেষ্টা করেছি, ইস্তিখারা করেছি, বুঝেছি, সব জেনে বুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, না সম্ভব না।
আমার বাবা মা আমাকে বিশ্বাস করে। জানে আমি মিথ্যা পছন্দ করিনা। কিন্তু এখন সেই মিথ্যের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। আমি তাদের কষ্ট দেয়া ও নিজেকে বিপদে ফেলতে চাইনা। তাই অত্যন্ত সুকৌশলে আমাকে বিষয়টা গোপন রেখে ছেড়ে দিতে হবে।
আমি আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিনা আলহামদুলিল্লাহ। যেটা একেবারে নতুন দ্বীনে ফিরেছে বোনরা করেন।
আমি এসংক্রান্ত ফতোয়া, লেকচার, পরামর্শ, অভিজ্ঞতা নেয়া সাধ্যমতো করেছি প্রায় দেড় বছর। সব জেনে বুঝেই ছেড়ে দেয়াই সমীচীন মনে করি।
১/ আমার পুরো পরিস্থিতি জেনে এভাবে মিথ্যের আশ্রয় নেয়া জায়েজ হবে কিনা?
২/ আমি স্টুডেন্ট পড়াই অনেক বছর যাবত। সেক্ষেত্রে আমি যতটুকু পড়েছি ততটুকু বলে বা অনার্সে পড়ছি -এভাবে বলে টিউশন নিতে পারবো কিনা? ( পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছি এটা সমাজ ভালভাবে নেয়না। এখন আমার নিযের খরচ নিজেকেই চালাতে হয়। এটাই একমাত্র ইনকাম সোর্স)
জাজাকাল্লাহ খাইরান।