بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
পাকিস্তানের
বিখ্যাত আলেম মুফতি শফী (রহ.) এ সংক্রান্ত একটি পুস্তিকায় লিখেছেন যে, ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে তিনটি বিষয়ের
সমষ্টি। ১. সাক্ষ্য প্রদান ২. সুপারিশ ও ৩. প্রতিনিধিত্বের সনদ প্রদান।
অর্থাৎ
কোন প্রার্থীকে ভোট দেওয়া মানে ওই প্রার্থী ভালো এবং যোগ্য বলে আপনি সাক্ষ্য দিচ্ছেন।
তিনি ভালো এবং যোগ্য বলে আপনি সুপারিশ করছেন। তিনি ভালো এবং যোগ্য বলে আপনি তার প্রতিনিধিত্বের
বৈধতার সনদ প্রদান করছেন।
ইসলামে
কারো পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া, সুপারিশ করা, সনদ দেওয়া এ তিনটি জিনিসেই গুরুত্বপূর্ণ।
এবং স্পর্শকাতরও। তাই সর্বাধিক সতর্কতার বিকল্প নেই।
বিখ্যাত
হাদিস বিশারদ শামসুদ্দীন যাহাবী (রহ.) মিথ্যা সাক্ষ্যকে চারটি বড় গুনাহের সমষ্টি বলে
আখ্যা দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে : ১. নিজে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার গুনাহ ২. যার বিরুদ্ধে
সাক্ষী দিচ্ছে তার উপর জুলুম করার গুনাহ। ৩. যার পক্ষে মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছে তার উপরও
প্রকৃতপক্ষে জুলুম করছে। কারণ, সে যা কিছু পাওয়ার যোগ্য ছিল না এ ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষীর মাধ্যমে
তাকে এর অধিকারী করে তুলছে এবং এভাবে তাকে করছে জাহান্নামী। ৪. মিথ্যা সাক্ষ্যদাতার
একটি হালাল কাজকে হারাম বানিয়ে নেওয়ার গুনাহ।
ভোট দেওয়ার
আরেকটি অর্থ হচ্ছে, পছন্দের
প্রার্থীকে ভোটারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগের প্রস্তাব করা। ইসলামের কথা হলো- সৎ
ও আমানতদার ব্যক্তিকে উকিল বা প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের পক্ষ
থেকে কোনো বিষয়ে দায়িত্বশীল নিযুক্ত হয়, তারপর সে তাদের জন্য কোনো ব্যক্তিকে কর্মকর্তা
নিযুক্ত করে, অথচ সে
জানে যে, মানুষের মধ্যে এমন ব্যক্তিও
আছে, যে তার চেয়েও অধিক যোগ্য এবং
কোরআন-হাদিসের অধিক জ্ঞান রাখে, তা হলে সে অবশ্যই
আল্লাহ
ও তার রাসুল এবং মুসলিম জাতির আমানতের খেয়ানত করল।’ (আল মুজামুল কাবির লিত-তিবরানি)
প্রতিনিধি
নিয়োগের অধিকার আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের কাছে আমানতস্বরূপ। আমানতের জিনিস তার প্রকৃত
পাওনাদারের কাছে হস্তান্তর করে দিতে হয়।
আল্লাহ
তায়ালা বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا يَعِظُكُم بِهِ
‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের
নির্দেশ দেন, তোমরা যেন
প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৫৮)।
আমানতকৃত
বস্তু তার যথার্থ প্রাপকের কাছে না পৌঁছানো খেয়ানত আর এটা হারাম ও মুনাফিকের নিদর্শনসমূহের
একটি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারি নেই তার মধ্যে ঈমান নেই...।’ (বায়হাকি)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
উপরের আলোচনা
থেকে একথা বুঝা যায় যে, ভোট হলো
একটি আমানত যা টাকা পয়সা দিয়ে ক্রয়-বিক্রয় করা সম্পূর্ণ হারাম। সুতরাং প্রশ্নেল্লিখিত
ছুরতে ঐ ব্যাক্তির জন্য মিথ্যা কথা বলে কারো ভোট কালেক্ট করা এবং এভাবে অর্থ উপার্জন
করা হারাম । উক্ত কাজ পরিহার করার জন্য তাকে হকের দাওয়াত দিতে হবে ও তার জন্য দোয়া
করতে হবে যেন আল্লাহ তায়ালা তাকে দ্বীনের সহিহ বুঝ দান করেন।