জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
এক ধর্মের সাথে অপর ধর্মের অনুসারীদের সহাবস্থান এবং অন্য ধর্মের অনুসারীদের আপন আপন পূজা-আরাধনা নির্বিঘ্নে পালন করতে সহযোগিতার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত পরিষ্কার।
ইসলাম এতে পূর্ণ সমর্থন দেয় ও দায়িত্ব গ্রহণ করে।
ইসলামের স্পষ্ট নীতি হচ্ছে, যে কোনো ধর্মাবলম্বী নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে তার ধর্ম পালন করুক। নিজস্ব পরিধির মধ্যে তার ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা তার রয়েছে। ইসলাম এক্ষেত্রে কোনো প্রকার অসহযোগিতা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। বরং তাদের নিজস্ব গণ্ডির ভেতরে থেকে এগুলো পালন করার জন্য ইসলামী সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও দেয়া হয়েছে ইসলামী খেলাফতের সময়গুলোতে। হযরত উমর রা. তাঁর শাসনামলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের كنيسة (কানীসা) বানানোর সুযোগও দিয়েছেন।
সুতরাং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার এবং ধর্মীয় আচার-আচরণকে এক করে দেখার পেছনে যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, প্রত্যেক ধর্মের নিজস্ব। এ উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব ও আনন্দও তাদের নিজস্ব।
তবে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যদের ধর্মীয় কাজে যোগ দেওয়া, সেগুলোকে পছন্দ করা, সে উৎসবকে নিজের উৎসব মনে করার কোনো একটি বিষয়ই শরীয়ত কর্তৃক সমর্থিত নয়।
মূলত অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সহাবস্থান, নিজস্ব পরিধির মধ্যে তাদের ধর্মপালন ও পালনের অধিকার একটি সমর্থিত ও স্বীকৃত বিষয়। এটি ইসলামেরই নীতি। কিন্তু অপর ধর্মের ধর্মীয় আচার এবং ধর্মভিত্তিক উৎসবকে নিজের উৎসব মনে করা কিংবা সে উৎসবে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে অংশ নেয়া সম্পূর্ণ অসমর্থিত, অযৌক্তিক ও বাস্তবতাবহিভর্‚ত। মূর্তিপূজা সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠান-উৎসবে কোনো মুসলমানের পক্ষে এভাবে একাত্মবোধ করার কোনো অবকাশই নেই। এটা ইসলামের অন্যতম প্রধান শিক্ষা এবং ভিত্তিগত চেতনারও বিরোধী।
,
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেন,
من تشبه بقوم فهو منهم
‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলভ‚ক্ত বলে গণ্য হবে।’ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০৩১
অন্য একটি বর্ণনায় খলীফা হযরত উমর রা. বলেছেন, اجتنبوا أعداء الله في عيدهم তোমরা আল্লাহর দুশমনদের উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাক। আস সুনানুল কুবরা, হাদীস ১৮৮৬২
অন্য বর্ণনায় তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেছেন ‘কারণ এক্ষেত্রে আল্লাহর অসন্তুষ্টি নাযিল হয়ে থাকে।’ আরেকটি বর্ণনায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেছেন
من بنى ببلاد الأعاجم وصنع نيروزهم ومهرجانهم وتشبه بهم حتى يموت وهو كذلك، حشر معهم يوم القيامة.
অর্থাৎ যারা বিধর্মীদের মত উৎসব করবে, কিয়ামত দিবসে তাদের হাশর ঐ লোকদের সাথেই হবে। আস সুনানুল কুবরা, হাদীস ১৫৫৬৩
,
★★সুতরাং হিন্দু ধর্ম অবলম্বন কারীদের জন্য ক্লাশের ছুটি,অগ্রীম ক্লাশ,ইত্যাদির দ্বারা তাদেরকে পূজার কাজ নির্বিঘ্নে করার সুযোগ করে দিতে হবে। তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
তবে এক্ষেত্রে আমাদের জন্য তাদের পূজায় সহযোগিতা করা,আনন্দ উৎসব করা জায়েজ হবেনা।
,
★★প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত " যদি আমি পূজা কে মনে প্রাণে ঘৃণা করি এবং এজন্য টিচারদের কল দিতেও ইতস্তত বোধ করছি।
এক্ষেত্রে এই কাজ যদি তাদেরকেই তাদের পূজার কাজ নির্বিঘ্নে করার জন্য হয়ে থাকে,তাহলে এটি আপনার জন্য জায়েজ আছে। তারপরেও আপনি নিন থেকে বেরই কাজ করতে না চাইলে অন্য কাহারো মাধ্যনে এই কাজ করিয়ে নিতে পারেন।
আর যদি এই কাজ তাদের পূজায় সহযোগিতা স্বরুপ হয়ে থাকে,বা পূজায় মুসলমানদের আনন্দ উৎসব মূলক হয়ে থাকে,তাহলে এক্ষেত্রে আপনার জন্য এই কাজ করা,বা আপনার আদেশ ক্রমে কাহারো দ্বারা করিয়ে নেওয়াও জায়েজ হবেনা।