বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(১)সাধারণত পিপিলিকাকে হত্যা করা হারাম ও নাজায়েয।
ইবনে আব্বাস রাযি থেকে বর্ণিত
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: "نهى رسول الله صلى الله عليه سلم عن قتل أربع من الدواب النملة، والنحلة، والهدهد، والصرد"
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চার প্রকার প্রাণী হত্যা করতে বারণ করেছেনঃ পিঁপড়া, মধুমক্ষিকা, হুদহুদ পাখি এবং চড়ুই সদৃশ বাজ পাখি।সুনানু আবি-দাউদ-৫২৬৭, সুনানু ইবনি মা'জা-৩২২৪
তবে কষ্টদায়ক পিপড়া যা মানুষের শরীরে কামড় দেয় বা যা খাদ্যকে নষ্ট করে দেয়,সেই সব পিপড়াকে হত্যা করা জায়েয আছে।যেমন সাদা পিপড়া,বা লাল পিপড়া।হাদীসে পিপড়া হত্যাকে নিষেধ করা হয়েছে,সেগুলো মূলত সেসব পিপড়াকে কেন্দ্র করে বলা হয়েছে,যেগুলো মানুষকে কোনো প্রকার ক্ষতি পৌছায় না।
সুতরাং ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো পিপড়াকে হত্যা করা যাবে না,যতক্ষণ না সেই পিপড়া কষ্টদায়ক প্রমাণিত হবে।এবং উক্ত পিপড়াকে হত্যা ব্যতিত সামনে বিকল্প কোনো রাস্তা থাকবে না।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " نَزَلَ نَبِيٌّ مِنَ الأَنْبِيَاءِ تَحْتَ شَجَرَةٍ فَلَدَغَتْهُ نَمْلَةٌ فَأَمَرَ بِجَهَازِهِ فَأُخْرِجَ مِنْ تَحْتِهَا ثُمَّ أَمَرَ بِهَا فَأُحْرِقَتْ فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَيْهِ فَهَلاَّ نَمْلَةً وَاحِدَةً " .
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন এক নবী (আঃ) এক গাছের নিচে বসবাস করছিলেন। একটি পিঁপড়া তাঁকে কামড় দিলো। তিনি বিছানাপত্র সরানোর নির্দেশ দিলে তা তাঁর নিচ হতে সরানো হলো। তারপর তিনি আদেশ দিলে সব পিঁপড়া জ্বালিয়ে দেয়া হলো। আল্লাহ তাঁর নিকট ওয়াহী পাঠালেনঃ একটি মাত্র পিঁপড়া নয় কেন?
মোটকথাঃ
কষ্টকর প্রাণীকে হত্যা করা জায়েয।এর জন্য বিকল্প রাস্তা গ্রহণ করা যেতে পারে।বিশেষ করে এমন পরিবেশ তৈরী করাই শ্রেয়, যা পিপিলিকা জন্মের প্রতিবন্ধ হয়।এতেকরে প্রাণী হত্যার বিধিনিষেধ সম্ভলিত হাদীস সমূহের সাথে সাথে পরিবেশ রক্ষার হাদীস সমূহের উপরও আ'মল হয়ে যাবে।বিস্তারিত জানুন-৮৯৫
(২)ইসলামের কোনো বিধানকে অবজ্ঞা করে ব্যঙ্গ করা স্পষ্টত কুফরী।তার জন্য তাৎক্ষণিক তাওবাহ করা ওয়াজিব।এবং সাথে সাথে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া ওয়াজিব।
(৩)আবিদাতুল মালিকি রাযি থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,
وعن عبيدة المليكي وكانت له صحبة قال: قال رسول الله - صلى الله عليه وسلم - ( «يا أهل القرآن لا تتوسدوا القرآن واتلوه حق تلاوته من آناء الليل والنهار، وأفشوه وتغنوه وتدبروا ما فيه لعلكم تفلحون، ولا تعجلوا ثوابه فإن له ثوابا» ) رواه البيهقي في شعب الإيمان.
হে কুরআন ওয়ালা! কুরআন নিয়ে অলসতা করবে না।বরং দিনে রাত্রে সঠিকভাবে সঠিক পদ্ধতিতে কুরআন তেলাওয়াত করো।কুরআনকে প্রচার করো,কুরআনকে গনিমত মনে করো,এবং তাতে নিহিত অর্থসমূহকে বুঝতে চেষ্টা করো।সম্ভবত তোমরা কামিয়াব হবে।তোমরা কুরআনের সওয়াবকে জলদি অর্জন করতে যাবে না, বরং কুরআনের একটি সওয়াব অবশ্যই রয়েছে।(মিশকাত-২২১০)
মুল্লা আলী কারী বলেন,
(ولا تعجلوا) بتشديد الجيم المكسورة، وفي نسخة بفتح التاء والجيم المشددة المفتوحة، أي: لا تستعجلوا ثوابه قال الطيبي: أي لا تجعلوه من الحظوظ العاجلة (فإن له ثوابا) : أي مثوبة عظيمة آجلة (رواه البيهقي في شعب الإيمان)
মর্মার্থ- ইমাম বলেন, হাদীসের শেষাংশের উদ্দেশ্য হল,তোমরা কুরআনের সওয়াবকে তারাতারি দুনিয়াতে চাইবে না।বরং কুরআন তেলাওয়াতের একটি সওয়াব আখেরাতে রয়েছে।
٢٢١٦ - وعن عمران بن حصين «أنه مر على قاص يقرأ، ثم يسأل فاسترجع، ثم قال: سمعت رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: (من قرأ القرآن فليسأل الله به فإنه سيجيء أقوام يقرءون القرآن يسألون به الناس» ) رواه أحمد والترمذي
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,যে ব্যক্তি কুরআন পড়বে,সে যেন আল্লাহর কাছে কিছু চায়।কেননা অচিরেই এমন সব লোকের আবির্ভাব ঘটবে,যারা কুরআন পড়ে পড়ে লোকদের নিকট কুরআনের বিনিময় চাইতে থাকবে।
সুতরাং উপরোক্ত হাদীস সমূহের আলোকে বলা যায়,এভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুরআন পড়ে বিনিময় গ্রহণ করা কখনো জায়েয হবে না।
(৪)কুরআন তেলাওয়াত পৃথক একটি ইবাদত।ইবাদত নিজে নিজে করতে হয়।তাই কুরআন তেলাওয়াতও নিজে নিজে করতে হবে।অন্যকে ভাড়া করে নিয়ে এসে কুরআন তেলাওয়াত করানোর কোনো নিয়ম শরীয়তে নেই।হ্যা কেউ যদি নিজে কুরআন তেলাওয়াত শিখতে চায়,এবং এজন্য সে কাউকে টাকার বিনিময়ে বাড়িতে নিয়ে আসে,তাহলে সেটা জায়েয হবে। কেননা এখানে মূলত শিক্ষার স্বার্থেই নিয়ে আসা হয়েছে।